গুগলের তৈরি স্মার্টগ্লাস ‘গুগল গ্লাস’ যখন কনজ্যুমারস ইলেকট্রনিক হিসেবে ব্যর্থ পণ্যের খাতায় নাম লেখায়, তখন একদল উদ্যোক্তা সেই গ্লাসের সুবিধা লুফে নেয় নিজেদের স্টার্টআপের জন্য। গুগল গ্লাসের জন্য তৈরি করেন নিজেদের অ্যাপ, যার মাধ্যমে বিশ্বের চিকিৎসাসেবায় নতুন এক মাত্রা তো যোগ হয়ই, পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষতাসম্পন্ন তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতেও অসামান্য অবদান রাখতে শুরু করে।
বলছিলাম ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করা সিলিকন ভ্যালির স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক স্টার্টআপ অগমেডিক্স এর কথা, যার প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইয়ান শাকিল। অগমেডিক্সের তৈরি অ্যাপ এবং ডাক্তারের পরিহিত গুগল গ্লাসের সাহায্যে রোগীকে দেখে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে যাবতীয় তথ্য রিপোর্ট আকারে লিখে রাখেন একজন ভার্চুয়াল সহকর্মী, যাদের বলা হয় স্ক্রাইব। এর মাধ্যমে ডাক্তারদের সপ্তাহে প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় সাশ্রয় হয়।
করোনার মহামারীর মধ্যে সংকটময় মুহূর্তে যখন আমরা কোণঠাসা হয়ে ঘরে আটকে থেকেছি, তখন থেকেই সম্মুখ-সারির যোদ্ধাদের মধ্যে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন চিকিৎসকগণ। পৃথিবীর এই ক্রান্তিকালে আমরা প্রযুক্তি এবং টেলিকমিউনিকেশন ও টেলিমেডিসিনের ভূমিকা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি। আর এই দুইয়ের সমন্বয়ে অগমেডিক্স স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত ও সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় কাজ করে গেছে।
শুধু তা-ই নয়, বাইরের সেবার পাশাপাশি, অগমেডিক্স তাদের ঘরের কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। সারা বিশ্বের ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানের মতোই শুরু থেকেই “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” বা ঘরে বসে কাজের সুবিধা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপার, প্রোগ্রামার, এবং আইটি প্রফেশনালরা। শুধু এ পর্যন্তই নয়, তাদের কর্মীরা যেন ঘরে বসে নির্বিঘ্নে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় কাজের সরঞ্জাম কর্মীদের বাসায় স্থাপনের দায়িত্বটিও নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে অগমেডিক্স।
করোনাকালে উদ্বেগজনক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো ঘরে বসে একটানা কাজ করার ফলে কম সময়ে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়া। কর্মীদের সুস্বাস্থ্যের এই দিকটি মাথায় রেখে অগমেডিক্স তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি সেবার ব্যবস্থা রেখেছে।
এরপরেও যাদের জন্য একান্তই অফিসে উপস্থিত থাকা জরুরি তাদের কথা চিন্তা করে অফিসের নিরাপত্তা সেবা কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন তারা। স্ক্রাইব, ডেভেলপার, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সাহায্য করা, কর্মক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার, পিপিই সরবরাহ, কর্মীদের স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আমরা বিশ্বব্যাপী কম-বেশি সব প্রতিষ্ঠানকেই দেখেছি করোনার প্রকোপে আসন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। এর মধ্যে কর্মী ছাঁটাই আর বেতন কর্তন করা হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সংকটময় এই সময়ে কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অগমেডিক্স কর্তৃপক্ষ।
তাদের গৃহিত পদক্ষেপ আর ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলেও খ্যাতি আর সুনাম কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অগমেডিক্সের সেবা আমার জন্য জীবন পরিবর্তনকারী ভূমিকা রেখেছে। এর দারুণ সেবার জন্য আমি প্রত্যেক ক্লিনিসিয়ানকে অগমেডিক্স ব্যবহারের পরামর্শ দেবো।
– ড. মানি নেজহাদ, নিউরোলজিস্ট, ডিগনিটি হেলথ
রিমোট স্ক্রাইব ছাড়া আমি নিজের ক্যারিয়ার কল্পনায় করতে পারি না, অগমেডিক্স আমার কাজ অর্ধেক কমিয়ে এনেছে।
– ড. হ্যানি, এমডি, ডিগনিটি হেলথ
করোনাকালীন এই দুর্যোগের সময়ে অগমেডিক্স স্ক্রাইবদের সেবা আর নমনীয়তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
– ড. ক্রিস্টিন সাং, সাটার ইস্ট বে মেডিকেল ফাউন্ডেশন
অগমেডিক্সের স্ক্রাইব সুবিধার ফলে বাড়তি কোনো সহকারীকে ক্লিনিকে বা চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত থাকা লাগছে না, বরং দূরে থেকেই তারা আরও উন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অগমেডিক্সও চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ স্ক্রাইব সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সেবার মান আরও বৃদ্ধি করতে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত অগমেডিক্সের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাব্যাপী হলেও পর্যায়ক্রমে এর পরিধি বেড়েই চলেছে। তবে অগমেডিক্সের প্রতিষ্ঠাতা যখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং এর কান্ট্রি ডিরেক্টর যখন এয়ারক্রাফট জায়ান্ট বোয়িংয়ের সাবেক সিনিয়র ম্যানেজার রাশেদ মুজিব নোমান, তখন প্রতিষ্ঠানটির জনবল বৃদ্ধি যে বাংলাদেশকেন্দ্রিক হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৮ সালে অগমেডিক্স কেবল বাংলাদেশ থেকেই ৫০০ জনেরও বেশি তরুণকে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দিয়েছে, আগামী ৫ বছরে এই সংখ্যা ৭ হাজারে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশের তরুণদের বেকারত্ব হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাংলাদেশ সরকারের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্স প্রকল্পে অগমেডিক্সের অবদান নিয়েই সাজানো হয়েছে এই লেখাটি। এছাড়াও অগমেডিক্স এর অফিসে প্রতি সোমবার থেকে শুক্রবার নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ইনফো সেশন হয়। কীভাবে তারা কাজ করে বা তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এর সবই সরাসরি জানা যাবে এই সেশনগুলোতে।