বিজনেস কেস কম্পিটিশন পিওনেরোস ৩.০: নতুন মৌসুমের ইতি

বছরের অন্যতম প্রত্যাশিত বিজনেস কম্পিটিশন ‘পিওনেরোস ৩.০’ গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার এক জমজমাট গ্র্যান্ড ফিনালের মাধ্যমে দুই মাসের যাত্রা শেষ করলো। গত বছরের মতো এবারও বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে বুয়েটের একটি টিম। বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট পিওনেরোসের তৃতীয় পর্বের পর্দা উঠেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। দু’মাস ব্যাপী এ প্রতিযোগিতাটি সারা দেশের সকল উদ্যোক্তামনা স্নাতকার্থী শিক্ষার্থীদের মাঝেই জন্ম দিয়েছে উৎসাহ ও উদ্দীপনার।

বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে একটি টিম; Image Source: BUET EDC

এবারের প্রতিযোগিতার দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৫০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে তিনটি রাউন্ডের মাধ্যমে বেছে নেয়া সেরা ১০ টি টিম গ্র্যান্ড ফিনালেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিজয়ী সেরা তিন দলকে সর্বমোট ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার সিড মানি দেয়া হয়, যে অর্থ দিয়ে বিজয়ী দলগুলো তাদের বিজনেস মডেলকে বাস্তবায়ন করবে।

প্রেজেন্টেশনে ব্যস্ত টিম; Image Source: BUET EDC

 এ বছরের পিওনেরোসের চ্যালেঞ্জ প্রতিবারের গতানুগতিক কেস সল্ভিংয়ের তুলনায় ছিল ভিন্ন।  প্রতিযোগীদের এবার তৈরি করতে হয়েছে নতুন একটি ক্রাউড সোর্সিং ভিত্তিক বিজনেস মডেল। তাই সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি একদম শূন্য থেকে কিছু একটা তৈরি করার অভিজ্ঞতাও এবছরের প্রতিযোগীরা পেয়েছে। আর প্রতিযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হয়েও যে ধরনের কার্যকর এবং টেকসই বিজনেস মডেল তৈরি করেছে, তা সত্যিই ছিল অবাক করার মত।  

বিচারকদের ব্যস্ত মুহূর্ত; Image Source: BUET EDC

পিওনেরোস ৩.০ গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারক প্যানেল ছিল প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যক্ষেত্রের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর রাকিবুল হোসেন, নভোটেল লিমিটেডের সিটিও তানভীর এহসানুর রহমান, এআরকমের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এম আসিফ রহমান এবং ইএম সলুশনসের স্থপতি রেজওয়ানুল হক জামি ছিলেন এবারের শ্রদ্ধেয় বিচারকমণ্ডলী।

বিচারকগণ একত্রে; Image Source: BUET EDC

বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে প্রতিটি টিমের মনকাড়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপিত বিজনেস মডেলগুলো দেখে বিচারক এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের সবাই ছিলেন মুগ্ধ। তবে সবাইকে ছাপিয়ে এবার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদের প্রকৌশল বিস্ববিদ্যালয়ের (BUET) ‘টিম এলিক্সির’। প্রথম রানার-আপ হয়েছে মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (MIST) ‘টিম লেইস্টার’, এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম গডমোড’ হয়েছে দ্বিতীয় রানারআপ। তবে বিচারকদের মতে সেরা দশের প্রতিটি দলই বিজয়ী হবার ক্ষমতা রাখে।

বিজয়ী দল টিম এলিক্সির টিম এলিক্সির; Image Source: BUET EDC

“এতদিনের রাতজাগা খাটা-খাটনি, একের পর এক নতুন ভাবনা আর ব্যর্থ হবার সম্ভাবনায় যেসব হতাশা, সবই কেটে গেল এই সাফল্যের মাধ্যমে। আমাদের জন্য এই সুযোগটি সত্যিই অপ্রতিম এবং আমরা এর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ,” বলছিলেন বিজয়ী দলের একজন সদস্য মাদেহা সাত্তার খান।

প্রথম রানার্স আপ দল টিম লেইস্টার; Image Source: BUET EDC

বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের (BUET EDC) জন্য ‘পিওনেরোস ৩.০’ ছিল একটি মাইলফলক। পিওনেরোসের তিন বছরের চড়াই উৎরাইয়ের যাত্রাকে এবারের মৌসুম দিয়েছে নতুন মাত্রা। এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল দেশ থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে বের করে নিয়ে এসে নিজেদের জন্য কাজ করবার সুযোগ করে দিয়ে দেশে একটি উদ্যোক্তা সংস্কৃতির বীজ বপন করা। গ্র্যান্ড ফিনালের সাফল্যমণ্ডিত সমাপ্তির পর প্রতিযোগী এবং বিচারকদের হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তি পিওনেরোসের নিজস্ব লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়াকেই ইঙ্গিত করে।

দ্বিতীয় রানার্স আপ দল টিম গডমোড; Image Source: BUET EDC

“ব্যক্তিগতভাবে পিওনেরোস ইভেন্টটির সাথে আমার অনেক আবেগ জড়িত এবং এ বছর আমি আমার সমগ্র টিমকে নিয়ে পিওনেরোসকে নিখুঁত এবং সফল করতে সর্বোচ্চ শ্রমটা দিয়েছি। আমি ক্লাবের প্রত্যেকটি সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ তাদেরকে ছাড়া এই ইভেন্টটি সম্পন্ন করা অসম্ভব ছিল। তবে আমি তখনই পিওনেরোস ৩.০ কে সফল বলব যখন প্রতিযোগীদের মধ্যে অন্তত একটি টিম তাদের বিজনেস মডেলকে বাস্তবে রূপ দেবে।” বলছিলেন বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ইয়ানুর ইসলাম পিয়াস।

উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগে পিওনেরোস ভবিষ্যতেও এগিয়ে যেতে থাকবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

This article is in Bangla language and features the third season of Business Case Competition Pioneros.

Featured Image: BUET EDC

Related Articles

Exit mobile version