ঘটনা ১
জামিল আহমেদের জীবনে হঠাৎই একটা বিরক্তির সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরে অফিস হওয়ার কারণে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান ভোরেই। আবার ফিরতে ফিরতে হয়ে যায় সন্ধ্যা। বয়স এখনও চল্লিশ পেরোয়নি, কিন্তু স্বাস্থ্য-সচেতন। পরিবারকে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না বলে অফিস থেকে ফেরার পরের সময়টুকু বাসাতেই থাকার চেষ্টা করেন। সেজন্য মাস কয়েক আগে একটা ট্রেডমিল কিনেছেন তিনি। প্রতিদিনের হালকা ব্যায়ামের জন্য যাতে আর বাইরে যেতে না হয়। যা-ই হোক, বিরক্তির কারণ হলো, এই ট্রেডমিলটার বেল্টটা জ্যাম হয়ে গেছে ক’দিন আগে, হাঁটতে গেলেই আটকে যায়। এবং বড় মুশকিল হলো, জিনিসটা যে ঠিক করবেন, সেটার কোনো উপায় করতে পারছেন না তিনি। এই জিনিস ঠিক করার লোক কোথায় থাকে, কেমন খরচ হয়, এসব খবর তো সবার কাছে থাকে না। এদিকে অফিস থেকে ফেরার পর আর ইচ্ছেও করে না এই ঝামেলায় যেতে। কিন্তু কাজটা তো সেরে ফেলা দরকার। এখন উপায় কী?
ঘটনা ২
জামিল সাহেবের অফিসের কলিগ মনোয়ার সাহেব। একটু ভারী শরীরের রাশভারী মানুষ। গরম হোক, বৃষ্টি হোক কিংবা শীত হোক, মনোয়ার সাহেবের একটাই চাহিদা, তার রুমে এসি চালু থাকা চাই। গরমটা একটু বেশিই যেন লাগে তার। সেদিন অফিসে লাঞ্চ ব্রেকে কথা হচ্ছিল দুই সহকর্মীর। জামিল সাহেব বললেন তার চলমান বিরক্তির কথা। মনোয়ার সাহেব তখন জানালেন, তিনিও প্রায় এরকমই একটা ঝামেলার মধ্যে আছেন। বাসায় তার রুমের এসিটা থেকে নাকি পানি পড়ছে হঠাৎ করে, আর কেন জানি সেটার জোর একদমই কমে গেছে, পাঁচ মিনিটও রুম ঠাণ্ডা থাকছে না। গত ৩ দিন ধরে যাব যাব করেও বেরুতে পারছেন না এসির মিস্ত্রির খোঁজে, সময়ই পাচ্ছেন না কাজটার জন্য। মনোয়ার সাহেবের এই একটাই বিলাসিতা, শীতল বাতাসের মধ্যে আরাম করে ঘুমানো। কিন্তু এসিটা এমন বিগড়ে যাওয়ার কারণে ঘুমটাই হচ্ছে না ঠিকমতো।
ঘটনা ৩
এই দুজনের অফিসের আরেক সহকর্মী সেঁজুতি মজুমদার। প্রকৌশলী, অফিসের আইটি বিভাগটা তিনিই সামলান। জামিল আর মনোয়ার সাহেব সেদিন অফিসের একটা বিষয়ে আলাপ করছিলেন তার সাথে, কথাপ্রসঙ্গে বাসার খোঁজখবর নিতে গিয়ে সেঁজুতি আপাকে তারা জানালেন ট্রেডমিল আর এসি সংক্রান্ত ঝামেলার কথা। এবং তাদের অবাক করে দিয়ে সেঁজুতি মজুমদার শোনালেন একটা খুব সহজ সমাধানের কথা, যেটা দিয়ে এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া মাত্র দুই মিনিটের ব্যাপার! এমন একটা অ্যাপ নাকি আছে, যেটা মোবাইলে নামিয়ে সেখান থেকে সরাসরি টেকনিশিয়ান অর্ডার করা যায়, যারা কিনা বাসায় এসে নিজেরাই এসি থেকে শুরু করে বাসার সমস্ত যন্ত্রপাতি ঠিক করে দিতে পারে। যার যেটা দরকার সে শুধু সেটা অ্যাপ থেকে খুঁজে নিয়ে অর্ডার করলেই হলো, বাকি কাজ আপনাআপনিই হয়ে যাবে। দক্ষ মিস্ত্রি চলে আসবে বাসায়, সব ঠিকঠাক করে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তারপর হাতে হাতে বা বিকাশে টাকা নিয়ে বিদায় নেবে। জামিল আর মনোয়ার সাহবে তো রীতিমতো বিস্মিত হলেন এই কাহিনী শুনে। তক্ষুণি মোবাইলে অ্যাপটা নামিয়ে পরীক্ষা করতে বসলেন, ঘটনা সত্যি কিনা।
এরপর…
তাদের সেদিনের পরীক্ষা সফল হয়েছিল। সামান্য দুটো সমস্যা নিয়ে যে তারা কয়েকদিন ধরে বিরক্ত ছিলেন, সেটা ভেবেই এরপর তাদের আফসোস হচ্ছিল। সেঁজুতি আপার কথামতো Sheba.xyz নামের এই অ্যাপটা নামিয়ে তারা প্রথমেই রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেন ফোন নাম্বার দিয়ে। এরপর হোমপেজে দেখা গেল সবগুলো সার্ভিসের তালিকা করা আছে ছবিসহ। সেখান থেকে তারা Home Appliance বেছে নিলেন। সেখানে আবার তালিকার মধ্যে আছে বাসা-বাড়ির সবরকমের যন্ত্রপাতির কথা, যেটা ইচ্ছে সেটাই ঠিক করা যাবে। এসির অপশনে গেলে দেখা যাবে, যত রকমের সমস্যা হতে পারে সবগুলোর একটা তালিকা আছে। সেখান থেকে মনোয়ার সাহেব অ্যাড করলেন Ac Water Drop Solution অপশন। এরপর টিক দিলেন 1.5 এ, কারণ তার রুমের এসিটা দেড় টনের। তারপর Schedule Service অপশনে প্রেস করে দিন-তারিখ-সময় ঠিক করে দিলেন। এরপর Select Partner প্রেস করলেন। সেখানে দেখা গেল, অনেকগুলো সার্ভিসিং কোম্পানির নাম দেওয়া, সাথে তাদের রেটিং আর চার্জও লেখা আছে। মনোয়ার সাহেব একটা বাছাই করে নিয়ে Select করলেন। এরপর ঠিকানা দেওয়ার পালা। Give Address এ গিয়ে ঠিকানা দিলেন, এরপর Checkout প্রেস করলেন। ক্যাশ নাকি বিকাশ, কীভাবে পেমেন্ট করবেন সেটা ঠিক করে দিলেন। তারপর Place Order প্রেস করে অর্ডারটা কনফার্ম করে দিলেন। ওদিকে জামিল সাহবের কাজটাও পুরোটা এরকমই ছিল। তিনি শুধু ট্রেডমিলের অপশনে গিয়ে সমস্যা বেছে নিয়ে একই নিয়মে অর্ডার করে ফেললেন।
তারা দুজনেই শিডিউল করেছিলেন সেদিনই সন্ধ্যায়। অফিস থেকে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই ফোনে কল পেলেন, সেবা থেকে সার্ভিস প্রোভাইডার চলে এসেছে বাসার কাছেই। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেল তারা। তারপর আর কী? এই দুজন যার যার বাসায় শুধু অবাক হয়ে দেখলেন, তাদের ঝামেলাগুলো মিটে গেল কত সহজেই। বাসা থেকে বের হওয়া লাগল না, কাউকে ফোন দিতে হলো না, রাস্তায় কাউকে খুঁজে বেড়ানো লাগল না- কিচ্ছু না। শুধু একটা অ্যাপ নামিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে কয়েকটা ক্লিক, ব্যাস এতটুকুই। বাকিটার দায়িত্ব নিয়ে নিল Sheba.xyz।
পরদিন অফিসে এসে সেঁজুতি আপার ডেস্কে গেলেন দুজনেই। চা খেতে খেতে ধন্যবাদ জানালেন তাকে এই দারুণ অ্যাপটা চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। অবশ্য তারা মনে মনে খুঁজছিলেন সেই মানুষগুলোকে, যারা এই অ্যাপটার মূল কারিগর, যারা কী চমৎকার একটা আইডিয়া বের করে সেটা থেকে বানিয়ে ফেলেছে এত সুন্দর একটা সিস্টেম! প্রতিদিনের এমন হাজার রকমের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যে এত সহজ, এটা ভাবলেই যেন মনে হচ্ছে, জীবনটা অনেক চিন্তামুক্ত হয়ে গেল হঠাৎ করেই!