সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপের আগে কলম্বিয়ান ফুটবল নিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন তিনি। কলম্বিয়ান ফুটবলের রহস্যময় উত্থান দেখে তিনি বলেই বসলেন, কলম্বিয়া ১৯৯৪’র ফিফা বিশ্বকাপ জয় করতে যাচ্ছে। নব্বই দশক এবং এর পরবর্তী সময়ে কলম্বিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যায়-অস্থিরতায় জর্জরিত ছিল। পেলে ভেবেছিলেন, একমাত্র ফুটবলকে পুঁজি করে কলম্বিয়া নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে, বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে।
তার এই ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তীতে সত্যি না হলেও, একেবারে অবান্তরও ছিল না। তখনকার সময়ে কলম্বিয়ান ফুটবলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যেসকল ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা সংগঠন জড়িত ছিল, তাদের আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা এবং কলম্বিয়ান ফুটবল দলের একঝাক তরুণ ফুটবলারের দুর্দান্ত ফুটবল দক্ষতার কথা বিবেচনা করলে, ৯৪’র বিশ্বকাপটা কলম্বিয়ার দখলে যাবার কথা ভাবাই যায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস; কলম্বিয়ার তৎকালীন ফুটবল প্রজন্মের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আন্দ্রে এস্কোবারের আত্মঘাতী গোল সব হিসেব-নিকেশ ও ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে করে দেয়।
কলম্বিয়ান ফুটবলের উত্থান
তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর মাদক ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তি, পাবলো এস্কোবার ছিলেন কলম্বিয়ান ফুটবল দলের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক এবং কলম্বিয়ান ক্লাব অ্যাটলেটিকো ন্যাশনালের পৃষ্ঠপোষক।। পাবলো এস্কোবার তার মাদক ব্যবসার অঢেল অবৈধ অর্থকে বৈধ করার একটি মাধ্যম হিসেবে ফুটবলকে বেঁছে নিয়েছিলেন। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ফুটবলের প্রতি পাবলো এস্কোবারের ভালবাসারও কোনো কমতি ছিল না।
একইসাথে প্রিয় খেলার উপর নিয়ন্ত্রণ এবং কালো টাকাকে সাদা করার মাধ্যম হিসেবে পাবলোর কাছে ফুটবল ছিল পরম আরাধ্য। মাদক পাচার থেকে আয় করা কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে কেবল পাবলো এস্কোবারই নন, কলম্বিয়ার আরো কিছু মাদক অধিপতিও ফুটবলকে বেঁছে নিয়েছিলেন। ফলাফলস্বরূপ, কলম্বিয়ান ফুটবলে কোটি কোটি টাকার ছড়াছড়ি। বিদেশ থেকে নামকরা সব খেলোয়াড় কিনে কলম্বিয়ান ক্লাবে খেলানো ছিল তখনকার সময়ে মামুলি ব্যাপার।
মাদক চোরাচালানকারী সদস্যদের বিপুল অর্থের যোগানে কলম্বিয়ান ফুটবলের উন্নতি ঘটতে থাকে। এই উন্নতি কেবল অর্থ যোগান, ক্লাব আর খেলোয়াড় কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে কলম্বিয়ার অর্জনই বলে দেয় মাঠে এবং মাঠের বাইরে কলম্বিয়ান ফুটবল অভ্যুত্থানের বীজ ইতোমধ্যে বপন করা হয়ে গেছে।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তী পেলে কলম্বিয়ান ফুটবলের পেছনের হর্তাকর্তা এবং পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কে অবগত হয়ে ভবিষ্যদ্বাণী না করলেও, খেলার মাঠে কলম্বিয়ার অর্জন ছিল তার দাবির অন্যতম প্রভাবক। ১৯৮৯ সালে দেশটির অন্যতম সফল ক্লাব অ্যাটলেটিকো ন্যাশনাল, দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফুটবল আসর কোপা লিবারটাডোর্সের শিরোপা অর্জন করে । ক্লাবটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পাবলো এস্কোবার। ক্লাবটিতে ছিল একঝাক ফুটবল তারকার ছড়াছড়ি। এই ক্লাবের অনেকে আবার কলম্বিয়ান জাতীয় ফুটবল দলেরও সদস্য ছিলেন।
জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের পর, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কলম্বিয়ার সাফল্য আসতে শুরু করে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কলম্বিয়ার জাতীয় ফুটবল দল ২৬টি খেলার মধ্যে মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছিল। এমনকি ১৯৯৩ সালে, ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে, বুয়েন্স আয়ার্সে স্বাগতিক আর্জেন্টিনাকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে। এই ম্যাচটি দেখতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দর্শক সমাগম হয়েছিল। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপের দলটির প্রত্যেকে ছিলেন নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিভাবান এবং তাদের প্রতিভার সাথে মিশে ছিল দেশের প্রতি প্রচণ্ড আবেগ। নানাবিধ অরাজকতা থেকে দেশকে মুক্তি দেয়ার জন্য এবং বিশ্ব দরবারে স্বদেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্যই তারা একত্রিত হয়েছিল।
বিশ্বকাপ শুরুর আগের এক বছরে কলম্বিয়া ফুটবল দলের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সাফল্য, পাবলোর পৃষ্ঠপোষকতা এবং কিংবদন্তী ফুটবলার পেলের ভবিষ্যদ্বাণী- সব মিলিয়ে কলম্বিয়া ফুটবল দলের উপর দেশটির জনগণের প্রত্যাশা দিনকে দিন বাড়তে থাকে এবং আকাশচুম্বী প্রত্যাশার ভার কাঁধে নিয়ে কলম্বিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই পাহাড়সম প্রত্যাশা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। তৎকালীন কলম্বিয়ান ফুটবল দলের কয়েকজন খেলোয়াড় এবং টিম ম্যানেজমেন্টের দাবি অনুসারে, দলটির প্রথম লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপের প্রথম বা দ্বিতীয় রাউন্ড পার করা। বিশ্বকাপের আগে ফ্লিক, র্যাবোনা, ফ্লুইড নাটমেগের মতো কৌশলী ফুটবল প্রদর্শন করেও কলম্বিয়ান ফুটবল ম্যানেজমেন্ট এবং খেলোয়াড়দের মাঝে প্রাপ্তির প্রত্যাশাটা সেই অনুপাতে কমই মনে হচ্ছিল।
বিশ্বকাপের আগে কলম্বিয়ার হোঁচট
একদিকে কলম্বিয়ান ফুটবলের উত্তরোত্তর উত্থান; অন্যদিকে, কলম্বিয়ার নারকীয় অবস্থা। মাদক উৎপাদন, চোরাচালান, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা এতই প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, এই অরাজকতার মাঝে ফুটবলই ছিল কলম্বিয়ানদের একমাত্র ভরসা। তারা ভাবতো, ফুটবলই একদিন তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু বাধ সাধলো ভাগ্য। বিশ্বকাপের আগেই ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে কলম্বিয়ান পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রর দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। অবশেষে তারা কলম্বিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মাদক সর্দার পাবলো এস্কোবারকে হাতে পায়। ধরতে না পারলেও হত্যা করতে সক্ষম হয়।
তারা ভেবেছিল, এস্কোবারের মৃত্যু কলম্বিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। কিন্তু তাদের এই ধারণা একদমই ভুল ছিল। পাবলোর মৃত্যুর পর কলম্বিয়ার অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা- যারা পাবলোর একচ্ছত্র আধিপত্যের সামনে কিছুটা পিছিয়ে ছিল, তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দেশভর চলতে থাকে আরো বেশি অরাজকতা। কলম্বিয়ান ফুটবলের অন্যতম সমর্থক এবং পৃষ্ঠপোষকের মৃত্যুতে অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে কলম্বিয়ান ফুটবল দল।
সেই আত্মঘাতী গোল
কলম্বিয়ার ফুটবলে ক্লাব মালিকদের এবং জুয়াড়িদের কালো হাতের প্রভাবও ছিল। তারাও চেয়েছিল তাদের খেলোয়াড়রা বিশ্বকে চমকে দিক। এমনকি খেলোয়াড়দের বাড়িতে হত্যার হুমকিও যেতে থাকে। ফলে বিশ্বকাপের শুরুতেই অবর্ণনীয় চাপের মুখোমুখি হয় কলম্বিয়ান জাতীয় দল এবং দলের খেলোয়াড়রা। ফলাফল হিসেবে রোমানিয়ার কাছে ৩-১ গোলের পরাজয় দিয়ে শুরু হয় কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ যাত্রা। এই হারের পর কলম্বিয়ার লক্ষ্য তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরবর্তী ম্যাচের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জয় পেলেই তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
আন্দ্রে এস্কোবার, ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপে কলম্বিয়ান দলের পোষ্টার বয়। অনেকের মতে পাবলো এস্কোবারের মৃত্যুর পর কলম্বিয়ার নতুন আশার আলো ছিলেন আন্দ্রে এস্কোবার। বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী সময়ে তাঁর ফুটবল নৈপুণ্যে তিনি সকলের চোখের মনিতে পরিণত হয়েছিলেন। এমনকি পাবলোর ফুটবল ক্লাব অ্যাটলেটিকো ন্যাশনালের হয়েও তিনি কয়েক বছর অসাধারণ ফুটবল উপহার দেন। রোমানিয়ার সাথে পরাজয়ের পর সকলের ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন আন্দ্রে।
পরের ম্যাচ স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। বিশ্বকাপ দৌড়ে টিকে থাকার জন্য এই ম্যাচে কলম্বিয়ার জয়ের কোনো বিকল্প নেই। পেসাদানার রোজ বোল স্টেডিয়ামে তখন নাভিশ্বাস! এত উৎসাহ উৎকণ্ঠা নিয়ে খেলতে আসা কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ ভাগ্য কোন দিকে যায় তা-ই দেখার পালা। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রবল মানসিক চাপ নিয়ে খেলতে নামে কলম্বিয়া। কিন্তু প্রথমার্ধে একটি আত্মঘাতী গোল করে বসেন দলের আন্দ্রে এস্কোবার। অথচ তিনিই ছিলেন কলম্বিয়ান ফুটবলের আশার আলো। তার উপর পুরো দেশ তাকিয়ে ছিল, যার মাধ্যমে কলম্বিয়া ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিতে চেয়েছিল। তার আত্মঘাতী গোলেই প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটে ১-০ পিছিয়ে পড়ে কলম্বিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, খেলার ৫২ মিনিটে কলম্বিয়ার জালে বল জড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড় ইয়ারনি স্টুয়ার্ট। ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে ৯০ মিনিটে একমাত্র গোল করে ২-১ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। এই পরাজয়ের ফলে বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে পড়ে কলম্বিয়া। এর পরের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পেলেও প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচে কলম্বিয়ার অর্জন ছিল মাত্র ৩ পয়েন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আন্দ্রে এস্কোবারের আত্মঘাতী গোল
আন্দ্রে এস্কোবারের হত্যা
জনগণের বিপুল প্রত্যাশার বিপরীতে শুধুমাত্র হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে কলম্বিয়া। বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে দেশে ফেরার পর এস্কোবার ১০ দিনের ছুটি নিয়ে তার নিজ বাড়ি মেডেলিনে যান। ফুটবল ক্লাব এসি মিলানের সাথে তার চুক্তি বিষয়ক আলোচনার জন্য তার ক্লাব সতীর্থদের সাথে মিলিত হতে চেয়েছিলেন। জুলাইয়ের ২ তারিখ মধ্যরাতে একটি পানশালা থেকে বের হবার পর, গাড়ি পার্কিং লটে তার সাথে দুই জন অচেনা লোকের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তারা আন্দ্রে এস্কোবারকে বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোলের জন্য দোষারোপ করতে থাকে।
আন্দ্রে এস্কোবার কোনোরূপ গোলযোগ না করে তাদেরকে বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, আত্মঘাতী গোলটি তিনি ইচ্ছে করে করেননি। বিপক্ষ দলের ক্রস বল ক্লিয়ার করার সময় পায়ে লেগে ভুলবশত নিজেদের গোলপোস্টের ভেতর বল জড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের দোষারোপ অব্যাহত রাখে এবং একপর্যায়ে আন্দ্রে এস্কোবারের মাথায় একটানা ছয় রাউন্ড গুলি করে গাড়িতে চড়ে পালিয়ে যায়। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
হত্যার নেপথ্যে রহস্য
কলম্বিয়ার একটি শক্তিশালী মাদক সংগঠনের দেহরক্ষী, হেমবারতো ক্যাস্ট্রো মুনিজ আন্দ্রে এস্কোবারকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। আদালত তাকে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কারাগারে সদাচার এবং ভালো ব্যবহারের জন্য তার সাজা কমিয়ে ১১ বছর করা হয়। হেমবারতো মুনিজের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি পিটার এবং জোয়ান গ্যালন নামক দুই মাদক ব্যবসায়ীর ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করতেন। পিটার এবং জোয়ান এই দুই গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয় পাবলো এস্কোবারের মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীতে পাবলোর প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চোরাচালান সংগঠন লস পেপেসে যোগদান করেন। আন্দ্রে এস্কোবার খুন হবার পর জানা যায়, এই গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয় মাদক ব্যবসায়ী এবং জুয়াড়ি। তারা বিশ্বকাপে কলম্বিয়ান ফুটবল দল নিয়ে বড় অংকের টাকা বাজি ধরেছিলেন এবং বিশ্বকাপ থেকে প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ার ফলে খুব হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন।
কলম্বিয়ান ফুটবল, আন্দ্রে এস্কোবার এবং পাবলো এস্কোবারের উপর নির্মিত ‘দ্য টু এস্কোবারস’ নামক ডকুমেন্টারিতে পাবলো এস্কোবারের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেন, লস পেপেসে যোগদান এবং পাবলো এস্কোবারের মৃত্যুর পর গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয়র আত্ম-অহমিকা এতটাই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল যে আত্মঘাতী গোলের শাস্তি হিসেবেই তারা আন্দ্রে এস্কোবারের হত্যাকাণ্ড ঘটাতে উদ্যত হয়েছিলেন। এর সাথে জুয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
সূত্রটি আরো দাবি করে, আন্দ্রে এস্কোবারের হত্যাকারী হিসেবে হেমবারতো ক্যাস্ট্রো মুনিজকে চিহ্নিত করে সাজা প্রদান করা হলেও, গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয়ই আন্দ্রের মূল হত্যাকারী। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে যে গাড়িতে করে হত্যাকারীরা পালিয়ে গিয়েছিল, সেই গাড়িটি এই গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয়ের গাড়ি। তারা কার্লোস ক্যাস্তিনো নামক একজন ডানপন্থী, আধা সরকারী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাধর নেতাকে বিপুল অংকের টাকা দিয়ে প্রসিকিউটরের দপ্তর কিনে নেয় এবং প্রসিকিউটর হেমবারতো মুনিজকে দোষী হিসেবে দায়ী করে হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়। ফলাফল স্বরূপ গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয় হত্যার দায় এড়িয়ে যায় এবং পুলিশ হেমবারতো মুনিজকে গ্রেফতার করে সাজা দান করে।
ডকুমেন্টারিতে আরো দাবি করা হয় যে, পাবলো এস্কোবার যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে আন্দ্রে এস্কোবারকে গ্যালন ভ্রাতৃদ্বয়ের হাতে প্রাণ হারাতে হতো না। কারণ, পাবলো এস্কোবার নিজে একজন ফুটবলপ্রেমী ছিলেন এবং কলম্বিয়ান জাতীয় ফুটবল দলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুভাবাপন্ন।
আন্দ্রে এস্কোবারকে সমাধিস্থ করার অনুষ্ঠানে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কলম্বিয়ান জনগণ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কলম্বিয়ার রাজপথে জড়ো হয়েছিল। এখনো বিশ্বকাপের আসর বসলে কলম্বিয়ার সমর্থকরা স্টেডিয়ামে আন্দ্রে এস্কোবারের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে যায় এবং তার প্রতি শোক প্রকাশ করে থাকে।
আন্দ্রে এস্কোবারের আত্মঘাতী গোল নিঃসন্দেহে কলম্বিয়ান নাগরিকদের হতাশায় ডুবিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, তার হত্যাকাণ্ড কি কেবলই আত্মঘাতী গোলের জের ধরেই সংগঠিত হয়েছিল, নাকি কলম্বিয়ান মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতও তার হত্যার পেছনে দায়ী?
ফিচার ইমেজ: Colombia Reports