ফুটবলের আবিষ্কারক চীনের মানুষজন হতে পারে, প্রসার কাজে অগ্রপথিক হতে পারে ইংল্যান্ড, কিন্তু ফুটবলকে প্রাণ দিয়েছিল ব্রাজিল। আরো ভালো করে বলতে গেলে ব্রাজিলিয়ান ট্রেডমার্ক স্টাইল সাম্বা। এই সাম্বা ফুটবল দিয়েই ব্রাজিল বিশ্বে সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় ফুটবল দলে পরিণত হয়। সাম্বা ফুটবল মূলত ছিল একগাদা অসম্ভব প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের স্বভাবজাত স্কিলের সমন্বয়ে শৈল্পিক খেলা। সমসাময়িক বিশ্বের চেয়ে ব্রাজিলে তখন প্রতিভার যোগান এত বেশী ছিল যে, কেবল স্কিল আর খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া দিয়েই দিব্যি চলে যেত। ব্রাজিলিয়ান মানুষ বা বিশ্বের কেউই তখন অবধি ব্রাজিল দলে কোচের ভূমিকাকে খুব বেশী বড় করে ভাবেনি।
সময় বদলাতে থাকে, ইউরোপিয়ানদের দাপট বাড়তে থাকে, তাদের ট্যাকটিক্স লাতিনদের চেয়ে সুস্পষ্টভাবে আলাদা ও চৌকশ ছিল। খেলোয়াড়দের স্কিলের সাথে কৌশলের মিশ্রণে দেখা গেল ফুটবল বিশ্ব প্রায় একটা সাম্যাবস্থায় চলে এসেছে যেখানে শুধু স্কিল আর টেকনিকই ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট না, সাথে প্রচন্ডভাবে দরকার ট্যাকটিক্স- মানে ভালো কোচ। ইউরোপিয়ান ফুটবলে যে কথাটা চলত যে, “ফুটবলে কোচের অবদান চল্লিশ ভাগ“, সেই আপ্তবাক্য আর ইউরোপে থেমে থাকেনি, সারা বিশ্বের জন্যই সত্য হয়ে যায়। আতশকাচের নিচে আসতে থাকেন ব্রাজিলিয়ান কোচরাও।
একটু অন্যভাবে শুরু করা যাক। ব্রাজিল ফুটবলের এখন তাম্রযুগ চলছে। যদি দলের দিকে তাকানো যায়, তবে সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে নিখাদ অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের অভাব এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে কোনো ভালো খেলোয়াড় নেই, এটা অনেকেই জানে। ২০১৩ সালের কনফেডারেশন কাপের ফাইনালে ব্রাজিল ৩-০ গোলে হারায় স্পেনকে। স্পেন ব্রাজিলকে মাঠে হারাতে পারেনি, তবে মাঠের বাইরে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। ডিয়েগো কস্তা এবং থিয়াগো আলকান্তারাকে নাগরিকত্ব দিয়ে নিয়ে নিয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর ফিরমিনোরা উঠে আসায় কস্তার অভাব বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু সে যে সময়টায় ব্রাজিল ছেড়ে স্পেনে চলে গেলো, তখন সে বিশ্বের সেরা গোলস্কোরিং প্লেয়ারদের একজন, আর ব্রাজিলে স্টাইকারের একদম খরা। পুরো ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে কোনো বল-প্লেয়িং মিডফিল্ডার নেই, আর থিয়াগো বর্তমান বিশ্বের সেরা পাঁচ মিডফিল্ডারের একজন। অথচ তাকে ধরে রাখার জন্য ব্রাজিল ঠিকমতো চেষ্টাই করেনি।
ইদানীং লিভারপুল তারকা কৌটিনহো তাঁর খেলার জায়গা পরিবর্তন করে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলছে। ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বকাপে বল-প্লেয়িং মিডফিল্ডার রোলে সে-ই খেলবে। যদি তা-ই হয়, তবে থিয়াগোর অভাব নিঃসন্দেহে ভুলে যাবে ব্রাজিল। বল-প্লেয়িং মিডফিল্ডারদের একটি জেনারেশন উঠে আসছে ব্রাজিল থেকে। ১৭-১৯ বছর রেঞ্জে আরথার, ডগলাস, থিয়াগো মায়া, ওয়েন্ডেল এমন অনেক ক্লাস প্লেয়ার উঠে আসছে। এতক্ষণ এসব বলার কারণ হলো প্লেয়ার গেলে প্লেয়ার উঠে আসে, কিন্তু ভালো কোচ এত সহজে উঠে আসে না। ব্রাজিলেও উঠে আসছে না। কিন্তু কেন?
একজন ভালো কোচ উঠে আসা ঠিক এতটা সহজ ব্যাপার না। একজন ভালো কোচ মানে তাঁর কিছু আইডিয়া থাকবে যেটা অনন্য। ফুটবলে এই আইডিয়াগুলো দলের ভেতর পৌছাতে বেশ কিছু সময় লাগে। এই সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই দল অগোছালো খেলে থাকে। দলের প্লেয়ারদের মাঝে তাঁর দর্শন পৌছিয়ে, দলের মাঝে বোঝাপড়া করার সময়টা না পেলে কোচদের আসল উন্নতি হয় না। আর এই সময়টাই ব্রাজিলিয়ান লীগে কোচেরা পায় না। মেক্সিকান এক সার্ভেতে উঠে এসেছে পুরো চিত্রটা। ‘এল ইকোনোমিস্তা’ ২০০২ থেকে ২০১৬ অবধি ১০টি দেশের কোচদের নিয়ে কাজ করে জানায় যে, ব্রাজিলে একজন প্রফেশনাল কোচ মাত্র পড়ে ১৫ ম্যাচ স্থায়ী হন এক ক্লাবে, যে সংখ্যাটা জার্মানিতে প্রায় পাঁচগুণ, আর ইংল্যান্ডে ছয়গুণ! ২০১৬ সালে যখন মূল ব্রাজিলিয়ান লীগ শুরু হয়, তখন ২০টি দলের ২০ জন কোচের মধ্যে কেবল ২ জন কোচ ছিলেন এমন যারা ২০১৫-তেও ওই ক্লাবেই ছিলেন। মানে হচ্ছে আগের বছরের ১৮ জনই বরখাস্ত হয়েছেন ক্লাব থেকে। এমন বাজে অবস্থা কোনো জায়ান্ট ফুটবল খেলুড়ে দেশের ছিল না ঐ বছরে।
মুরিসি রামালহো বর্তমান ব্রাজিলিয়ান কোচদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। গত দু’বারই জাতীয় দলের জন্য তিনি বিবেচিত হয়েছিলেন জোরালোভাবে। ২৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে মাত্র ২০টি ক্লাবে যেতে হয়েছে তাঁকে, গড়ে ১ বছর ২ মাস করে প্রায়! প্রচন্ড হৃদরোগ নিয়ে একবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বলেছিলেন যে, তাঁর আগে হার্টে সমস্যা খুব একটা না থাকলেও শুরু হয়েছে। তিনি ক্লাব বোর্ডের চাপ নিতে পারছিলেন না। ২ ম্যাচ খারাপ করলেই ক্লাব আল্টিমেটাম দিয়ে দেয় যে, ৩য় ম্যাচটা না জিতলেই বরখাস্ত। অথচ বর্তমানের অন্যতম সফল কোচ পেপ গার্দিওলার শুরুটা ছিল জঘন্য।
ইতিহাসের অংশ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের প্রথম সময়ে তো রীতিমতো ট্রফিখরা ছিল অনেকদিন। আরেক কিংবদন্তি আরিগো সাচ্চির প্রথমদিকে বেশ কয়েক ম্যাচ কোনো জয়ই ছিল না। বর্তমান ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে তারা থাকলে কারোরই বিশ্বসেরা হওয়া হতো না। ঠিক এই কারণেই ব্রাজিলে ভালো তরুণ কোচ উঠে আসছে না। কারণ নিজেদের আইডিয়া প্রয়োগ করার সময়ই পাচ্ছেন না তারা। ঘুরে-ফিরে একই কোচ এই ক্লাব থেকে ওই ক্লাব করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে সফল দুই ঘরোয়া কোচ- টিটে (বর্তমান জাতীয় দলের কোচ) আর ক্রুজেইরোকে টানা লীগ জেতানো অলিভেইরা। তারা তুলনামুলকভাবে কিছুদিন বেশী সময় পেয়েছিলেন অন্যদের থেকে। আবার দুটো লীগ জেতানো এই অলিভেইরাকেই কয়েক ম্যাচ খারাপ করায় ক্লাব সাথে সাথে বরখাস্ত করে দেয়!
ব্রাজিলে কোচের অভাবটা স্পষ্ট বোঝা যায় কোচ সাইকেল দেখলেই। ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জেতা কোচকে ২০০২ সালে আবার কোচ করে আনা হয়, ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতা কোচ স্কলারিকে ২০১৩ সালে আবার কোচ করে আনা হয়, ২০০৬-২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা ডুঙ্গাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় ২০১৪ বিশ্বকাপের পর! মানে এই সময়গুলোয় ব্রাজিলের হাতে শক্তিশালী অপশন ছিল না বা বোর্ডের কোনো ফিলসফি ছিল না। কেমন? ২০০৬-১০ পর্যন্ত ডুঙ্গার সময়কে সাফল্যমন্ডিত বলা চলে। ব্রাজিলের সোনালী প্রজন্ম (রোনালদো, রিভালদো, কাফু, কার্লোস) অবসরে যাওয়ার পর কম ট্যালেন্ট ফ্লো নিয়েও ২০০৭ কোপা আমেরিকা আর ২০০৯ কনফেডারেশন কাপ জিতিয়েছেন। হল্যান্ডের সাথে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে একটি বাজে দ্বিতীয়ার্ধ বাদে সফল বলাই যায় তাকে। কিন্তু তাঁর ডিফেন্সিভ স্টাইল ব্রাজিলে প্রচুর সমালোচিত হতে থাকে। ২০১০-এ ডুঙ্গা যখন জাতীয় দলের দায়িত্ব হারান, তখন নেইমার, গানসোদের মতো নতুন মুখ উঠছে। বোর্ড ভাবলো- এবার সুন্দর ফুটবলে ফিরে যেতে হবে এই তরুণদের নিয়ে। যে ডুঙ্গাকে ২০১০ এ ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ধ্বংসের অভিযোগে বাদ দেয়া হয়েছিলো, তাকেই ৭-১ এ হারার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হলো! জার্মানির মতো পরিকল্পিত বিপ্লব তো দূরে থাক, ফেডারেশন বুঝতেই পারে না তারা আসলে কী চায়? এর প্রভাবটা সরাসরি এসে পড়ে দলের উপর।
একটি দলের সুন্দর খেলাটা আসে মূলত খেলোয়াড়দের টেলিপ্যাথিক্যাল বোঝাপড়া থেকেই, ব্রাজিলিয়ান লীগে যেটা হয় না। কীভাবেই বা হবে? ঘন ঘন কোচ বরখাস্ত হলে নতুন কোচ এলে দলের মূল একাদশও বদলে যায়, ফলে বোঝাপড়াটা হয়ে উঠে না সেভাবে। আবার একজন কোচের মাথায় যখন চাপটা থাকে যে, হারলেই তিনি বিদায়, তখন ডিফেন্সিভ প্লেয়ার খেলিয়ে হার এড়াতে চান তিনি।ফলে সেভাবে তরুণ আক্রমাণাত্মক খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে পারেন না। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে খুব আহামরি কোনো ফরোয়ার্ড ব্রাজিল ইউরোপে পাঠাতে পারেনি, অন্তত আগের মতো এত বেশী হারে তৈরি করতে পারেনি। যদিও বর্তমান উঠতি জেনারেশনটা অসম্ভব প্রতিভাবান। ব্রাজিলে গত কয়েক বছর আগেও যে হারে ডিফেন্ডার, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার উঠে আসতো, সেই হারে স্ট্রাইকার উঠত না, এখনো সেই হার খুবই কম। অনেক বিশেষজ্ঞের মতেই এর পেছনে বড় দায় ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর ‘হায়ার এন্ড ফায়ার’ পলিসি।
ব্রাজিলিয়ান লীগ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। লীগজয়ী দলের বিভিন্ন প্লেয়ারের দিকে ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের চোখ পড়ে এবং তাদের অনেকেই ক্লাব ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে চলে যায়। ফলে দল দুর্বল হয়ে পড়ে স্বভাবতই। ক্লাব কর্তৃপক্ষ ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রেই কোচকে দল গোছানোর সময় দেয় না তখন। ক্রুজেইরোকে টানা দুটো লীগ জেতানোর পর কোচ অলিভেইরা কেবল কয়েকটা ম্যাচ খারাপ করায় তাঁকে এক মাসও সময় দেয়নি ক্লাব। তিনি এভারটন রিবেইরো, গৌলারট, লুকাস সিলভাদের মতো তরুণ প্রতিভাদের তুলে আনেন। প্রায় একই সময়ে তাদের ব্রাজিলের বাইরের বিভিন্ন ক্লাব কিনে নেয়। স্বভাবতই ধুঁকতে থাকা ক্লাবকে পুনর্গঠনের জন্য এক মাস সময়ও পাননি প্রায় অসাধ্য সাধন করা কোচ। উল্টো একজন ক্লাব অফিশিয়াল সদম্ভে বলেন, “ক্লাব টানা দুটি লীগ জিতেছে কারণ আমরা কোচকে প্লেয়ার কিনে দিয়েছি, উনার এতে খুব বেশী ক্রেডিট নেই।”
মেক্সিকান সেই প্রতিবেদনের আরেকটি শিউরে উঠার মতো তথ্যও আছে। ২০০২ থকে ২০১৬ এই ১৫ বছরে ব্রাজিলের তিন জায়ান্ট ক্লাব ফ্লুমিনেন্স, ফ্লামেঙ্গো আর গ্রেমিও যথাক্রমে ৪১, ৩৮ ও ২৬ জন কোচকে বরখাস্ত করেছে! দ্বিতীয় বিভাগ বা ছোট ক্লাবগুলোর অবস্থা তাহলে ভাবুন। ব্রাজিল জাতীয় দলের ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ লুক্সেমবার্গকে তাঁর ৩১ বছরের ক্যারিয়ারে ৩৭ বার ক্লাব বদলাতে হয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্লাবে ৪ বারও গিয়েছেন। এর মানে হলো ক্লাবগুলোর বিন্দুমাত্র ‘ফুটবলিক ম্যানার’ নেই, বরখাস্ত করে একই কোচকে একাধিকবার ফিরিয়ে আনার মানে ক্লাবের কোনো ফিলসফি বা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নেই। সাম্প্রতিক সময়ে চারজন ব্রাজিল কোচ সরাসরি করিন্থিয়ান্স থেকে জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন, অন্যান্য ক্লাবের তুলনায় এই ক্লাবটি বেশ স্থিতিশীল। বর্তমান ব্রাজিল কোচ জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে ক্লাব ছাড়ার পর তাঁরই সহকারী ক্যারিল্লেকে দায়িত্ব দেয় ক্লাবটি আগের কোচের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য, যেটা ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর মধ্যে বিরল। তিনি আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন, করিন্থিয়ান্সকে নিয়ে গেছেন টেবিলের শীর্ষে এবার চলতি লীগে। এখনো শীর্ষেই আছে ক্লাব। তাঁকে ভবিষ্যৎ ব্রাজিল কোচ হিসেবে ইতিমধ্যেই ভাবা হচ্ছে। তবে এমন ঘটনা ব্রাজিলের ঘরোয়া লীগে খুঁজে পাওয়া খুব দুস্কর।
খুব বেশী না, ব্রাজিল যদি তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার দিকে তাকায়, তবে আরো পরিষ্কার ধারণা পাবে নিজেদের কোচ ঘাটতি নিয়ে। বাউজা যখন বরখাস্ত হলো, তখন আর্জেন্টিনার সামনে বহু অপশন। এটলেটিকো মাদ্রিদের সিমিওনে, সেভিয়ার সাম্পাওলি, টটেনহ্যামের পচেত্তিনো, চিলির পিজ্জি, কলম্বিয়ার পেকারম্যান, মার্সেল বিয়েলসা। হয়ত সেই সময়টায় সবাইকে পাওয়া যাচ্ছিলো না বা কয়েকজনের সাথে বোর্ডের ঝামেলা আছে। কিন্তু ফুটবলের খোঁজখবর রাখা প্রত্যেকেজানবেন তাদের সামর্থ্য। একদিন না একদিন সিমিওনে, পচেত্তিনোরা কোচ হবেনই। সে মাফিক ব্রাজিলে কোচ উঠে আসছে না। ২০১৬ সালে লাতিন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খ্যাত কোপা লিবারতাদোরেসে ক্লাবগুলোতে আর্জেন্টাইন কোচ ছিল ১৩ জন! চিলিতে আর্জেন্টাইন বিয়েলসা যে বিপ্লব আনেন, সে ধারাবাহিকতায় আরেক আর্জেন্টাইন সাম্পাওলি আর পিজ্জি দুজনেই একটি করে কোপা আমেরিকা জেতান। ফলে চিলিয়ান লীগে প্রায় ৬০ ভাগের বেশী কোচ এখন আর্জেন্টাইন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সোজা ইউরোপে। ইউরোপে সেল্টা ভিগো, আলাভেস এমন ক্লাবগুলোতে ভাল কাজ করছে এমন আর্জেন্টাইন কোচ এখন বহু, সেই অনুপাতে ব্রাজিলিয়ান কোচ নেই বললেই চলে। খেলোয়াড় তুলে আসলেও কোচ আসছেই না।
ভরসার কথা হলো বর্তমান ব্রাজিল কোচ টিটেকে যদি মাপা হয়, নিঃসন্দেহে তিনি বিশ্বের শীর্ষ দশজন কোচের একজন তাঁর ট্যাক্টিকাল আইডিয়া আর গেমরিডিং এর জন্য। ২০১২ থেকেই ব্রাজিল মিডিয়া চাইছিল টিটে কোচ হোক। তিনি স্বাধীনচেতা হওয়ায় ফেডারেশন বারবার অবজ্ঞা করে গেছে তাঁকে। তবে এবার যখন ডুঙ্গাকে বরখাস্ত করা হলো, তখন ব্রাজিল বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ার পথে। সেই অবস্থায় এই টিটেরই শরণাপন্ন হয় ফেডারেশন। টানা আট ম্যাচ জিতিয়ে বাদ পড়তে থাকা ব্রাজিলকে প্রথম দল হিসেবে কোয়ালিফাই করিয়েছেন তিনি। আশার আলো টিটে হলেও ভয়ের কথা হলো সেই মাপের কোচ আর উঠে আসছে না। আর বর্তমান যুগে কেবল প্লেয়ারদের স্কিল আর টেকনিক দিয়ে সাফল্য পাওয়ার আশা দুরাশামাত্র। ব্রাজিলকে এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে, নয়তো অদূর ভবিষ্যতে ভালো খেলোয়াড় থাকার পরেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের সোনার হরিণ অধরাই থেকে যাবে।