Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাশেজ: টেস্ট ক্রিকেটে উদ্দীপনার অন্য নাম

‘ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশ’ বলে একটা কথা আছে। আর সময়ের অববাহিকায় এই প্রেম যেন বেড়েই চলেছে দিন কে দিন। টেস্ট খেলার হাত ধরে ক্রিকেট খেলার শুরু হলেও ধীরে ধীরে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের উদ্ভাবন। আজ চার-ছক্কার দৌড়ে পাঁচদিন ধৈর্য ধরে খেলা দেখার আগ্রহ কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেটের আভিজাত্যের ছাপ এখনও সেই টেস্টেই, তা যে কোনো ক্রিকেট অনুরাগীর কাছেই সত্য।

বর্তমানে খুব কম সংখ্যক টেস্ট খেলা হতে দেখা যায়। ইদানীং যতগুলো টেস্ট ম্যাচ হয় তার মধ্যে ‘অ্যাশেজ’ সিরিজ অনেক বেশি মহার্ঘ্যপূর্ণ। সেই অনেক বছর আগে থেকে শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথে চলে আসছে এই সিরিজ।মাঝে মাঝে অবাক হতে হয় এর গোড়াপত্তনের ইতিহাস সম্পর্কে জানলে। কীভাবে শুরু হলো এই সিরিজ? কেনই বা এ ধরনের নামকরণ করা হলো এই সিরিজের? অনেকের কাছে হয়তো বিষয়টি জানা। কিন্তু যাদের কাছে অজানা, তাদেরকে জানানোর প্রয়াসে আজকের লেখা।

ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজের ট্রফি

ইংরেজি অ্যাশেজের বাংলা অর্থ হলো ‘ছাই’ বা ভস্ম। শুনতে অবাক ঠেকলেও অ্যাশেজের নামকরণের সার্থকতা কিন্তু এর প্রকৃত ইতিহাস থেকেই পাওয়া যায়। আর এই ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে আজ থেকে একশ বছরেরও আগে টেস্ট খেলার গোড়াপত্তনের সময়ে।

ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রথম টেস্টের একটি দুর্লভ চিত্র

১৮৭৭ সালের ১৫ই মার্চ। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বর্তমানে ‘টেস্ট’ নামে পরিচিত বড় ফরম্যাটে প্রথমবার মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া, যা ইতিহাসের প্রথম টেস্ট হিসেবে ধরা হয়। ঐ সময় ধরাবাধা কোনো নিয়ম না থাকার কারণে ‘যতক্ষণ বা যতসময় বা যতদিন’ খেলা যায় এমন চুক্তিতে টেস্টটি খেলতে নামে দু’দল। তবে অনির্ধারিত সময় হলেও চারদিন খেলার পর ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটে যায়। মাঝে একদিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ বিশ্রামের জন্য রাখা হয়। ইতিহাসের প্রথম এই টেস্টটি ৪৫ রানে জিতে বড় ফরম্যাটে জয়ের যাত্রা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া।

প্রথম টেস্টের অস্ট্রেলিয়া দলের খেলোয়াড়দের ছবি

ঐ অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট খেলার পর দু’দলেরই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় অনেক গুণ। সেই সুবাদে ১৮৮১ সালের মাঝমাঝি সময় চার ম্যাচের সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড। তাতেই ব্যাপকভাবে প্রসার পেয়ে যায় টেস্ট ক্রিকেট। নিজেদের মাঠে চার ম্যাচের ঐ অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৮৮২ সালে টেস্ট নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট নীতি বাদ দিয়ে তিন দিনের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই সুবাদে ইংল্যান্ডের ‘ওভালে’ ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট তিন দিনের এক ম্যাচের সিরিজ খেলতে নামে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয় সেটি।

১৮৮২ সালের ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের তৈলচিত্র

টসে জিতে প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। জবাবে ইংল্যান্ডও ব্যাট হাতে খুব একটা যে সফল হয়েছিলো তা নয়। মাত্র ৩৮ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কিছুটা ছন্দে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। এইচ এইচ মেসির একমাত্র ফিফটির উপর ভিত্তি করে দলীয় ১২২ রানে সবাই আউট হয়ে যায়। জেতার জন্য তখন ইংল্যান্ডের দরকার মাত্র ৮৫ রান। নিজের মাটিতে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের এই রান তুলতে তেমন বেগ পাওয়ার কথা নয়।

কিন্তু তা বললে তো আর হয় না। অস্ট্রেলিয়াও ছেড়ে কথা বলার পাত্র নয়। ডানহাতি ব্যাটসম্যান গ্রেসের বত্রিশ রানের উপর ভিত্তি করে সর্বসাকুল্যে ৭৭ রান পর্যন্ত করতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। ফেড্রিক স্পফোরথের বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র সাত রানের জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে স্পফোরথ ৪৪ রানের  বিনিময়ে নেন ৭ উইকেট।

ফেড্রিক স্পফোরথ এর পোট্রেট

আর এভাবেই ইংল্যান্ডের  মাটিতে হাজারো দর্শককে কাঁদিয়ে সিরিজটি জিতে নেয় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশ গণমাধ্যমে তখন ইংলিশ ক্রিকেটের উপর রোষানল ছড়িয়ে পড়ে। তখন ইংল্যান্ডের সবচাইতে জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্যা স্পোর্টিং টাইমস’ তাদের প্রতিবেদনে ইংরেজ ক্রিকেট সম্পর্কে লেখে- ইংলিশ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংলিশ ক্রিকেটকে ভস্মিভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে প্রদান করেছে।

ইংল্যান্ডের পত্রিকায় ছাপা ইংলিশ ক্রিকেট সম্পর্কে বিদ্রূপ মন্তুব্য

ঐ সফরে মেলবোর্নের কিছু নারী দর্শক ইংল্যান্ড অধিনায়ককে কিছু ছাই স্তুপাকারে প্রদান করে। পাত্রে রক্ষিত ছাই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের মৃত্যুস্বরূপ প্রতীকী অর্থে দেয়া হয়েছিল। এভাবেই বিখ্যাত অ্যাশেজ সিরিজের সূত্রপাত ঘটে যাতে কেবলমাত্র অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজই অন্তর্ভুক্ত থাকে। পরের সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। তিন ম্যাচের ঐ সিরিজটি ‘অ্যাশেজ’ নামে পরিচিত লাভ করে।

প্রথম অ্যাশেজ সিরিজের দুই অধিনায়ক

১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ লড়াই শুরু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ২-১ ব্যবধানে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে টেস্ট সিরিজটি জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় ইংলিশরা। তাই বলা যায়, ১৮৮২ সালের শেষ দিকে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যাশেজ’ সিরিজ। যে দল সিরিজ জয় করে তারা অ্যাশেজ ট্রফিটি লাভ করে। এরপর থেকে দুই দলের মধ্যকার টেস্ট সিরিজের প্রতিযোগিতাকে ঘিরে অদ্যাবধি ক্রীড়া বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহলের সৃষ্টি করে আসছে।

বর্তমান অ্যাশেজ সিরিজের ট্রফি

অ্যাশেজ পাত্রটিকে ভুলবশতঃ কেউ কেউ অ্যাশেজ সিরিজের ট্রফি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তবে এটি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয় নি। কিন্তু ইংলিশ ক্যাপ্টেন সর্বদাই এটিকে ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে বিবেচনা করতেন। প্রায়শই পাত্রের অনুলিপি বা রেপ্লিকাকে অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ের প্রতীক হিসেবে প্রদান করা হয়। কিন্তু এভাবে প্রকৃত পাত্রটিকে কখনো প্রদান কিংবা প্রদর্শন করা হয় নি। সেই ম্যাচের ক্যাপ্টেন ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রী লর্ডসে অবস্থিত এমসিসি’র যাদুঘরে প্রকৃত পাত্রটি দান করেন।

মূল অ্যাশেজের ছাই ভরা ট্রফিটি

বর্তমানে অ্যাশেজ সিরিজটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় প্রতিপক্ষ দুই দলের মধ্যে সবচাইতে বহুল আলোচিত এবং আড়ম্বরপূর্ণ ক্রিকেটীয় সিরিজ হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। বর্তমানে দ্বি-বার্ষিকাকারে পালাক্রমে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ থেকে ৩০ মাসের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অ্যাশেজ সিরিজে পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতি ম্যাচে দুই ইনিংস নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের যাবতীয় আইন-কানুন প্রতিপালন করে অনুষ্ঠিত হয়। কোনো কারণে সিরিজ ড্র হলে পূর্বেকার অ্যাশেজ বিজয়ী দলের কাছেই ট্রফিটি রক্ষিত থাকে।

২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৬৯টি ‘অ্যাশেজ’ সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। দুই দেশের এই মর্যাদাপূর্ণ লড়াইয়ে দুটি দেশই সমান সংখ্যকবার অর্থাৎ ৩২ বার করে সিরিজ জিতে নেয়। পাঁচটি সিরিজ অমীমাংসিত থাকে। তাই আসন্ন ২০১৭-১৮ সালের অ্যাশেজ সিরিজ জিতে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য থাকবে দুটি দলেরই।

ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সেই অনেক বছর আগে থেকেই নিজেদের মধ্যে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে আসছে। তখন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের এত আধিক্য ছিল না। কী করেই বা থাকবে? এ্কে যে সাহেবি খেলা বলে আখ্যায়িত করা হতো! কিন্তু কালের বিবর্তনে ইংল্যান্ডের সাড়া পৃথিবীজুড়ে ক্ষমতার আধিপত্য কমতে থাকে। পাশাপাশি খেলার প্রসারের স্বার্থে অনেক দেশ ধীরে ধীরে এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে থাকে। বর্তমানে দশটি টেস্ট খেলুড়ে দলের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যাশেজের মতো এতো মর্যাদাপূর্ণ এবং ইতিহাস সম্বলিত সিরিজ কোনোটি আছে কিনা তা প্রশ্নাতীত।

 

This article is in Bangla language. It's about the oldest cricketing contest 'Ashes'.

References:

1. espncricinfo.com/the-ashes-2013/content/story/259985.html
2. en.wikipedia.org/wiki/The_Ashes_urn
3. espncricinfo.com/ci/engine/current/match/62406.html
4. en.wikipedia.org/wiki/The_Ashes

Featured Image: cricketconclusiveblog.wordpress.com

Related Articles