বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২ জুন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অর্থাৎ, অনেকটা চোখের পলক ফেলার মতোই। ঠিক এমন সময়েই একসাথে অনেকগুলো ইনজুরির খবর চাপে রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। সর্বশেষ সংযুক্তি দলের তারকা ওপেনার তামিম ইকবাল। যদিও তার পিছনে লাইনটা বেশ লম্বা। বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ও অভিজ্ঞ দল নিয়ে যখন বাংলাদেশ দল ভালো কিছুর স্বপ্নে বিভোর, ঠিক তখনই এমন দুঃসংবাদ কোটি সমর্থক তো বটেই, কখনও কখনও দলের সতীর্থদের আত্মবিশ্বাসেও চিড় ধরিয়ে দেয়। এই মুহূর্তে দলে তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিভিন্ন মাত্রার ইনজুরিতে ভুগছেন। রুবেল হোসেন ও সাকিব আল হাসানকে নিয়েও রয়েছে ইনজুরির অশনি সঙ্কেত।
এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে আছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডে প্রায় ‘ইংলিশ’ কন্ডিশনে আইরিশ ও উইন্ডিজের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ মিশন। সেখানে দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারতে হয়েছে। তবে ফলাফল যা-ই হোক, মাঠে নিজেদের প্রস্তুতিটা ঠিকঠাক করার চেষ্টা ছিল মাশরাফিবাহিনীর মধ্যে। এবার যখন মূল ম্যাচের রণপরিকল্পনা নিয়ে কাটাছেঁড়া, তখনই একমুঠো দুঃসংবাদ মন খারাপ করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ শিবিরের।
তামিম ইকবাল
দলের ইনজুরিগ্রস্থ ক্রিকেটারের তালিকায় নতুন সংযুক্তি তামিম। উরুর মাসলে ব্যথার কারণে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামেননি। শুক্রবার তার নেটে ফেরা দেখে নির্ভার হচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি, মিনিট ২৫ ব্যাট করার পর কব্জিতে চোট পেলেন। ফলাফল, মাঠ ছেড়ে বের হয়ে আসতে হয়েছে তাকে। যত দ্রুত পারা যায় তামিমের হাতে এক্স-রে করার কথা জানিয়েছেন দলের ফিজিও থিয়ান চন্দ্রমোহন। সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তামিমের দলে থাকা নিয়েই এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
লন্ডনে তামিমের ইনজুরি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন,
‘তামিমকে নিয়ে এখনই মন্তব্য করাটা খুব দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আগে তার হাতে এক্স-রে করাবো, দেখবো সেখানে কোনো ফ্র্যাকচার আছে কি না। যদি থাকে, তাহলে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামানো হবে না। যদি তা না হয় তাহলে আমরা আশা করছি, দলের উদ্বোধনী ম্যাচে সে থাকছে।’
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন
ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে পিঠে ব্যথা পেয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। যদিও তিনি দ্রুত সেরে ওঠার চেষ্টা করছেন, কিন্তু শুক্রবারেও ব্যথা নিয়ে তার অবস্থা বিশেষ সুবিধার ছিল না।
বিরাট কোহলিদের বিপক্ষে ২৭ রানে ১ উইকেট, ব্যাট হাতে ১৮ রান করা সাইফকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মূল একাদশে দেখতে চাইছেন নির্বাচকরা। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে নিজেও দারুণ উচ্ছ্বসিত তরুণ এই ক্রিকেটার। কিন্তু পিঠের ব্যথা বদলে দিয়েছে পুরো পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্তারা জানাচ্ছেন, ২ জুন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে সাইফের অন্তর্ভুক্তি একরকম নিশ্চিত। পিঠের ব্যথা থেকে বাঁচতে ব্যথানাশক ওষুধ নেবেন তিনি।
এর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে চোট পাওয়ার পরপরই তার পিঠে এমআরআই করানো হয়। সাইফ প্রসঙ্গে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন,
‘আমরা সাইফউদ্দিনকে প্রথম ম্যাচে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। যদিও এখনও তার খানিকটা ব্যথা আছে, তারপরও আমরা মনে করি সে খেলতে পারবে। সম্ভবত তার পেইনকিলার ইঞ্জেকশন নিতে হতে পারে। এর আগে সে এই ধরণের ইঞ্জেকশন নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
মাশরাফি বিন মুর্তজা
ইনজুরি নিয়ে মাশরাফি বরাবরই বিশেষ সতর্ক। সেটাও আবার যখন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ; তখন সতর্কতাটা আরও বেশি হবে, তা স্বাভাবিক। তারপরও চোট থেকে বাঁচতে পারেননি দলের এই অধিনায়ক। তিনি আরও আগেই সেই আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে গিয়ে ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট পেয়েছেন। ইংল্যান্ডেও সেই চোটই ভোগাচ্ছে তাকে। তামিমের মতো মাশরাফিরও ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। এবার জুড়েছে বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। সেটা ভারতের বিপক্ষে খেলতে খেলতেই। এ কারণেই ইনিংসের মাঝখানে ফিল্ডিং থেকে উঠে যান তিনি। এমনকি ব্যাটও করেননি।
তামিমের বাঁ হাতের কব্জিতে চোট পাওয়ার দিন শুক্রবারও মাশরাফি হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণেই অনুশীলনে নামেননি। তাকে নিয়ে খালেদ মাহমুদ বলেন,
‘মাশরাফির চোট খুব গুরুতর নয়। আশা করছি, খানিকটা পরিচর্যা ও চিকিৎসা পেলেই শতভাগ ঠিক হয়ে যাবে।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
কাঁধের মাংসপেশীতে গ্রেড থ্রি ল্যাব্রাম টিয়ার। ঠিক এই ধরণের ইনজুরির কারণেই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে। এমন চোটে অস্ত্রোপচারই মোক্ষম অস্ত্র। কিন্তু বিশ্বকাপের কারণে সে উপায় নেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ১৫ দিনের বিশ্রামও দেওয়া হয়েছিল তাকে। আবার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এক সপ্তাহ পার হতে না হতেই শুরু করেছিলেন ব্যাটিং।
মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তাই দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ত্রিদেশীয় সিরিজে তার হাতে বলই দেওয়া হয়নি শুধু শঙ্কার কারণে, পাছে আবার বিশ্বকাপে কোনো সমস্যা হয়! বিশ্বকাপেও এই ইনজুরি তাকে ভোগাতে পারে। এরই মধ্যে অবশ্য হালকা মেজাজে বোলিং শুরু করেছেন। ভারতের বিপক্ষে প্রস্ততি ম্যাচের আগে অনুশীলনে ৩ ওভার বোলিং করার পর নিশ্চিন্ত ছিলেন। তখনই বলেছিলেন, দলের প্রয়োজনে ভারতের বিপক্ষে ২-৩ ওভার বল তিনি করতেই পারবেন। কিন্তু সেই ঝুঁকি নেয়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। বলা যায়, ইনজুরির কারণে অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ নয়, বরং ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহকে পাচ্ছে দল।
সবকিছু মিলিয়ে দল চাইছে মূল ম্যাচে পুরোপুরি ফিট একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।
মুস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও ইনজুরিগ্রস্থ, কাফ চোট নিয়েই খেলে যাচ্ছেন সমানে। ত্রিদেশীয় সিরিজের পর মাঝের ছুটিতে বিশ্রামে ছিলেন। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ফিরেছেন বোলিংয়ে। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, বিশ্বকাপে তার ইনজুরিটা দলকে খুব একটা ভোগাবে না। তারপরও, শঙ্কা থাকবেই। বিশেষ করে দলের এতগুলো ক্রিকেটার যখন ইনজুরি সমস্যায় ভুগছে, তখন টিম ম্যানেজমেন্টও চাইবে মুস্তাফিজকে নিয়ে বাড়তি সতর্কতায় থাকতে।
এ কথা না বললেই নয় যে, ইনজুরি কাটিয়ে মুস্তাফিজের ফেরাটা বেশ রয়েসয়েই হচ্ছে। ত্রিদেশীয় সিরিজে ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজ ভারতের বিপক্ষে ৪৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। বলা হচ্ছে, এখনও নিজের শতভাগ দিয়ে বোলিং করছেন না মুস্তাফিজ, সেটা ইনজুরির ভয়েই। তারপরও ক্রমশ ফিরছেন নিজের শক্তির জায়গা কাটার দিয়ে।
সাকিব আল হাসান ও রুবেল হোসেন
দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব ও ফাস্ট বোলার রুবেল হোসেনও ইনজুরিতে। যদিও তাদের ইনজুরি অন্যান্যদের মতো গুরুতর নয়, তারপরও ইনজুরির প্রশ্নে ইনজুরিই মূল কথা। সাকিবের পুরনো আঙ্গুলের চোটের সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজে যোগ হয়েছে পিঠের ব্যথা। অন্যদিকে, রুবেলের বুড়ো আঙ্গুলের আঘাত।