সাব্বির রহমান রুম্মন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক আফসোসের নাম। একেবারে শুরু থেকে তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যত তারকা বলে বিবেচিত। সেভাবে শুরুও করেছিলেন জাতীয় দলে। কিন্তু একটার পর একটা মাঠের বাইরের ঘটনা তাকে বিকশিত হতে দিচ্ছে না।
সর্বশেষ এক ঘটনায় এখন ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করছেন। তারপরও হাল ছাড়ছেন না এই তরুণ। বলছেন, নিজেকে সংশোধন করে যত দ্রুত সম্ভব আবার রানে ফিরতে চান। আতিফ আজমের সাথে ক্রিকবাজ-এর এক সাক্ষাৎকারে এই নিষেধাজ্ঞার সময় ও নিজের ভুল-ত্রুটি নিয়ে কথা বলেছেন সাব্বির রহমান। তার বাংলা ভাষান্তর তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার সময়টা কীভাবে কাটছে আপনার?
আমি আগে যেভাবে চলতাম, এখনো সেভাবেই চলছি। নিয়মিত নিজের অনুশীলন করছি এবং বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে কাজ করছি। নিয়মিত জিম করছি। দৌড়কে একটু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, এটা সহনশীলতা বাড়াতে বড় একটা ভূমিকা রাখবে। আমাকে বলা হয়েছে, আমি বিসিবির মালিকানার কোনো অবকাঠামো বা কিছু ব্যবহার করতে পারবো না। এজন্য আমি মিরপুরে অনুশীলন করতে পারছি না। ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন করছি মোহাম্মদপুরের একটা মাঠে। সেই এলাকাতেই একটা জিমে যাচ্ছি। মোহাম্মদপুরের রেসিডেনশিয়াল স্কুলের মাঠে দৌড়ের সেশন করছি এবং সেখানেই ফুটবল খেলছি। আগে যেমন অনুশীলন করতাম, এখনো সেভাবেই করে যাচ্ছি।
আপনার তো ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অনুমতি আছে। সেক্ষেত্রে কোনো লক্ষ্য কি ঠিক করেছেন?
আমাদের প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট, জাতীয় ক্রিকেট লিগ সম্ভবত আগামী অক্টোবরের ৪ তারিখ থেকে শুরু হবে। আপাতত আমি সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছি। আসলে কত রান করতে পারবো, সেটা তো আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব না। এটা অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আমি যেরকম পরিশ্রম করছি, সেরকমই ফলাফল পাবো, এটা বলা যায়।
আমি কোনোকিছুর নিশ্চয়তা দিতে পারি না, তবে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো ব্যাটিং ও ভালো বোলিং করার জন্য তৈরি আছি। আমি রান করার চেষ্টা করবো। এর আগে অনেকবার নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এবার এই লিগে আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।
আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট রানসংখ্যা বা এরকম কিছু ঠিক করেছেন?
আগে একসময় এরকমটা করেছি। বলতাম, ‘আমি এবার প্রিমিয়ার লিগে বা জাতীয় লিগে বা কোনো নির্দিষ্ট সিরিজে এই পরিমাণে রান করতে চাই।’ কিন্তু তাতে কখনো সফল হইনি। আমার মনে হয়, এটা করতে গিয়ে নিজের ওপর বাড়তি চাপ নিয়ে ফেলি। আমি ম্যাচ-বাই-ম্যাচ খেলতে চাই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে শেষবার (শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে) আমি ভালো স্কোর করেছি। সেখান থেকে আমার বেশ আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীড়ে আমি এই ব্যাপারগুলো বুঝতে শিখেছি। সে অনুযায়ীই এখন আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি।
আপনার কি মনে হয় না, আপনার নিজের মেজাজের উপর একটু নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার? কারণ, এর জন্য আপনি বারবার বিপদে পড়ছেন।
আসলে রাগ হয়ে যাওয়াটা এখানে খুব বড় ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেরই তো রাগ আছে। সম্ভবত, আমি আমার মনের কথা নিজের ভেতরে লুকিয়ে রাখার বদলে বেশি বলে ফেলি। অনেক মানুষ এটা পছন্দ করে না। লোকে ভাবে, এটা আমার অহংকার বা আমি একটু বেশি গর্ব করছি। কিন্তু দেখুন, আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, আমি একটা খ্যাপা মানুষ, আমি আসলে সেরকম নই। রেগে যাওয়াটা অবশ্যই ভালো কোনো গুণ নয় কিন্তু কখনো কখনো আসলে রেগে না গিয়ে থাকা যায় না।
আমি নিজেকে আরো ভালো করার চেষ্টা করছি। আর আপনি যদি সত্যিই জানতে চান, তাহলে আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ (অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট) নিয়ে কাজ করছি। যাতে অন্তত কেউ আমাকে গালি দিলেও আমি তার সাথে ভদ্রভাবে ব্যবহার করতে পারি। আমি অনেক কিছু শিখছি।
আপনার কি এখন এসব নিয়ে কারো উপর ক্ষোভ আছে?
না। আগে কারো সাথে কিছু হয়ে থাকলেও সেসব নিয়ে কারো উপর কোনো ক্ষোভ নেই। কখনো কারো ক্ষতি করিনি। সবকিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। তবে সত্যি বলি, আমি যে এসব ঝামেলায় পড়ছি, সেজন্য কিছু ব্যাপার নিয়ে আমার আফসোস আছে। আমি এখন মনোযোগ দিচ্ছি যাতে এ ধরনের ভুলগুলো আগামী দিনগুলোতে আর না করি।
আপনার যে প্রতিভা আছে। তাতে কি আপনার মনে হয়, আপনি প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন?
গত চার বছরে আমি ৫০টির কাছাকাছি ম্যাচ খেলেছি কিন্তু আমার নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটিং পজিশন নেই। তিন নম্বরে সবচেয়ে বেশি রান করেছি। একজন খেলোয়াড় যদি আগে আগে উইকেটে যায় এবং শেষ অবধি ব্যাট করে, সে অবশ্যই বেশি রান করবে।
আমি কয়েকটা ফিফটি বা সেঞ্চুরি মিস করেছি দলের প্রয়োজনে শট খেলতে গিয়ে। আমি সবসময় দলের জন্য খেলতে পছন্দ করি। সবাই দলের জন্য খেলে। গত দুই সিরিজে আমি মাত্র কয়েকটা বল সামলানোর সুযোগ পেয়েছি। আপনি আশা করতে পারেন না যে, শেষ ২০ বলে আমি ৪০-৫০ রান করে ফেলতে পারবো। এর মধ্যে অনেক ইনিংস আছে, যেখানে আমাকে দোষ দেওয়া হয়েছে যে, আমি আমার উইকেট খুব সহজে বিলিয়ে দিয়ে এসেছি। আমি সেসব ইনিংস নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। ঠিক কোথায় আমি ভুল করেছি তা খুঁজছি এবং সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করছি। আমি এরপর যখনই সুযোগ পাবো অবশ্যই দলের জন্য এবং নিজের জন্য আরো রান করার চেষ্টা করবো। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, সেটা আমি করতে পারবো।
এরকম বড় সুযোগ হারানোর একটা বড় উদাহরণ হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। আপনি ভালো সুযোগ নষ্ট করেছিলেন…
হ্যাঁ, ওটা খুব বড় একটা সুযোগ ছিল। আমার জন্য আসলে প্রতিটা ম্যাচই একেকটা সুযোগ। কেউই আসলে আউট হতে চায় না। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমি আমার উইকেট হারিয়েছিলাম। আমি ওই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি। আসলে প্রতিদিন তো পরিস্থিতি আমার পক্ষে থাকবে না।
আপনি পরিষ্কারভাবেই টপ অর্ডারে ব্যাট করতে পছন্দ করেন। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট চায় আপনি ৭ নম্বরের জায়গাটার দাবি পূরণ করেন। এই ভূমিকায় কতটা মানিয়ে নিতে পারছেন?
(সীমিত ওভারের ক্রিকেটে) ফিনিশিংয়ের কাজটা আমার জন্য খুব একটা চাপের বিষয় নয়। কারণ আমি বল মারতে পছন্দ করি। এতে আমি বেশ খোলা মনে খেলতে পারি। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাটা আমার শক্তি। সেটা যে ফরম্যাটেই হোক না কেন। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যেখানেই ব্যাট করাতে চায়, আমি সবসময় আমার শতভাগ দিতে প্রস্তুত থাকি।
আপনার কি মনে হয় যে, ভালো ব্যাটসম্যান হতে গিয়ে আপনাকে নিজের অলরাউন্ডার সত্ত্বা থেকে কিছুটা বিসর্জন দিতে হচ্ছে?
আমি একজন বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। ব্যাটিং তখন আমার দ্বিতীয় পছন্দ ছিল। কিন্তু পরে ব্যাটসম্যানই হয়ে গেছি। আমাদের দলে এখন এত বোলার আছে যে, আমাকে আসলে খুব একটা বল করতে হয় না। তবে আমি সবসময় বল করার জন্য প্রস্তুত থাকি। আমি অনুশীলনে বোলিং করি। সেখানে উন্নতি করার চেষ্টা করি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুশীলন ম্যাচে আমি পুরো ১০ ওভার বল করেছি।
এই কঠিন সময়ে নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখেন কীভাবে?
আমার বাবা-মা ও আমার পরিবার আমাকে এই সময়ে খুব সমর্থন দিচ্ছেন। তারা আমাকে অনুপ্রাণিত করছেন।
ফিচার ছবি- AFP