সদ্যই বাংলাদেশ দলের সাথে যোগ দিয়েছেন ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস। শুরুতেই দলের টেস্ট ব্যর্থতা দেখলেও এরপর দেখেছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। এই দুটি সিরিজ জয় নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত এই কোচ। তবে এই গর্ব নিয়ে বসে থাকার লোক নন তিনি। এরই মধ্যে ‘এ’ দলের খেলা দেখতে ছুটেছেন আয়ারল্যান্ডে।
এই ক’দিনে বাংলাদেশ দলকে দেখার অভিজ্ঞতা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, ‘এ’ দলকে দেখতে যাওয়া এবং নিজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন কোচ স্টিভ রোডস।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথে এখন অবধি অভিজ্ঞতাটা কেমন হল?
এখন অবধি ভালো। আমাদের কিছু উত্থান-পতন গেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে ক্যারিয়ানে আমাদের ছেলেরা ভালো পারফরম করেছে। বিশেষ করে টেস্টে ব্যর্থতার পর তারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে যেভাবে ফিরে এসেছে, সেটা দারুণ ছিল। সত্যি কথা বলি, এরকম ঘুরে দাড়ানোর জন্য আমাদের অসাধারণ দৃঢ়তা দেখানোর প্রয়োজন ছিল।
আপনি কী মনে করেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা ওখানে পৌঁছানোর পর সবকিছু বদলে গেছে?
আপনি যখন বাংলাদেশ দলের দিকে তাকাবেন, তখন দেখতে পাবেন মাশরাফি অসাধারণ একজন অধিনায়ক। সে উদাহরণ তৈরি করে নেতৃত্ব দেয়। সে একজন যোদ্ধার মতো অধিনায়ক। আর দলের সবাইকে অনুসরণ করতে চায়।
সাকিব আল হাসানের ব্যাপারে কী বলবেন?
সাকিবকে আমরা টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে পাচ্ছি। কৌশলগত দিক থেকে সে অসাধারণ একজন অধিনায়ক। সে যেভাবে ক্রিকেটটা খেলে, দলের সবাই ওকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু ওর ক্রিকেট মস্তিষ্ক, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে, বিষ্ময়কর। এর একটা বড় কারণ হল সে বিশ্বজুড়ে অনেক ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে বেড়ায়। সে যেমন অনেক খেলোয়াড়কে চেনে, তেমনই এই খেলাটা বোঝে। আমরা খুব সৌভাগ্যবান যে, আমরা এরকম দু জন অধিনায়ক পেয়েছি।
আপনার কী মনে হয়, সাকিব টেস্টের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে বেশি যোগ্য বলে নিজেকে প্রমাণ করেছে?
ক্রিকেট অনেকটাই নির্দিষ্ট মুহুর্তের পরিস্থিতির খেলা। যখন দলের সেই পরিস্থিতি নিচের দিকে থাকে, তখন বিশ্বের সেরা অধিনায়কের পক্ষেও ঘুড়ে দাড়ানো কঠিন। আমরা যখন প্রথম টেস্টে টসে হারলাম এবং ৪৪ রানে অলআউট হলাম, এর মানে মোমেন্টাম পুরোপুরি আমাদের বিপক্ষে চলে গেল। যেমনটা আগে বলেছি, এখান থেকে বিশ্বের সেরা অধিনায়কও ঘুরে দাড় করাতে পারত না দলকে। আমি মনে করি না, এর জন্য সাকিবের অধিনায়কত্বের কোনো দায় আছে। সে চমৎকার একজন অধিনায়ক। আমরা যদি ওই টেস্টে টসে জিততাম, যদি ভালো একটা শুরু পেতাম, তাহলে হয়তো পুরো ব্যাপারটা অন্যরকম হতো। সে (সাকিব) একজন খুবই মানসম্পন্ন অধিনায়ক, মানসম্পন্ন ক্রিকেটার; মাশরাফিও তাই। ফলে বাংলাদেশের খুব কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে, তারা খুব ভালো দু জন অধিনায়ক পেয়েছে।
দুই অধিনায়কের বোলিং পরিবর্তন বা মাঠে আচরণে কোনো বিশেষ পার্থক্য দেখেন?
আমি সেভাবে দেখছি না। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দুই অধিনায়কই তাদের বোলারদের দারুণভাবে ব্যবহার করেছে। মাশরাফি ও সাকিব, দুইজনই বোলারদের ভালো পারফরম্যান্সটা বের করে নিয়েছে। আমাদের কিছু খুব ভালো স্পিন বোলার আছে এবং ভালো পেস বোলিংও ছিল, যা আমাদের উইন্ডিজ থেকে ভালো ফলাফল করতে সাহায্য করেছে। আমাদের যথেষ্ট বোলার রয়েছে। তবে টেস্ট ম্যাচের জন্য আমাদের কয়েকজন দ্রুত ও দীর্ঘদেহী বোলার খুঁজে বের করতে হবে, যারা উইকেটে জোরে আঘাত করে সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে… যেমনটা উইন্ডিজ বোলাররা করে দেখিয়েছে।
টেস্ট সিরিজটা তো আপনার জন্য বড় একটা ধাক্কা ছিল…
টেস্ট সিরিজটা আমাদের জন্য সহজ ছিল না। আমরা টেস্টের পারফরম্যান্সে যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছি। তবে খুবই গর্ববোধ করছি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পেরে। ওয়ানডে সিরিজ জয় করার প্রত্যাশা আমাদের ছিল, আমরা সেটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করা অবাক করার মতো ছিল। আমরা আসলেই দারুণ খেলেছি শেষ দুই ম্যাচে। খুবই খুশি দুটি সিরিজ জয় করতে পেরেছি। লিটন দাসের ওপর খুবই সন্তুষ্ট, সে শেষ ম্যাচে দারুণ খেলেছে।
টেস্টের ব্যাটিং নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
দেখুন, টেস্ট ম্যাচে আমাদের ব্যাটিং সামর্থ্য কেমন তা খোলাসা হয়েছে। আমাদের এখানে উন্নতি করার জায়গা আছে। আমাদের যোগ্য প্লেয়ার আছে। তবে আমাদের কন্ডিশনের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে ও প্রতিপক্ষ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখতে হবে; বিশেষ করে যখন আমরা দেশের বাইরে খেলব তখন।
টেস্টে এত খারাপ ফলাফল আশা করেছিলেন?
প্রথম টেস্টে টস হারাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। উইকেটে একইসাথে সিম, সুইং ও বাউন্স করেছে। তাদের ডিউক ক্রিকেট বল একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। গ্যাব্রিয়েল, রোচ, হোল্ডার ও কামিন্সদের নিয়ে গড়া উইন্ডিজ বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে বিশ্বের বেশিরভাগ ব্যাটিং লাইন আপকে এমন কন্ডিশনে ধুঁকতে হতো।
আপনার আয়ারল্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশ্যটা কী?
এটা একটা দারুণ ব্যাপার ছিল যে, আমি টেস্ট দল, ওয়ানডে দল ও টি-টোয়েন্টি দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দেখতে পেরেছি। এখন আমাকে অন্তত ২০-২২ জন খেলোয়াড়কে কাছ থেকে দেখতে হবে। আমি যখন আয়ারল্যান্ডে যাব, ওখানে কিছু খেলোয়াড়ের সাথে দেখা হবে, যাদের আমি আগেই দেখে ফেলেছি। এর বাইরে আমি আমাদের পরের ধাপের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখতে চাই। এরই মধ্যে কয়েক জনকে দেখেছি। আশা করছি, আয়ারল্যান্ডে আরো কিছু খেলোয়াড়কে আমি পর্যবেক্ষণ করতে পারব। আমি ‘এ’ দলের কোচ সাইমন হেলমুটের সাথে কিছু সময় কাটাতে চাই। কারণ, আমরা বাংলাদেশ দলের গভীরতা যদি আরো বাড়াতে চাই, আমাদের ‘এ’ দলকে তাহলে ভালো করতে হবে। আর এখন অবধি তারা ভালোই করছে। আমি তাদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। এখন মুখিয়ে আছি ওদের সাথে দেখা করতে এবং ওদের খেলতে দেখতে।
মুমিনুল হক ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ১৮২ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন। তাকে কি আপনারা জাতীয় দলের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য বিবেচনা করবেন?
মুমিনুল অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছে। আমার ধারণা এটা তার নিজের জন্য এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটা ভালো খবর। কারণ সে একজন মানসম্পন্ন ক্রিকেটার। সে প্রমাণ করেছে, সে একদিনের ক্রিকেটটা ভালো খেলতে পারে। এটা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ভালো খবর।
লিটন দাস কি ওয়ানডেতে তামিমের সাথে ইনিংস শুরু করার সুযোগ পেতে পারে?
সে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পুরো সফর জুড়েই ভালো খেলেছে। কিন্তু কিছু কিছু খেলায় ভালো শুরু পাওয়ার পরও ইনিংসটা বড় করতে পারেনি। ওকে শেষ টি-টোয়েন্টিতে ওভাবে খেলতে দেখাটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ, ইনিংসটা আসলেই দরকার ছিল। যখন দরকার, তখন সে শক্তিশালী একটা ক্রিকেট খেলেছে। তার খেলার ওপর নিয়ন্ত্রণ অসাধারণ ছিল। সে প্রমাণ করেছে, সে আসলেই বড় মঞ্চে, বড় খেলায় পারফর্ম করাটা উপভোগ করে। ওরকম একটা ম্যাচে পারফর্ম করা, ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার পাওয়া তার জন্য এবং বাংলাদেশের জন্য দারুণ ব্যাপার। ফলে আশা করি, এটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো একটা লক্ষণ।
বাংলাদেশ ওখানে দুটো সিরিজ জিতে এসেছে, এটা কীভাবে দেখছেন?
আমি মনে করি এটা (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জয়) অবশ্যই আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে। জয়ের চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। এর আগেও ওয়ানডেতে আমরা ভালো খেলেছি। সুতরাং আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই এশিয়া কাপে যাব। তবে আমরা খুব বেশি চিন্তা করতে চাই না। আমরা খুব সহজেই ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ তে জিততে পারতাম, সেই দিক থেকে খুবই সন্তুষ্ট।
ফিচার ছবি- latestbdnews.com