Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আশরাফুলের ভাবনায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ

বাংলাদেশের ক্রিকেট কখনোই বিস্মৃত হতে পারবে না মোহাম্মদ আশরাফুলকে। ইতিবাচক-নেতিবাচক দুইদিক থেকেই দেশের ক্রিকেটে আলোচনার সর্বোচ্চ তরঙ্গে অবস্থান করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের প্রথম সুপারস্টার তিনি। তার ব্যাটের মাধ্যমেই স্বপ্ন দেখতো বাংলাদেশের অগুণতি ক্রিকেটপ্রেমী। বাঘা বাঘা প্রতিপক্ষকে দৃষ্টিসীমায় নামিয়ে আনার বীরত্ব দেখাতে পারতো শুধু তার ব্যাট। আবার সিংহভাগ সময়েই হতাশার সাগরে ফেলেছেন ভক্তদের।

ফিক্সিং-কাণ্ডে জড়িয়ে নিজের ক্যারিয়ারের সব অর্জনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন আশরাফুল। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন নিষিদ্ধ হয়ে। নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপ কাটিয়ে ক্রিকেট ফিরে স্বাভাবিক জীবনই কাটাচ্ছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন নিয়মিত, তবে আগের মতো রানের জোয়ার নেই তার ব্যাটে।

দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক। বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে ২৪.৯১ গড়ে ২৯৯ রান করেছেন তিনি, সর্বোচ্চ ৮৭ রান। ১৭৭ ওয়ানডে, ৬১ টেস্ট ও ২৩ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন আশরাফুল। ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার এখন দেশের অন্যতম ক্রিকেটবিশ্লেষকও বটে।

আশরাফুল এখন নিয়মিত ক্রীড়াবিশ্লেষকও; Image Credit: Dhaka Tribune

বিশ্বকাপ মিশনে ইংল্যান্ড গিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। একই সময়ে ইংল্যান্ডে অবস্থান করবেন আশরাফুলও। কেন্ট ক্রিকেট লিগে ব্ল্যাক হিথ ক্লাবের হয়ে খেলবেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। এবার দর্শকের ভূমিকায় সাবেক সতীর্থদের খেলা দেখবেন আশরাফুল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল, বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্র।

বিশ্বকাপকেন্দ্রিক আলোচনায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন নিয়ে আশরাফুলও নিজের মূল্যায়ন জানিয়েছেন। তার চোখে, সেরা দল গঠন করা হয়েছে; তারপরও সেমিফাইনালে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের বিশ্বকাপ ভাবনা সম্পর্কে সবিস্তারে বলেছেন।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল কেমন?

এটা নিয়ে আমরা ছয় নম্বর বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। বিশ্বকাপের হিসেবে আমি বলব যে, সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল। পাঁচজন ক্রিকেটার আছেন, যারা ১২ বছরের ওপরে খেলছেন। যেহেতু এবারের ফরম্যাট একটু ভিন্ন, শেষ তিনটা বিশ্বকাপে কিন্তু সফল, আমরা তিনটা করে জয় পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার যদি সেমিফাইনালে যেতে হয়, আমাদের কমপক্ষে ৫-৬টা ম্যাচ জিততে হবে। ওইদিক থেকে চিন্তা করলে অভিজ্ঞ দল, কিন্তু সেমিফাইনাল খেলা একটু কঠিন হয়ে যাবে। কন্ডিশন বিবেচনা করলে আমাদের বেশিরভাগ বোলাররা কিন্তু একটু ইনজুরি সমস্যায় আছে। যেই ধরনের উইকেটে খেলা হবে, সেখানে আসলে ভালো বোলিং না করলে ম্যাচ জেতা কঠিন হবে। টিম হিসেবে বেস্ট টিম, তবে ফলাফল গত তিন বিশ্বকাপের মতোন হওয়া কঠিন হবে।

দলটার ঘাটতি-শক্তি

আশরাফুলের মতে, ব্যাটিংই দলের মূল শক্তি; Image Credit: ESPNcricinfo

আমাদের সুবিধা আমি মনে করি ব্যাটসম্যানরা। মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ – ওরা কিন্তু এটা নিয়ে চারটা বিশ্বকাপ খেলবে, এবং ওরা কিন্তু সেরা সময়ে আছে। এই একটা সুবিধা। ওরা যদি সেরাটা দিতে পারে, কারণ ওদের দিনে একাই ম্যাচ জেতাতে পারে ওরা। ওরা যদি সেরাটা দিতে পারে বিভিন্ন দিনে এবং বাকিরা যদি অবদান রাখে, তাহলে আমি মনে করি যে কোনো দলের বিপক্ষে আমরা জিততে পারব। আর বোলিংয়ে কিন্তু নিউ জিল্যান্ডে আমাদের বোলাররা অতটা ভালো করতে পারেনি।

সম্প্রতি ইনজুরির কারণে সবাই শতভাগ ফিট না। এদিক দিয়ে যদি একটু কাটিয়ে উঠতে পারি, বোলিং ইউনিটটা যদি একসাথে ভালো করে, মাশরাফির নেতৃত্বটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে এখানে। সে যদি বোলারদের নিয়ে সুন্দরভাবে সামলাতে পারে, ম্যাচ বাই ম্যাচ। আমরা যেমন শুরুর দিকে নিউ জিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে খেলব, সেখানে আমার মনে হয় স্পিন নিয়ে অ্যাটাক করা উচিত। কারণ পেস আক্রমণ নিয়ে ওদের সাথে অতটা ভয়ঙ্কর হবে না, যতটা স্পিনে হবে। প্রতিটা ম্যাচ বাই ম্যাচ যদি খেলি, তাহলে ভালো করা সম্ভব। তবে কঠিন হবে।

সেমির টার্গেট পূরণে করণীয়

যদি সেমিফাইনাল খেলতে হয়, তাহলে সবাই আমরা ধরে নিচ্ছি যে, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউ জিল্যান্ড এবং সাউথ আফ্রিকা থেকে একটা টিম হয়তো আমাদের হারাতে হবে। সবগুলো টিমের সাথেই আমাদের জেতা সম্ভব। কিন্তু কন্ডিশন অনুযায়ী একটু কঠিন হবে।

তিনশ’র বেশি রানের ধাক্কা

আমরা অতীতে করি নাই, কিন্তু আমাদের সামর্থ্য আছে। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ অনেক অভিজ্ঞ। তামিম গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অসাধারণ খেলেছে। মুশফিক অসাধারণ খেলেছে। গত বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ অসাধারণ খেলেছে। তার মধ্যে লিটন, সাব্বির, সৌম্য, ওরাও আসছে। যেই ধরনের উইকেট থাকবে, আমার মনে হয় ৩০০ করা সম্ভব, প্রতি ম্যাচেই সম্ভব। কয়েকটা টিমের সাথে কঠিন হবে, তবে বেশিরভাগ টিমের সাথে সম্ভব।

বোলিংয়ের পরীক্ষা ও মাশরাফির নেতৃত্ব

মাশরাফির নেতৃত্বই হয়তো হয়ে উঠতে পারে এক্স ফ্যাক্টর; Image Credit: Getty Images

যেই ধরনের উইকেটে খেলা হবে এবং আমাদের বোলারদের যেই গতি, এই জায়গায় মনে হয় আমরা একটু পিছিয়ে থাকব। আমাদের বেশিরভাগ বোলারই, শুধু রুবেল ১৪০ গতিতে বল করতে পারে, বাকিরা ১৩০-১৩৫ এইরকম। তারপরও দেড় মাস সময় আছে। আমাদের একটা সুবিধা থাকবে যে, মাশরাফি অধিনায়ক। কারণ সে সেরা অধিনায়ক। ভালো একটা নেতা থাকলে এইসব ছোটখাটো জিনিসগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে। সিনিয়ররা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এবং জুনিয়ররা যদি ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারে, তাহলে ভালো কিছু আশা করতে পারি। কিন্তু ম্যাচ-বাই-ম্যাচ চিন্তা করলে একটু কঠিন। ওই ধরনের কন্ডিশনে আমাদের থেকে বাকি দলগুলো একটু ভালো টিম।

স্পিনাররা কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন?

যেই দু’জন আছে, সাকিব ও মিরাজ। দুইজনই আমাদের হোম কন্ডিশনে ভালো পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে। এখন ট্রু ব্যাটিং উইকেটে আমাদের বোলাররা কেমন করে, সেটা দেখার বিষয়। নিউ জিল্যান্ডে দেখেছি ব্যাটিং উইকেট ছিল, সেখানে স্পিন বোলারদের ভ্যারিয়েশন না থাকলে কঠিন হয়ে যায়। যেটা রশিদ, মুজিব, কুলদীপ, চাহালদের আছে, ভ্যারিয়েশন আছে বলেই কিন্তু সারভাইভ করছে। ভালো ব্যাটিং উইকেটে যদি স্পিন করাতে পারে, তাহলে কিন্তু বিপজ্জনক। আপনি যদি স্পিন করাতে না পারেন, তাহলে কঠিন হয়ে যায়।

সাকিব-মিরাজ স্পিনজুটির দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ; Image Credit: Pictame

ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা

আমি ইংল্যান্ডে খেলেছি। এবারও যাচ্ছি। ইংল্যান্ডে জুন-জুলাইতে ব্যাটিং করে অনেক মজা লাগে। ওয়েদারও খুব গরম থাকে। আমাদের মতোই গরম থাকে। বিশ্বকাপ ইভেন্টগুলোতে ব্যাটিং উইকেটই হয় সাধারণত, ট্রু ব্যাটিং উইকেট হবে। বোলারদের যদি বাড়তি পেস থাকে, তাহলে অনেক কাজে দিবে। আর যদি অ্যাভারেজ পেস হয়, তাহলে ব্যাটিং করা অনেক সহজ। অবশ্যই যত দিন যাবে, উইকেট তত স্পিনসহায়ক হবে। কিন্তু উইকেট হবে ৩২০ প্লাস উইকেট, প্রতি ম্যাচেই। গত বিশ্বকাপ যদি দেখেন, আরব আমিরাতও প্রতি ম্যাচে ২৭০ প্লাস রান করেছে। এবারও তাই হবে। আর ইংল্যান্ডের মাঠ তুলনামূলক ছোট থাকে। এখানে মিসহিট হলেও বাউন্ডারি-ওভারবাউন্ডারি হয়ে যায়। আমাদের খুব পরিকল্পনা করে ডিসিপ্লিন ক্রিকেট খেলতে হবে।

তারকা হওয়ার মঞ্চ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ আসলে প্লেয়ারদের তারকা বানায়। এখানে যদি আপনি ভালো খেলতে পারেন, দেশের জন্য নাম হবে, নিজের জন্য নাম হবে। যেই ৭ জনের নাম হচ্ছে, ওরা কিন্তু ইতঃমধ্যেই বাংলাদেশের জন্য সুপার স্টার। ওরা কিন্তু ইতঃমধ্যে প্রমাণিত যে, এই লেভেলে পারফর্ম করেছে। এখন শুধু আরেকটা ধাপ, যেখানে পুরো বিশ্বক্রিকেট ফলো করবে বাংলাদেশকে এবং এই প্লেয়ারগুলোকে। এই প্লেয়ারদের জন্য শুভ কামনা রইল। ওরা যেন ভীতিহীন ক্রিকেট খেলে, এটাই আশা থাকবে। উইকেটগুলো খুব চমৎকার থাকবে ব্যাটিংয়ের জন্য। যারাই সুযোগ পাবে, যেন বড় বড় ইনিংস খেলে।

এভাবেই বারবার উল্লাসে মেতে উঠতে চাইবে বাংলাদেশ; Image Credit: BCB

হোম সিকনেসের প্রভাব

আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর মনে হয় ৮-১০ দিনের বিরতি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ওই সময়টা যদি দেশে আসতে পারত, তাহলে ভালো হত। এমনি এই বিশ্বকাপে সবার সাথে সবাই খেলবে। নয়টা ম্যাচ, দেড় মাসের সফর। আবহাওয়ার সাথে সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য হয়তো থাকতে হবে আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর। কিন্তু আসতে পারলে মনে হয় ভালো হতো। আমাদের মধ্যে এটা (হোম সিকনেস) আছে। আমি নিজেও খেলার সময় দেখেছি। আমি কেন্ট ক্রিকেট লিগে কিছুদিন খেলে ঈদে দেশে আসবো। ওখানে সাড়ে চার মাস খেলা আমার। লম্বা সময় দেশের বাইরে, শেষের দিকে প্রভাব ফেলে।

This article is in Bangla language. It is about the world cup mission and vision of Bangladesh cricket team according to the analysis of Mohammad Ashraful, former captain of Bangladesh National Cricket Team. In this article, Ashraful talked about the strong points and weak links in the Bangladeshi side. 

Featured Image: Cricbuzz

Related Articles