গত এক দশকের হিসাব করলে প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন দলের পথচলাটা বেশ নাটকীয় ছিল, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে এই সময়ে। সিটিজেনদের পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পতন, রূপকথার জন্ম দিয়ে লেস্টার সিটির লিগজয়, ক্লপের হাত ধরে লিভারপুলের পুনরোত্থান, সাথে ফার্গুসন ও ওয়েঙ্গারের মতো লিজেন্ডারি দুই কোচের বিদায় – সব মিলিয়ে নানা বিচিত্র ঘটনায় ঠাসা ছিল এই দশক।
এই ঘটনাবহুল দশকের সেরা একাদশ যদি নির্বাচন করা হয়, তবে কেমন হবে সেই দল? দশ বছর সময়ে এই লিগে খেলে গেছেন অনেক তারকা খেলোয়াড়। তাদের মধ্য থেকে মাত্র ১১ জন বেছে নেওয়া কিছুটা দুঃসাধ্য তো বটেই। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি ২০০৯-২০১৯ সালের পারফরম্যান্স বিচার করে ৩-৫-২ ফর্মেশনে একটি সেরা একাদশ বানানোর।
পিটার চেক (গোলরক্ষক)
গোলরক্ষক পজিশনে লড়াইটা হয়েছে মূলত তিনজনের মধ্যে। তারা হলেন: পিটার চেক, জো হার্ট এবং ডেভিড ডে হেয়া। ম্যানসিটি ছাড়ার পর জো হার্টের পারফরম্যান্স গ্রাফ একদমই নিম্নগামী। ডে হেয়ার পারফরম্যান্স অবশ্য বেশ ধারাবাহিক ছিল, কিন্তু গত মৌসুম থেকে তাকেও নড়বড়ে লাগছে। তাই, সবকিছু বিচার করে এই দশকে প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে পিটার চেকই কিছুটা এগিয়ে থাকেন।
এই দশকে চেলসির হয়ে দু’টি লিগ শিরোপা জিতেছেন চেক, আর চেলসির সেই ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে চেকের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। এই সময়ের মধ্যে এফএ কাপ জিতেছেন তিনটি, লিগ কাপ একটি। সবচেয়ে বড় কথা, এই দীর্ঘসময়ে দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর ডে হেয়া ক্লিনশিট রেখেছেন ১০২টি, সেখানে এই সময়ে চেকের ক্লিনশিটের সংখ্যা ১১৬টি। তাই সবকিছু বিচারে পিটার চেকই এই একাদশে গোলরক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হলেন।
জন টেরি (সেন্টারব্যাক)
সেন্টারব্যাক পজিশনে প্রথম জায়গাটি অবশ্যই জন টেরির জন্য বরাদ্দ থাকবে। এই ইংলিশ ডিফেন্ডার দীর্ঘদিন ধরে চেলসির রক্ষণভাগকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এই দশকে চেলসি যে তিনটি লিগ শিরোপা জিতেছে, তার প্রতিটিতেই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। চেলসি যেবার ইউসিএল জেতে, সেবার সাসপেনশনের কারণে ফাইনাল মিস করলেও দলকে ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
তাছাড়া এই সময়ের মধ্যে চেলসির হয়ে দুইবার এফএ কাপ ও একবার লিগ কাপের শিরোপা জিতেছেন। পুরো ক্যারিয়ার বিবেচনা করলে প্রিমিয়ার লিগে ডিফেন্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্লিনশিট এবং অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি লিগজয়ের রেকর্ডটাও তার। তাই শুধু সেন্টারব্যাক হিসেবেই নয়, আমাদের এই একাদশে অধিনায়ক হিসেবেও জন টেরিই প্রথম পছন্দ।
ভিনসেন্ট কোম্পানি (সেন্টারব্যাক)
ম্যানচেস্টার সিটির মতো মাঝারি মানের দলকে প্রিমিয়ার লিগের পরাশক্তিতে পরিণত করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান যে ডিফেন্ডার রেখেছিলেন, তিনি ভিনসেন্ট কোম্পানি। এই দশকে সিটিজেনরা মোট চারবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছে, আর প্রতিবারই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এই বেলজিয়ান সেন্টারব্যাক। দলের হয়ে দু’বার এফএ কাপ ও চারবার জিতেছেন লিগ কাপের শিরোপা।
তাছাড়া, মোট তিনবার পিএফএ টিম অফ দ্য ইয়ারে জায়গা পেয়েছেন তিনি। সিটিজেনদের হয়ে নিজের বিদায়ী মৌসুমে লেস্টার সিটির বিপক্ষে অসাধারণ এক দূরপাল্লার গোল করেন, যা শেষ পর্যন্ত লিগজয়ের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। আমাদের এই দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে ভিনসেন্ট কোম্পানিকেই নির্বাচিত করা হলো।
ভার্জিল ভ্যান ডাইক (সেন্টারব্যাক)
২০১৫ সালে সেল্টিক থেকে সাউদাম্পটনে যোগ দেওয়ার পর থেকে দারুণ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। কিন্তু মাঝারি ক্লাবের খেলোয়াড় হওয়ায় সেভাবে খবরের শিরোনামে আসেননি। তবে লিভারপুল স্কাউটদের নজরে ঠিকই পড়ে যান এই ডাচ সেন্টারব্যাক, তাকে দলে নেওয়ার জন্য নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালাতে থাকে তারা। তবে সাউদাম্পটনও তাদের এই রত্নকে সহজে হাতছাড়া করতে চাইছিল না, চড়া দাম হাঁকিয়ে বসে তারা। শেষ পর্যন্ত ২০১৭-১৮ মৌসুমের শীতকালীন দলবদলে রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ভ্যান ডাইককে দলে ভেড়ায় লিভারপুল।
তখন এই উচ্চমূল্য নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু তাদের মুখ বন্ধ করতে খুব বেশি সময় তিনি নেননি। যে লিভারপুলের রক্ষণভাগ ছিল তাসের ঘর, এক ভ্যান ডাইকের আগমনে সেই রক্ষণভাগই রাতারাতি পাল্টে যায়। আর ২০১৮-১৯ মৌসুমটা তো পার করেছেন পুরো স্বপ্নের মতো, তার প্রতিদানস্বরূপ একজন ডিফেন্ডার হয়েও পিএফএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার জিতে নেন তিনি। এই মৌসুমেও এখন পর্যন্ত দারুণ খেলে যাচ্ছেন, তাই দলের তৃতীয় সেন্টারব্যাক হিসেবে এই ডাচ ডিফেন্ডারকে না নেওয়ার কোনো কারণই নেই।
এনগোলো কান্তে (সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার)
২০১৫-১৬ মৌসুমে রূপকথার জন্ম দিয়ে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে নেয় লেস্টার সিটির মতো একটি মধ্যম সারির দল। এই অভাবনীয় সাফল্যের কারণে সেই দলের আক্রমণভাগের দুই তারকা রিয়াদ মাহরেজ ও জেমি ভার্ডি প্রশংসায় ভাসতে থাকেন। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ কৃতিত্বের মূল দাবিদার হিসেবে আরেকজন অখ্যাত খেলোয়াড়ের নাম বলতে থাকেন। তিনি ফ্রেঞ্চ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে। অবশ্য সেই মৌসুমের পরিসংখ্যান দেখলে তাকে মূল নায়ক বলাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। সেই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ট্যাকল এবং ইন্টারসেপশন – দুই জায়গাতেই সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
তার এই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে সেই মৌসুমেই ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কান্তেকে দলে নিয়ে নেয় চেলসি। নতুন ক্লাবে গিয়েও নিজের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সের ধারাটা ধরে রাখেন তিনি, আগের মৌসুমে দশম হওয়া চেলসিকে সেই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তার। আর সেটার স্বীকৃতিস্বরূপ সেই মৌসুমে পিএফএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার জিতে নেন তিনি। এরপর চেলসির পারফরম্যান্স ছকে হয়তো উত্থান-পতন হয়েছে, কিন্তু কান্তে ঠিকই নিজের কাজটি ঠিকমত করে যাচ্ছেন। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অতি স্বাভাবিক কারণেই আমাদের এই সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন।
সেস্ক ফাব্রিগাস (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার)
মাত্র ১৬ বছর বয়সে লা মাসিয়া থেকে আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন সেস্ক ফাব্রিগাস, এরপর আস্তে আস্তে দলে নিজের জায়গা পাকা করেন। ২০০৮ সালের নভেম্বরে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান, নিজের দারুণ পারফর্মেন্সে ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ মৌসুমে আর্সেনালকে শীর্ষ চারে রাখতেও তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এরপর নিজের শৈশবের ক্লাবের টানে যোগ দেন বার্সেলোনায়। সময়টা খুব ভালো যায়নি সেখানে। তাই তিন মৌসুম পর, ২০১৪-১৫ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে আবারো ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে। তবে এবার আর গানারদের লাল-সাদা জার্সিতে নয়, চেলসির নীল জার্সিতে।
নতুন দলে সেই পুরনো ছন্দে ফিরেন ফাব্রিগাস, মাঝমাঠে তার দারুণ পারফর্মেন্স সেই মৌসুমে চেলসির লিগজয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এরপরের মৌসুমটা খারাপ কাটলেও ২০১৬-১৭ মৌসুমে আবার পুরনো ছন্দে ফিরেন তিনি, চেলসির হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জিতেন প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। আর্সেনাল ও চেলসির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ৩৫০টি ম্যাচ খেলে ১১১টি গোলে সহায়তা করেছেন, যা লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
কেভিন ডি ব্রুইন (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার)
২০১৩-১৪ মৌসুমের শীতকালীন দলবদলে যখন কেভিন ডি ব্রুইনকে উলফসবার্গের কাছে বিক্রি করে দিল চেলসি, তখন খুব কম মানুষই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। জার্মান লিগে আড়াই মৌসুম সফলভাবে পার করার পর ২০১৫-১৬ মৌসুমের শীতকালীন দলবদলে ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডে যখন তাকে দলে ভেড়ায় ম্যানসিটি, তখন উল্টো সিটিজেনদের ট্রান্সফার পলিসি নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্ত নিন্দুকের মুখে ছাই তুলে দিতে খুব বেশি সময় তিনি নেননি। আজ বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করলে সেখানে খুব সহজেই এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার জায়গা করে নেবেন।
অসাধারণ গোলস্কোরিং ক্ষমতা, নিঁখুত পাসিং, দুর্দান্ত ভিশন, সাথে দারুণ ডিফেন্সিভ ওয়ার্করেট – সব মিলিয়ে আধুনিক যুগের মিডফিল্ডার হিসেবে পারফেক্ট একটি প্যাকেজ। গত দুই মৌসুম ধরে পেপ গার্দিওলার অধীনে ঘরোয়া লিগে সিটিজেনরা যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তার নেপথ্য কারিগর তিনি। বর্তমান সময়ে যেকোনো দলই পেলে তাকে লুফে নিবে, তাই আমাদের দলে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে তাকেই নেওয়া হলো।
রাহিম স্টার্লিং (রাইট উইঙ্গার)
স্বজাতি খেলোয়াড়রা একটু ভালো খেললেই ইংলিশ মিডিয়া এত বেশি প্রশংসা শুরু করে দেয় যে, সেই খেলোয়াড়কে একপ্রকার ওভার-রেটেড বানিয়েই ছাড়ে তারা। তাদের এই দোষের কারণে কোনো ইংলিশ তরুণকে নিয়ে খুব হইচই শুরু হলে অনেকে কিছু না জেনেই সেই তরুণকে ওভার-রেটেড বলে দেন।
ঠিক এমনটাই ঘটেছিল রাহিম স্টার্লিংয়ের বেলায়। লিভারপুলে থাকাকালীন বেশ আলো ছড়ালেও শুধুমাত্র ইংলিশ হওয়ার কারণে অনেকেই তাকে ওভার-রেটেড বলে আখ্যায়িত করছিল। ২০১৫-১৬ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে যখন ৪৪ মিলিয়ন পাউন্ডে তাকে দলে ভেড়ায় ম্যানসিটি, তখন অনেকে উল্টো সেই ট্রান্সফার ফি’র যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
সিটিজেনদের হয়ে প্রথম দুই মৌসুমে তার পারফরম্যান্স অবশ্য সংশয়বাদীদের ধারণাকেই সত্য প্রমাণ করার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু পেপ গার্দিওলার অধীনে ২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজেকে যেন অন্য অবতারে আবিষ্কার করেন এই ইংলিশ উইঙ্গার। শেষ দুই মৌসুমে সিটিজেনদের আক্রমণভাগে সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্মার ছিলেন তিনি, দলকে টানা দুইবার ঘরোয়া লিগে শ্রেষ্ঠ করার পাশাপাশি নিজে জিতেছেন পিএফএ সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এছাড়া সিটিজেনদের হয়ে দুইবার লিগ কাপ ও একবার জিতেছেন এফএ কাপের শিরোপা। গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগে সেভাবে কোনো রাইট উইঙ্গার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেননি, তাই এই পজিশনে রাহিম স্টার্লিংই সবচেয়ে উপযুক্ত খেলোয়াড়।
ইডেন হ্যাজার্ড (লেফট উইঙ্গার)
চেলসির শেষ দুই লিগজয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় কে ছিলেন? সিংহভাগ মানুষের উত্তর একটাই হবে, ইডেন হ্যাজার্ড। তার গোল কিংবা অ্যাসিস্ট সংখ্যা দিয়ে চেলসিতে তার গুরুত্ব বোঝা যাবে না। নিজের দুর্দান্ত ড্রিবলিং ও প্লে-মেকিং দক্ষতার মাধ্যমে তিনি যেভাবে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করতেন, তা এক কথায় অসাধারণ। এই অনবদ্য পারফর্ম্যান্সের কারণেই ২০১৪-১৫ মৌসুমে জিতেছিলেন প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, ২০১৮-১৯ মৌসুমে জিতেছিলেন প্রিমিয়ার লিগের সেরা প্লে-মেকারের স্বীকৃতি।
তাছাড়া মোট চারবার পিএফএ বর্ষসেরা দলে জায়গা পেয়েছেন এই বেলজিয়ান উইঙ্গার। চেলসিতে নিজের বিদায়ী ম্যাচটিও শেষ করেছেন দারুণভাবে, জোড়া গোলে চেলসিকে ইউরোপা লিগের শিরোপা উপহার দিয়ে গত মৌসুম শেষে পাড়ি জমিয়েছেন স্পেনে। লেফট উইঙ্গার পজিশনে লিভারপুলের সাদিও মানের পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত, কিন্তু সব দিক বিবেচনায় ইডেন হ্যাজার্ডকেই এই পজিশনে নেওয়া হলো।
রবিন ভ্যান পার্সি (স্ট্রাইকার)
গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগে দারুণ যে সব স্ট্রাইকারের উত্থান হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম রবিন ভ্যান পার্সি। ২০০৯-১০ মৌসুমে এমানুয়েল আদেবায়োর চলে যাওয়ার পর আর্সেনালের সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলা শুরু করেন। টানা দুই মৌসুম দারুণ পারফর্ম করার পর ২০১১-১২ মৌসুমে দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। নেতৃত্বের ভার পেয়ে সেই মৌসুমে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেন তিনি, ৩০ গোল করে সেই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ গোলদাতা হন তিনি।
তবে গানারদের সাথে চুক্তিটা আর দীর্ঘায়িত করেননি এই ডাচ ফরোয়ার্ড, ২০১৩-১৪ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ২৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন তিনি।
তাকে ২০ নাম্বার জার্সি তুলে দিয়ে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন বলেছিলেন,
‘এই ২০ নাম্বার জার্সির খেলোয়াড়ই আমাদের ২০ নম্বর লিগ শিরোপায় সবচেয়ে বড় অবদান রাখবে।‘
বাস্তবিক অর্থে সেটাই হয়েছিল, ২৬ গোল করে আবারও প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি দলকে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতান। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে ওঠা ও বড় ম্যাচে প্রভাব রাখায় হ্যারি কেইন, জেমি ভার্ডি কিংবা রোমেলু লুকাকুকে টপকে ভ্যান পার্সিই আমাদের এই একাদশে স্ট্রাইকার হিসেবে সুযোগ পেলেন।
সার্জিও আগুয়েরো (স্ট্রাইকার)
২০১১-১২ মৌসুমে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ম্যানসিটিতে যোগ দেন সার্জিও আগুয়েরো। বাকিটা ইতিহাস। সেই মৌসুমে লিগের একদম শেষ ম্যাচে অন্তিম মুহূর্তে কিউপিআরের বিপক্ষে যে গোলটি তিনি করেন, সেটি হয়তো পুরো প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল। ওই গোলের কারণেই দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও লিগ শিরোপা ঘরে তোলে সিটিজেনরা।
আগুয়েরো সেখানেই থেমে থাকেননি। প্রতি মৌসুমে ধারাবাহিক পারফর্ম করে তারকাবহুল ম্যানসিটি দলে নিজেকে অপরিহার্য সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সিটিজেনদের হয়ে এ পর্যন্ত লিগ জিতেছেন চারবার, এফএ কাপ জিতেছেন একবার, আর লিগ কাপ জিতেছেন চারবার। এখন পর্যন্ত ২৪৭টি ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১৭২টি, অ্যাসিস্ট ৪৫টি। এই দশকে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে ধারাবাহিক স্ট্রাইকারটিকে বাদ দিয়ে একাদশ সাজানোর চিন্তা করাই বৃথা।
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন (কোচ)
গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগ অসাধারণ কিছু কোচের দেখা পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পাঁচজন; তারা হলেন – স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, আর্সেন ওয়েঙ্গার, জোসে মরিনহো, ইয়ুর্গেন ক্লপ ও পেপ গার্দিওলা। এই দশকের সেরা একাদশের কোচ হওয়ার মূল লড়াইটি হয়েছে দু’জনের মধ্যে – স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ও পেপ গার্দিওলা। এই সময়কালের মধ্যে দু’জনই মোট দুইবার দলকে লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন।
তবে সব কিছু মিলিয়ে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনই এগিয়ে থাকবেন। সীমিত বাজেটের দল নিয়েও দলকে নিয়মিত লিগ শিরোপা জেতানোর ক্ষমতা একমাত্র এই স্কটিশেরই ছিল। শুধু প্রিমিয়ার লিগ নয়, পুরো ফুটবল ইতিহাসেরই সর্বকালের অন্যতম সেরা এই কোচকে একাদশের সাথে রাখাটা তাই যে কারো জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার হবে।