Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘কালো চিতা’ মনু: কারখানার শ্রমিক থেকে মোহামেডানের তারকা

দেশের বর্তমান প্রজন্ম লা লিগার গ্যালারিতে আগুন জ্বলার খোঁজ রাখে। খোঁজ রাখে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর লেটেস্ট গাড়ির মডেল, জুতার মাপ। লিওনেল মেসির তিন নম্বর সন্তানের নাম কী, সে কার মতো দেখতে হয়েছে তা-ও জানে। ইতালির কিংবদন্তি গোলরক্ষক বুফনের কান্না দেখে চোখ ভিজে যায় রাত জেগে ক্লাব ফুটবলের টানটান উত্তেজনার ম্যাচ দেখা বঙ্গদেশীয় তরুণের। মন কাঁদে তারও। আর বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আলাপ উঠলেই যেন শুরু হয় হা-হুতাশ। তাদের ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপের হাসির ইঙ্গিতে যেন হাহাকার করে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাস। সেই ইতিহাস কতটাই বা জানি আমরা?

বাংলাদেশের তথা ঢাকাই ফুটবলের সোনালী অতীত এখনও কুড়ে খায় সেই প্রজন্মের বর্তমান বুড়োদের। গল্প ফাঁদতে বসলেই যেন উঠে আসে আবাহনী-মোহামডান কিংবা ফরাশগঞ্জের সেই ম্যাচগুলোর কথা। আর যারা লিখেছিলেন সেই কাব্যগাঁথা? তারা এখনও অমলীন স্মৃতিতে। তাদেরই একজন মনির হোসেন মনু। কদিন আগেই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে চলে গেছেন দুনিয়ার ওপারে। ঢাকা লিগে ১৯৮৫ সালে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে তার সেই বাঁক খাওয়ানো গোল (অনেকে বলেন রংধনু গোল) এখনও এ দেশের ইতিহাসে শতাব্দীর সেরা গোল বলে অভিহিত।

তার দুর্দান্ত গতি, ড্রিবলিং, সাদা-কালো মোহামেডানের জার্সি; সব মিলিয়ে উইঙ্গার মনু পরিচিত ছিলেন মোহামেডানের ‘কালো চিতা’ বলে। যাকে প্রতিরোধ করা নিয়ে প্রতি ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে আলাদা রণকৌশল আঁটত প্রতিপক্ষ দলগুলো। মূলত ওই গতির জন্যই কোচ তার নাম দিয়েছিলেন চিতাবাঘ।

মোহামেডানের মনু; Source: Daily Amader Sangbad

অন্তত চারটি গোলের জন্য ঢাকার ফুটবল আজীবন মনে রাখবে মনুকে। আবাহনীর বিপক্ষে পরপর দুই বছর করা দুটি গোল। একটি ছিলো ওই বাঁক খাওয়ানো গোল, পরের বছর ১৯৮৬ সালে ৪০ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে অসাধারণ এক গোল। সেটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে শিরোপা এনে দেয় মোহামডানকে। জাতীয় দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে চীনের বিপক্ষে করা গোলও মনে রাখার মতো হয়েছিল। মনুর করা চতুর্থ স্মরণীয় গোলটি পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দল ইস্ট বেঙ্গলের বিপক্ষে।

এই ফুটবল খেলতে গিয়েই মরতে বসেছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবকে হারানোর পর দলটির সমর্থকরা পিটিয়ে কাদার মধ্যে ফেলে রেখেছিলো মোহামডানের মনুকে। সেসবই স্মৃতি। কিন্তু এই স্মৃতি এ প্রজন্মের কজনই বা জানতে চায়? দেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসের আংশিক ইতিহাস জানলেও হয়তো এ দেশের ফুটবল নিয়ে আক্ষেপটা কমতে পারে। কেমন ছিলো সে সময়ের মনু? শেষটাই বা কী করে হলো, তা নিয়ে খানিক বয়ানের চেষ্টা পাঠকদের জন্য।

১.

‘৮০-‘৯০ এর দশকের সময় ঢাকা লিগের মৌসুমে বিশ্বকাপের মতো আবহ বিরাজ করতো ঢাকায়। ঘরের ছাদ ছেয়ে যেতো আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, আরমানিটোলা, ওয়ারি ইত্যাদি ক্লাবের পতাকায়। পুরো মৌসুম জুড়ে চলতো উৎসব। চায়ের কাপে সমর্থকদের মধ্যে উঠতো লিগ নিয়ে গল্পের ঝড়, তর্ক আর আত্মপক্ষ প্রমাণের কথার লড়াই। সেই লড়াই শব্দের বাণ থেকে ইট-পাটকেলে চলে যেতে খুব একটা সময় লাগতো না। ম্যাচ শেষে ভরা গ্যালারিতে, কখনও বা স্টেডিয়ামের বাইরেই শুরু হতো সমর্থকদের মধ্যে ঢিল ছোঁড়াছুড়ি। আর ফুটবলারদেরকেও অনেক সময় পালাতে হতো গা বাঁচিয়ে। এ সবই ছিল ঢাকা লিগের সংস্কৃতি। সব ছাপিয়ে ছিলো ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। এখন যেমন ফাঁকা গ্যালারি দেখা যায়, সে সময়ে এমনটা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ। উল্টো, তিল ধারণের জায়গা পর্যন্ত ছিল না!

তাদেরই একজন মনির হোসেন মনু কিংবা ‘কালো চিতা’। ছোটবেলা থেকে খুব ভালো ফুটবল খেলতেন। ছিলেন মোহামডানের পাঁড় সমর্থক। সেখান থেকেই ফুটবলে পেশাদার ফুটবলে আসা। তার সফলতা দেখে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীও অনেকবার তাকে দলে টানতে চেয়েছে। কিন্তু রাজি হননি মনু। সে কারণেই নাকি জাতীয় দলে কোনো এক ম্যাচে মাঠে নামানো হয়নি তাকে, এই অভিযোগ বেঁচে থাকতে করে গিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারটা আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশি দূর এগোতে পারেননি সদা হাস্যজ্ব্যোল এই ফুটবলার।

ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছেন মনু। জন্মের পর থেকে বাবা-মাকে সেভাবে দেখেনইনি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই তারা মারা গিয়েছেন। এরপর পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মনু ভাইদের কাছেই থেকেছেন। অভাবের সংসারে ছোটবেলা থেকে কাজ করেছেন হোটেলে। সেখান থেকে ব্যাটারির কারখানাতেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। এসবের মধ্যে দিয়ে একটা ভালো কাজ হয়েছিলো। খ্যাপ খেলতে যাওয়ার জন্য সে যুগে মোবাইল ফোনের চলন না থাকায় সবাই এসব জায়গায় এসে মনুকে খেলতে নিয়ে যেত টাকার বিনিময়ে। এরপর ১৯৮০ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বড় ভাই’রা ধরে নিয়ে গেলেন মনুকে। সেখানে বিদেশি কোচের অধীনে একটি দলের হয়ে অনুশীলন শুরু করলেন। সেই দলটিই আবার জাতীয় দলের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে। সেখান থেকে ইয়ংমেন্স ফকিরাপুল ক্লাব দিয়ে চতুর্থ বিভাগের ফুটবল খেলা শুরু করেন মনু।

মারা যাওয়ার ঠিক ১৩ মাস আগের স্মৃতিতে মনু; Source: Kaler Kantho

পরের বছর ১৯৮১ সালে তৃতীয় বিভাগ ও ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে খেলা শুরু হয় মনুর। নিজের পারফরম্যান্সের প্রমাণ দিয়ে নিজেকে খুব দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছিলেন মনু। কিন্তু দ্বিতীয় বিভাগে খেলতে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি। দলকে শিরোপা জেতানোর ‘অপরাধে’ প্রতিপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা দলের সমর্থকদের হাতে খেলেন বেদম পিটুনি। প্রায় মরমর অবস্থা।

বেঁচে থাকাকালীন সময়ে এক সাক্ষাতকারে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন মনু এভাবে, ‘‘সেবার বিআরটিসিকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে প্রথম বিভাগে তুলি ১২ বছর পর। আমি ১৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ ক্ষেত্রে আমার লড়াই হয় ‘লাকি গোবিন্দদা’র সঙ্গে। খেলার পর সমর্থকদের মাইর, তার আগে ওদের খেলোয়াড়দের মাইর। মাইরের চোটে আট-নয়বার আমি মাঠের বাইরে যাই। বরফ লাগিয়ে আবার ফিরি। এর মধ্যেই দুই গোল দিয়ে হারিয়ে দিই মুক্তিযোদ্ধাকে। ১২ বছর পর বিআরটিসি উঠে প্রথম বিভাগে। কিন্তু তা নিয়ে আনন্দ করব কিভাবে? রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই আমরা যে যেদিকে পারি, দৌড়ে যাই পালিয়ে।

রাতের বেলা বিআরটিসি ক্লাবে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের সমর্থকরা চালায় হামলা। সব কিছু ভেঙে ফেলে; সামনে যাকে পায় তাকেই মারে। আমি পালানোর সময় পাইনি। এমন মাইর শুরু হলো! আমার শুধু মনে আছে ওরা বলছে, ‘এই মনুর কারণে আমরা হেরেছি। ওকে মেরে ফেল।’ হকিস্টিক দিয়ে মাথায় মারে। তীরের মতো রক্ত বের হচ্ছিল মাথা থেকে। আর কিছু মনে নেই। ক্লাবের মধ্যে একটা ‘গাঁড়া’ আছে। সেখানে ক্লাবের বাবুর্চি ময়লা পানি, মাছের আঁশ এসব ফেলে। মুক্তিযোদ্ধার সমর্থকরা আমাকে মেরে পা ধরে সেই পাঁকের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দিয়ে যায়। জ্ঞান ফেরে অনেক রাতে। কোনোমতে হেঁটে খালি গায়ে আরামবাগে আসি। বড় ভাই শরীফ বন্ধুদের নিয়ে মোড়ে আড্ডা দেয়। উনি দেখে দৌড়ে এসে আমাকে ধরেন। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে মাথায় দেওয়া হয় আটটি সেলাই। ফেলে দিই মাথার চুল। দুই মাস বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। তখনই মনে হয়, দূর, আর ফুটবল খেলব না’’।

খুব অভিমান হয়েছিলো মনুর। ফুটবলই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যে ফুটবলকে নিজের জীবন বানিয়েছেন, সেটার সঙ্গে অন্তত রাগ করে থাকতে পারেননি। সুস্থ হয়েই ফিরেছিলেন ফুটবলে। প্রথম শ্রেণির ফুটবল শুরু করেছিলেন যে ক্লাবের হয়ে মার খেয়েছিলেন সেই বিআরটিসির হয়ে।

কালো-সাদা জার্সির মোহামেডান-আকাশী জার্সির আবাহনীর দ্বৈরথ; Source: Pratidiner Sangbad

১৯৮০-৮৩; প্রতিটি বছর যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলো মনুর জন্য। ’৮০ সালে শুরু করলেন চতুর্থ শ্রেণির ফুটবল, ’৮৩ সালে প্রথম শ্রেণির ফুটবল। একই বছরে স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দিল তার হাতে। অর্থাৎ, সুযোগ পেলেন স্বপ্নের ক্লাব মোহামডানে। যেখান থেকে তার ‘চিতাবাঘ’ হয়ে ওঠা।

সে বছর শেরে বাংলা কাপে সিলেট বিভাগকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন মনু। ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ৪০ গজ দূর থেকে শট নিয়ে বল পাঠিয়েছিলেন জালে। গোলরক্ষক মহসিন টেরই পাননি! আরও একবার এই টুর্নামেন্টে ঢাকা জেলার হয়ে খুলনাকে হারিয়েছিলেন ফাইনালে। তারপর প্রস্তাব পেলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে।

মজার ব্যাপার হলো, যে ক্লাবের হয়ে এতদিন গ্যালারিতে বসে গলা ফাটিয়েছেন; সেই দলের যোগ দেবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন! এ প্রসঙ্গে মনু বলেন, ‘খুশি হয়েছিলাম। পাশাপাশি আরেক কথাও ভাবছিলাম, মোহামেডানে আমি কি খেলার সুযোগ পাব? বাদল ভাই, সালাম ভাই, মোসাব্বের ভাই, কোহিনূর ভাইরা থাকতে কোচ আমাকে কেন খেলাবেন? আর জানেন কিনা, ক্যারিয়ারে তখন পর্যন্ত আমি কিন্তু স্ট্রাইকার’।

তারপরও ঝুঁকি নিয়েই চলে আসেন মোহামডানে। তারপর শুরু হয় তার ক্যারিয়ারের নতুন যাত্রা।

২.

মোহামেডানে যোগ দেওয়ার পর প্রথম তিন ম্যাচে সুযোগই পাননি মনু। হয়তো ততক্ষণে নিজের ভাগ্যকে দুষছিলেন। ‘ছোট ক্লাবে বড় পারফর্মার’ চলে। কিন্তু বড় ক্লাবে গেলেই সেই পারফর্মার হয়ে যায় সাদামাটা। তারপরও চতুর্থ ম্যাচে সাত মিনিটের জন্য মাঠে নামার সুযোগ হয়েছিল মনু। গোল করতে পারেননি। কিন্তু রাইট আউট থেকে দুটি মাইনাস করে নিজের আগুণ প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। ব্যস, সেই থেকে মোহামডানের পরের ম্যাচে শুরু থেকে খেলেছেন মনু। কিন্তু এই ক্লাবে এসে স্ট্রাইকার মনু হয়ে যান উইঙ্গার। তাতে ঝামেলা হয়নি একটুও। সাফল্য পেয়েছেন হাতে ধরে। প্রথম মৌসুমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় পেয়েছিলেন মোহামডান থেকে।

১৯৮৪-৮৭; এই চার বছর মোহামেডানে খেলেছেন মনু। পারিশ্রমিক ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে পৌঁছেছিল ৭ লাখ টাকার মতো। তার মধ্যেই একাধিকবার আবাহনীতে ডাক পেয়েছেন তিনি। কিন্তু যাননি। এ নিয়ে মনু বলেছিলেন, ‘‘আবাহনীর কর্মকর্তারা খালি চেক দিয়ে বলেছে, ‘তুই কত টাকা চাস বল?’ কিন্তু আমি মোহামেডান ছাড়িনি। ছোটবেলার ভালোবাসার ক্লাব। টাকাই তো সব না রে ভাই। সে কারণে মোহামেডানে থেকে যাই। যদিও মোহামেডান থেকে অন্যরা যত টাকা পেয়েছে, আমাকে তা দেওয়া হয়নি। কারণ ওই যে কর্মকর্তারা জানেন, আমি ক্লাব ছাড়ব না। মায়ার জালের কারণে’’।

ম্যাচের আগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলাররা; ডানদিক থেকে তিন নম্বরে মনু। পিছনের গ্যালারি দেখলেই টের পাওয়া যায় ওই সময়ে ঢাকাই ফুটবলের জনপ্রিয়তা; Source: Mohamedan Sporting Club

শেষ বছরে পায়ে ব্যথা পেয়ে ছুরিকাঁচির নিচে যেতে হলো মনুকে। কিন্তু একই অপারেশন করে অন্যান্য ফুটবলাররা মাঠ দাপিয়ে বেড়ালেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারলেন না মনু। যে বছর তার পায়ে অস্ত্রোপচার হলো, সে বছরই ভারতের মোহনবাগানের এক কর্মকর্তা ঢাকায় এসেছিলেন মনুর খেলা দেখতে। কিন্তু তিনি তখন অসুস্থ। খুব আপ্লুত হয়েছিলেন মনু। সেই ভদ্রলোকের পা ছুঁয়ে সালাম করেছিলেন।

মোহামেডান ছাড়ার পর ১৯৮৯ সালে সেই মোহামেডানের বিপক্ষে খেলতে গিয়েই ক্যারিয়ার শেষ হয়েছিল মনুর। আরামবাগের হয়ে খেলেছিলেন সেবার। কায়সার হামিদের সঙ্গে অ্যাংকেলে বাড়ি খান। তারপর থেকে আর পুরোপুরি ঠিক হতে পারেননি মোহমেডানের ‘কালো চিতা’। তারপরই খেলা ফুটবল খেলা ছেড়ে দেন।

ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলের গল্পটাও মনুর ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো ছিলো। ১৯৮৫ সালে প্রথমবার লাল-সবুজ জার্সিতে সুযোগ পাওয়ার পর এই দলের হয়ে পাকিস্তান, নেপাল সফর করেছেন। দেশের মাটিতে খেলেছেন প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ। সেখানে চীনের বিপক্ষে তার করা গোল এখনও স্মরণীয়। ১৯৭৮-৮৮ সালের দিকে মনুর গতির সামনে রুখে গিয়েছিলো চীন দল। সেন্টারের একটু সামনে থেকে শট নিয়ে জালে জড়িয়েছিলেন বল। সে ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন মনু।

নিজের ক্যারিয়ারে স্মরণীয় বলতে গেলে চীনের এই ম্যাচটিকে তালিকায় রেখেছেন মনু। আর দুটি ম্যাচের হলো, আবাহনীর বিপক্ষে দুটি জয়ের ম্যাচ।

খেলা ছাড়ার পর মনুর চাইলে সংগঠক কিংবা কোচ হতে পারতেন। কিন্তু নিজেকে বিতর্কের মধ্যে জড়াতে চাননি দেশসেরা এই উইঙ্গার। তার মতে, যে সমর্থকদের কারণে ‘মনু’ হয়েছেন, তাদের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চান তিনি। তবে তার অভিমান ছিল। শোনা যায়, পরের দিকে মোহামেডান ক্লাবে যেতেন না মনু। স্টেডিয়ামে খেলা দেখতেন লুকিয়ে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দরজা মাড়াননি কখনই।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাই ছিলেন মনু। সবার অন্তরে ছিলেন ‘চিতাবাঘ’ হয়ে। থাকবেন আজীবন।

ফিচার ইমেজ- Prothom Alo

Related Articles