ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১। ১১ তম ম্যাচ, ১০ ডিসেম্বর। ম্যাচের ৫০ তম চাল তখন। কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলা ম্যাগনাস তখন খেলেন Qc5, একইসাথে সাদা রুক আর পাসড এ-পন এর ওপর ডাবল অ্যাটাক। পরমুহূর্তেই চ্যাম্পিয়নশিপ চ্যালেঞ্জার ইয়ান নেপোমনিয়াশি হার মেনে হ্যান্ডশেক করেন ম্যাগনাস কার্লসেনের সাথে, নিশ্চিত হয়ে যায়- পঞ্চমবারের মতো রাজমুকুট জিতে নিয়েছেন ম্যাগনাসই।
কিছুদিন পর ম্যাগনাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার আর টাইটেল ডিফেন্ড করার আগ্রহ নেই, মোটিভেশন খুঁজে পাচ্ছেন না আর। যদি আলিরেজা ফিরৌজা ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট জিতে তাকে চ্যালেঞ্জ না করেন, তাহলে তিনি হয়তো স্বয়ং রাজমুকুট ত্যাগ করবেন।
দেখতে দেখতে সেই ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। এখন দেখা যাক, কে জিতবেন এবারের ক্যান্ডিডেটস? ম্যাগনাস কি টাইটেল ডিফেন্ড করবেন, নাকি নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখতে পাব আমরা?
ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট
এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের চ্যালেঞ্জার নির্ধারণ করার জন্য। কারা খেলবেন এই টুর্নামেন্ট? এর প্রতিযোগী নির্ধারণের জন্য সারা বিশ্বে বেশ কিছু টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, যেসব থেকে নিয়মকানুন মেনে শীর্ষস্থান অধিকারীরা এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
পেয়ারিং
সবার আগে জেনে নেয়া যাক এবারের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাপারে।
কোয়ালিফাই করার ক্রমানুসারে প্রতিযোগীগণ হচ্ছেন যথাক্রমে:
১) ইয়ান নেপোমনিয়াশি (র্যাঙ্কিং ৬, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ রানারআপ)
২) তৈমুর রাজাবভ (র্যাঙ্কিং ১৩, ফিদে মনোনীত)*
৩) ইয়ান ক্রিস্তফ দুদা (র্যাঙ্কিং ১৬, ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন)
৪) ডিং লিরেন (র্যাঙ্কিং ২, টপ রেটেড)**
৫) আলিরেজা ফিরৌজা (র্যাঙ্কিং ৩, গ্র্যান্ড সুইস চ্যাম্পিয়ন)
৬) ফাবিয়ানো কারুয়ানা (র্যাঙ্কিং ৪, গ্র্যান্ড সুইস রানারআপ)
৭) হিকারু নাকামুরা (র্যাঙ্কিং ১১, গ্র্যান্ড প্রিক্স চ্যাম্পিয়ন)
৮) রিহার্ড রাপোর্ট (র্যাঙ্কিং ৫, গ্র্যান্ড প্রিক্স রানারআপ)
* তৈমুর রাজাবভ গত ক্যান্ডিডেটসে কোয়ালিফাই করেছিলেন। কিন্তু কোভিডের মাঝে ফিদে যখন খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানান যাতে টুর্নামেন্ট পেছানো হয়। কিন্তু ফিদে তার আহ্বানের তোয়াক্কা না করে টুর্নামেন্ট চালিয়ে নেয়। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয় কিছুদিনের মধ্যেই, তাই টুর্নামেন্টের মাঝপথে সেটি থামিয়ে দিতে তারা বাধ্য হয়। এক বছর পরে তারা গতবারের ক্যান্ডিডেটস শেষ করে। ফিদে তাদের এই ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য, এবং তৈমুরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য এবারের ক্যান্ডিডেটসে তাকে একটি সিট দিয়েছে।
** ডিং লিরেন সুযোগ পেয়েছেন সার্গে কারিয়াকিনের ফাঁকা জায়গায়। সার্গে বিশ্বকাপের রানারআপ হয়ে স্পট নিশ্চিত করেন, কিন্তু শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ফিদে কর্তৃক ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হন। ফলে তার ফাঁকা স্থানে ডিং লিরেন সুযোগ পান মে মাসের সর্বোচ্চ রেটিংধারী হবার সুবাদে।
বি.দ্র.: এখানে প্লেয়ারদের মে মাসের রেটিং এবং সেই অনুযায়ী র্যাঙ্কিং তুলে ধরা হয়েছে।
সূচি এবং নিয়মকানুন
এবারের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৬ জুন থেকে ৫ জুলাই, স্পেনের মাদ্রিদের প্যালেস অব সান্তনাতে, যেহেতু ২০২৩ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। নিচে এই টুর্নামেন্টের বিস্তারিত সূচি তুলে ধরা হলো।
ফরম্যাট
১) টুর্নামেন্টটি ডাবল রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রতি প্লেয়ার ১৪টি করে ম্যাচ খেলবেন।
২) টাইম কন্ট্রোল: প্রথম ৪০টি চালের জন্য ১২০ মিনিট, এর পরবর্তী ২০ চালের জন্য ৫০ মিনিট, এরপর গেমের বাকি অংশের জন্য প্রতি চালে ৩০ সেকেন্ডের ইনক্রিমেন্টসহ ১৫ মিনিট।
৩) ৪০ তম চালের আগে খেলোয়াড়গণ ড্রতে সম্মত হতে পারবেন না, তবে থ্রি মুভ রিপিটিশনে ড্র হতে পারবে।
৪) প্রতি জয়ের জন্য থাকছে ১ পয়েন্ট, ড্রয়ের জন্য ০.৫ পয়েন্ট, আর হারের জন্য ০ পয়েন্ট।
৫) ১৪ রাউন্ড শেষে যার পয়েন্ট বেশি, তিনিই পরবর্তীতে ম্যাগনাসের চ্যালেঞ্জার হিসেবে নির্বাচিত হবেন। ম্যাগনাস যদি স্বেচ্ছায় টাইটেল ছেড়ে দেন, সেক্ষেত্রে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে লড়বেন এই টুর্নামেন্টের ১ম ও ২য় স্থান অধিকারী খেলোয়াড়।
টাইব্রেক
যদি প্রথম স্থানের কয়েকজন খেলোয়াড়ের পয়েন্ট সমান হয়ে যায়, তাহলে টাইব্রেক অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৩ সাল থেকে টাইব্রেকের নিয়ম ছিল সমান পয়েন্টধারীদের মাঝে যার জয়সংখ্যা বেশি, তিনিই হবেন বিজয়ী। উল্লেখ্য, ৭ম ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে ভ্লাদিমির ক্রামনিক এবং ম্যাগনাস কার্লসেনের পয়েন্ট সমান থাকলেও এই নিয়মানুসারে ম্যাগনাস কার্লসেন বিজয়ী হন। কিন্তু এবার এই নিয়মে পরিবর্তন এসেছে। এবারে টাইব্রেক হবে র্যাপিড এবং ব্লিটজ ফরম্যাটে।
নিয়ম
১) দুজন খেলোয়াড়ের পয়েন্ট সমান হলে দুটি ১৫+১০ ফরম্যাটের র্যাপিড ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এতেও ফলাফলের নিষ্পত্তি না হলে ৩+২ ফরম্যাটের দুটি ব্লিটজ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এতেও ফলাফলের নিষ্পত্তি না হলে কালার অল্টারনেট করে ব্লিটজ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আরমাগেডন বা সাডেন ডেথ, যেখানে একটি ডিসাইসিভ গেম নির্ধারণ করে দেবে বিজয়ী কে।
২) তিনজন থেকে আটজনের সকলেরই পয়েন্ট সমান হলে তাদের মধ্যে ১৫+১০ ফরম্যাটের র্যাপিড টুর্নামেন্ট, এবং এতেও ফলাফলের নিষ্পত্তি না হলে ৩+২ ফরম্যাটের ব্লিটজ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাইজপুল
২০২২ ক্যান্ডিডেটসের প্রাইজ ফান্ড হচ্ছে ৫,০০,০০০ ইউরো। এর বণ্টন নিম্নরূপ:
১) চ্যাম্পিয়ন: ৪৮,০০০ ইউরো
২) রানার আপ: ৩৬,০০০ ইউরো
৩) তৃতীয় স্থান অধিকারী: ২৪,০০০ ইউরো
এছাড়া, প্রতি ০.৫ পয়েন্টের জন্য খেলোয়াড়রা পাবেন ৩,৫০০ ইউরো করে। এবার একনজরে প্রত্যেক খেলোয়াড় সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক।
১) ইয়ান নেপোমনিয়াশি (রেটিং ২৭৭৩, বয়স ৩১)
বর্তমানে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকারী রুশ গ্র্যান্ডমাস্টার ইয়ান নেপোমনিয়াশির এটি ২য় ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট। গত ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট জিতে তিনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাসের চ্যালেঞ্জার হন, এবং চ্যাম্পিয়নশিপে হেরে অটো সিলেকশনে এই ক্যান্ডিডেটসে স্পট নিশ্চিত করেন।
গত বছর প্রথম এসেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে ভালো অবস্থানেই থাকবেন বলা যায়। সাথে এবার ফর্মও যাচ্ছে ভালো। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাসের কাছে হেরে গেলেও এরপর র্যাপিড চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাসকে পেছনে ফেলে রানারআপ হন নেপো। বেশ কয়েকটি অনলাইন টুর্নামেন্টেও দুর্দান্ত খেলেছেন এই রুশ নাগরিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চলমান চ্যাম্পিয়নস চেস ট্যুরের প্রথম টুর্নামেন্ট এয়ারথিংস মাস্টার্স, যেখানে ফাইনালে ম্যাগনাসের কাছে হেরে রানারআপ হয়েছেন তিনি। তবে ফাইনালের আগপর্যন্ত তার বাকি প্রতিপক্ষদের (লেভন এবং এরিক হ্যানসেন বাদে) ধরাশায়ী করে দিয়েছেন দাবা বোর্ডে, তার দ্রুতগতির আক্রমণাত্মক কৌশলের মাধ্যমে। যদিও সুপারবেট ক্লাসিকে তার সময়টা ভালো যায়নি, নয়জনের মধ্যে হয়েছেন সপ্তম, তবে আশা করা যায় পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা সঙ্গী করে বোর্ডে ঝড় তুলবেন তিনি। এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চোক করে বসেন তিনি, যা আমরা দেখতে পেয়েছি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের ৬ষ্ঠ গেমের পর থেকে (১৩৬ চালের সেই বিখ্যাত ম্যাচ)। এদিক থেকে একটু পিছিয়েই থাকবেন তিনি।
খেলার ধরন
তার খেলার ধরন সম্পর্কে বলতে গেলে সবার আগে মাথায় আসবে একটা শব্দ- গতি। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চাল দেন তিনি। আক্রমণাত্মক দাবা তার সহজাত। ছন্দে থাকলে, এবং নিজের সহজাত প্রবৃত্তির ওপর বিশ্বাস রাখলে যেকোনো প্রতিপক্ষকে দাবা বোর্ডে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা তার আছে। সাদা নিয়ে তার পছন্দের ওপেনিং রুই লোপেজ, বার্লিন ডিফেন্স, আর কালো নিয়ে সিসিলিয়ান নাইদর্ফ।
২) তৈমুর রাজাবভ (রেটিং ২৭৫৩, বয়স ৩৪)
আজেরি দাবাড়ু রাজাবভের এটি তৃতীয় ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট। ২০১৯ সালে ফিদে ওয়ার্ল্ড কাপ জিতে ২০২০ সালের ক্যান্ডিডেটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন তিনি। কিন্তু কোভিডের কারণে নাম প্রত্যাহার করে নেন তখন। এজন্য ফিদে ২০২২ সালের ক্যান্ডিডেটসে রাজাবভকে ডিরেক্ট এন্ট্রি দেয়।
নিকট অতীতে কোনো ক্লাসিক্যাল গেম খেলেননি রাজাবভ, তাই তার ফর্ম নিয়ে আলোচনা করতে হলে তার অনলাইন র্যাপিড এবং ব্লিটজ ফর্ম বিবেচনায় নিতে হবে। ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়নস চেস ট্যুরে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন তিনি। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস চেস ট্যুর ফাইনালে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট ছিল তার, সম্মুখ সমরে ম্যাগনাসকে হারিয়ে দেন তিনি।
খেলার ধরন
ট্যাকটিক্যাল; পছন্দের ওপেনিং কিংস ইন্ডিয়ান ডিফেন্স। এই ওপেনিংকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তবে তার প্লেয়িং স্টাইল ড্র হেভি, যা নিয়ে তার অনেক সমালোচনা করা হয়।
৩) ইয়ান ক্রিস্তফ দুদা (রেটিং ২৭৫০, বয়স ২৪)
ক্লাসিক্যাল গেমে ম্যাগনাসের ১২৫ গেমের আনবিটেন স্ট্রিক ভাঙা গ্র্যান্ডমাস্টার হচ্ছেন পোলিশ নাগরিক ইয়ান ক্রিস্তফ দুদা। ২০২১ সালে ফিদে ওয়ার্ল্ড কাপ জিতে তিনি ক্যান্ডিডেটসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। এই ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনালে ম্যাগনাসকে হারিয়ে দেন তিনি, ফাইনালে সার্গে কারিয়াকিনকে হারিয়ে হন চ্যাম্পিয়ন। এটি তার প্রথম ক্যান্ডিডেটস।
তেজোদ্দীপ্ত এবং ধূর্ত প্লেয়ার দুদা থেকে এবারের ক্যান্ডিডেটসে দাবা বোর্ডে অসাধারণ কিছুই আশা করা যায়। এই মুহূর্তে ফর্মের তুঙ্গে আছেন তিনি। গত বছরের শেষে অনুষ্ঠিত ব্লিটজ চ্যাম্পিয়নশিপে রানারআপ হন তিনি। টাটা স্টিল চেসে যদিও নবম স্থান অধিকার করেছেন, তবে এরপর চলমান চ্যাম্পিয়নস চেস ট্যুরে তার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত।
চ্যারিটি কাপে ম্যাগনাসের কাছে ব্লিটজ টাইব্রেকে হেরে রানারআপ হন। তবে সেই ফাইনালের এক ম্যাচে মাত্র ২৬ চালে হারিয়ে দিয়েছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে। এরপর অসলো ই-স্পোর্টস কাপে চ্যাম্পিয়ন হন দুদা। চলমান গ্র্যান্ড চেস ট্যুরের সুপারবেট ক্লাসিকে অংশগ্রহণ না করলেও সুপারবেট র্যাপিড এবং ব্লিটজ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি, যেখানে খেলেছেন ১৫ তম চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ, লেভন আরোনিয়ান, ওয়েসলি সো, ফাবিয়ানো কারুয়ানা। সুতরাং বলতেই হবে, ক্যান্ডিডেটস প্রতিযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে কম রেটেড প্লেয়ার হলেও তাকে হেলাফেলা করাটা হবে অনেক বড় ভুল।
খেলার ধরন
বেশ ধূর্ত একজন দাবাড়ু দুদা। ঠিক কখন তিনি কাউন্টার অ্যাটাক করে বসবেন তা আঁচ করা বেশ কঠিন। অ্যালেক্সেই শিরভ, দানিয়েল দুবভদের মতো অতি-আক্রমণাত্মক না হলেও মাঝে মাঝেই দুদাকে দেখা যায় দুর্দান্ত কিছু স্যাক্রিফাইস করে চমকে দিতে! যেমন চমকে দিয়েছিলেন ম্যাগনাসকে, যে ম্যাচে মাত্র ২৬ চালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দেন তিনি। সেই গেমের ১৮ তম চালে দুর্দান্ত একটি নাইট স্যাক্রিফাইস করে চোখ ধাঁধিয়ে দেন সবার। শুরুর দিকটা ভালোমতো পার করে ফেলতে পারলে তার মতো ভয়াবহ খেলোয়াড় খুব কমই পাওয়া যাবে। সাদা নিয়ে তার পছন্দের ওপেনিং ইটালিয়ান গেম জোকো পিয়ানো, আর কালো নিয়ে কুইন্স গ্যাম্বিট ডিক্লাইনড।
৪) ডিং লিরেন (রেটিং ২৮০৬, বয়স ২৯)
বর্তমানে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ২য় স্থান অধিকারী ডিং লিরেনের এটি ৩য় ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট। অনেকের মতেই, ডিং লিরেন এই ক্যান্ডিডেটসের সেরা খেলোয়াড়। আর সেই ভাবনা যে অমূলক নয়, সেটার প্রমাণ তিনি দিয়ে যাচ্ছেন। ইদানিং বেশ ভালো ফর্মে আছেন এই চীনা দাবাড়ু। অথচ তার এই ক্যান্ডিডেটস খেলাই হতো না, যদি না ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন সরকারের পক্ষ নিয়ে চেস ওয়ার্ল্ড কাপের রানারআপ সার্গে কারিয়াকিন নিষিদ্ধ হতেন।
কারিয়াকিন নিষিদ্ধ হওয়ায় তার স্থলে খেলার সুযোগ পেতেন ক্যান্ডিডেটসে জায়গা না পাওয়া টপ রেটেড খেলোয়াড়। শর্ত হলো, তাকে আবার ৩০টি ক্লাসিক্যাল গেম খেলতে হবে (২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মে মাসের মাঝে)। ডিং লিরেনের রেটিং এপ্রিল মাসে সবার চেয়ে বেশি থাকলেও করোনার কারণে ভ্রমণ জটিলতায় ম্যাচ খেলতে পেরেছেন সর্বসাকুল্যে ৪টি, গ্র্যান্ড প্রিক্স টুর্নামেন্টেও খেলতে পারেননি যে কারণে। যে কারণে তাকে স্পট পাওয়ার জন্য ২৬টি রেটেড ক্লাসিক্যাল গেম খেলতে হতো। তিনি এপ্রিল মাসে ২৮টি ক্লাসিক্যাল গেম খেলে ক্যান্ডিডেটসে নিজের স্পট নিশ্চিত করেন, এবং এর মাধ্যমে ২৮০৬ রেটিং অর্জন করে বিশ্বর্যাঙ্কিংয়ে ২য় স্থান অর্জন করেন।
ফর্মের দিক দিয়ে বেশ ভালো অবস্থানে আছেন তিনি। ২০২১ সালের গোল্ডমানি এশিয়ান র্যাপিডের সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওঠেন, যেখানে ভ্লাদিস্লাভ আর্তেমিয়াভের কাছে হেরে যান। স্পিড চেস চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ওঠেন। সেখানে এক মহাকাব্যিক ম্যাচে হিকারু নাকামুরার কাছে টাইব্রেকে হেরে যান। ম্যাচ-পরবর্তী সাক্ষাতকারে হিকারু বলেছেন, এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন স্পিডচেস ম্যাচ। ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়নস চেস ট্যুরের এয়ারথিংস মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলেন, যেখানে রুশ টিনএজার আন্দ্রে এসিপেঙ্কোর কাছে হেরে যান। চ্যারিটি কাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওঠেন, যেখানে ম্যাগনাসের কাছে হেরে যান, যদিও প্রিলিমিনারিতে ম্যাগনাসকে আর আরেক ক্যান্ডিডেটস কন্টেন্ডার ইয়ান ক্রিস্তফ দুদাকে হারান তিনি। আর সদ্য সমাপ্ত চেসেবল মাস্টার্স জিতে নেন ডিং, সেমিতে ম্যাগনাসকে বাড়ির পথ ধরিয়ে দিয়ে। এছাড়াও ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের গত আসরের দ্বিতীয়ার্ধে সম্ভাব্য ৭ পয়েন্টের মধ্যে ৪.৫ স্কোর করেছিলেন, যদিও প্রথমার্ধের বাজে পারফরম্যান্সের জন্য ক্যান্ডিডেটস জিততে পারেননি। সুতরাং, অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান ফর্মের ভিত্তিতে আশা করা যায় বেশ ভালো পারফরম্যান্স উপহার দেবেন ডিং।
খেলার ধরন
খেলার ধরনের দিক দিয়ে তাকে তুলনা করা হয় আয়রন তিগ্রান খ্যাত তিগ্রান পেত্রসিয়ানের সাথে। বেশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঠান্ডা মাথায় খেলেন তিনি। সাদা নিয়ে তার পছন্দের ওপেনিং কিংস ইন্ডিয়ান, এবং কালো নিয়ে রুই লোপেজ।
৫) আলিরেজা ফিরৌজা (রেটিং ২৮০৪, বয়স ১৮)
গত কয়েক বছরে যে কয়জন তরুণ এনার্জেটিক দাবাড়ুর উত্থান ঘটেছে, তাদের মধ্যে সবার আগে নাম আসবে ইরানি বংশোদ্ভুত ফরাসি দাবাড়ু আলিরেজা ফিরৌজার। ২৮০০ রেটিং অর্জনকারী সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু তিনি, আগের রেকর্ড ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের। এটি আলিরেজার প্রথম ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট। ২০২১ সালে গ্র্যান্ড সুইস টুর্নামেন্ট জিতে তিনি ক্যান্ডিডেটসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। এবারের ওয়ার্ল্ড ব্লিটজ চ্যাম্পিয়নশিপের ৩য় স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
প্রথম ক্যান্ডিডেটস যেহেতু, আশা করা যায় দাবার বোর্ডে ঝড় তুলবেন এই টিনএজ প্রডিজি। যদিও সম্প্রতি তেমন একটা খেলেননি তিনি, চলমান গ্র্যান্ড চেস ট্যুরের সুপারবেট ক্লাসিক রোমানিয়ায় ভালো করতে পারেননি। তবে এর আগে গত বছরের শেষ নাগাদ তার ফর্ম ছিল অনবদ্য! একের পর এক টুর্নামেন্ট জিতে সবার নজরে আসেন তিনি। মাত্র টিনএজেই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে উঠে এসে দাবা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। গত বছরের চ্যাম্পিয়ন্স চেস ট্যুরের এইমচেস ইউএস র্যাপিডের প্রিলিমিনারিতে ম্যাগনাসের সাথে ম্যাচে দুর্দান্ত এক অ্যাটাকিং গেমপ্লেতে ম্যাগনাসকে হারিয়ে তিনি চমকে দিয়েছেন সবাইকে।
গ্র্যান্ড সুইসে আলিরেজার পারফরমেন্স ছিল অপ্রতিরোধ্য! একমাত্র ফাবি ছাড়া কেউ তার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। গ্র্যান্ড সুইস জিতে টিনএজেই ক্যান্ডিডেটসে কোয়ালিফাই করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। যদি এরপর ক্যান্ডিডেটস জিতে ম্যাগনাসকে হারাতে পারেন, তাহলে এক বিশ্বরেকর্ডই হবে বৈকি! এত কম বয়সে এর আগে কেউ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবার হাতছানি তার সামনে। ইতোমধ্যেই সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ ২৮০০ রেটিং অর্জন করে সেই স্বপ্নকে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত করে তুলেছেন আলিরেজা! দেখা যাক, বিশ্বরেকর্ড করতে পারেন নাকি এই ওয়ান্ডারকিড!
খেলার ধরন
ভয়ডরহীন, আক্রমণাত্মক, দ্রুতগতির, এবং তেজোদ্দীপ্ত। সাদা নিয়ে তার পছন্দের ওপেনিং ইটালিয়ান গেম, এবং কালো নিয়ে ওপেন সিসিলিয়ান ডিফেন্স, সিসিলিয়ান নাইদর্ফ ভ্যারিয়েশন।
৬) ফাবিয়ানো কারুয়ানা (রেটিং ২৭৮৬, বয়স ২৯)
ববি ফিশারের পর মার্কিনিরা যে দাবাড়ুর ওপর সবচেয়ে বেশি আশা করে মার্কিন মুলুকে রাজমুকুট ফিরিয়ে আনার, তিনি ফাবিয়ানো কারুয়ানা। এ নিয়ে টানা চতুর্থবার ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন এই মার্কিন নাগরিক। ২০২১ সালে গ্র্যান্ড সুইস টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়ে তিনি ক্যান্ডিডেটস স্পট নিশ্চিত করেছেন, ফাইনালে হেরে গিয়েছেন আলিরেজা ফিরৌজার কাছে।
অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে ক্যান্ডিডেটসের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তিনি। ২০১৩ সাল থেকে যতগুলো ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট খেলা হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে কয়েকজন সেকেন্ড হাফ ওয়ারিয়র রয়েছেন। যারা দ্বিতীয়ার্ধে বোর্ড কাঁপিয়েছেন, ফাবিয়ানো কারুয়ানা তাদের একজন।
পূর্ববর্তী তিনটি ক্যান্ডিডেটসে তার পারফরমেন্স এরকম: রানারআপ, চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ। সুতরাং, তাকে হারাতে ভালোই বেগ পেতে হবে সবাইকে। তাছাড়া, ইদানিং মোটামুটি বেশ ভালো ফর্মে আছেন বলা যায়। ২০২২ সালের শুরুতে টাটা স্টিল চেসে যদিও ৮ম স্থান অধিকার করেছেন, তবে এরপর আমেরিকান কাপ জিতে নেন লেভন আরোনিয়ানকে হারিয়ে (লেভন আরোনিয়ান গত বছর জাতীয়তা বদল করেছেন)। এরপর চলমান গ্র্যান্ড চেস ট্যুরের সদ্যসমাপ্ত সুপারবেট ক্লাসিক রোমানিয়ায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেছেন, র্যাপিড এবং ব্লিটজেও ৪র্থ স্থান অর্জন করেছেন।
খেলার ধরন
ধীরস্থির, পজিশনাল খেলোয়াড়। চেস ইঞ্জিনের মতো প্রিসাইজ মুভ খেলে থাকেন বলে তাকে বলা হয়ে থাকে ‘ফাবি দ্য চেস মেশিন’। সাদা নিয়ে তার পছন্দের ওপেনিং রুই লোপেজ বার্লিন ডিফেন্স, আর কালো নিয়ে পেট্রফ।
৭) হিকারু নাকামুরা (রেটিং ২৭৬০, বয়স ৩৪)
তার ক্যান্ডিডেটসে কোয়ালিফাই করাটাই চমক। দীর্ঘ ২৭ মাস ক্লাসিক্যাল গেম খেলেননি প্রফেশনাল চেস স্ট্রিমার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই মার্কিন। তবে ২৭ মাস পর ২০২২ সালে ওয়াইল্ড কার্ড দিয়ে গ্র্যান্ড প্রিক্সের মাধ্যমে ক্লাসিক্যাল গেমে ফিরেই গ্র্যান্ড প্রিক্স জিতে ক্যান্ডিডেটসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। এটি তার দ্বিতীয় ক্যান্ডিডেটস।
২০১৫ সালে একবার ক্লাসিক্যাল র্যাঙ্কিংয়ে ২য় স্থান অধিকার করেন তিনি। আর এই ২৭ মাসে প্রচুর র্যাপিড, ব্লিটজ এবং বুলেট চেস খেলেছেন, যেটা মিডলগেম আর এন্ডগেমে তাকে করে তুলেছে অসাধারণ দক্ষ। বর্তমানে লাইভ রেটিংয়ে র্যাপিড আর ব্লিটজ উভয় র্যাঙ্কিংয়েই দুইয়ে রয়েছেন হিকারু। ব্লিটজে যেটি ম্যাগনাসের থেকেও এগিয়ে!
ফর্ম বিচার করতে হলে আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে তার র্যাপিড এবং ব্লিটজ ফর্ম। এ সময়কার সেরা ব্লিটজ প্লেয়ারদের একজন হিকারু। গত বছর স্পিড চেস চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। কোভিড চলাকালে অনলাইনে ম্যাগনাসের সাথে প্রচুর ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ম্যাগনাস কার্লসেন ইনভাইটেশনাল টুর্নামেন্টের প্রিলিমিনারিতে তাদের বং ক্লাউড ওপেনিং জোক এখনও অনেকের চোখে ভাসে। গত বছর চ্যাম্পিয়নস চেস ট্যুরের নিউ ইন চেস ক্লাসিকের ফাইনালে ওঠেন তিনি, যেখানে ম্যাগনাসের কাছে হেরে যান।
খেলার ধরন
ট্যাকটিক্যাল, ইউনিভার্সাল স্টাইল অব প্লে। শুরুর দিক ভালোমতো পার করতে পারলে তিনি ভয়াবহ হয়ে ওঠেন। সাদা নিয়ে তার সবচেয়ে বেশি খেলা ওপেনিং হচ্ছে রেটি ওপেনিং, কালো নিয়ে রুই লোপেজ বার্লিন ডিফেন্স।
৮) রিহার্ড রাপোর্ট (রেটিং ২৭৭৬, বয়স ২৬)
২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড প্রিক্স টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়ে ক্যান্ডিডেটসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন হাঙ্গেরিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার রিহার্ড রাপোর্ট। এটি তার প্রথম ক্যান্ডিডেট।
২০১৭ সালে তার রেটিং ছিল ২৬৭৫। সেখান থেকে বেশ দ্রুত উত্থান হয় তার। বর্তমানে তিনি চেস র্যাঙ্কিংয়ের ৫ম স্থানে আছেন। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত টাটা স্টিল মাস্টার্সে ৩য় স্থান অধিকার করেন। সাম্প্রতিক ফর্ম মোটামুটি। সদ্য সমাপ্ত সুপারবেট ক্লাসিক তার ভালো যায়নি, পয়েন্ট টেবিলের সবার শেষে স্থান হয়েছে। তবে আশা করা যায়- দ্রুতই এ থেকে ফিরে আসতে পারবেন তিনি। র্যাপিড ও ব্লিটজেও তার অবস্থান ৬ষ্ঠ।
খেলার ধরন
পজিশনাল প্লেয়ার, শুরু থেকেই সেন্টার কন্ট্রোল করে পজিশন ধরে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। বেশ আনইউজুয়াল ওপেনিং প্রায়ই খেলতে দেখা যায় তাকে, নির্দিষ্ট কোনো পছন্দের ওপেনিং নেই তার।
শেষ কথা
ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট কে জিতবেন, সেটা আগে থেকে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না অনুমিতভাবেই। অধিকন্তু, এই সুপারজিএমদের মধ্যে রেটিংয়ের পার্থক্য খুবই কম। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক ফর্ম, খেলার ধরন বিবেচনায় কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে শুধু। দ্য চেস মেশিন ফাবি এই স্কোয়াডের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, তরুণ তুর্কিতে বাজি রাখতে চাইলে অবশ্যই আলিরেজা, আর স্ট্রিমারপ্রিয় আপামর মার্কিন কিডদের পছন্দের শুরুতে থাকবেন হিকারু!
ফর্মে ফেরা ডিং, আর গ্র্যান্ড প্রিক্সে ঝলক দেখানো রাপোর্টও চাইবেন মুকুটটা নিজের করে নিতে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ধূর্ত খেলোয়াড় দুদা, গত বছরেই ম্যাগনাসকে হারানো রাজাবভ, আর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া নেপোকেই বা কীভাবে পিছিয়ে রাখবেন? প্রথমার্ধ শেষে কিছুটা ভাল ধারণা পাওয়া যেতে পারে ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট কোন দিকে যাচ্ছে সেই ব্যাপারে। হ্যাপি চেসিং!