গত ৩০ বছরে খেলাধুলা এগিয়েছে অনেক। তবে সবচেয়ে আমূল পরিবর্তন এসেছে ডলারের ঝনঝনানিতে। ‘৭০ কিংবা ‘৮০ এর দশকেও এত টাকা খরচ করতে হয়নি কোনো ক্লাবকে। কিন্তু প্রসারের ফলে ক্লাবগুলোর আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি খরচও বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ।
তবে সবধরনের খেলাধুলা মিলিয়ে অর্থকড়ি খরচের বেলায় এনবিএ’র বাস্কেটবল দল, ফুটবল ক্লাব কিংবা আমেরিকান বেসবল ক্লাবগুলোই এগিয়ে। এইসব ক্লাবগুলোর ব্যয়ের বড় একটা অংশ চলে যায় খেলোয়াড়দের বেতন ভাতা সংক্রান্ত বিষয়ে। আজ আমরা দেখবো এই বছরের সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া দশটি ক্লাব সম্পর্কে।
১০. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৬.৫ মিলিয়ন ইউরো (৮.৩ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : অ্যালেক্সিস সানচেজ (২৩ মিলিয়ন ডলার)
একটা সময় বড় বড় খেলোয়াড়েরা ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মাতালেও তা এখন ধূসর অতীত। সময়টাও ভালো যাচ্ছে না রেড ডেভিলদের। তারপরও খেলোয়াড়দের বেতন ভাতায় এখনো বেশ খরচ করে চলেছে ক্লাবটি।
গত মৌসুমে আর্সেনাল থেকে অ্যালেক্সিস সানচেজকে দলে ভেড়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বর্তমানে এই চিলিয়ান ফরোয়ার্ডই ক্লাবটির সবচেয়ে বেতনধারী খেলোয়াড়। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ লাখ ইউরো পেয়ে থাকেন তিনি। এছাড়াও মার্শাল, লিনগার্ড, পগবা বা মাতাদের পিছনে টাকার বড় একটা অংশ ঢালতে হয় ক্লাবটিকে। যদিও গুঞ্জন রয়েছে, খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো ক্লাবের ড্রেসিংরুমে বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছে।
৯. জুভেন্টাস
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৬.৭ মিলিয়ন ইউরো (৮.৫৫ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৩০ মিলিয়ন ডলার)
চলতি মৌসুমে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে ভিড়িয়ে বেশ শোরগোল ফেলে দেয় ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাস। যদিও রোনালদোকে দলে ভেড়াতে ‘তুরিনের বুড়ি’রা হিগুয়েইন ও বুফনকে ছাড়তে বাধ্য হয়। আগের সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় হিগুয়েইন ক্লাব ছাড়লেও রোনালদো দলে যোগ দেওয়াতে জুভেন্টাসের খেলোয়াড়দের বেতন ভাতাতেও বেশ কিছু অতিরিক্ত অর্থকড়ি যোগ করতে হয় জুভেন্টাসকে। এগনেলি পরিবারের মালিকানাধীন থাকা জুভেন্টাসকে অবশ্য আরো বেশ কিছু খেলোয়াড়ের জন্য বড় অঙ্কের টাকা ঢালতে হয়। দিবালা, পিয়ানিচ, বোনুচ্চিসহ আরো কিছু খেলোয়াড়ও পেয়ে থাকেন কাড়ি কাড়ি টাকা। তবে খেলোয়াড় ও দল ম্যানেজমেন্টে জুভেন্টাস বর্তমানে ইউরোপের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
৮. মায়ামি হিট
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৭ মিলিয়ন ইউরো (৮.৯৫ মিলিয়ন ইউরো)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : হাশান হোয়াইটসাইড (২৫.৪ মিলিয়ন ডলার)
আট নাম্বার জায়গায় রয়েছে এনএনবিএর ক্লাব মায়ামি হিট। সত্যি বলতে, মায়ামি হিটের এই তালিকায় আরো উপরে স্থান পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ক্রিস বশকে বেতন হিসেবে দেওয়া ২৬ মিলিয়ন ইউরো এখানে যোগ হচ্ছেনা। ট্যাক্স সমস্যার কারণে কিছু উচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়কেও খেলাতে পারছেনা মায়ামি হিট। তবে ২০১৮ – ২০১৯ মৌসুমে ডোয়াইন ওয়েডসের বিদায়ী মৌসুমে ক্লাবটিকে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে। ডোয়াইনের বিদায়ে বেশ কিছু খেলোয়াড়ও দলে ভেড়ায় মায়ামি হিট।
৭. হিউস্টন রকেটস
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৭.৫ মিলিয়ন ইউরো (৯.৬ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : ক্রিস পল (৩৫.৬ মিলিয়ন ডলার)
মায়ামি হিটের মতো না করে হিউস্টন রকেট নিজেদের প্ল্যানমতো এগিয়েছে গত কয়েক বছর। ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে দল গুছানো শুরু করে এই বাস্কেটবল ক্লাবটি। দলে ভেড়ায় জেমস হারডেনকে। পাশাপাশি রায়ান এন্ডারসনকেও তারা ২০১৬ সালে দলে নিয়ে আসে। এত সব বড় বড় তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড়কে ধরে রাখতে তাই হিউস্টন রকেটসকে দেদারসে ডলার খরচ করতে হয়েছে। আর তাই এই তালিকায় সাত নাম্বার স্থানটি দখল করেছে এই এনবিএ’র বাস্কেটবল ক্লাবটি।
৬. টরোন্টো র্যাপটরস
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৭.৫৮ মিলিয়ন ইউরো (৯.৬৭ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : কাইল লৌরি (৩১ মিলিয়ন ডলার)
টরোন্টো র্যাপটরস ক্লাবটি ধূর্ত কয়েকজন কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত। মাসাই উজিরি নামের এই অফিসিয়ালরা বেশ প্রভাবশালী এবং পুরো সংঘটন এর উপর প্রভাব খাটিয়ে চলেন। তাই গত সাড়ে পাঁচ বছরে ধীরে ধীরে টরোন্টো র্যাপটরসকে বেশ শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলে। ডেমার ডেরোজান কিংবা কাইল লৌরির মতো বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ায় টরোন্টো। তাই বেতন ভাতায় বেশ খরচ করতে হয় ক্লাবটিকে। ২০১৮ সালের সেরা ব্যয়বহুল দশ ক্লাবে টরোন্টো র্যাপটরস স্থান পেয়েছে ছয় নাম্বারে।
৫. ওয়াশিংটন উইজার্ড
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৭.৬৩ মিলিয়ন ইউরো (৯.৭২ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : ওটো পর্টার জুনিয়র (২৬ মিলিয়ন ডলার)
তালিকায় পাঁচ নাম্বারেও রয়েছে এনবিএ’র আরেক স্বনামধন্য ক্লাব ওয়াশিংটন উইজার্ড। তবে এই ক্লাবের কর্মকর্তারা টরোন্টোর মত এতটা সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার এবং বিচক্ষণ না হওয়ায় অতটা ভালো অবস্থানেও নেই ওয়াশিংটন উইজার্ড। সবচেয়ে বেশি বেতনধারী খেলোয়াড় ওটো পর্টারও বেশ কয়েক ম্যাচ ধরে খেলার বাইরে রয়েছেন। গত ৩-৪ মৌসুমে খেলোয়াড় বেতন ভাতায় ২৭০ মিলিয়ন ইউরোর উপর খরচ করেও তেমন সাফল্য পায়নি ওয়াশিংটন উইজার্ড। তবে এইবার দলটিকে নিয়ে বেশ আশাবাদী দলের কর্মকর্তারা।
৪. গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্স
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৭.৮২ মিলিয়ন ইউরো (৯.৯৬ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : স্টেফান কারি (৩৭.৫ মিলিয়ন ডলার)
২০১২ সাল পর্যন্তও দলটির অবস্থা ছিলো একেবারে যাচ্ছেতাই। কিন্তু হঠাৎ করেই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্স। ৫-৬ বছর আগেও যে দল এনবিএ’র হাসির পাত্র ছিল, তারাই আজ মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রবল পরাক্রমে।
২০১২ সালের পর তারা দলে নেয় স্টেফান কারি, ক্লে থম্পসন এবং ড্রেয়মন্ড গ্রিনকে। এরপর টানা দুইবার ফাইনাল খেলে দলটি। পরবর্তীতে তারা দলে টানে কেভিন ডুরান্টকেও। গত গ্রীষ্মেই গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্স হয়ে ওঠে সবচেয়ে প্রতিভাবান এক দল। টানা দুইবারের পর এবারও গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্সকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই দেখছেন বেশিরভাগ বাস্কেটবল বোদ্ধা।
৩. ওকলাহোমা সিটি থান্ডার
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৭.৮৫ মিলিয়ন ইউরো (১০ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : রাসেল ওয়েস্টব্রক (৩৫.৬৫ মিলিয়ন ডলার)
গত বছরে সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া ক্লাবদের প্রথম অবস্থান থেকে এইবার তিনে নেমে গেছে ওকলাহোমা সিটি থান্ডার। কারমেলো অ্যান্থনি, পল জর্জ, রাসেল ওয়েস্টব্রকদের মতো খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স দিতে হয়েছে ক্লাবটিকে। কিন্তু গড়পড়তা পারফরম্যান্স উপহার দেয় দলটি। তাই এইবার বেশ কিছু খেলোয়াড় অদলবদল করেছে ক্লাবটি। তবে তাতে ভাগ্য ফিরবে কিনা, তা এখন সময়ের হাতেই বাঁধা।
২. রিয়াল মাদ্রিদ
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ৮.০৯ মিলিয়ন ইউরো (১০.৩ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : গ্যারেথ বেল (১৮.২ মিলিয়ন ডলার)
জিনেদিন জিদান ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ে হঠাৎ করেই বিশাল ধাক্কা খায় রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো খেলোয়াড় বিদায়ের পরও ক্লাবটি গড়ে প্রতি খেলোয়াড়ের পেছনে খরচ করছে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের উপর। বর্তমানে খরচের এই তালিকায় ক্লাবটি আছে দুই নাম্বারে।
তবে এই মৌসুমে বেশ টালমাটাল অবস্থায় আছে লস ব্লাঙ্কোসরা। জুলেন লোপেতেগি বিদায়ের পরে দায়িত্বে এসেছেন সান্তিয়াগো সোলারি। তবে গোলমুখে একজন ক্রিস্টিয়ানোর অভাব দারুণভাবে বোধ করছে রিয়াল মাদ্রিদ। তাই গুঞ্জন রয়েছে, পরবর্তী মৌসুমে হ্যাজার্ড কিংবা নেইমারের মতো বড় তারকা দলে ভেড়াবে এই স্প্যানিশ ক্লাব। সেই ক্ষেত্রে বেতন ভাতায় আরো বেশি খরচ করতে হবে ক্লাবটিকে।
১. বার্সেলোনা
খেলোয়াড়প্রতি গড় বার্ষিক বেতন : ১০.৪৫ মিলিয়ন ইউরো (১৩.৩১ মিলিয়ন ডলার)
সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় : লিওনেল মেসি (৩৫ মিলিয়ন ডলার)
গত বছরের চার র্যাঙ্কিং থেকে এইবার এক লাফে প্রথম স্থানটি দখল করেছে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। গত কয়েক মৌসুম লিগে ভালো করলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে বেশ ভুগেছে বার্সেলোনা। অন্যদিকে নেইমারের প্রস্থানেও কিছুটা শূন্যতা তৈরি হয় ক্লাবে।
তাই বেশ কিছু খেলোয়াড় দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা। দেম্বেলের পাশাপাশি ন্যু ক্যাম্পে আসেন ভিদাল, লংলে, কৌতিনহোরা। তাই খেলোয়াড়দের বেতন ভাতাতেও কিছু খরচ বেড়ে যায় ক্লাবটির। তবে ক্লাবের খরচ করা টাকার বড় অংশ যায় ক্লাবটির প্রাণ লিওনেল মেসির পেছনে। এত টাকা-কড়ি খরচ করার পর এই মৌসুমে বেশ ভালোই শুরু করেছে ক্লাবটি। শেষ পর্যন্ত সব ট্রফি ঘরে তুলতে পারবে কিনা, তা অবশ্য সময়ই বলে দিবে।