ডেভিড ভিয়া: তিউয়ার সেই ছোট্ট কিশোর

“হ্যালো, ডেভিড। নিউইয়র্কে তোমাকে স্বাগতম।”

এটুকুই কেবল বুঝতে পেরেছিলাম। পরিপাটি করে কোট পরে আসা লোকটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন, আমিও মৃদু হেসে করমর্দন করলাম। এরপর তিনি কিছু একটা বললেন, বুঝতে না পেরে আমার খুব নার্ভাস লাগতে শুরু করলো। যতদূর মনে পড়ে, তিনি আমাকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন।

ইয়াঙ্কি স্টেডিয়ামের লকার রুমের বাইরের টানেলটাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা। সবেমাত্র অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে নিউ ইয়র্কে এসেছি আমি, তাদের নতুন ক্লাব NYCFC তে খেলতে। প্রথমবারের মতো স্টেডিয়ামে এসেছি, তাই হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখছিলাম সবকিছু।

Image source : the players tribune
ডেভিড ভিয়া; Image source: the players tribune

স্পেনে বড় হওয়ার কারণে আমরা আমেরিকা সম্পর্কে খুব কমই জানতাম। নিউ ইয়র্ক শহরকে কেবল সিনেমাতেই দেখেছি। আমরা কেবল একটা জিনিস সম্পর্কেই জানতাম, সেটা হলো ‘ইয়াঙ্কিজ’। তো, আমি দাঁড়িয়েছিলাম আমেরিকান ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় প্রতীকটির সামনে। ভাবছিলাম, এখন থেকে এটাই আমার নতুন বাড়ি। এমন সময় স্যুট পড়া হোমড়াচোমড়া গোছের লোকটা আমার দিকে এগিয়ে এলেন।

উনি কী বলছিলেন, আমি কিছুই ‍বুঝতে পারছিলাম না। এটাও নিশ্চিত ছিলাম না, তিনি আসলে কে! তারপর হঠাৎ করে ‘স্টেইনব্রেনার’ শব্দটা আমার কানে এলো, আর আমি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি বুঝতে পারলাম, মেয়েদের সঙ্গে টিভি দেখে ইংরেজি শেখাটা কোনো কাজেই দেবে না এখানে! 

আমি ডিজনি চ্যানেল দেখেই ‘ইংরেজিতে কথা বলতে পারবো’- এই ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু হ্যাঙ্ক স্টেইনব্রেনারের সামনে তার নিজের মাঠে দাঁড়িয়ে তাকে কী করে নিজের কথাগুলো গুছিয়ে বলবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না কিছুতেই। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিকে আমি অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি আটকা পড়েছিলাম নিজের সীমাবদ্ধতার ফাঁদেই।

হ্যাঙ্ক আর আমি খানিকক্ষণ একে অপরের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলাম। আমি আমার দোভাষীর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তাকে প্লিজ বলুন, আমি আমার ইংরেজিতে শান দিতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি!’ 

হ্যাঙ্ক হেসে ফেললেন। বললেন ‘এটা কোনো ব্যাপার না।

আমি তখনই বুঝতে পারলাম, ইংরেজি শেখাটাকে আমার আরও গুরুত্ব দিতে হবে। একজন পেশাদার শিক্ষকও খুঁজে বের করতে হবে। এটাই ছিল আমার ‘ওয়েলকাম টু নিউইয়র্ক’ মুহূর্ত। ওদের কথায়, সবারই নাকি এরকম একটা মুহূর্ত থাকে।

কেন আমি আমেরিকায় আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, এই প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে আমি কোথা থেকে উঠে এসেছি – আগে সেই গল্প বলতে হবে।

ডেভিড ভিয়ার কৈশোরের ছবি; Image Source: Entertainmentwise

আমার ছোটবেলা কেটেছে স্পেনের ছোট্ট শহর তিউয়াতে। এই শহরে তিনটা জিনিসই আছে – ফুটবল, কয়লা খনি আর আপেল। ফুটবল জিনিসটা অবশ্য আমাদের একক সম্পত্তি ছিল না। গোটা স্পেনজুড়েই লাখ লাখ শিশু স্কুলশেষে বাড়ি ফিরে রাস্তায় ফুটবল খেলতে নেমে যায়, অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওঠানো যায় না। এটাই তাদের জীবন। স্পেনে যদি ঘুরতে বের হন, দেখবেন প্রায় প্রতিটি বাড়িরই জানালার কাঁচ ভাঙা! সবই এই রাস্তায় ফুটবল খেলার ফল। এখানে ফুটবলের ১১ জনের নিয়মটা প্রায় কখনোই মানা হয়না। দেখা যায়, একটা বল নিয়ে ৪০টা শিশু সমানে দাবড়ে বেড়াচ্ছে! 

আমরা জানতাম, রাতের খাবারের জন্য ঘরে ফেরা মানেই দিনটা ওখানেই শেষ। মায়েরা আমাদের তক্ষুনি খাইয়ে জোর করে পড়তে বসিয়ে দেবেন! তাই যখনই মনে হতো যে শক্তি শেষ হয়ে আসছে, তিউয়াজুড়ে থাকা বাগানগুলোর কোনো বেড়া টপকে গাছ থেকে আপেল ‘ধার করে’ খেয়ে ফিরতাম! কিছু কিছু বাচ্চা তো আরেক কাঠি সরেস, প্রতিবেশীদের খামার থেকে খরগোশ নিয়ে চলে আসতো! আমি অবশ্য কখনও এরকম করতাম না।

আমরা সবাই আসলে একটা স্বপ্নের পেছনে দৌঁড়াচ্ছিলাম। 

সবাই ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর কথা জানে। কিন্তু আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম, আমাদের ছিল ‘স্প্যানিশ ড্রিম’! এটা ছিল – স্পেনের লাল জার্সি গায়ে দেশের জন্য প্রথম বিশ্বকাপ ছিনিয়ে আনা। ঠিক কবে থেকে আমরা এই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম, এটা সবাই ভুলে গেছে। আর আমি এটা মোটেও বাড়িয়ে বলছি না।

আমার যখন চার বছর বয়স, আমি আমার চেয়ে বয়সে বড় একদল ছেলের সঙ্গে খেলেছিলাম একবার। ওদের একজন আমার পায়ের উপর পড়ে গিয়েছিল, আমার উরুর হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল তাতে। হাড়টা এতটাই খারাপভাবে ভেঙেছিল যে, ডাক্তার বাবা-মাকে দু’টো চিকিৎসার কথা বলেছিল। এক, সার্জারি করে সারিয়ে ফেলা – যেটা অনেক সহজ, কিন্তু এতে সারাজীবনের জন্য আমার চলাফেরা হয়ে যাবে সীমিত। দুই, পা’টাকে পুরোপুরি সুস্থ হতে দেয়ার সুযোগ দেয়া। এক্ষেত্রে আমাকে নিতম্বের উপর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত একটা প্লাস্টার করে রাখতে হবে মাসের পর মাস। তবে এই চিকিৎসা কাজ না করার ঝুঁকিও ছিল, সেক্ষেত্রে সারাজীবনের জন্য আমাকে খুঁড়িয়ে চলতে হতো।   

আমার বাবার জন্য এই সমস্যার সমাধান একটাই ছিল, তিনি আমার জন্য পরের পদ্ধতিটাই গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ফুটবল-অন্তঃপ্রাণ, তার একটাই ধ্যানজ্ঞান ছিল – আমাকে পেশাদার ফুটবলার বানানো। এর জন্য আমার জন্মের মুহূর্ত থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত যা যা করার, তার সবই করেছেন। 

তিউয়ার বেশিরভাগ লোকের মতোই বাবা ছিলেন কয়লাখনির শ্রমিক। প্রতিদিন সকালে উঠে যখন আমি স্কুলে রওনা হতাম, তিনি ততক্ষণে মাটির ৮০০ মিটার নিচে খনিতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এই কয়লা খনির উপরেই গোটা শহরটা চলতো তখন। কিন্তু খনিতে কাজ করাটা ছিল খুবই বিপজ্জনক, বাবার অনেক বন্ধু এখানে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তার নিজেরও অনেকগুলো ছোট-বড় সার্জারির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে কনুই, হাঁটু আর নাকে। আমরা প্রায়ই ঠাট্টা করে বলতাম, ‘মাইক টাইসনের সঙ্গে বক্সিংয়ের সেই গল্পটা বলো তো!’

আমার পায়ে কাস্ট লাগানোর পর আমাকে দুই মাস বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে। আমার ডান পা স্লিং দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। আমার সেসবের কিছুই মনে নেই, কিন্তু বাবা-মা বলেন, আমি ওই সময়টা শুধু টিভিতে ফুটবল দেখে আর গান শুনে কাটিয়েছি। আমি খেলতে যেতে পারতাম না, স্কুলেও যাওয়া হচ্ছিল না। আমি নাকি এতোই অধীর হয়ে গিয়েছিলাম যে, বাম পা দিয়ে শুধু লাথি মারতাম বিছানায়। শেষমেশ মা বিরক্ত হয়ে স্লিং থেকে দুই পা-ই খুলে দিয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত বিছানা থেকে নামার অনুমতি যখন পেলাম, তখনও চার মাসের জন্য আমার পায়ে কাস্ট বেঁধে রাখতে হলো। তবে বিছানা থেকে ছাড়া পেয়ে আমি প্রথমেই একটা কাজ করেছিলাম, সেটা হলো বাবার সঙ্গে আঙিনায় লাফিয়ে বেড়ানো! আমি দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম, কাস্ট বসানো পা-টা উঁচিয়ে। আর বাবা বলটা নিয়ে আমার বাম পা-য়ের দিকে গড়িয়ে দিতেন। আমি এমনিতে ডান পায়ে খেলতাম, তাই এটা ছিল আমার দুর্বল পা। তিনি বল গড়িয়ে দিতেন, আমি আবার সেটা পাস দিয়ে তার দিকে পাঠাতাম। খনিতে দীর্ঘ পরিশ্রমের পরও দিনশেষে তিনি আমার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে খেলতেন। সেখানেই আমার চোখে বাবা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা এঁকে দেন।

আজও আমি দুই পায়েই একইরকম ভালো খেলতে পারি। আমি সবসময় বলি, ফুটবলার – বিশেষ করে স্ট্রাইকারদের জন্য এটা বড় এক আশীর্বাদ। আমি কখনোই সবার চেয়ে বেশি গতি নিয়ে দৌঁড়াতে পারতাম না, কৌশলগতভাবেও আমি দলের সেরা ছিলাম না। কিন্তু আমি সবসময় দুই পা দিয়েই বলে লাথি কষাতে পারতাম, আর এটাই আমাকে স্ট্রাইকার হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিলো। এটা হয়েছিলো সেই চার বছর বয়সে বাবার আমার বাম পায়ের পেছনে অমন শ্রম দেয়ার কারণে। আমার হয়তো অনেক ব্যথা করতো, কিন্তু সারাদিন খনিতে খেটে আসার পর বাবার নিশ্চয়ই আমার চেয়েও বেশি কষ্ট হতো। কিন্তু এটা নিয়ে কখনো তাকে কিছু বলতে শুনিনি, তিনি সত্যিই এটা ভালোবাসতেন।

সেদিন থেকে বাবা সবসময় আমার পাশে ছিলেন। যখনই আমি খেলেছি, তিনি সেটা পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। খনিতে তার কাজের সূচিকে তিনি বদলে ফেলতেন আমার প্র্যাকটিস থাকলে, এমনকি সেটা রাত ২টায় হলেও!

পাঁচ বছর বয়সে আমি পার্কে ফুটবল নিয়ে দৌড়াতাম। কুড়িতে এসে সারাগোসায় চলে এলাম। এখানে একটা দিনও প্র্যাকটিসে আর বাসে চড়ে আসতে হয়নি, বাবা প্রতিবার নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাকে পৌঁছে দিতেন।

যখন ছোট ছিলাম, আমেরিকা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না আমার। মনে হতো, এটা অনেক দূরের দেশ, যেখানে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব! শহরের অন্য বাচ্চারাও সেখানে কোনোদিন ঘুরতে যাবে- এটা স্বপ্নেও ভাবতো না। আমি নিজেও স্পেন তো দূরে থাক, নিজের শহরের সীমানার বাইরেই কোনো নতুন গন্তব্য কখনো দেখিনি।

৯-১০ বছর বয়সে আমার স্বপ্ন ছিল কেবল স্পোর্টিং গিহন-এর মূল দলে জায়গা পাওয়া। এটাই ছিল আস্তুরিয়াস প্রদেশের একমাত্র পেশাদার ফুটবল ক্লাব। আপনারা নিশ্চয়ই বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমিগুলোর কথা জানেন, যেখানে ছেলেরা শৈশবেই পেশাদার ফুটবলারের মর্যাদা পেত। আমার গল্পটা একেবারেই সেরকম ছিল না।

Image source : Watching Sports HD

অবশেষে যখন গিহনে যুবদলে চুক্তিবদ্ধ হলাম, আমার বয়স তখন মাত্র ১৬। স্কুলে তখনও পড়ছি একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান হবার আশায়। এই পড়াশোনার একটা অংশ ছিল শিক্ষানবিশ হিসেবে এসি জাতীয় জিনিস মানুষের বাড়িতে লাগানো। কিন্তু আমি যখন গিহনে খেলার সুযোগ পেলাম, এটার সঙ্গে ইন্টার্নশিপটা সাংঘর্ষিক হয়ে গেল।

তখন আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা এলো। আমি কি বাস্তববাদী হবো আর ইলেক্ট্রিশিয়ান হওয়ার পড়া চালিয়ে যাব? নাকি এসব থামিয়ে আমার স্বপ্নপূরণে লেগে যাব?

বাবাকে রাজি করাতে বেশি কষ্ট হবে না, জানতাম। কিন্তু মায়ের ব্যাপারটা পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। ফুটবলের প্রতি তার তেমন টান ছিল না; মা চাইতেন, এর চেয়ে আমি আমার কিছু একটা করে খাওয়ার দিকে বেশি নজর দিই। আমি তাই মায়ের সঙ্গে একটা চুক্তিতে এলাম। আমি দু’বছর সময় নেবো; এর মধ্যে যদি গিহনের পেশাদার দলে জায়গা না করতে পারি, আমি ফুটবল ছেড়ে দেব। ফিরে আসবো ইলেক্ট্রিশিয়ান হওয়ার পড়াশোনায়।

দু’বছর পর আমার বাবা-মা ‘এল মলিনন’ স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডে আরও ১৬ হাজার ভক্তের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন। এখানেই পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার অভিষেক হয়। এটা ছিল সম্ভবত আমার পরিবারের সবচেয়ে আনন্দময় দিন!

আমি তখনও ফুটবলার হিসেবে পরিচিতি পাইনি। তবে আমি দলে জায়গা পেয়েছিলাম, জানতাম এটা ধরে রাখতেই হবে। কিন্তু এরপর কী হতে চলেছে – সেটা আমাদের ধারণাতেই ছিল না। আমি আমার প্রথম গোলটা করলাম! গিহনের লাল-সাদা জার্সি গায়ে সেই মাঠে, যেখানে সত্তরের দশকে বাবার প্রিয় ফুটবলার কুইনি খেলতেন! সেদিন মা কেঁদেছিলেন। আমরা চিন্তাও করিনি, এর ঠিক দশ বছর পর আমি স্পেনের প্রথম বিশ্বকাপের ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরবো! আর সেদিন কেঁদেছিলেন বাবা। আমরা শুধু এতটুকু জানতাম, আমার ইলেক্ট্রিশিয়ান হওয়ার পরিকল্পনাটা সেদিন থমকে গিয়েছিলো।

২০১০ সালের বিশ্বকাপ হাতে ভিয়া; Image Source: Getty Images

পরের দশ বছরে আমি কেবল উপরেই উঠেছি। গিহন থেকে সারাগোসা, এরপর ভ্যালেন্সিয়া, তারপর বার্সেলোনা হয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। সেই ছোট্ট ছেলেটি, যার এক পায়ের চেয়ে অন্যটা ছিল সামান্য খাটো – তার জন্য এই অর্জনই বা কম কিসে!

ভ্যালেন্সিয়ার জার্সি গায়ে ভিয়া; Image Source: Getty Images

কিন্তু সবগুলো ক্লাবই ছিল স্পেনের। আমি আমার গোটা ক্যারিয়ার নিজের দেশেই কাটিয়ে দিয়েছি। আমি দুটো পা-ই ব্যবহার করতে পারতাম, কিন্তু জানতাম মাত্র একটা ভাষা আর বেঁচে থাকার একটামাত্র উপায়। আর তাই যখন আমেরিকায় এসে NYFC-র জন্য খেলার প্রস্তাব পেলাম- চ্যালেঞ্জটা কিছুতেই দূরে ঠেলে দিতে পারলাম না!

আমার পরিবারও আমার আমেরিকা যাওয়া নিয়ে খুশি ছিল। কিন্তু স্পেনে থাকা আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো, “ডেভিড, তুমি ওখানে গিয়ে খাবেটা কী? ওখানকার খাবার তো স্পেনের মতো নয়।”

নিউইয়র্ক সিটি এফসির হয়ে গোল উদযাপন করছেন ভিয়া; Image Source : The Player’s Tribune

মিস্টার স্টেইনব্রেনারের সঙ্গে দেখা হওয়ার কিছুদিন পরই আমি আমার মেয়েদের ব্রায়ান্ট পার্কে আইস স্কেটিং করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওদের স্কেটিং দেখে কী যে খুশি লাগছিল! ওখানে একটা বিশাল ক্রিসমাস ট্রি দাঁড়িয়ে ছিল, আর ছিল আকাশছোঁয়া সব দালান। আমি কোট আর হ্যাট পড়েছিলাম, আমাকে তাই কেউ চিনতে পারেনি। আমি সেখানে কেবলই একজন সাধারণ বাবা হয়ে গিয়েছিলাম, যে নিজের বাচ্চাদের খেলা দেখতে এসেছে। ঠিক যেমনটা বাবা আসতেন আমার খেলার সময়। পার্কটা কেবল তিউয়া’র চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর ছিল- এই যা!

ওদের স্কেটিং যখন শেষ হলো, সবার খিদে পেয়ে গেল। সব মিলিয়ে আমরা ১০ জন ছিলাম, তাই আমরা আরো একবার ‘ওয়েলকাম টু নিউ ইয়র্ক’ মুহূর্তের সামনে পড়ে গেলাম! আগে থেকে কোনো রিজার্ভেশন না থাকায় এত বড় দল নিয়ে এত বড় শহরে এখন কোথায় খেতে যাই?

পরিবারের সাথে ভিয়া; Image Source : @DavidVilla Instagram

আমার বাচ্চারা পিৎজা খেতে চাইছিলো। তাই আমরা ঘোরাঘুরি করে একটা ছোট্ট পিৎজার দোকান খুঁজে বের করলাম। ওখানে কেবল দুটো বসার টেবিল ছিল, দেয়ালে ঝোলানো ছিল ছোট ছোট ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। ঠিক যেন সেই সিনেমায় দেখা নিউ ইয়র্ক শহরের মতো! পিৎজা যখন এলো, সাঁই করে একটা টুকরা মুখে দিয়েই পাগল হয়ে গেলাম! ফুটবলের কল্যাণে বিশ্বের সব জায়গায় ঘোরা হয়েছে আমার। আর তাই যখন বলছি সেটাই ছিল আমার খাওয়া সেরা পিৎজা, আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না! সেটা ছিল ছোট্ট একটি মুহূর্ত, কিন্তু সেই মুহূর্তটিতেই পূরণ হয়েছিল আমার ‘আমেরিকান ড্রিম’!        

ফুটনোট: মূল লেখাটি ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে “জাস্ট অ্যা কিড ফ্রম তিউয়া” নামে ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় পাবলিশ করা হয়েছিল। রোর বাংলার পাঠকদের জন্যে লেখাটি বাংলায় উপস্থাপন করে হয়েছে।

 

This article is in Bangla language. It is about the origin story of David Villa, the former striker of the Spain national team. It was previously published in 'The players Tribune', which has been translated into Bangla language for the sake of our beloved readers. Please click on the hyperlinks to check the references.

Featured Image: NYCFC.com

Related Articles

Exit mobile version