সম্প্রতি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল আন্দ্রেস মেসি যোগ দিলেন প্যারিস ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে। মেসির জার্সি নাম্বার নিয়ে একটা প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক ছিল, যেহেতু নেইমারই সেখানে দখল করে আছেন মেসির আইকনিক ‘১০’ নাম্বার জার্সি। নেইমার মেসিকে সেই ১০ নাম্বার জার্সিটা দিয়েও দিতে চেয়েছিলেন, তবে মেসি ফিরিয়ে দিয়েছেন সে প্রস্তাব। মেসি নিয়েছেন ‘৩০’ নাম্বার জার্সি, যার জন্য প্রথা ভাঙতে হয়েছিল ক্লাবটিকে৷ মেসির এই ‘৩০’-এর পেছনের কারণ সবারই জানা। বার্সায় মেসির প্রথম জার্সি নাম্বার ছিল ৩০। সেই ‘উইয়ার্ড লয়্যালটি’ বিষয়টা ঘুরেফিরে চলে আসে বোধহয় আবারও।
বার্সায় ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রোনালদিনহোর ক্যারিয়ারের বয়স যখন মাত্র এক, পর্তুগিজ ফুটবলার ডেকো তখন মাত্রই যোগ দিলেন। একই বছর যোগ দিলেন মেসি। চুপচাপ স্বভাবের মেসির বন্ধু হয়ে উঠেন এই দু’জন, আত্মবিশ্বাসের জোগান দেন ড্রেসিংরুমে,প্র্যাকটিস সেশনে, মাঠে-মাঠের বাইরে৷ দু’জনই হয়ে ওঠেন মেসির দুজন ‘অভিভাবক’; নাহ, বোধহয় তারও বেশি, দু’জন ‘বন্ধু’। রোনালদিনহোর জার্সি নাম্বার তখন ‘১০’ আর ডেকোর ‘২০’ – দুইয়ে মিলেই যেন মেসির ‘৩০’।
ডেকো’র নাম সামনে আসলে দুটো চিত্র মাথায় চলে আসে। প্রথমে আফসোস হয়, কত কিছুই তো দেওয়ার ছিল তার৷ আবার এটিও মনে পড়ে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পরও মাঠে কি নিখুঁতভাবেই না সেরাটা দিতেন। অ্যান্ডারসন লুইস ডি সুজা, পুরো ফুটবল দুনিয়া যাকে এক নামেই চেনে – ‘ডেকো’।
লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার শুরুর দিকে তাকালে যে কয়েকজন মানুষগুলো নাম সবসময়ই উচ্চারিত হয়, তার মাঝে অন্যতম একজন ডেকো। মাঠ এবং মাঠের বাইরে রোনালদিনহোর পাশাপাশি ডেকো মেসিকে দিয়েছেন ভরসা, জুগিয়েছেন প্রেরণা, জোগান দিয়েছেন সাহসের।
পেলের শহর সাও পাওলোতে ২৭ আগস্ট ১৯৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন ডেকো। স্বভাবতই ব্রাজিলের অন্য সব বাচ্ছাদের মতোই শৈশব থেকেই তারও ছিল ফুটবলে সুনিপুণ দক্ষতা। বল কন্ট্রোল থেকে শুরু করে ব্যালেন্স কিংবা ড্রিবলিং, ফিনিশিং সব কিছুতেই সবার নজর কেড়েছিলেন খুবই ছোট বয়সে। ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে জন্ম নিলেও গায়ে জড়ানো হয়নি সেলেসাওদের জার্সি৷ গায়ে উঠেছে ইউসেবিও-ফিগো-রোনালদোদের পর্তুগালের জার্সি। জাতীয় দলের জার্সির গল্পটা একটু পরেই বলি। এর আগেও আছে বলার মতো কিছু গল্প।
আন্তর্জাতিক জার্সিতে গায়ে পর্তুগিজদের জার্সি জড়ালেও যুব দলের ক্যারিয়ারে হাতেখড়ি ব্রাজিলের ন্যাসিওন্যাল অ্যাটলেটিকো ক্লাবের হয়ে, সেটির স্থায়িত্বকাল ১৯৯৫-৯৬। যুব ক্যারিয়ারে গায়ে জড়িয়েছেন করিন্থিয়ান্সের জার্সি, সেটিও ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে। ১৯ বছর বয়সে অভিষেক হয় করিন্থিয়ান্সের মূল দলে।
তবে উঠতি বয়সে নজরে পড়েন পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকার স্কাউটদের। ১৯৯৭ তে সাও পাওলোতে একটি যুব টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে তাদের চোখে পড়েন ডেকো। তবে পর্তুগিজ লিজেন্ড টনি সম্ভবত সবচাইতে বেশি অবাক হয়েছিলেন ডেকো’র বল কন্ট্রোল আর অসম্ভব রকমের ব্যালান্স দেখে। টনি মন্তব্য করেন,
“আমি যা দেখেছি, সবাই তা দেখেছে!”
এরপর সাইন করেন বেনফিকার সাথে, পাড়ি জমান পর্তুগাল। তবে বেনফিকার হয়ে তখন মাঠে নামা হয়নি। ২০ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে সাইন করিয়ে আরেক পর্তুগিজ ক্লাব আলভের্কাতে লোনে পাঠানো হয়ে। ওই মৌসুমে আলভের্কার হয়ে ৩২ ম্যাচে ১২ গোল করেন ডেকো। টপ লিগে প্রমোশন পায় আলভের্কা। ১ বছর পর বেনফিকায় ব্যাক করেন ঠিকই, তবে আর গায়ে জড়ানো হয়নি বেনফিকার জার্সি। কারণ তাকে স্যালগুইরোসের কাছে বিক্রি করা হয়। ইনজুরিতে কেটে গেল সিজনের প্রায় পুরোটা সময়। এক মৌসুমে ম্যাচ খেলেন মাত্র ১২টি, গোলসংখ্যা মাত্র দুইটি৷ মাঠে যেমন নামতে পারেননি, তেমনই নেমেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি।
কোথাও থিতু হতে পারছিলেন না। বছরে বছরে বয়সের সাথে সাথে ক্লাবসংখ্যাও বাড়তে লাগল। আবার ক্লাব পরিবর্তন; তবে এবারেরটা ক্যারিয়ারের সবচাইতে বড় টার্নিং পয়েন্ট। তার ক্লাব স্যালগুইরোস তাকে বিক্রি করে এফসি পোর্তোর কাছে ৮ মিলিয়ন ইউরোতে। তবে পোর্তোতে টিকে থাকতে হলে কিংবা শুরুর একাদশে জায়গা করে নিতে হলে অবশ্যই ভালো পারফর্মের বিকল্প নেই।
আর সেখানেও সফল তিনি — অসাধারণ পাস অ্যাকুরেসি, স্কিল, বল কন্ট্রোল নজর কাড়েন কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের। প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও পরে তিনিই হয়ে উঠেন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। মাঝে বরখাস্ত হন সান্তোস। দলের দায়িত্ব অক্ট্যাভিও ম্যাকাডোও বেশিদিন জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। তবে ডেকো ঠিকই তার সেরাটা দিয়ে দিয়েছেন।
এরপর পোর্তোর দায়িত্বে আসেন তরুণ কোচ জোসে মরিনহো। মরিনহো-ডেকো একের পর এক সাফল্য এনে দিতে থাকেন পোর্তোকে, নিয়ে যান অনন্য এক উচ্চতায়। মরিনহোর ৪-৪-২ ফর্মেশনের ফুটবলে ডেকো ছিলেন পোর্তোর অ্যাটাকের প্রাণ। তাকে কেন্দ্র করেই সাজানো কিংবা পরিবর্তন করা হতো ফর্মেশন। এই জুটি ২০০২-০৩ মৌসুমে পোর্তোকে প্রথমবার সুপার কাপ জয়ের স্বাদ এনে দেন৷ একই মৌসুমে পোর্তো জিতে নেয় পর্তুগিজ কাপ এবং পর্তুগিজ চ্যাম্পিয়ন নামক লিগ শিরোপা।
২৯শে মার্চ, ২০০৩ — ডেকোর জীবনের সবচাইতে স্মরণীয় অধ্যায় বলা চলে। স্তাদিও দাস আন্তাসে মুখোমুখি তখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবং পর্তুগাল। ডেকোর জন্য মিশ্র রকমের অনুভূতি। প্রথমবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাঠে পা রাখা, আবার সেটি নিজ জন্মভূমির বিপক্ষেই। ৬২ মিনিটে সার্জিও কনসেইসাওর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ২৫ বছর বয়সী ডেকো।
তবে রূপকথার তখনো বাকি। ৮২ মিনিট শেষে খেলা যখন ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পথে, ঠিক তখনই বাদ সাধেন ডেকো। ৮২ মিনিটে ডিরেক্ট ফ্রি-কিক থেকে গোল দিয়ে পর্তুগালকে এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দিলেন ডেকো। আন্তর্জাতিক জার্সিতে অভিষেকেই গোল, যেটা সচরাচর সব ফুটবলারের কপালে জুটে না। এসেই গোল করলেন, দল জেতালেন। তাও সেটি নিজ জন্মভূমি ব্রাজিলের বিপক্ষে!
অন্যদিকে, ২০০৩-০৪ যেন আরো রঙিন করে দেন মরিনহো-ডেকো জুটি৷ সমর্থকদের এত সহজে সে স্মৃতি ভোলার কথা নয়। প্রথমেই পর্তুগিজ লিগ শিরোপা, এরপর পর্তুগিজ সুপার কাপ, এবং সব শেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ — যেখানে সবচাইতে বড় অবদান ডেকো’র৷ চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের মালিক ছিলেন তিনি, ফাইনালের গোলসহ মোট ২ গোল আর ৭ অ্যাসিস্ট। এরপর মরিনহো শুরু করেন চেলসি অধ্যায়, আর ডেকোর শুরু হয় বার্সা-অধ্যায়।
২০০৪-০৫ মৌসুমে ২১ মিলিয়ন ইউরোতে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায়। বার্সায় তখন রোনালদিনহো মাত্র এক সিজন কাটালেন, আগে থেকেই ছিলেন পুয়োল-জাভি-ইনিয়েস্তারা। নতুন করে যুক্ত হলেন ডেকো-ইতো-মেসিরা। নিজের সহজাত স্কিল আর নিখুঁত পাসিং অ্যাবিলিটির কারণে খুব দ্রুতই মানিয়ে নেন বার্সার সাথে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে অন্যরকম এক সখ্যতা গড়ে ওঠে ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহোর সাথে।
একই সাথে জাতীয় দলের ডেকোও তখন দুর্দান্ত-দুর্বার। লুইস ফিগো, রুই কস্তা, নুনো গোমেজ, রোনালদো — এদের সাথে অন্যরকম সময় অতিবাহিত করেন পর্তুগালের জার্সিতে। দলকে নিয়ে যান ইউরোর ফাইনালে, কিন্তু স্পর্শ করা হলো না শিরোপা; সেবার যে নতুন করে ইতিহাস লিখল গ্রিকরা!
সব মিলিয়ে ২০০৩-০৪ মৌসুমের জন্য ব্যালন ডি’অর-এর শর্ট লিস্টে উঠে আসে ডেকোর নাম। ব্যালন ডি’অর স্পর্শ করা না হলেও রানার্সআপ হয়েছিলেন বটে৷ ইউক্রেন ফরোয়ার্ড শেভচেঙ্কোর কাছে ব্যালন ডি’অর-এর লড়াইয়ে হারলেও বছরের সেরা মিডফিল্ডারের নাম ডেকো, এ নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না।
প্রথম বছরে বার্সার হয়ে লা লিগা জয় ছাড়া বড় কোনো সাফল্য নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগেও দল বাদ পড়েছে শেষ ষোল থেকেই। তবে পরের মৌসুমে, অর্থাৎ ২০০৫-০৬তে অন্য রকম সিজন কাটায় বার্সেলোনা। রোনালদিনহো-ইতো-ডেকো ত্রয়ী মিলে বার্সাকে উপহার দেন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, লা লিগার শিরোপা এবং সুপারকোপা। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে ডেকোর অবদান অনস্বীকার্য, মাঝমাঠের ইঞ্জিন হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন সেরাটা দিয়েই। পুরস্কার হিসেবে তিনি জেতেন বার্সেলোনার প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার এবং উয়েফা বেস্ট মিডফিল্ডার অব দ্য ইয়ার। এখন পর্যন্ত একমাত্র মিডফিল্ডার ডেকো, যিনি ভিন্ন দুই ক্লাবের হয়ে উয়েফা বেস্ট মিডফিল্ডার অব দ্য ইয়ার পুরস্কারটি পেয়েছেন।
তবে প্রদীপের আলো নিভে যাওয়ার সময়টা ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থাকতেই শুরু হয়েছিল। একে ব্রাজিলিয়ান রক্ত বয়ে বেড়াচ্ছে শরীরে, তাই স্বভাবতই অন্যান্য অনেক ব্রাজিলিয়ানদের মতোই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ব্যাপারটা তার মধ্যেও ছিল। তার উপর ছিল রোনালদিনহোর সাথে ঘনিষ্ঠতা৷ দু’জনই যেন হরিহর আত্মা, আর বন্ধুত্বটাও ছিল জম্পেশ।
রাতভর নাইট ক্লাবে পার্টি, মদ্যপান, নারীসঙ্গ, উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন — এসবের কারণে ব্যাঘাত ঘটছিল তার পারফরম্যান্সে। পরের সিজনে বার্সা যেমন ভালো করতে পারেনি, তেমনি ডেকোও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি পরপর দুই বছর ঘটে এবং বরখাস্ত করা হয় কোচ রাইকার্ডকে, সাথে বিক্রি করা হয় ডেকোকেও৷ শেষ হয় বার্সার সাথে ৪ বছরের অধ্যায়ের। বার্সার হয়ে ১৬১ ম্যাচে ২০ গোল আর ৪৫ অ্যাসিস্ট।
তবে রোনালদিনহো এবং ডেকোকে বিক্রি করে দেওয়ার মূল কারণ জানান আর্সেনাল থেকে বার্সায় আসা ফুটবলার আলেকজান্ডার হ্লেব,
“লিওনেল মেসিকে রক্ষার জন্য বার্সেলোনা রোনালদিনহো এবং ডেকোকে বিক্রি করেছিল, কারণ এই জুটি প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় ট্রেনিংয়ে আসত।”
এমনটা মনে করেন ইউরোপিয়ান ফুটবল জার্নালিস্ট এবং লেখক গ্রাহাম হান্টারও। ডেকো-রোনালদিনহোর এমন জীবনযাপন এবং এর সাথে মেসির প্রভাব কেমন হতে পারে, এই ব্যাপারে তিনি বেশ খোলামেলাই লিখেছিলেন। তার মতে,
“মেসিও যদি নৈশকালীন আনন্দের স্বাদ পেতেন তাহলে বার্সা কেবল দুজনের পরিবর্তে তিনজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়কে হারাতে পারত। তাই ব্রাজিলিয়ানদের যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।”
২০০৮ সালে ১০ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসিতে যোগ দেন ডেকো। ততদিনে ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময় পেরিয়ে এসেছেন৷ তবে তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন কোচ লুই ফেলিপে স্কলারি। তিনি বলেন,
“ডেকো ঠিক জিদান নয়, তবে একই রকম। আমার কাছে রোনালদো এবং মেসির মতো সে-ও বিশ্বের অন্যতম সেরা।”
১৭ই আগস্ট ২০০৮; পোর্টসমাউথের বিপক্ষে চেলসির হয়ে অভিষেকেই করলেন গোল, সাথে অ্যাসিস্টও। নির্বাচিত হলেন ‘Barclays Premier League’s best player of August Award’-এর জন্য।
এত সুন্দর শুরু হলেও এরপর চেলসিতে সেভাবে আর নিজেকে মেলে ধরে পারেননি৷ চেলসি-অধ্যায় কাগজে-কলমে যেমন সুখকর ছিল না তার জন্য, তেমনি মানসিকভাবেও তিনি এখানে খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তবে তিনি চেয়েছিলেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে যোগ দিতে। ইনজুরির কারণে এখানে পারফরম্যান্স করতে না পেরে তিনি যেমন হতাশ ছিলেন, তেমনি মরিনহোর সাথে আবারও জুটি গড়তে ইন্টারে যেতে মরিয়া ছিলেন এই পর্তুগিজ তারকা৷
“চেলসিতে আমার জন্য কঠিন একটি মৌসুম ছিল। আমার গুরুতর চোট ছিল এবং আমি আমার সেরা ফুটবলও খেলতে পারিনি। আমার এজেন্ট ক্লাবের সাথে কথা বলেছে, এবং জানিয়েছে যে আমি চেলসিতে খুশি নই। আমি ভালোভাবেই জানি আমি এখানে চুক্তিবদ্ধ, কিন্তু আমি চলে যেতে চাই। ইন্টার কি আমার পছন্দের গন্তব্য? হ্যাঁ, আমি অপেক্ষা করছি এবং আমি তাদের সাথে চুক্তিতে দিয়ে যেতে চাই। আমি ইন্টারকে বেছে নিলাম, কারণ তারা ইতিহাস সমৃদ্ধ এক ক্লাব এবং আমি মরিনহোর মতো একজন কোচের অধীনে আবার কাজ করতে চাই।”
চেলসির হয়ে তার সবচাইতে বড় অর্জন ২০০৯-১০ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়। এছাড়া এফএ কাপের শিরোপাও জিতেছেন দুইবার৷ দুই মৌসুমে খেলেছেন ৫৮ ম্যাচ, ৬ গোলের বিপরীতে ৫ অ্যাসিস্ট। তবে চেলসি ছাড়ার পর ইন্টারও আর তাকে দলে ভেড়ায়নি। ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সে।
শেষের দিকে জাতীয় দলের হয়েও সময়টা একেবারেই ভালো যায়নি ডেকো’র। ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগালের প্রথম ম্যাচে আইভরি কোস্টের বিপক্ষে খেলেন তিনি। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি দক্ষিণ কোরিয়া আর ব্রাজিলের বিপক্ষে। তবে ইনজুরি থেকে সেরে উঠলেও শেষ ষোল’র ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে তাকে আর মাঠে নামাননি কোচ। আর এখানেই শেষ হয় জাতীয় দলের ক্যারিয়ার। আর কখনো ডাক পাননি জাতীয় দলে। জাতীয় দলে হয়ে অর্জন ২০০৪ সালের ইউরোতে ফাইনাল খেলা, সাথে ৭৪ ম্যাচে ৫ গোল আর ১৮ অ্যাসিস্ট।
ক্যারিয়ারের শেষ ৩ বছর কাটান স্বদেশী ক্লাব ফ্লুমিনেন্সে। সেখানে খেলেন ৬৯ ম্যাচ, যাতে আছে ৪ গোল আর ১৮ অ্যাসিস্ট। আর ২০১৩ সালে ৩৬তম জন্মদিনের আগের দিন সেখান থেকেই বিদায় জানান ফুটবলকে৷ ইতি টেনেছেন, কারণ শরীর আর আগের মতো সায় দিচ্ছে না তাকে:
“খুব দুঃখ ও মানসিক কষ্টের সঙ্গে আমার পেশাদার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। ফ্লুমিনেন্সে দারুণ সময় কাটিয়েছি, আমি আরও অবদান রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার শরীর সাড়া দিচ্ছে না সেভাবে।”
জ্বলে উঠে আবার হুট করেই নিভে যাওয়ার তালিকায় অনেক নাম আছে। সে নামগুলোর তালিকা করলে সবার আগে যাদের নাম থাকবে, তাদের মধ্যে ডেকো অন্যতম। হতে পারতেন জাভি-ইনিয়েস্তাদের মতো নামিদামী তারকা, থাকতে পারতেন বার্সার স্বর্ণালী যুগের মূল সেনানী হিসেবে৷ কিন্তু তার কিছুই হয়ে ওঠেনি। খুব তাড়াতাড়িই লাইনচ্যুত হয়ে পর্দার আড়ালেই চলে গেলেন ডেকো৷ তবে মাঠে তার বুদ্ধিমত্তা, পাস, বল কন্ট্রোল — সবই থাকবে ভক্ত-সমর্থকদের হৃদয়জুড়ে।