প্রায় চার বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড। আজ পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়ালো। চার বছর আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫-২ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলো ইংল্যান্ড। এই চার বছরে বদলেছে অনেক কিছু; দল হিসাবে শ্রীলঙ্কা আর আগের মতো শক্তিশালী নেই, অন্যদিকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড বর্তমানে বেশ শক্তিশালী দল।
২০১৪ সালের শ্রীলঙ্কা দলে সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে এবং দিলশানের মতো তারকা ক্রিকেটাররা ছিলো। তারাই দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর সাঙ্গাকারা এবং জয়াবর্ধনে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর এখনও তাদের বিকল্প খুঁজে পায়নি শ্রীলঙ্কা। একের পর এক অধিনায়ক পরিবর্তন করেও কূলকিনারা করে উঠতে পারছে না তারা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে শ্রীলঙ্কা ৭১টি ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেয়েছে মাত্র ২২টি। অন্যদিকে ইংল্যান্ড এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ৪৮টি ওয়ানডে ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে।
ইয়োইন মরগানের নেতৃত্বে বর্তমানে ইংল্যান্ড ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে, যা তাদের সাফল্য পাওয়ার অন্যতম কারণ। মরগান সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে ইংল্যান্ডের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের পরই। চার বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসা ইংল্যান্ডের শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে স্কোয়াডে থাকা সদস্যদের সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
১. অ্যালেস্টার কুক
সিরিজের পারফরম্যান্স
পুরো সিরিজজুড়েই নিষ্প্রভ ছিলেন অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুক। স্লো ওভাররেটের কারণে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়া বাকি ছয় ম্যাচে ১৯.৮৩ ব্যাটিং গড় এবং ৬৭.২৩ স্ট্রাইকরেটে মাত্র ১১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। যার ফলে ওয়ানডে দলে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পল ডন্টন বলেন,
“কুকের অত্যধিক বাজে সময় কাটছে। কিন্তু আমি অবাক হবো যদি সে বিশ্বকাপে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন না করেন।”
এমন পরিস্থিতিতে কুক বলেন,
“আমার কোনো অভিযোগ থাকবেনা যদি আমার বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।”
পরবর্তী পরিস্থিতি
সিরিজের তিনদিন পর অ্যালেস্টার কুককে ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইয়োইন মরগানকে। অধিনায়কত্ব হারানোর পর কুক বলেন,
“বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ার কারণে আমি ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছি, এবং এই হতাশা থেকে বের হতে আমার কিছু সময় লাগবে।”
বর্তমান পরিস্থিতি
ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব হারালেও টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যালেস্টার কুক। ওয়ানডে ক্রিকেট না খেললেও টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান হিসাবে একাদশে ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তী এই ব্যাটসম্যান গত মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সময় টেস্টে ক্রিকেটে তার রানসংখ্যা ছিলো ১২,৪৭২।
২. মঈন আলী
সিরিজের পারফরমেন্স
সিরিজে অ্যালেস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন মঈন আলী। প্রথম ম্যাচেই মাত্র ৮৭ বলে ১১টি চার এবং পাঁচটি ছয়ের মারে ১১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ওয়ানডেতে এটি তার প্রথম শতরানের ইনিংস ছিলো। তবে বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। তবুও সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক ছিলেন মঈন। সাত ম্যাচে ৩৩.৭১ ব্যাটিং গড়ে ২৩৬ রান করার পাশাপাশি পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
পরবর্তী পরিস্থিতি
ঐ সিরিজের পর বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডের হয়ে ইনিংস গোড়াপত্তন করেছিলেন মঈন আলী। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একটি শতকও হাঁকিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে ইংল্যান্ড ওয়ানডে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মঈন আলী। আদিল রাশিদের সাথে জুটি বেঁধে স্পিন ডিপার্টমেন্ট সামলানোর পাশাপাশি লোয়ার মিডল-অর্ডারে ব্যাটিং করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৮২ ম্যাচে ৭৪ উইকেট শিকার করার পাশাপাশি ১০৪.৮৩ স্ট্রাইকরেটে রান তুলছেন মঈন আলী।
৩. অ্যালেক্স হেলস
সিরিজের পারফরমেন্স
ইংল্যান্ডের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে শতক হাঁকানো অ্যালেক্স হেলস সিরিজের শুরু থেকে খেলার সুযোগ পাননি। সাদা বলের ক্রিকেটে পারদর্শী এই ব্যাটসম্যান সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে যথাক্রমে ২৭, ০ এবং ৭ রান করে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চেও বেশিরভাগ ম্যাচে সাইডবেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিলো অ্যালেক্স হেলসকে। শুধুমাত্র দুই ম্যাচের জন্য একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, যার মধ্যে একটি ছিলো বাংলাদেশের সাথে হেরে বাদ পড়া সেই ম্যাচ।
বর্তমান পরিস্থিতি
বিশ্বকাপের পর থেকে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হয়েছিলেন অ্যালেক্স হেইলস। কিন্তু বর্তমানে টিম কম্বিনেশনের কারণে দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন তিনি। তাছাড়া ব্রিস্টলে বেন স্টোকসের সাথে তিনিও ফেঁসে গিয়েছিলেন, যার ফলে বেশ কিছুদিন দল ভাবনার বাইরে ছিলেন হেইলস।
তিনি ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন, যা ঐ সময় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিলো। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত ছয়টি ওয়ানডে শতক হাঁকিয়েছেন।
৪. ইয়ান বেল
সিরিজের পারফরমেন্স
সাত ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ পরই ইয়ান বেলকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। প্রথম দুই ম্যাচে তিনি ৩৫ এবং ১১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথে দল থেকে বাদ পড়লেও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ইয়ান বেল। সুযোগ পেয়ে হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, যা ঐ টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস ছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বিশ্বকাপে তার শেষ ম্যাচ ছিল। শেষ পর্যন্ত এটিই তার শেষ ওয়ানডে ম্যাচে পরিণত হয়েছিলো। ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়লেও ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে ছিলেন ইয়ান বেল। তবে এরপর আর তাকে দলে ডাকা হয়নি।
এখন তিনি ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যে তার দল এই মৌসুমে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় বিভাগের শিরোপা ঘরে তোলে।
৫. জো রুট
সিরিজের পারফরমেন্স
দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও পুরো সিরিজেই রানের মধ্যে ছিলেন জো রুট। সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন। ঐ সিরিজে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধুমাত্র কুমার সাঙ্গাকারা, তিনি ৭৫.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ৪৫৪ রান করেছিলেন। রুট একটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৭৩.৪০ ব্যাটিং গড়ে ৩৬৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন এবং অফ স্পিন বোলিং করে শিকার করেছিলেন একটি উইকেট।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপেও জো রুটের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপেও তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক হাঁকান, তবে দলকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের মূল স্তম্ভ জো রুট। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার ব্যাটিং গড় ৫১-এর চেয়েও বেশি। তিনি তার সর্বশেষ দু’টি ওয়ানডে ম্যাচেও অপরাজিত শতক হাঁকিয়েছিলেন। তার শতক দু’টির উপর ভর করেই ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিলো ইংল্যান্ড।
৬. ইয়োইন মরগান
সিরিজের পারফরমেন্স
সিরিজে ব্যাট হাতে খুব বাজে সময় কাটিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক ইয়োইন মরগান। সাত ম্যাচে ১২.৮৫ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ৯০ রান সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্যে ৬২ রান এসেছে যে ম্যাচে তিনি কুকের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
ব্যাট হাতে সফলতার মুখ না দেখলেও সিরিজশেষে ইয়োইন মরগানকে নতুন অধিনায়ক হিসাবে নির্বাচিত করে ইংল্যান্ড। তার নেতৃত্বে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ খেলে ইংল্যান্ড। তরুণ অনভিজ্ঞ দলকে শুরুতেই ফল না পেলেও বর্তমানে তার অধীনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড অপ্রতিরোধ্য দল।
বর্তমান পরিস্থিতি
অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর ইয়োইন মরগানের ক্যারিয়ার গ্রাফ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তিনি নিজেকে ইংল্যান্ডের সেরা ওয়ানডে অধিনায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, ব্যাট হাতেও রানের মধ্যেই আছেন তিনি। দলে তার জায়গা হারানোর পরিস্থিতি কখনও আসেনি, তবুও তিনি জানিয়ে রেখেছেন প্রয়োজনে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের মূল একাদশের বাইরে থাকতে প্রস্তুত তিনি।
৭. জেমস টেইলর
সিরিজে পারফরম্যান্স
অভিষেকের পর থেকে প্রথম তিন বছরে মাত্র দু’টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন জেমস টেইলর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় একাদশে সুযোগ পান তিনি। সুযোগ পেয়ে নিজের প্রথম দুই ম্যাচে ৯০ এবং ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন টেইলর। সিরিজে চার ম্যাচে ৪২.৫০ ব্যাটিং গড়ে ১৭০ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপে তিন নাম্বার পজিশনে ব্যাট করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন জেমস টেইলর। বিশ্বকাপের আগে খেলা ১১টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে দশটিতে তিন নাম্বারে ব্যাট করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে তাকে ব্যাট করার জন্য ছয় নাম্বারে পাঠানো হয়। ছয়ে ব্যাট করতে নেমে অপরাজিত ৯৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ঐ ম্যাচের পর বিশ্বকাপে আর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। বিশ্বকাপের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র ওয়ানডেতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে শতক হাঁকান।
বর্তমান পরিস্থিতি
জেমস টেইলর ২০১৬ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। হৃৎযন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে ডাক্তাররা ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাকে।
৮. রবি বোপারা
সিরিজের পারফরমেন্স
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছিলেন বোপারা। দু’টি ম্যাচেই ইংল্যান্ড পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকালেও সিরিজে ছয় ম্যাচ খেলে ৩০.৮৩ ব্যাটিং গড়ে ১৮৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন, বল হাতে শিকার করেছিলেন এক উইকেট।
পরবর্তী পরিস্থিতি
রবি বোপারা বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও মূল একাদশে তার বদলে গ্যারি ব্যালেন্সকে সুযোগ দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বোপারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, এটিই ছিলো তার শেষ ওয়ানডে ম্যাচ।
বর্তমান পরিস্থিতি
ইংল্যান্ডের হয়ে তার থেমে থেমে চলা ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটার পর বর্তমানে তিনি বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগগুলো খেলছেন। ইতিমধ্যে তিনশ’র অধিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন বোপারা। এছাড়া এসেক্সের হয়ে এখনও কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন তিনি।
৯. জস বাটলার
সিরিজের পারফরমেন্স
২০১২ সালে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন জস বাটলার। কিন্তু দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেন ২০১৪ সালে লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৭৪ বলে ১২১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। তিনি ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সাত ম্যাচের সিরিজে সব ক’টি ম্যাচ খেলে ২৯.০০ ব্যাটিং গড়ে ১৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন, এর মধ্যে অপরাজিত ৫৫ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংসও রয়েছে।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডু-অর-ডাই ম্যাচে দলের বিপর্যয়ের মুখে মাত্র ৫২ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে প্রায় জয় এনে দিয়েছিলেন বাটলার। কিন্তু বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষরক্ষা হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বর্তমানে ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। দলে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করছেন তিনি। বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে পাঁচটি শতক হাঁকিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৪৬ বলে শতক হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন।
১০. বেন স্টোকস
সিরিজের পারফরমেন্স
বেন স্টোকস সাত ম্যাচের সিরিজের তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিন ম্যাচে ১১.০০ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন, বল হাতেও সাফল্য পাননি। আট ওভার বল করে ৮৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকেছেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বাজে ফর্মের কারণে বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও রাখা হয়নি স্টোকসকে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ইংল্যান্ডের এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার সামাল দিচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। পাঁচ নাম্বারে নিজের জায়গা থিতু করে ফেলেছেন। ইতিমধ্যে তার নামের পাশে তিনটি ওয়ানডে শতক রয়েছে। এছাড়াও বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু এনে দিতে বিশেষ পারঙ্গম তিনি।
১১. ক্রিস ওকস
সিরিজের পারফরমেন্স
ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত এক সিরিজ কাটিয়েছিলেন ক্রিস ওকস। সিরিজে দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি, সাত ম্যাচে ২৫.২৮ বোলিং গড়ে ১৪ উইকেট শিকার করেছিলেন। এছাড়া ব্যাট হাতে ২০.৬০ গড়ে ১০৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন ওকস।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপেও নিয়মিত একাদশে ছিলেন ক্রিস ওকস। বাংলাদেশের বিপক্ষে নকআউট ম্যাচে পরিণত হওয়া ম্যাচে অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপর পার্শ্বে যোগ্য সঙ্গীর অভাবে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতি
ইনজুরির জন্য পুরো এক মৌসুম দলের বাইরে ছিলেন তিনি। ইনজুরি ছাড়া ফর্মের কারণে দল থেকে সচরাচর বাদ পড়েন না ওকস। বর্তমানে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণ তার দায়িত্বে। ওয়ানডেতে অ্যান্ডারসন, ব্রডের বিদায়ের পর তিনিই ইংল্যান্ডের মূল পেসার।
১১. ক্রিস জর্ডান
সিরিজের পারফরমেন্স
সিরিজের শুরু থেকে না খেললেও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসাবেই তিনি সিরিজ শেষ করেছিলেন। পাঁচ ম্যাচে সাকুল্যে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপের শুরু থেকে একাদশে জায়গা পাননি জর্ডান। বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের শেষ দুটি ম্যাচে দলে ছিলেন। এরপর ‘নতুন রূপের’ ইংল্যান্ডের ওয়ানডে সাইডে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতি
ওয়ানডে ক্রিকেটে নিয়মিত একাদশে না থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনও নিয়মিত সুযোগ পান ক্রিস জর্ডান।
১২. জেমস ট্রেডওয়েল
সিরিজের পারফরমেন্স
সিরিজের ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন অফ স্পিনার জেমস ট্রেডওয়েল। পাঁচ ম্যাচ খেলে মাত্র চার উইকেট শিকার করলেও ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ৪.৭৬।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপে মঈন আলী প্রধান স্পিনার হিসেবে খেলার কারণে জেমস ট্রেডওয়েল মাত্র এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। ততদিনে অবশ্য ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলো।
বর্তমান পরিস্থিতি
গ্রায়েম সোয়ানের সাথে দ্বিতীয় স্পিনার হিসাবে বেশ কিছু ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন জেমস ট্রেডওয়েল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে যখন নিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন, তখন ৪৫টি ওয়ানডেতে তার উইকেট সংখ্যা ছিলো ৬০টি। দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকার পর চলতি বছরে কাঁধের ইনজুরির কারণে অবসরগ্রহণ করেন।
১৩. জেমস অ্যান্ডারসন
সিরিজের পারফরমেন্স
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্কোয়াডে থাকলেও হাঁটুর ইনজুরির কারণে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন অ্যান্ডারসন, কারণ বিশ্বকাপের আগে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপের আগে ছন্দ ফিরে পেলেও বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উইকেটশূন্য ছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতি
বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন জেমস অ্যান্ডারসন। ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেও টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন তিনি। বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করা বোলার তিনি।
১৪. হ্যারি গার্নি
সিরিজের পারফরমেন্স
বোলিং ডিপার্টমেন্টে বৈচিত্র্য আনার জন্য বাঁহাতি পেসার গার্নিকে শ্রীলঙ্কা সিরিজে রাখা হয়। দলের ডাক পাওয়ার আগে কাউন্টিতে দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছিলেন তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাকে দলে রাখার পরিকল্পনা কাজে দেয়নি, তিন ম্যাচ খেলে ২৪.২ ওভার বল করে ১৫৮ রান খরচায় মাত্র এক উইকেট শিকার করেছিলেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
হ্যারি গার্নি এরপর বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও জায়গা পাননি। এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে আর খেলা হয়নি তার।
বর্তমান পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও এখনও নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন হ্যারি গার্নি, তিন ফরম্যাটেই একইভাবে সফলতাও পাচ্ছেন তিনি।
১৫. স্টিভেন ফিন
সিরিজের পারফরমেন্স
উপমহাদেশের কন্ডিশনে পেসারদের উইকেট শিকার করতে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। ফিনও পুরো সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন, যদিও খুব বেশি উইকেট শিকার করতে পারেননি তিনি। পাঁচ ম্যাচে তিনি পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি
বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট শিকার করে প্রস্তুতিটা ভালোভাবেই সেরে নিয়েছিলেন ফিন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতি
ক্রমাগত ইনজুরির কারণে গত কয়েক বছরে গতি হারিয়েছেন স্টিভেন ফিন। তিনি প্রায় ১৮ মাস জাতীয় দলের বাইরে আছেন। সর্বশেষ অ্যাশেজের প্রাথমিক দলে থাকলেও ইনজুরির কারণে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। পুনরায় জাতীয় দলে ফিরতে হলে তাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।
Featured Image Source : Getty Images