‘দ্য ওভালে’ অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশের ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ-‘এ’ জমজমাট হয়ে উঠেছে। গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৭ রানের জয় তুলে নিয়ে আসরের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। গ্রুপ-এ এর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে গ্রুপের বাকি তিন দলেরই।
গতকাল কার্ডিফে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অফ ফর্মে থাকা জেসন রয় এবং অ্যালেক্স হেইলস ইংল্যান্ডের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেন। নিজের শেষ ছয়টি ওডিআইতে জেসন রয় যথাক্রমে ০, ২০, ১, ৮, ৪ এবং ১ রানের ইনিংস খেলার পরেও তার উপর আস্থা রেখেছেন মরগান। কিন্তু এবারও আস্থার প্রতিদান দিতে পারলেন না রয়। ইনিংসের ৮ম ওভারে পরিবর্তিত বোলার হিসেবে বল করতে আসেন কিউই পেসার অ্যাডাম মিলনে। মিলনের প্রথম ওভারের শেষ বলে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে আনলাকি থার্টিনে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন জেসন রয়।
নিজের উইকেট হারানোর আগে অ্যালেক্স হেইলসের সাথে ৩৭ রানে জুটি গড়েছেন রয়। রয়ের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন জো রুট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩৩* রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছিলেন রুট। অপরপ্রান্তে থাকা হেইলসও সাবলীলভাবে ব্যাট করছেন। ইনিংসের ২১তম ওভারের তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি তুলে নেন অ্যালেক্স হেইলস। মিলনের করা ঐ ওভারের পঞ্চম বলে ছয় হাঁকানোর পর ওভারের শেষ বলে মিলনের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন অ্যালেক্স হেইলস। আউট হওয়ার আগে তিনি ৬২ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি জো রুটের সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৮১ রান যোগ করে গিয়েছেন।
অধিনায়ক মরগান উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই অ্যান্ডারসনের বলে সজোরে রান হাঁকাতে গিয়ে উইকেটরক্ষক রংকির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। তিনিও আনলাকি থার্টিনে আউট হন। পরপর দুই উইকেট হাঁকানোর পর ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপের হাল ধরেন স্টোকস এবং রুট। জো রুট দলীয় ১৮৮ রানের মাথায় চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। অ্যান্ডারসনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তিনি দলীয় সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন। বেন স্টোকস ৪৮ রানে বোল্টের বলে এবং মঈন আলী ১২ রান করে অ্যান্ডারসনের বলে আউট হলে জস বাটলার একপ্রান্ত আগলে রেখে স্কোরবোর্ডে রান সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। জস বাটলারের ৪৮ বলে দুটি চার এবং সমান সংখ্যক ছয়ের সাহায্যে সাজানো ৬১* রানের ইনিংসের কল্যাণে তিনশো রানের কোটা টপকায় ইংল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর এটি ইংল্যান্ডের ২৩তম তিনশোর্ধ্ব রানের ইনিংস।
মার্ক ওড এবং জ্যাক বলকে পরপর দুই বলে সাজঘরে ফেরান টিম সাউদি। এতে করে ইংল্যান্ড ৩ বল বাকি থাকতেই ৩১০ রানে গুটিয়ে যায়। কিউইদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন অ্যান্ডারসন এবং মিলনে। কার্ডিফে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। হলোও তাই। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষে কার্ডিফে বৃষ্টি নামে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে দ্বিতীয় ইনিংস অনুষ্ঠিত হলেও কাটা যায়নি একটি ওভারও। ইংলিশ অধিনায়ক ইয়োন মরগান ইনিংসের প্রথম করতে বল তুলে দেন পেসার জ্যাক বলের হাতে। তিনি নিজের করা চতুর্থ বলে কিউই ওপেনার লুক রংকিকে সাজঘরে ফেরান। লুক রংকি নিজের নামের পাশে কোনো রান যোগ না করে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসাবে ক্রিজে এসে মার্টিন গাপটিলের সাথে জুটি গড়েন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দুই ব্যাটসম্যানই বেশ ধীরগতিতে ব্যাট করছিলেন। প্রথম ছয় ওভার থেকে মাত্র ১২ রান সংগ্রহ করে তারা। খোলস ছেড়ে বের হয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়ে নিজের উইকেটটি হারান মার্টিন গাপটিল। বেন স্টোকসের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ৩৩ বলে ২৭ রান।
গাপটিল আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেইলর। কেন উইলিয়ামসনের সাথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৯৫ রান। কেন উইলিয়ামসন ৯৮ বলে আটটি চারের মারে ৮৭ রান করে ইনিংসের ৩১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মার্ক ওডের শিকারে পরিণত হন কিউই অধিনায়ক।
দলীয় ১৬৮ রানে রস টেইলর ৩৯ রান করে জ্যাক বলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েন রস টেইলর। নিউজিল্যান্ড শেষ আট উইকেট হারায় মাত্র ৬৫ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চার উইকেট শিকার করা লিয়াম প্লাঙ্কেট এদিনও নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন। নিজের শেষ স্পেলে বল করতে এসে মাত্র নয় বলে তিন উইকেট শিকার করেন তিনি। ম্যাচে ৫৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন প্লাঙ্কেট।
জ্যাক বল ৮ ওভার বল করে দুটি মেইডেন ওভার বল করে ৩১ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ-‘এ’তে প্রথম দল হিসাবে সেমিফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড।
দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠার সুযোগ আছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার জন্য সমীকরণটা তুলনামূলক সহজ। নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেলেই সেমিফাইনালে উঠে যাবে অজিরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে যে দল জিতবে সে দলেরও সেমিফাইনালে উঠার সুযোগ আছে। সেমিফাইনালে উঠতে এই দু’দলের তাকিয়ে থাকতে হবে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচের দিকে। ইংল্যান্ড জয় পেলেই নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ থেকে যে দল ম্যাচ জিতবে সে দল সেমিফাইনালে উঠবে। আর যদি অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত হয়, তখনও নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ থেকে যে দল জিতবে সে দল সেমিফাইনালে উঠবে। বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও বাংলাদেশের সুযোগ থাকবে সেমিফাইনালে উঠার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড জয় পেলে রান রেটের হিসেবে বাংলাদেশের সেরা চারে উঠার সুযোগ থাকবে।