শুরু হয়ে গেছে ইউরো ২০২০ আসর। এবারের ইউরো শিরোপা কার হাতে উঠবে, সেটা জানতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ১১ জুলাই অব্দি। তবে শিরোপাজয়ের সম্ভাবনায় যেভাবে স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি কিংবা ইংল্যান্ডের নাম আলোচনায় উঠে আসছে, সেই তুলনায় ইতালি বা নেদারল্যান্ডসের মতো দলগুলো নিয়ে নেই তেমন মাতামাতি। তাদেরও রয়েছে ফুটবলবিশ্বকে চমকে দিয়ে ইউরোতে অভাবনীয় কিছু করে ফেলার ক্ষমতা। ইতালিই যেমন উড়ন্ত সূচনা করেছে এবারের ইউরোতে, দারুণ দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়াশৈলীতে তুরষ্ককে হারিয়ে দিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। ইউরোর কালো ঘোড়া বৃত্তান্তের প্রথম পর্বে আজ আমরা কথা বলব এই ইতালি এবং তুরস্কের সম্ভাবনা নিয়েই।
ইতালি
বিগত সময়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতালি যেন এক হতাশার নাম। সর্বশেষ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না পাওয়া চারবারের বিশ্বজয়ীদের শেষও বোধহয় দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। কিন্তু রবার্তো মানচিনির অধীনে যেন ভোজবাজির মতোই পাল্টে গেছে এই দল। মানচিনি এই দলটিকে নিজের হাতে এমনভাবেই সাজিয়েছেন যে হারতেই যেন ভুলে গেছে আজ্জুরিরা। সর্বশেষ ২০১৮ উয়েফা ন্যাশনস লিগে পর্তুগালের সাথে হারার পর ইতালি ২৮টি ম্যাচ খেললেও এর মাঝে কোনো দলই হারাতে পারেনি চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ানদের। এই ইউরোতেও শুরুটা করেছে দারুণ।
বিগত ম্যাচগুলোতে ফলাফল
ইতালি তাদের সর্বশেষ খেলা ১০ ম্যাচে ৯টি জয়ের বিপরীতে মাত্র ১টি ম্যাচে ড্র করেছে; ড্র করা ম্যাচটি ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এই ১০ ম্যাচে ইতালি ২৬ গোল করার বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ১ গোল!
খেলার ধরন
মানচিনির ফুটবল দর্শনের বেশ বড় একটা অংশই ৪-৩-৩ ফর্মেশনের উপর নির্ভরশীল। ইতালিকেও তিনি ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই খেলান। মানচিনির অধীনে ইতালি সাধারণত পজেশনবেসড ফার্স্ট ট্রানজিশনাল ফুটবল খেলে থাকে। বিল্ডআপের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন দুই ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তি এবং নিকোলা বারেল্লা। বিল্ডআপের সময় দুই ওয়াইড ফরোয়ার্ড প্রতিপক্ষ অর্ধের হাফ স্পেসে পজিশন নেন এবং দুই ফুলব্যাক হাইলাইনে উঠে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনকে ওয়াইড করার চেষ্টা করতে থাকেন। এক্ষেত্রে ইতালির আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা প্রতিপক্ষ বক্সের কাছে ওভারলোড তৈরি করে তাদের ডিফেন্সিভ স্ট্রাকচারকে ভাঙতে চেষ্টা করেন।
মিডফিল্ড থেকে বিল্ডআপের সময় ভেরাত্তি কিংবা জর্জিনহো বল নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে টিমমেটদের সাথে কুইক পাসিং করতে থাকেন এবং ভালো ফরোয়ার্ড পাস দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এসময় অপর ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার বারেল্লা ক্রমাগত নিজের পজিশন রোটেট করতে থাকে পাসিং অপশন বাড়ানোর জন্য। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রোলে থাকা লোকাতেল্লি তখন তাদের থেকে কিছুটা নিচে অবস্থান করেন এবং টিমমেট বলের দখল হারালে সাথে সাথে প্রতিপক্ষকে প্রেস করে বলের দখল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
বলের দখল হারালে ইতালির খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষ খেলোয়ারদের সাথে ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে তাদের ডিফেন্সিভ ডুয়েল জেতার হার এবং বল রিকভারির হার বেশ ভালো হওয়ায় ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান ব্যাটলে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা ইতালির বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারে না।
শুরুর একাদশ
গোলবারের নিচে মানচিনির প্রথম পছন্দ জিয়ানলুইজি ডোনারুমা। সেন্টারব্যাক ডুয়ো হিসেবে দুই পরীক্ষিত সৈনিক চিয়েল্লিনি এবং বোনুচ্চি থাকছেন, সেটাও অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে প্রতিপক্ষ দলে দ্রুতগতির ফরোয়ার্ড থাকলে এবং ডিফেন্সলাইন থেকে লং বল দিয়ে প্রতিপক্ষের টাইট ডিফেন্সলাইনকে বিপদে ফেলার ক্ষেত্রে বোনুচ্চির জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন ইন্টার মিলানের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো বাস্তোনি। ইতালির ফুটবল স্টাইলে দ্রুতগতিতে ওভারল্যাপ করতে পারা ফুলব্যাকের প্রয়োজন বলে দুই ফুলব্যাক হিসেবে মানচিনির প্রথম পছন্দ আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি এবং লিওনার্দো স্পিনাৎজোলা।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে সাসুউলোর হয়ে দুর্দান্ত সিজন কাটানো লোকাতেল্লির খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তার উপরে দুই ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে পারেন মার্কো ভেরাত্তি এবং নিকোলা বারেল্লা। তবে প্রতিপক্ষ হাই প্রেসিং করে খেললে সেক্ষেত্রে খেলতে পারেন জর্জিনহো। তুরষ্কের বিপক্ষে ম্যাচেই যেমন ভেরাত্তির পরিবর্তে জর্জিনহো খেলেছেন, নিজের নামের প্রতি সুবিচারটাও করেছেন দারুণভাবে।
আক্রমণভাগে দুই ওয়াইড উইঙ্গার লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে এবং ফেদেরিকা কিয়েসার মাঝে খেলবেন সিরো ইমোবিলে। তবে প্রতিপক্ষের টাইট ডিফেন্সকে ওয়াইড করে ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন নষ্ট করার জন্য কিয়েসার পরিবর্তে আন্দ্রেয়া বেলোত্তি কিংবা ডমেনিকো বেরার্দিকে নামানোর সম্ভাবনাই বেশি। তুরষ্কের বিপক্ষে মানচিনি বেছে নিয়েছিলেন বেরার্দিকেই। বেরার্দি দারুণভাবে তার প্রতিদান দিয়েছেন। গ্যাজেট ডেলো স্পোর্টসের মতে,
“What a player he has become! He did not score but he was unstoppable.”
যাদের দিকে নজর রাখবেন
জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মা, ডমেনিকো বেরার্দি, ডেদেরিকা কিয়েসা।
দুর্বলতা
ইতালি দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হতে পারে “দ্য ইতালিয়ান ওয়াল”-খ্যাত সেন্টারব্যাক জুটি চিয়েল্লিনি এবং বোনুচ্চির উপস্থিতি। তারা অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা অনেকটাই ধীরগতির হয়ে গিয়েছেন, ফলে প্রতিপক্ষ দলে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফরোয়ার্ডের উপস্থিতি ইতালির ডিফেন্সকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। বোনুচ্চির জায়গায় বোস্তানিকে খেলাতে পারেন কোচ, তবে তার আন্তর্জাতিক ফুটবলে অনভিজ্ঞতা ইউরোর মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ইতালিকে ভোগাতে পারে। দলের লেফটব্যাক পজিশন নিয়েও রয়েছে দুর্বলতা। স্পিনিৎজোলা বেশ ভালো ফর্মে থাকলেও তিনি ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে গেলে সঠিক সময়ে আবার নিচে নামেন না, আবার অপর লেফটব্যাক এমারসন পালমিয়েরি চেলসির হয়ে খুব একটা খেলারও সুযোগ পাননি এই সিজনে।
সম্ভাবনা
গত দশকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ধারাবাহিক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় কাটানোর পর মানচিনির হাত ধরে আবারো নিজেদের চিরচেনা রূপে ফিরে এসেছে ইতালি। মানচিনির অধীনে হারতে ভুলে যাওয়া এ দলটির চোখ যে শিরোপার দিকেই থাকবে, সেটিও বলাই বাহুল্য। গ্রুপ-এ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে যেতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খুব বেশি কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা নেই ইতালির। তাই কোনোরকম ব্যতিক্রম না ঘটলে ইতালি অন্তত সেমিফাইনাল খেলবে, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে বলা যায়।
তুরস্ক
আন্তর্জাতিক ফুটবলে তুরস্ক তেমন বড় কোনো নাম না হলেও এবারের ইউরোতে তাদের আশা দেখাচ্ছে সর্বশেষ কিছু ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স। তার উপর এবারের ইউরোতে তুরস্কের ডাগআউটে থাকছেন ২০০২ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জনের মূল কারিগর কোচ সেনোল গুনেস। তার হাত ধরে তুর্কিরা আবারও ২০০২ বিশ্বকাপের মতো এবারের ইউরোতেও কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারবে কি না, সেটা জানতে কেবলই সময়ের অপেক্ষা। তবে শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি তাদের; ০-৩ ব্যবধানে পরাজয়ে তো শুরুটা হয়েছেই, উপরন্তু তার মধ্যে একটি গোল ছিল আত্মঘাতী যেটা এসেছে ডেমিরালের পা থেকে।
বিগত ম্যাচগুলোতে ফলাফল
তুরস্ক তাদের সর্বশেষ খেলা ১০ ম্যাচে ৫টি জয়ের বিপরীতে মাত্র ৪টি ম্যাচে ড্র করেছে এবং ১টি ম্যাচে হেরেছে। এই ১০ ম্যাচে তুরস্ক ২৪ গোল করার বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ১৫ গোল।
খেলার ধরন
গুনেস সাধারণত তুরস্ককে ৪-২-৩-১ অথবা ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলতে নামান। তিনি সাধারণত বলের দখল নিজেদের কাছে রাখার পরিবর্তে অতি দ্রুত আক্রমণে যাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দেন। তুরস্কের খেলোয়াড়েরা লম্বা সময় ধরে বলের দখল রাখার পরিবর্তে যত দ্রুত সম্ভব আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য তুরস্কের মিডফিল্ডররা বলের দখল পাওয়ার সাথে সাথেই ফরোয়ার্ড পাস (৭২ শতাংশ ক্ষেত্রেই) খেলার চেষ্টা করে। আক্রমণভাগের খেলোয়ারদের মধ্যে হাকান চালহানোলু, ইউসুফ ইয়াজিকি এবং বুরাক ইলমাজের লং রেঞ্জে শট নেবার দক্ষতা বেশ ভালো হওয়ায় প্রতিপক্ষ বক্সের আশেপাশে বল পেলেই তারা গোল করার চেষ্টা করেন।
তুরস্কের খেলোয়াড়রা লম্বা সময় নিজেদের পায়ে বল রাখার পরিবর্তে অতি দ্রুত বল প্রোগ্রেস করতে চেষ্টা করে বলে তারা সাধারণত ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপে অংশ নেয় না। এজন্য ডিফেন্সলাইন থেকে গোলকিপার চাকির কিংবা সেন্টারব্যাক ইলমাজকে উদ্দেশ্য করে লং বল দেয়। এসময় ইলমাজ দ্রুত বল নিজের দখলে নিয়ে তার টিমমেটদের সাথে কুইক ওয়ান-টু-ওয়ান পাসিং করে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সলাইন ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করেন অথবা নিজেই ড্রিবল করে প্রতিপক্ষে ডিফেন্সে ঢুকে পড়েন। এক্ষেত্রে ইলমাজ বলের দখল নিতে ব্যর্থ হলে তার আক্রমণভাগের টিমমেটরা তাদের ফিজিক্যালিটি ব্যবহার করে সেকেন্ড বলের দখল নেবার চেষ্টা করে।
ইলমাজের আরেকটি বড় গুণাবলি হচ্ছে, তিনি অন্যান্য ফরোয়ার্ডদের মতো বক্সের আশেপাশে না থেকে মিডফিল্ডে ড্রপ করেন এবং মিডফিল্ডারদের জন্য বাড়তি পাসিং অপশন তৈরি করেন। একইসাথে তার মিডফিল্ডে নেমে বলের দখল নিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়ারদের নিজের দিকে আকর্ষণ করার কারণে তার টিমমেটরা ওয়াইড এরিয়ায় অনেক ফ্রি স্পেস পেয়ে যান।
বলের দখল প্রতিপক্ষের কাছে থাকা অবস্থায় তুরস্কের খেলোয়াড়রা সাধারণত উপরে উঠে প্রতিপক্ষকে প্রেস করে বলের দখল পুনরায় ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে নিজেদের ডিফেন্স আঁটসাঁট রাখার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। প্রতিপক্ষ বল নিয়ে উপরে উঠে আসলে তুরস্কের খেলোয়াররা তখন বল ইন্টারসেপ্ট কিংবা ফাউল করে প্রতিপক্ষের বিল্ডআপে বাধা দিতে চেষ্টা করে। তুরস্কের মোট বল রিকভারির ৯২ শতাংশই নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ডে, এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে তারা উপরে উঠে প্রেস করার পরিবর্তে প্রতিপক্ষের বল নিয়ে উপরে উঠে আসার অপেক্ষা করে। প্রতিপক্ষের আক্রমণের সময় তুরস্কের মিডফিল্ডাররা মিডফিল্ডের সেন্টার এরিয়া আঁটসাঁট রাখতে চেষ্টা করে। এতে করে প্রতিপক্ষের খেলোয়াররা ওয়াইড এরিয়া দিয়ে বল প্রোগ্রেস করতে বাধ্য হয়। তখন তুরস্কের খেলোয়াররা সে সাইডের পাসিং জোনগুলো ব্লক করে প্রেস করতে থাকে এবং পুনরায় বলের দখল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে।
শুরুর একাদশ
তুরস্ক যেহেতু তাদের ডিফেন্সলাইন থেকে লং বলের মাধ্যমে বিল্ডআপ করে থাকে, এজন্য চাকিরের বল ডিস্ট্রিবিউশন সামর্থ্যের জন্য গোলবারের নিচে তিনিই গুনেসের প্রথম পছন্দ। দুই ফুলব্যাক হিসেবে খেলবেন জেকি চেলিক এবং উমুত মেরাস। সেন্টারব্যাক হিসেবে সয়ুঞ্চু এবং কাবাকের নামার সম্ভাবনা বেশি, তবে অতি আক্রমণাত্মক দলগুলোর বিপক্ষে জুভেন্টাসের মেরিহ ডেমিরালকেও দেখা যেতে পারে। প্রথম ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে নেমেছিলেন ডেমিরাল, ম্যাচটা অবশ্য ভুলে যেতেই চাইবেন তিনি।
মিডফিল্ডে ৪-২-৩-১ কিংবা ৪-৩-৩ ফর্মেশনভেদে খেলোয়াড় বাছাইয়ে পার্থক্য দেখা যেতে পারে। তবে দুই ক্ষেত্রেই মূল প্লেমেকার হিসেবে দেখা যাবে মিলানের হয়ে দুর্দান্ত সিজন কাটানো হাকান চালহানোলু। তার দুর্দান্ত সেটপিস কিংবা লং রেঞ্জের একটি শটই গড়ে দিতে পারে ম্যাচের গতিপথ। চালহানোলুর পাশে বল প্রোগ্রেসিভ মিডফিল্ডার রোলে দেখা যেতে পারে ওজান তুফানকে। তাদের নিচে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রোলে দেখা যেতে পারে ওকায় ইয়োকুসলুকে, যেখানে তার মূল ভূমিকা থাকবে প্রতিপক্ষ দলের মূল প্লেমেকারের স্বাভাবিক খেলায় বাধা প্রদান করে তাদের সৃষ্টিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটানো।
আক্রমণভাগে লেফট উইঙ্গার হিসেবে কেনান কারমানকে দেখা যেতে পারে৷ রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলবেন ইউসুফ ইয়াজিকি। তবে তিনি প্রথাগত রাইট উইঙ্গারদের মতো না খেলে সেন্টার এরিয়ায় কাট-ইন করে চালহানোলুর সাথে ওয়ান টু ওয়ান করে প্রতিপক্ষ বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবেন। নাম্বার নাইন রোলে খেলবেন লিলের হয়ে দুর্দান্ত সিজন কাটানো বুরাক ইলমাজ। টিমমেটদের বাড়িয়ে দেওয়া লং বলগুলোকে জালে জড়ানোই থাকবে তার মূল লক্ষ্য।
যাদের উপর নজর রাখবেন
চাগলার সয়ুঞ্চু, হাকান চালহানোলু, বুরাক ইলমাজ।
দুর্বলতা
তুরস্কের এই দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ হলেও তাদের কোচ সেনোল গুনেসের ঘন ঘন রোটেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হুটহাট ট্যাকটিক্সে পরিবর্তন ইউরোতে তাদের বেশ ভোগাতে পারে। এছাড়াও তাদের মূল সেন্টারব্যাক সয়ুঞ্চু ইনজুরির কারণে লেস্টার সিটির হয়ে খুব বেশি খেলার সুযোগ পাননি। তার আত্মবিশ্বাসের অভাব শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভোগাতে পারে।
সম্ভাবনা
গ্রুপপর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইতালি, ওয়েলস এবং সুইজারল্যান্ড থাকায় পরের রাউন্ডে যাওয়াটা বেশ কঠিনই হবে তুরস্কের জন্য। শুরুটাও তেমন ভালো হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিগত সময়ে তাদের পারফরম্যান্স তুরস্কের সমর্থকদের বেশ সাহস যোগাবে। পরের দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতেই চাইবে তারা। আর গ্রুপপর্বের বাধা পেরোতে পারলে রাউন্ড অব সিক্সটিনে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এজন্য অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের দলকে দেখার আশা করতেই পারেন তুরস্কের সমর্থকেরা।