Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউরো-জয়ের দৌড়ে যারা: সাউথগেটের ইংল্যান্ড

আগামী ১১ জুন শুক্রবার মাঠে গড়াচ্ছে ইউরো ২০২০। ১৩ জুন ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে শিরোপাপ্রত্যাশী ইংল্যান্ড। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক টুনামেন্টের শুরুতে অনেক সাড়া জাগালেও মাঠের পারফরম্যান্সে প্রায়ই খেই হারায় ইংল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১৮ অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপটাই ধরুন না! শুরুটা দুর্দান্ত হলেও দৌড় শেষমেশ সেমিফাইনালেই গিয়ে থামেন।

তবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বরাবর ব্যর্থ হলেও এবারের ইউরোতে শক্তিমত্তার বিচারে তাদের ফেবারিট হিসেবেই ধরা যায়। আসন্ন ইউরোর তাদের দলে বেশ ভালো কিছু তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে, যারা বেশ প্রতিশ্রুতিশীল। তরুণদের উপর ভরসা রেখেই বলা যায়, এইবারের ইউরোতে ইংল্যান্ড যেকোনো দলের জন্য আতঙ্কস্বরূপ!

ইউরোর জন্য ২৬ সদস্যের ইংল্যান্ড স্কোয়াড;; image credit: England Football Team

উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) ইতিহাসে ইংল্যান্ড

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উয়েফা ইউরোপিয়ান চাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ড সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় ১৯৬৮ সালের ইতালির আসরে। পরের দু’আসরে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও ১৯৮০তে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। ‘৮৪ আসরে আবারও কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হলেও পরের পাঁচ আসরে ধারাবাহিকভাবে কোয়ালিফাই করে। ১৯৯৬ আসর ইংল্যান্ডের মাটিতেই উয়েফা চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়, যে আসরে দলটি সেমিফাইনালে ওঠে এবং ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১-১ ড্র করে টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিসে জার্মানির কাছে হেরে যায়। এরপর ২০০৮ সালে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও দলটি ২০০৪ ও ২০১২ আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০১৬ আসরে রাউন্ড অফ সিক্সটিন খেলে।

বিগত ম্যাচগুলোর ফলাফল

ইংল্যান্ড তাদের সর্বশেষ খেলা ১০ ম্যাচে ৮ জয়ের বিপরীতে মাত্র ২টি ম্যাচ হেরেছে, বেলজিয়াম এবং ডেনমার্কের বিপক্ষে। এই ১০ ম্যাচে ইংল্যান্ড ২২ গোল করার বিপরীতে মাত্র ৪ গোল হজম করেছে।

খেলার ধরন

ইংল্যান্ডের শেষ কিছু ম্যাচে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাউথগেট ৪-৩-৩ ফর্মেশন ব্যবহার করেছেন, তবে তাকে কিছু সংখ্যক ম্যাচে ৪-২-৩-১ এবং ৩-৪-৩ ফর্মেশনেও দলকে খেলাতে দেখা গেছে। সাউথগেট দলকে ব্যাকলাইন হতে বিল্ডআপ করাতে পছন্দ করেন। এজন্য খেলোয়াররা বেশিরভাগ সময় বল পজেশন নিজেদের দখলে রাখতে চেষ্টা করে। খেলোয়াড়রা ডিরেক্ট ফুটবল খেলার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে ধৈর্য্য ধরে বল সার্কুলেট করতে থাকে এবং বিল্ডআপের সময় খুব কম পরিমাণে ফরোয়ার্ড পাস দিতে দেখা যায়। ডিরেক্ট ফুটবল খেলতে অনীহা থাকায় বিল্ডআপের সময় খুব বেশি লং বল খেলতে দেখা যায় না, এর পরিবর্তে খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে শর্ট পাসের মাধ্যমে বিল্ডআপে অংশ নেয়।

বলের দখল থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের আক্রমণের বিভিন্ন দিক; image credit: Total Football Analysis

সাউথগেট তার মিডফিল্ডকে সিঙ্গেল পিভট কিংবা ডাবল পিভট যেভাবেই খেলান না কেন, তার টিম সিলেকশনে মিডফিল্ডে একটা কমন নাম থাকেই সাধারণত – ডেক্লান রাইস। ডেক্লান সাধারণ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের মতো প্রতিপক্ষের খেলা নষ্ট করার পাশাপাশি বল পায়েও দক্ষ। বিল্ডআপের সময় তিনি দুই সেন্টারব্যাকের মাঝে পজিশন নিয়ে থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন তৈরি করে। এতে করে দুই ফুলব্যাক আরো হাইলাইনে উঠার সুযোগ পায় এবং ইংল্যান্ডের সহজাত পাসিং ফুটবল খেলতে আরো সুবিধা হয়।

রাইস মিডফিল্ড থেকে ডিফেন্সে নেমে ব্যাক-থ্রি তৈরি করছেন; Image credit: Total Football Analysis

দলের মূল নাম্বার নাইন হ্যারি কেইন প্রথাগত স্ট্রাইকারদের মতো বক্সের আশেপাশে অবস্থান করার পরিবর্তে মিডফিল্ডে নেমে এসে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি তৈরি করেন। কেইন মিডফিল্ডে নেমে আসায় মিডফিল্ডারদের জন্য বাড়তি পাসিং অপশন তৈরি হয়। ফলে প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডারদের পক্ষে ইংল্যান্ডের মিডফিল্ড লাইনকে প্রেস করে তাদের স্বাভাবিক পাসিং ফুটবল নষ্ট করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেইন গোলস্কোরার হিসেবে অনেক সলিড হওয়ায় সাধারণত প্রতিপক্ষের একজন সেন্টারব্যাক কেইনকে সরাসরি টাইট ম্যান মার্ক করেন। এজন্য কেইন মিডফিল্ডে ড্রপ করলে তাতে ট্র্যাক করে প্রতিপক্ষ দলের সেন্টারব্যাক উপরে উঠে আসলে তাদের ডিফেন্সলাইনে বড় গ্যাপ তৈরি হয় এবং সেই সুযোগে ইংল্যান্ডের উইঙ্গাররা সেন্টার এরিয়ায় কাট-ইন করে থ্রেট তৈরি করার সুযোগ পান।

যেহেতু ইংল্যান্ড বল পজেশন নিজেদের দখলে রেখে খেলতে পছন্দ করে, এজন্য তাদের আউট অব পজেশন অবস্থায় খুব বেশি সময় কাটাতে হয় না। ইংল্যান্ডের পজেশনবেসড স্লো বিল্ডআপের বিপক্ষে বেশিরভাগ দলই দ্রুত ও ডিরেক্ট কাউন্টারবেসড ফুটবল খেলে থাকে। এজন্য ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা বল পজেশন হারালে সাথে সাথেই জোরেশোরে প্রেসিং করতে শুরু করে বলের দখল ফিরে পাওয়ার জন্য। এজন্য ফাইনাল থার্ডে ইংল্যান্ডের খেলোয়ারদের বল রিকভারির হার অন্যান্য দলগুলোর তুলনায় বেশ ভালো।

কাউন্টারপ্রেসিংয়ের সময় ইংল্যান্ড দুইটি নিয়ম মেনে চলে। প্রথমত, যদি কোনো খেলোয়াড় খুব সংকীর্ণ জায়গার মধ্যে বলের দখল হারায়, তবে পজিশনের চিন্তা না করেই তড়িৎগতিতে বল হোল্ডারকে সরাসরি প্রেস করতে থাকা৷ তাৎক্ষনিক চাপের কারণে বল হোল্ডারকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত বল হোল্ডার লং বল খেলার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের প্রতিটি খেলোয়াড়কে ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান ম্যান মার্ক করে রাখা এবং এরিয়াল ব্যাটেলে শক্তিশালী হওয়ার কারণে এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের বলের দখল ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে৷

বলের দখল হারালে ওয়াকার খুব দ্রুত প্রতিপক্ষের খেলোয়ারকে প্রেস করে দ্রুত বল পাস দিতে বাধ্য করেন; image credit: Total Football Analysis

দ্বিতীয়ত, যদি ইংল্যান্ডের কোনো খেলোয়াড় বলের দখল হারানোর পর প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা সাথে সাথেই পাসিং জোন অনেক বড় করে ফেলে, তবে বল হোল্ডারকে সরাসরি প্রেস করার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে অর্গানাইজড হয়ে যায় এবং প্রতিপক্ষের ভুল পাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

যাদের উপর নজর রাখবেন

  • ডেক্লান রাইস

ওয়েস্টহ্যামের হয়ে দুর্দান্ত এক সিজন কাটানোর পরে রাইসের ইউরো স্কোয়াডে থাকাটা এক কথায় নিশ্চিতই ছিল। নিঃসন্দেহে প্রিমিয়ার লিগের সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের একজন ছিলেন ওয়েস্টহ্যামের ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। সাউথগেট তার দলকে ৪-৩-৩, ৩-৪-৩ কিংবা ৪-২-৩-১ যে ফর্মেশনেই খেলান না কেন, প্রতি ক্ষেত্রেই ডেক্লানই স্টার্টার হচ্ছেন, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

বিল্ডআপের সময় তার ব্যাকলাইনে ড্রপ করাটা যেমন দলকে রক্ষণগত দিক থেকে পোক্ত করে, তেমনই তার স্পেস কভারের কারণে দলের ফরোয়ার্ড প্লেয়াররা আরো বেশি আগ্রাসন নিয়ে প্রতিপক্ষকে প্রেস করতে পারে।

এখানে রাইস কভার ম্যানের রোলে এরিয়া কভার দিচ্ছেন। ফলে আক্রমণভাগের খেলোয়াররা আরো আগ্রাসীভাবে প্রতিপক্ষের ব্যাকলাইনকে প্রেস করতে পারছেন; Image credit: Total Football Analysis
  • ম্যাসন মাউন্ট

দলের প্রতি নিবেদন এবং দলের প্রয়োজনে যেকোনো অবস্থায় জ্বলে উঠতে পারার কারণে ম্যাসন মাউন্ট ক্লাব কিংবা ন্যাশনাল টিমে উভয় কোচেরই প্রিয় পাত্র। সাউথগেট যদি মিডফিল্ডে ডাবল পিভট খেলান, তবে পিভট ডুয়োর উপরে নাম্বার টেন রোলে মাউন্টের খেলার সম্ভাবনা সর্বাধিক। প্রিমিয়ার লিগের এই সিজনে মাউন্ট ছিলেন ইন বিটুইন দ্য লাইনে অপারেট করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ফুটবলার। একই রোলে ইউরোতেও মাউন্ট হতে পারেন সাউথগেটের তুরুপের তাস।

  • ফিল ফোডেন

ফোডেন প্রথাগত নাম্বার টেন রোলে খেলার মতো ফুটবলার হলেও এই সিজনে গার্দিওলা তাকে বেশিরভাগ সময় লেফট উইঙ্গার রোলেই খেলিয়েছেন। কেইন মিডফিল্ডে ড্রপ করলে উইং থেকে সেন্টার এরিয়ায় ফ্রি স্পেসে কাট-ইন করে গোলস্কোরিংয়ে ভালো অবদান রাখতে পারেন ম্যানসিটির এই তরুণ।

  • হ্যারি কেইন

নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ড বর্তমান দলের সবচেয়ে বড় তারকা দলের অধিনায়ক হ্যারি কেইন। তার এই সিজনে লিগে ২৩ গোল এবং ১৪ অ্যাসিস্ট উভয়ই ছিল লিগের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতা এই তারকা এবারও পাখির চোখ করে রাখবেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হওয়ার দিকে। এই মৌসুমে সনের সাথে মিলে যেভাবে ত্রাস ছড়িয়েছেন প্রতিপক্ষ দলগুলোর উপর, তাতে করে তার সাথে রাশফোর্ড-ফোডেনদের বোঝাপড়া ঠিকমতো গড়ে উঠলে ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগকে থামানো প্রতিপক্ষের জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই কঠিন কাজ হবে।

হ্যারি কেইন; image credit: Getty Images

কেমন হতে পারে শুরুর একাদশ

ইংল্যান্ডের বর্তমান দলটা এতটাই তারকায় পরিপূর্ণ যে সাউথগেটকে মধুর সমস্যায় পড়তে হবে ম্যাচের আগে একাদশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। গোলবারের নিচে পুরনো সৈনিক জর্দান পিকফোর্ডের উপরই ভরসা রাখার সম্ভাবনা বেশি সাউথগেটের। যদিও এভারটনের হয়ে এই সিজনটা পিকফোর্ডের খুব বেশি ভালো যায়নি, কিন্তু তার বল ডিস্ট্রিবিউশন সামর্থ্যের জন্য গোলবারের নিচে তারই থাকার সম্ভাবনা বেশি। যদিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দুর্দান্ত সিজন কাটানো হ্যান্ডারসনেরও স্টার্ট করার বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিফেন্সলাইনে রাইটব্যাক রোলে ওয়াকার অটোচয়েসই বলা যায়। সাউথগেট ব্যাক-ফোর খেলালে রাইটব্যাক রোলে খেলবে ওয়াকার, আর সাউথগেট যদি থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন খেলায়, তবে রাইট সেন্টারব্যাক রোলে ওয়াকারের খেলার সম্ভাবনা বেশি। সেন্টারব্যাক রোলে স্টোনস-ম্যাগুয়ের জুটির খেলার সম্ভাবনাই বেশি পুরো সিজনজুড়ে দুই ম্যানচেস্টারের হয়ে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য। লেফটব্যাক রোলে লুক শ এবং জেমস চিলওয়েল দু’জনই রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ফলে ম্যাচে কাকে খেলাবেন, সেটা ঠিক করার জন্য হয়তো ম্যাচের আগে টসই করতে হবে সাউথগেটকে! তবে লো ব্লকে খেলা টিমগুলোর বিপক্ষে ক্রস করে ডেডলক ভাঙার জন্য চিলওয়েলের একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি। আবার ওয়াইড এরিয়ায় স্পিড দিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনকে ডিজঅর্গানাইজড করার ক্ষেত্রে একাদশে থাকতে পারেন শ। সাউথগেট ব্যাক-থ্রি সিস্টেম খেলালে রাইট উইংব্যাক রোলে রিস জেমসের খেলার সম্ভাবনা বেশি।

মিডফিল্ডে ডাবল পিভট খেলালে রাইসের সাথে লিডসের হয়ে দুর্দান্ত সিজন কাটানো ক্যালভিন ফিলিপস মিলে হতে পারেন পিভট ডুয়ো। আবার অভিজ্ঞতার জন্য দলের সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন ইনজুরির কারণে অনেকদিন খেলার বাইরে থাকা জর্দান হ্যান্ডারসন। আবার মিডফিল্ডে কুইক পাসিং করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনকে ব্রেক করার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে সাউথগেট রাইসকে সিঙ্গেল পিভট রোলে খেলিয়ে তার সামনে খেলাতে পারেন বেলিংহামকে। ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার হিসেবে সাউথগেটের অটোচয়েস ম্যাসন মাউন্ট, সেটা তো বলা হয়েছে আগেই।

ফরওয়ার্ড লাইনে মূল টার্গেটম্যান হিসেবে খেলবেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন। দুই উইংয়ে রাশফোর্ড এবং ফোডেনকে দেখার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সিজনে বাজে ফর্ম থাকলেও অভিজ্ঞতার বিচারে লেফট উইংয়ে থাকতে পারেন রাহিম স্টার্লিং। ইনজুরিতে পড়ার আগ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের সেরা প্লেমেকার ছিলেন অ্যাস্টন ভিলার জ্যাক গ্রেলিশ। কিন্তু ইনজুরির পর খুব বেশি ম্যাচ না খেলায় তাকে হয়তো বা বেঞ্চেই থাকতে হবে। তবে প্রতিপক্ষের ন্যারো ডিফেন্সলাইনকে ওয়াইড করার জন্য উইং এরিয়ায় সাঞ্চো কিংবা সাকাকেও দেখা যেতে পারে। এরিয়াল বলে টাইট স্পেসের মধ্যে কার্যকরী হওয়ার কারণে তখন মূল টার্গেটম্যান হিসেবে ডমিনিক কালভার্ট লুইনকে দেখা যেতে পারে।

দুর্বলতা

সমন্বয়হীনতা 

ইংল্যান্ড দলটি তারকায় পরিপূর্ণ হলেও দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে। অনেক ম্যাচেই দলকে সম্পূর্ণ ছন্নছাড়া খেলতে দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, বল পায়ে দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই শক্তিশালী হওয়ায় বল পায়ে থাকলে বেশি আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টা করেন।

মিডফিল্ড

ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ভ্যারিয়েশনের অভাব। রাইস এবং ফিলিপস দু’জনই অনেকটা একই ধরনের খেলোয়াড়। হেন্ডারসন লিভারপুলের হয়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলেছেন সেন্টারব্যাক রোলে। তিনি মূল একাদশে কতটা ফিট সেটা বলাও কঠিন। এজন্য বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার রোলে বেলিংহ্যাম ছাড়া আর কেউ নেই দলে। ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার হিসেবে মাউন্ট ছাড়া আর তেমন কেউ নেই, যেহেতু ফোডেন এবং গ্রেলিশ দু’জনই তাদের ক্লাবের হয়ে লেফট উইঙ্গার রোলে খেলেন।

লো ব্লক ডিফেন্স ভাঙতে দুর্বলতা

সাউথগেটের খেলার ধরনে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, খেলোয়াড়রা বলের দখল নিজেদের কাছে রাখলেও বিপদজনক পাস বা লং বল খুব কম খেলে। এছাড়াও মিডফিল্ড থেকে বিল্ডআপের সময় খেলাও অনেকটা ধীরগতির হয়ে যায়। এজন্য লো ব্লক ডিফেন্সলাইনের সামনে ইংল্যান্ডকে ভুগতে দেখার সম্ভাবনাই বেশি।

অভিজ্ঞতার অভাব 

ইংল্যান্ড দলটা তারুণ্যে পরিপূর্ণ হলেও অভিজ্ঞতার অভাবটা স্পষ্ট। তাছাড়াও বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই খেলোয়াররা নিজেদের ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারেন না অভিজ্ঞতার অভাবে। এই ব্যাপারটাও ইংল্যান্ডকে ভালোভাবেই ভোগাতে পারে।

সম্ভাবনা 

ইংল্যান্ডের গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। হোম কন্ডিশনের সুবিধা পাওয়ায় এবং তুলনামূলক সহজ গ্রুপে পড়ায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই রাউন্ড অব সিক্সটিনে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দলের তারকারা নিজেদের সামর্থ্যের শতভাগ দিতে পারলে এই দলের চ্যাম্পিয়ন হবার খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনোরকম ব্যতিক্রম না ঘটলে ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল খেলবে, সেটা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

এবারের ইংল্যান্ড দলটা তারকাবহুল হওয়ায় দলের মূল লক্ষ্য থাকবে প্রথমবারের মতো ইউরো শিরোপাজয়ের দিকে। তবে দলটি তারুণ্যনির্ভর এবং জাতীয় দলের হয়ে পরীক্ষিত খেলোয়াড়ের অভাব অন্যান্য শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর বিপক্ষে ভোগাতে পারে। এক্ষেত্রে সাউথগেট তার দলকে কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলান, সেটাই দেখার বিষয়। এই দল যদি সেমিফাইনালের আগে বিদায় নেয়, তবে তা হবে চরম হতাশাজনক। তবে বড় ম্যাচে বাজে খেলার অভ্যাস পাল্টাতে পারলে ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রথমবারের মতো ইউরো শিরোপা জয়ও সম্ভব।

Related Articles