Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কিটন জেনিংস: ইংল্যান্ডের ওপেনিংয়ে মন্দের ভালো

১.

টেস্ট ক্রিকেটে কিটন জেনিংসের অভিষেক ঘটেছিল রাজকীয়ভাবে। নিজের অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে শতক হাঁকিয়েছিলেন। যেখানে ভারতীয় স্পিনারদের সামনে উপমহাদেশের বাইরের ব্যাটসম্যানরা অসহায় আত্মসমর্পণ করে প্রতিনিয়ত, সেখানে অনভিজ্ঞ জেনিংস সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহাওয়ায় খেলতে এসেই ১১২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন।

ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ২১৯ বলে ১৩ চারের মারে ১১২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এই শতাব্দীতে তার আগে ইংল্যান্ডের মাত্র দুজন ওপেনার নিজেদের অভিষেক ম্যাচে শতক হাঁকিয়েছিলেন। তারা হলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস এবং অ্যালিস্টার কুক। সম্প্রতি নাইটহুড অ্যাওয়ার্ড জেতা ‘স্যার’ অ্যালিস্টার কুক এবং অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, দুজনেরই গর্ব করার মতন ক্যারিয়ার রয়েছে।

ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকিয়েছিলেন কিটন জেনিংস; Image Source: AFP

দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত ওপেনিং জুটির সমস্যায় ভুগছিলো। তার অভিষেকের আগে কুক চার বছরে এগারজন ভিন্ন ব্যাটসম্যানের সাথে ইনিংস গোড়াপত্তন করেছিলেন। জেনিংস যে মৌসুমে টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন, ঐ মৌসুমেও তিনজন ভিন্ন ব্যাটসম্যানের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন কুক। ভারতের বিপক্ষে জেনিংস তার অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ১১২ রান করার পর দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রান করেছিলেন। তা দেখে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, এই বুঝি কুকের যোগ্য সঙ্গী পাওয়া গেলো।

কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৬ সালের মৌসুমে ডারহামের হয়ে ১৬ ম্যাচে সাতটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৪.৫০ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৪৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন কিটন জেনিংস। কাউন্টিতে ঐ আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানোর পর ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিনের ওপেনিং নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছিল। কিন্তু তিনিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ সামাল দিতে পারেননি। নিজের পরবর্তী সিরিজ খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। সেখানে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১৫.৮৭ ব্যাটিং গড়ে সংগ্রহ করেছিলেন মাত্র ১২৭ রান। সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

২০১৬ সালে কাউন্টিতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন জেনিংস; Image Source: Getty Images 

২.

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা ব্যর্থতার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় কিটন জেনিংসকে। তার বদলে কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করার জন্য ডাক পেয়েছিলেন ডারহামে তার সাথে ইনিংস উদ্বোধন করা মার্ক স্টোনম্যান। তিনিও দুর্দান্ত ফর্মে থাকার কারণে টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন। স্টোনম্যান কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৬ সালের আসরে ডারহামের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৪৫.৭০ ব্যাটিং গড়ে ১,২৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৭ সালের আসরে ১২ ম্যাচের ১৯ ইনিংসে ব্যাটিং করে চারটি শতক এবং চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬০.৮৪ ব্যাটিং গড়ে ১,১৫৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

কিটন জেনিংস এবং কুক; Image Source: Getty Images

মার্ক স্টোনম্যানও কাউন্টির ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি, অ্যাশেজে পাঁচটি, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলার পর প্রত্যাশানুযায়ী রান না পাওয়ার কারণে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। অ্যাশেজ এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের ভরাডুবির পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও ঘরের মাটিতে প্রথম টেস্টে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। ফলে আবারও জেনিংসের শরণাপন্ন হয় ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের ফিরতি ম্যাচে ২৯ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। শেষপর্যন্ত ম্যাচটি ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল।

ইংল্যান্ডের হয়ে মার্ক স্টোনম্যান ১১টি টেস্ট খেলে ২০ ইনিংস ব্যাটিং করে পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের অর্ধশত রানের ইনিংসকেই বড় করতে পারেননি। পাঁচটি অর্ধশতকের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিলো ৬০ রানের। জাতীয় দলে ব্যর্থ হলেও কিটন জেনিংস কাউন্টিতে ছন্দে ফিরেছিলেন। ২০১৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে দশটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে তিনটি শতকের সাহায্যে ৪৭.২৬ ব্যাটিং গড়ে ৭০৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ফলে স্টোনম্যানের বদলি হিসেবে আবারও দলে ডাক পান। কিন্তু এবারেও নিজের কাউন্টি ফর্মের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

কাউন্টিতে অসাধারণ ব্যাটিং করলেও জাতীয় দলে এখনও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি জেনিংস; Image Source: Getty Images

ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ছয়টি টেস্ট খেলে একবারও পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলতে পারেননি। এই ছয় ম্যাচে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিলো ৪২। তার টানা ব্যর্থতার প্রভাব অভিজ্ঞ কুকের উপরও পড়ে। তাই ভালোয় ভালোয় ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিলেন ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান।

কুকের বিদায়ের পর ওপেনিং পজিশন নিয়ে চিন্তা আরও বেড়ে যায় ইংল্যান্ডের। কুক থাকাকালীন তার যোগ্য সঙ্গী খুঁজতে যেখানে অর্ধযুগ কেটে গিয়েছিল, সেখানে তার বিদায়ের পর দুজন ওপেনারের সংকটে পড়লো ইংল্যান্ড।

৩.

ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পর ইংল্যান্ডের পরবর্তী সিরিজ ছিলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন টেস্টের। উপমহাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে কিটন জেনিংসকে আরও একটি সুযোগ দিয়েছিল ইংল্যান্ড। তার সঙ্গী হিসেবে পাঠানো হয়েছিলো ২০১৮ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রোরি বার্ন্সকে। তিনি ২০১৮ সালে কাউন্টিতে সারির হয়ে ১৪ ম্যাচে চারটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৪.৭১ ব্যাটিং গড়ে ১,৩৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। শুধুমাত্র ঐ আসরেই নন, বার্ন্স ২০১৬ এবং ২০১৭ সালেও কাউন্টিতে সহস্রাধিক রান করেছিলেন। ২০১৬ সালে ১৬ ম্যাচে ৪০.৮৫ ব্যাটিং গড়ে ১,১৪৪ রান এবং ২০১৭ সালে ১৪ ম্যাচে ৪৯.৫৭ ব্যাটিং গড়ে ১,০৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক হাঁকানোর উদযাপন করছেন জেনিংস; Image Source: Getty Images

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে অবশেষে আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন কিটন জেনিংস। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪৬ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচজয়ী অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এই ম্যাচের পরও আবারও রানখরায় ভুগতে থাকেন তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের বাকি ইনিংসগুলোতে যথাক্রমে ১, ২৬, ১৩ এবং ১ রান করে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তবুও তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ছিলো ইংল্যান্ড। দরজায় কড়া নাড়া অ্যাশেজের আগে ওপেনিংয়ে নতুন কাউকে ডাক না দিয়ে জেনিংস এবং বার্ন্সকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাঠিয়েছিল ইংল্যান্ড। তাদের ব্যাকআপ হিসাবে স্কোয়াডে ছিলেন জো ডেনলি। তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও স্কোয়াডে ছিলেন।

জাতীয় দলে এসে ভাগ্যের সহায়তাও পাচ্ছেন না জেনিংস; Image Source: Associated Press

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সুবিধা করতে পারেননি কিটন জেনিংস। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৭ ও ১৪ রান করে সাজঘরে ফিরে গেলে দ্বিতীয় টেস্টে একাদশে জায়গা হারান তিনি। তার জায়গায় অভিষেক ঘটে জো ডেনলির। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেই পরাজিত হয়েছিলো ইংল্যান্ড। যার ফলে শেষ টেস্টে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বেন ফোকসকে বাদ দিয়ে আবারও একাদশে ফেরানো হয় জেনিংসকে। এবারও তিনি রানের দেখা পাননি। প্রথম ইনিংসে আট রানে ফিরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ২৩ রানের ইনিংস। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পুরো সিরিজ জুড়েই নড়বড়ে ব্যাটিং করেছিলেন। তার সঙ্গী বার্ন্সও কাউন্টির অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। এখন ছয় টেস্টে মাত্র ২৫.০০ ব্যাটিং গড়ে ৩০০ রান করেছেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত কিটন জেনিংস দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ফর্ম হারানোর পর এখনও সেভাবে নিজেকে ফিরে পাননি। এখন পর্যন্ত ১৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে মাত্র ২৫.১৯ ব্যাটিং গড়ে ৭৮১ রান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ১১২ রান এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংস বাদ দিলে তার ক্যারিয়ারে বলার মতো আর অর্জন অবশিষ্ট থাকেনা। ইংল্যান্ডের মাটিতে দশটি টেস্ট খেলার পরেও এখনো পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংস খেলে ১৭.৭২ ব্যাটিং গড়ে ৩১৯ রান সংগ্রহ করেছেন ঘরের মাঠে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন জো ডেনলি এবং রোরি বার্ন্স; Image Source: Getty Images

এই শতাব্দীতে স্ট্রাউস এবং কুকের পর তৃতীয় ইংলিশ ওপেনার হিসেবে অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানো জেনিংস গত একযুগে ইংল্যান্ডের ওপেনারদের মধ্যে রান এবং ম্যাচের দিক দিয়েও স্ট্রাউস ও কুকের পরেই অবস্থান করছেন। তারা ছাড়া আর কোনো ইংলিশ ওপেনার গত একযুগেও তার চেয়ে বেশি রান ও ম্যাচ খেলতে পারেননি। তাই মন্দের ভালো হয়ে হয়তো আরও একবার সুযোগ পাবেন। নতুবা ইংল্যান্ডের হয়ে অ্যাশেজ খেলার স্বপ্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজেই জলাঞ্জলি দিয়ে আসলেন কিটন জেনিংস।

This article is in Bangla language. It is about keaton jennings poor performance in test cricket. Please click on the hyperlinks to look for references.  

Featured Image: Getty Images

Related Articles