পঞ্চাশ পেরোনো মাঝবয়সী ভদ্রলোক। চোখে-মুখে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ছাপ। আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোয়। মগজে নতুন নতুন চিন্তার ঢেউ ওঠে। তিনি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সর্বময় কর্তা। একসময় ক্রিকেট খেলতেন, খেলা ছেড়েছেন একযুগ হলো প্রায়।
সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা হতে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট-কর্তা অ্যালগি ফ্রেমস লিখেছেন,
‘মনে হচ্ছে ক্রিকেটটা মরে গেছে। দুনিয়াজোড়া কেমন প্রাণহীন হয়ে গেছে ক্রিকেট।’
চিঠিটা পড়ে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে ভদ্রলোকের। প্রতিটি অক্ষরজুড়ে আক্ষেপ ও হতাশা, যন্ত্রণা ও বেদনা স্পষ্ট। চিঠিটা এখনো আছে তার ড্রয়ারে। কীভাবে ক্রিকেটের জৌলুস ফেরানো যায়, তা নিয়ে তার ভাবনার অন্ত নেই।
শুভ্র চুলের সুপুরুষ ভদ্রলোকটি জ্যোতিষী নন, জ্যোতিষচর্চায় আগ্রহও নেই। থাকলে দেখতে পেতেন, তার ভাবনার পরিসমাপ্তি আসন্ন। মাসকয়েক বাদে তার তলবে হাজির হবেন তার সতীর্থ ও বন্ধু ক্রিকেটার, এবং ক্রিকেট-পরবর্তী জীবনে ‘মণিকার’ বনে যাওয়া আর্নি ম্যাককর্মিক। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সর্বেসর্বার নির্দেশে ম্যাককর্মিক নতুন একটা ট্রফি তৈরী করবেন, ক্রিকেটকে জাগিয়ে তোলা পুরুষটির নামানুসারে যে ট্রফির নামকরণ করা হবে — ফ্র্যাংক ওয়ারেল!
১.
বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক ক্রিকেটের উৎসব, ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র ও পরাজয় এড়াতে লড়াই সবার। দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগেই আছে। আম্পায়ার শাসানো কোনো ব্যাপারই না। থ্রোয়িং-মারামারি রোজকার ঘটনা। সম্মান-সম্প্রীতির কোনো অস্তিত্ব নেই যেন। ক্রিকেট ইজ আ জেন্টেলম্যানস গেইম—বাণী চিরন্তনী এই সময়ে ভীষণ হাস্যকর ও বেমানান ঠেকে। হাহাকার ওঠে ক্রিকেট-হৃদয়ে, খেলা আর খেলা নেই রে ভাই!
মধ্য-ত্রিশ পেরোনো কৃষ্ণকায় তরুণ ফ্র্যাংক ওয়ারেল। ক্রিকেট বিবেচনায় তিনি প্রবীণ। ক্যারিয়ারে তার ঘনিয়েছে গোধূলিবেলা। খুব মনঃকষ্টে ভোগেন। ভালো লাগে না এইসব অস্থিরতা। ক্যারিবিয়ান সাগর তীরে মনের আনন্দে ক্রিকেট খেলে বেড়ে ওঠা তার। যেখানে পরাজয়ে কোনো ক্লেদ থাকত না, বিজয়ে বীরত্বের বাড়াবাড়ি থাকত না, যেকোনো মূল্যে হতে হবে জয়ী — ছিল না এমন বিদঘুটে ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা। প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রাখো, নিজের ক্ষেত্রে নিংড়ে দাও সর্বোচ্চটা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে তিল পরিমাণ দেয়া যাবে না ছাড়। ব্যস, দাঁড়িয়ে গেল সুস্থ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় ও সুন্দরতম লড়াইয়ের প্রণালী!
ওয়ারেল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সর্বজন শ্রদ্ধেয়। আপামর জনতা ভালোবাসে তাকে। নয়নের মণি তিনি। নেতৃত্বের আসনে তাকে দেখতে জনদাবি তোলে সর্বস্তরের জনগণ। গ্যারি আলেক্সান্ডারের দল নবীন ক্রিকেটশক্তি পাকিস্তানের কাছে হেরে এসেছে সিরিজ, ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জুটেছে সিরিজ পরাজয়। বহুদিন ধরে ওঠা দাবি এবার জোরসে চিৎকার ও হুংকার তুলতে শুরু করে। সকল যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র গাত্রবর্ণের কারণে বঞ্চিত ও বর্জিত হবেন কেন ওয়ারেল?
সিএলআর জেমস ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের কন্ঠস্বর। প্রতিবাদে সবচেয়ে বেশি সরব হয়ে উঠেন তিনি। এইসব বিভাজন ও বর্ণবাদ মেনে নেয়া যায় না আর। জনমত গঠনে রাখেন সবচেয়ে সোচ্চার ভূমিকা।
‘The Board (West Indies cricket authorities) should know that the eyes of the world are upon them. Yes, the eyes of the world. Not to select Worrell would be an act of war.’
সিএলআর জেমস টেনেছেন যুদ্ধের তুলনা, টনক নড়ে ক্রিকেট বোর্ডের। তারা যুদ্ধ বাঁধাতে চান না, এড়াতে চান। ৩৬ বয়সী ফ্র্যাংক ওয়ারেলের হাতে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সমর্পণে বাধ্য হয় তারা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে জনতা। প্রিয় মানুষটিকে নেতার আসনে দেখে যেন স্বস্তি মেলে ক্রিকেট প্রাণে। জর্জ হ্যাডলি মোটে একটি টেস্টে পাকেচক্রে নেতৃত্ব দিলেও ফ্র্যাংক ওয়ারেল হন উইন্ডিজ ক্রিকেটের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ মেয়াদের কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক।
অবশেষে, চিন্তা ও চেতনার এবং সুমহান স্বাতন্ত্রবোধ প্রকাশের ও প্রয়োগের সময় এসে গেছে; ওয়ারেল বুঝতে পারেন।
২.
কোনোরকম অসৌজন্যমূলক আচরণ করা যাবে না। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হতেই পারে, তাই বলে কোনোরূপ বাকবিতণ্ডা বা তর্ক-বিতর্কে জড়ানো যাবে না। অধঃবদন হলেও নত মস্তিষ্কে ‘আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’ মেনে নেবে নিঃশব্দে। মাঠে কোনোপ্রকার অসহিষ্ণুতা দেখানো চলবে না। প্রতিপক্ষের প্রতি রাখতে হবে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা। এবং মাঠে ঢেলে দিতে হবে সর্বোচ্চ। খেলাটার প্রতি সম্মান ও শৌর্য বজায় রাখবে যেকোনো মূল্যে। তারপর উপহার দেবে চূড়ান্ত ভদ্রতার মোড়কে সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াইটা জমাতে পারি আমরা। তার আগে আমাদের প্রত্যেককে বিশ্বাস রাখতে হবে, আমরা ওদের মতো ব্যাটিং-বোলিং, এবং ফিল্ডিং, হ্যাঁ, ফিল্ডিংটাও আমরা করতে পারি। হীনমন্যতা ভুলে যাও। নিজের শক্তিমত্তায় হও আস্থাশীল। সেরাটা দাও, জয়-পরাজয় যা হোক, ব্যাপার না। ক্রিকেট একটা খেলা, আর আমরা হতে চাই খেলাটার সবচেয়ে সুন্দর বিজ্ঞাপন ও সর্বোত্তম দূত হয়ে বিপণনে রাখতে চাই জোরালো ভূমিকা।
ওয়ারেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রিচি বেনোর সঙ্গে। রিচি বেনো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের দলনায়ক। নিজের আক্রমণাত্মক পদ্ধতি ও শুদ্ধতম ক্রিকেটের পথে বেনোকে আমন্ত্রণ জানালে অজি-দলপতিও সাড়া দেন স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহে। তারপর ক্রিকেটের বুকে দু’টি দল জন্ম দিলেন অমরত্বের এক বটবৃক্ষ। যে বৃক্ষ ঘিরে পুনরোজ্জীবিত হলো ক্রিকেট, ক্রিকেটের মাঠে রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা ফিরে এলো সাড়ম্বরে, মরে যাওয়া ক্রিকেটে যোগান দিল বিশুদ্ধ অক্সিজেন, ক্রিকেট-সৌন্দর্য্যে ফুলে-ফলে উদ্বেল ও উচ্ছ্বাস নিয়ে আবারও ভরে ওঠার সুযোগ পেল ক্রিকেটের সবুজ উদ্যান।
৩.
গ্যারফিল্ড সোবার্স, ওয়েসলি হল, রোহান কানহাই – তারুণ্যে ভরপুর প্রতিভা। ওয়ারেল বুঝলেন, এই তরুণদের ঠিকঠাক পরিচর্যা ও সুনিপুণ ব্যবহারেই রয়েছে তার সাফল্যের চাবিকাঠি। ছোট ছোট দলে বিভক্ত করা, কারো কোনো অভিযোগের সুযোগ না রাখা, এবং প্রত্যেকটি ক্রিকেটারের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দারুণ দক্ষতায় সংসার গোছালেন ওয়ারেল।
কাজটা আগেও করতেন। যখন অধিনায়ক ছিলেন না, তখনও। ছেলেরা তার কাছে বিভিন্ন সমস্যা ও সিদ্ধান্তের জন্য গেলে কাউকেই ফেরান না তিনি। তবে নেতৃত্ব পেয়ে সেই পরিচর্যা ও সামলানোর হার বেড়ে গেল বহুগুণ।
স্যার ওয়েসলি হল বহু বছর পর বই লিখলেন, ‘পেস লাইক ফায়ার’। সেখানে ওয়ারেলকে নিয়ে দুটো লাইন থাকলো এরকম —
‘Even when Gerry Alexander was skipper, it was Frank who solved every player’s problem, negotiated his league contract, and advised on his play.’
নেতৃত্বের প্রথম টেস্ট। সোবার্সকে সঙ্গে নিয়ে জুড়লেন চতুর্থ উইকেটে ১৭৪ রান। যেন অন্যদের বার্তা দিলেন, অস্ট্রেলিয়ান বোলিংয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কাজে লাগল তা; প্রথম ইনিংসে হৃষ্টপুষ্ট সংগ্রহ পেল উইন্ডিজ। কম গেল না অস্ট্রেলিয়াও। মাঠের ক্রিকেটে কোনো আপ্যায়ন নেই। দ্বিতীয় পালার ব্যাটিংয়েও ওয়ারেলের ব্যাটে অনমনীয় দৃঢ়তা ও সাহস। দুইবারই ৬৫ রান করে যোগান দিলেন স্কোরবোর্ডে।
শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২৩৩ রানের লক্ষ্য। ওয়ারেল নিজেও বোলিং করলেন। নিংড়ে নিলেন ওয়েসলি হলের পুরোটা। চা-বিরতির সময় চার উইকেট হাতে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন আরো ১২৪। আর আছে দু’ঘন্টা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট-কর্তা চায়ের কাপ হাতে অধিনায়কের কাছে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী করবে ভাবছো?’
অধিনায়কের তড়িৎ জবাব, ‘আমরা জয়ের জন্যেই লড়বো।’
শুনে বড় খুশি হন ক্রিকেটকর্তা। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকর্তার চিঠিটা আছে তার কাছে। রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা খেলা করে ৫২ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটারের চোখে। আপ্লুত চোখে ভাবেন, ক্রিকেট জেগে উঠবে আবার। এমন সাহসী ও আগ্রাসী ক্রিকেট হলে ক্রিকেট মরবে না কিছুতেই।
পরবর্তী ঘন্টাদুয়েকে যা হলো, তাতে ক্রিকেট তো বেঁচে উঠলোই, অমরত্ব পেয়ে গেলেন একজন ওয়ারেল, একজন বেনো, এবং একজন ওয়েসলি হল।
দিনের ও টেস্টের শেষ বলটি করার সময় কানের কাছে মুখ নিয়ে স্পষ্ট সুরে জানিয়ে দেয়া হয় অধিনায়কের চাওয়া,
‘হল, তুমি যদি নো বল করো, তাহলে চিরকালের জন্য বার্বাডোসে ফেরার কথা ভুলে যেও।’
তাই পায়ে ফোস্কা নিয়েও, একটুও বিচলিত হন না ওয়েসলি হল। ম্যাচটা জমিয়ে দেন তিনি। রান-আউট হন ম্যাককিফ, আর ওয়েসলি হল অমরত্ব নেন ক্রিকেট নামক খেলাটির ইতিহাসে।
৪.
মেসিডনের রাজা ফিলিপ পুত্র অ্যালেক্সান্ডারের বীরত্বে খুশি হয়ে বলে উঠেছিলেন,
“পুত্র, তুমি অন্য কোনো রাজ্য খুঁজে নাও। মেসিডন তোমার জন্য একটু বেশিই ছোট!”
ওয়ারেলের অমরত্বের জন্য ক্রিকেট খেলাটি বড্ড ছোট মনে হতে পারে। মহানুভবতা ও মানবিকতার এমন শীর্ষ ছুঁয়েছেন যে, ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কী করেছেন না করেছেন তা বড্ড গৌণ ঠেকে। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই গড়, অন্য দুই ডব্লিউ’কে (উইকস ও ওয়ালকট) সঙ্গে নিয়ে উইন্ডিজ মিডল অর্ডারকে বিশ্বমানে পৌছে দেয়া, আপাত-নবীন এক ক্রিকেট শক্তিকে পায়ের তলায় মজবুত জমিন খুঁজে পেতে খুঁটি হওয়া, অধিনায়ক হিসেবে ষাট শতাংশ জয়ের হার — ক্যারিয়ারে অর্জন কম নেই তার। কিন্তু সেসব বড্ড খেলো ঠেকে! যেন সাগরের কাছে দাঁড়িয়ে লবণের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া!
মানবতা ও আদর্শে, ব্যক্তিত্বে ও বিশ্বাসে ফ্র্যাংক ওয়ারেল ছুঁয়েছেন সাগরের বিশালতা। ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে আলাপ ছাপিয়ে ওয়ারেল আরো অর্থবহ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন জীবনের মঞ্চে, আদর্শের পাঠশালায়। সেই স্বীকৃতিস্বরূপ মেলবোর্নের হাজার হাজার জনতা সুর তুলে গান বাঁধে, ফর হি ইজ অ্যা জলি গুড ফেলো।
৫.
লক্ষাধিক জনতা.. কেউ বলেন দুই লাখ, কারো মতে সংখ্যাটা পাঁচ লক্ষ। অবশ্য তা অবিশ্বাস করেন অনেকে। মেলবোর্নের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ উপস্থিত হয়েছিল কথাটা যেমন অবাস্তব, তেমনি অগ্রহনযোগ্য। তবে হাজার হাজার মানুষ যে সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছিল, ট্রফি হস্তান্তরে জমায়েত ছিল জনতার জোয়ার, সেসব পুরোপুরি সত্যি।
মঞ্চে দাঁড়ানো তিনজনই খুব প্রিয় মেলবোর্নবাসীর। রিচি বেনো, অস্ট্রেলিয়ার দলপতি। আর অন্যজন পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রলোক, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্ব কাঁধে তার। একসময় ক্রিকেট মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে টেনেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রিয় ও গর্বের ধন তিনি। তার চার রান না পাওয়ার গল্প জানেন ক্রিকেট স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রটিও। তার ৬,৯৯৬ রান, ৫২ টেস্ট, ৭০ ইনিংস, ২৯টি সেঞ্চুরি, ১২টি ডাবল, দু’টি ট্রিপল, একদিনে ট্রিপল সেঞ্চুরির কীর্তি, ব্যাটিং অর্ডার বদলে দেয়ার অদ্ভুত ও বিচক্ষণ ক্যাপ্টেন্সি — মোটামুটি ক্রিকেট জানা ব্যক্তিমাত্রই জানেন। মাস কয়েক আগে প্রথম টাই টেস্টের পর তার মস্তিষ্কপ্রসূত যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ম্যাককর্মিক তৈরি করেন একটি ট্রফি, যাতে টাই টেস্টের বলটিও রাখা আছে। রতনে রতন চেনে; ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠতম ব্যাটসম্যানটি ক্রিকেটের মহত্তম সন্তান ফ্র্যাংক ওয়ারেলকে সম্মান দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
হাজারো জনতার সমস্ত মনযোগ ও উল্লাসের কেন্দ্রে সিরিজজয়ী বেনো নন, পঞ্চাশোর্ধ্ব সেই ভদ্রলোক (যাকে আমরা স্যার ডন ব্র্যাডম্যান বলে চিনি) নন, তিনি ভিনদেশী একজন। ফ্র্যাংক ওয়ারেল। তার একটু হাত নাড়া, একটু মুচকি হাসি, একটু কথা বলা জনতার উচ্ছ্বাসে আনে প্রবল জোয়ার। তারা সুর তুলে গান গায়, ফর হি ইজ অ্যা জলি গুড ফেলো।
ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রতিপক্ষ দলনায়ক ও সফরকারী কোনো দল এতটা শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা আর কখনো অর্জন করতে পারেনি। ছোট ছোট হাস্যরস ও স্বভাবসুলভ বাগ্মীতায় মেলবোর্নের ক্রিকেট জনতাকে আরো একবার মুগ্ধ করেন ওয়ারেল। সিরিজের ট্রফি বেনোর হাতে তুলে দেন। কী সৌভাগ্য! নিজের নামাঙ্কিত সিরিজে খেলছেন নিজেই। আবার তা প্রতিপক্ষের কাছে তুলেও দিচ্ছেন। এবং সেই ট্রফি বেনোর হাতে তুলে দেয়ার আগে বেনো ও তার দলের প্রশংসায় নেই কোনো কার্পণ্য, আবার সেই ট্রফি পুনরোদ্ধারের দৃপ্ত বিশ্বাস! যেন এক মহান যোদ্ধা সপ্রশংস দৃষ্টিতে প্রতিপক্ষকে যেমন দেখছেন, তেমনি দেখে নেওয়ার প্রত্যয়ও শুনিয়ে যাচ্ছেন দৃপ্ত-কন্ঠে।
“উই হ্যাভ টু কনগ্রাচুলেট রিচি এন্ড হিজ ম্যান ফর দিস ওয়ান্ডারফুল ফাইটব্যাক ইন অ্যাডিলেইড এন্ড প্রিডোমিনেট এন্ড সীন হিয়ার ইন দিস ম্যাচ। এন্ড উই আর লুকিং ফরওয়ার্ড টু সিয়িং দিস ট্রফি ইন দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোয়্যার উই শ্যাল ট্রাই টু র্যাস্ট ইট ফ্রম ইউ ইন দ্য সেম ফ্রেন্ডলি এন্ড এক্সাইটিং ম্যানার এজ ইট হ্যাজ এনিওয়ান ইন দিস সিরিজ।”
ওয়ারেলের ঠোঁটে ক্রিকেটের শুদ্ধতম লড়াইয়ের জয়গান। লড়াইটা হবে ‘ফ্রেন্ডলি অ্যান্ড এক্সাইটিং ম্যানার’-এ।
“আমি আমার মগজ-সদৃশ এই ক্যাপটা তুলে দিলাম বেনোর হাতে, দিলাম আমার (টাই) গলাটাও, এবং আমার শরীরের ঊর্ধ্বাংশও (ব্লেজার) তুলে দিলাম তার হাতে। দুঃখিত, শরীরের নিম্মাংশটা তাকে দিতে পারছি না, কারণ হাঁটু ছাড়া আমার পক্ষে হয়তো দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হবে না।”
সরস ও বুদ্ধিদ্বীপ্ত বাক্য, আন্তরিক বাচনভঙ্গী অস্ট্রেলিয়ার কাছে আরো কাছের ও প্রিয় করে তোলে ওয়ারেলকে। সেজন্যেই নিশ্চিত করে বলা যায়, পরাজিত দল তো নয়ই, কোনো বিজয়ী দলও অস্ট্রেলিয়ার বুকে এতটা উষ্ণ অভ্যার্থনা ও সমাদর পায়নি কোনোকালে।
উইজডেন তাই তাকে স্মরণ করে এইভাবে,
Though he made his name as a player his greatest contribution was to destroy forever the myth that a colored cricketer was not fit to lead a team.
‘কালারড ক্রিকেটার’ শুধু নেতৃত্ব দিতে পারেন তা-ই নয়, ওয়ারেল প্রমাণ করেছিলেন, প্রতিপক্ষের হৃদয় সিংহাসনের সম্রাট ও প্রিয়তমও হয়ে উঠতে পারেন। প্রবল ব্যক্তিত্ব, মার্জিত অভিরুচি, স্বতন্ত্র মনোভাব ও মহান নেতৃত্বগুণে ভিনদেশ ও ভিন্নাঞ্চলেও ওয়ারেল অর্জন করেছিলেন সেই সম্মান, যা কোনো জনপদ বরাদ্দ রাখে তাদের শ্রেষ্ঠতম নায়কদের জন্যেই। ওয়ারেলকে তারা তাদের নায়ক ও আদর্শ ভাবতেন!
৬.
বছর কয়েক পর ওয়ারেল গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে, তার আগে-পরে অমন সম্মাননা জোটেনি আর কোনো অতিথি দলের। অথচ সেই সফরের আগেই ওয়ারেলের অকৃত্রিম শুভাকাঙ্খী সিএলআর জেমসের প্রশ্ন — ওয়ারেল কেন দলে? ওয়ারেলের নেতৃত্ব নিয়ে ও ইংলিশ গ্রীষ্মে তার সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লেখাটার শিরোনাম দিলেন, ‘আফটার ফ্র্যাংক ওয়ারেল, হোয়াট?’
ওয়ারেল ও তার দলের অভূতপূর্ব সম্মাননা প্রাপ্তি এবং ইংল্যান্ডকে ধুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে বিলেতি গ্রীষ্মে ক্যারিবিয়ান বিজয়ের পতাকা উত্তোলনে জেমস ভুল প্রমাণিত হলেও মনঃক্ষুণ্ণ হননি নিশ্চয়! অকৃত্রিম শুভাকাঙ্খী হিসেবে বর্ষীয়ান ক্রিকেট লেখক তো আদতে চেয়েছিলেন, যেন ওয়ারেলের সুমহান মর্যাদার কোনো ক্ষতি না হয়! তিনি তো জানতেন, ক্রিকেট কাউকে সাফল্যের উঁচুতে তুললেও পতনের অতল গহ্বরে ছুঁড়ে ফেলতেও দ্বিধা করে না।
ওয়ারেল অন্য ধাতুতে গড়া। অসাধারণ ক্রিকেট-আত্মা ও মানবিক আচরণের উজ্জ্বলতম প্রকাশ তার চলনে-বলনে-আচরণে। অধিনায়কত্ব-পূর্ব ক্যারিয়ারে পঞ্চাশোর্ধ্ব গড়, অধিনায়কত্বের সময় নেমে আসে চল্লিশের গোড়ায়; একটিও সেঞ্চুরি নেই। তারপরও ওয়ারেল বিচক্ষণতা ও ব্যক্তিত্বে অস্পর্শনীয় এক চরিত্র।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ওয়ারেলের উইন্ডিজ আগ্রাসী ও খুনে, মেজাজী ও আক্রমণাত্মক। দলটা যে ওয়ারেল দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন, তারই প্রমাণ ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়।
১৫টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৯টি জয়, ৩টি হার, ২টি ড্র ও ১টি টাই। ফলাফল ছাড়া টেস্ট খেলার মানে কী? ওয়ারেল চাইতেন রেজাল্ট। হারলে হারবো, কিন্তু ক্রিকেটের সুন্দরতম সৌন্দর্য্যের প্রকাশ ঘটা চাই।
ওয়ারেলের নেতৃত্বে ২টি ড্রতেও ছিল টানটান উত্তেজনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে বছর তিনেকের ব্যবধানে দ্বিতীয় টাই দিতে দিতে দেয়নি। ১ উইকেট ও ৫ রান দূরত্বে ম্যাচের সময় শেষ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইডে অসম্ভব এক লড়াইয়ের মাধ্যমে ম্যাচ বাঁচাতে সক্ষম হয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। সেবার উইন্ডিজের জয় হতে দূরত্ব ছিল ১ উইকেট। মেলবোর্নের শেষ ও ফাইনাল টেস্টেও প্রবল রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা শেষে অস্ট্রেলিয়ার জয় মাত্র দুই উইকেটের বিনিময়ে।
সাধে কি আর বলা হয় ফ্র্যাংক ওয়ারেল উইন্ডিজ ক্রিকেটের অধিনায়ক হয়ে নয়, ক্রিকেট মাঠে এসেছিলেন ক্রিকেটের ‘জিয়ন কাঠি’ হাতে! ক্রিকেটকে অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য কোনো জাদুমন্ত্রবলে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যেই যেন আগমন হয়েছিল তার।
৭.
জন্ম ও বেড়ে ওঠা বার্বাডোসে। ত্রিনিদাদেও কাটিয়েছেন অনেকটা সময়, থিতু হয়েছিলেন জ্যামাইকায়। তখন সাগরপ্রিয় বাবা সৈকতে বুঁদ। মা দেশান্তরী হয়ে চলে গেছেন নিউ ইয়র্ক। তিনিও বিষণ্ণ হৃদয়ে পাড়ি জমালেন জ্যামাইকায়। বার্বাডোসের লোকজন ক্ষেপেছিল কি? বিশ্বাসঘাতক ভেবেছিল তাকে?
ক্যারিবিয়ানের দিলখোলা মানুষগুলোর রাগ বা ক্ষোভ থাকে না বেশিক্ষণ। ওয়ারেলকে ক্ষমা করে দিয়ে পরে বুকে টেনে নিতেও আপত্তি হয়নি কারো। ওয়ারেল তাদেরই মতো একজন গর্বিত বাজান।
ক্যারিবিয়ানের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর সুবাদে এইসব মানুষকে যেন খুব বুঝতে পারতেন। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ঐক্য ও উইন্ডিজ ক্রিকেটের সংহতি, তাকে যতটা আলোড়িত করতো, তিনি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করতে পারতেন, তা আর কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না।
জন গডার্ডের নেতৃত্বে খেলেছেন ওয়ারেল। গডার্ডের অধীনে ব্যাটিংয়ে চমৎকার সময়ও কাটিয়েছেন। তবে তারও আগে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গডার্ডের সঙ্গে পাঁচ শতাধিক রানের এক জুটিতে অংশীদার ছিলেন তিনি। ক্লাইড ওয়ালকটের সঙ্গেও পাঁচ শতাধিক রানের জুটি আছে তার। দু’টি পাঁচ শতাধিক রানের জুটিতে অংশীদারীত্বের সেই রেকর্ড অটুট এখনো।
ওয়ালকট ও উইকসের সঙ্গে ছিল আশৈশব বন্ধুত্ব, তা আমৃত্যু বজায় ছিল। কিন্তু তার নেতৃত্বে উইকস বা ওয়ালকট কারোরই খেলার সৌভাগ্য হয়নি। দুই বন্ধুরই উষ্ণ শুভকামনা ও সমর্থন বরাবরই সঙ্গী ছিল ওয়ারেলের। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থ্রী ডব্লিউ’র জন্ম, আঠারো মাসের ব্যবধানে। বলা হয় তিনজনেরই ধাই-মা ছিলেন একজন। ব্যাট হাতে একে-অপরের সঙ্গ উপভোগ করতেন তারা। পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন প্রায়। তিনজনই দারুণ জনপ্রিয় হলেও, ওয়ারেল ব্যক্তিত্ব-গুণে জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে অন্যদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বহু ব্যবধানে। তাতে অন্যদের কোনো আক্ষেপ বা মনোকষ্ট ছিল বলে জানা যায়নি।
তিনজনেরই ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড ছিল দুর্দান্ত। এভারটন উইকস টানা পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন ভারতেই। সেই সিরিজ মিস করেছিলেন ওয়ারেল। ঘরের মাঠে ভারতকে পেয়ে ওয়ারেল করলেন তার নেতৃত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার। সিরিজ জিতলেন ৫-০ তে।
৮.
নরি কন্ট্রাকটর তখন ভারতের অধিনায়ক, তখন পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ। ১০ টেস্টে হারেননি একটিও, ২টি জয়ের বিপরীতে ৮টি ড্র। সিরিজ জিতেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। উইন্ডিজে পৌছে সেসব রেকর্ড ভেঙ্গেচুরে একসার; প্রথম দুই টেস্টেই হেরে বসল ভারত। তৃতীয় টেস্টের আগে বার্বাডোসে প্রস্তুতি ম্যাচে চার্লি গ্রিফিথকে সামলাতে হিমশিম খেলেন; গ্রিফিথের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে মিস করলেন, বল এসে লাগল মাথায়, বোঁ করে উঠল ডান কান। রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে গেলেন ভারত দলপতি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হলো। পড়ে গেলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
ওয়ারেল ছুটে গেলেন অতিথি দলনায়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণে। ওয়ারেলের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলে গেছে নরির। চান্দু বোর্দে, বাপু নাদকার্নি, পলি উমরিগর — নরি কন্ট্রাকটরের তিন সহকর্মী-সতীর্থ ও বন্ধু রক্ত দিলেন, রক্ত দিলেন ওয়ারেলও। বেঁচে উঠলেন নরি।
নরি আর কখনো খেলেননি ভারতের হয়ে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন, হাল ছেড়ে দেননি, মাঠেও নেমেছিলেন; কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে বোর্ডেরই আর সাহস হয়নি নরি কন্ট্রাকটরকে ক্রিকেটের জন্য বিবেচনা করে!
নরি কন্ট্রাকটরের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি বাধা দেননি সে যে আবার মাঠে ফিরছে, ক্রিকেট খেলছে, মাঠে নামছে? মিসেস নরি জবাব দিয়েছিলেন, ‘সে এতটা সময় পর্যন্ত যে বেঁচে আছে, সেটাই তো দৈব ঘটনা, তার সৌভাগ্য বা নিয়তি। আমি কোথাকার কে হে, যে ওর সৌভাগ্য বা নিয়তিতে নাক গলাব?’
ভারতীয় ক্রিকেট আজও মনে রেখেছে সেদিনের সেই ঋণ। রক্তের ঋণ শোধ করা যায় না। তবে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ও ওয়ারেল-স্মরণে প্রতি বছর ৩রা ফেব্রুয়ারি ‘ফ্র্যাংক ওয়ারেল দিবস’ পালন করে ভারতীয় ক্রিকেট মহল। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের উদ্যোগে সেদিন স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
সে ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক হতে চলল, নরি বেঁচে আছেন এখনো। অথচ ফ্র্যাংক ওয়ারেল ইহলোকের পাঠ চুকিয়েছেন সেই কবে!
৯.
ব্রিটিশ রাজ একে একে তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে। জ্যামাইকায় প্রায় তিনশ’ বছরের ব্রিটিশ রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ সূর্যের অস্ত নামলে উদিত হয় স্বাধীন জ্যামাইকার নতুন সূর্য। স্বাধীন জ্যামাইকার সিনেটর হয়ে কর্তব্যবোধে সাড়া দিতে পিছপা হন না ওয়ারেল। সিএলআর জেমস তার জ্ঞান ও জানাশোনায় এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে, বলেছিলেন—
Worrell is one of the few who after a few hours of talk have left me as tired as if I had been put through a wringer. His responses to difficult questions were so unhesitating, so precise and so took the subject on to unsuspected but relevant areas, that I felt it was I who was undergoing examination. No cricketer, and I have talked to many, ever shook me in a similar manner.
নাইটহুড সম্মাননা মানুষের কৃতিত্ব ও অর্জনের স্বীকৃতি হলেও এই ক্ষেত্রে নেহায়েৎ সাদামাটা। তার বিশালত্ব ও অসাধারণত্বের পাশে এসব নিতান্তই ক্ষুদ্র দেখায়। যেমনটা আকাশকে ‘বিশাল’ বললে বলা হয়, আসলে আর কতটা? সাগরকে ‘গভীর’ বললে স্বীকৃতি দেয়া হয় আদতে আর কতটা?
খুব তাড়া ছিল বুঝি। ক্রিকেট-নেতা, সিনেটর, নাইটহুড, ম্যানেজার (খেলা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার হওয়াটা ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল), স্কলার, দার্শনিক, ডিপ্লোম্যাট… কত কী করলেন এক জীবনে! অথচ জিন্দেগীর সীমা ছিল কতটা? মাত্র ৪৩ বছর!
১০.
পৃথিবী আপন গতিতে চলমান। কেউ মরে, কেউ বাঁচে; কেউ জেতে, কেউ হারে। নিয়তি বা অদৃষ্টের সঙ্গে কুস্তি লড়া যায় না। ওয়ারেল পারেননি। বর্ণাঢ্য জীবনতরী বাধ্য হয় দুরারোগ্য ব্যাধি লিউকেমিয়াতে থেমে যেতে। ওয়ারেল থেমে যান, তবে হেরে যান না, হারিয়ে যান না; বেঁচে থাকেন ইতিহাসে। তার কীর্তি, তার অর্জন, তার ব্যক্তিত্ব, তার আচরণ তাকে দিগ্বীজয়ী সম্রাটের মতো অমর করে রেখে দেয় জনগণের হৃদয়-সিংহাসনে।
মহাত্মন ওয়ারেল স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে সগৌরবে আবাদ করা মানবতাবাদ ও শুদ্ধতার জমিনের একজন সেবক, একজন মালী হিসেবে বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর বেঁচে থাকা পর্যন্ত, ক্রিকেটের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত।
ফ্র্যাংক মর্টিমার ম্যাগলিন ওয়ারেল, আপনার জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা!