Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোল স্কোরিং ডিফেন্ডারেরা

ফুটবলে সাধারণত গোল করার মূল দায়িত্ব পালন করে থাকে ফরোয়ার্ডরা, তেমনি ডিফেন্ডারদের মূল কাজই হলো নিজেদের জালে বল জড়াতে না দেওয়া। ফুটবলের গোঁড়ার সময় থেকে কালের পরিক্রমায় বর্তমান সময় পর্যন্ত খেলাটিতে এসেছে নানা রকম কৌশলগত পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ও নিজের গোল করার সহজাত প্রবৃত্তির দরুন অনেক ডিফেন্ডার নিজেকে মেলে ধরেছিলেন অসামান্য গোল স্কোরার হিসেবেও।

রক্ষণ সামাল দিয়ে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানো সহজ কথা নয়। এই কঠিন কাজটিই অনেক ডিফেন্ডার নিজেদের জন্য এতটাই সহজ করে ফেলেছিলেন যা সত্যিই ঈর্ষণীয়। ডিফেন্ডারের গোল দলের জন্য একরকম বোনাস বলা চলে। যে ডিফেন্ডার রক্ষণ সামলাতে সিদ্ধহস্ত সে নিজ দলের জন্য আশীর্বাদ, কিন্তু যে ডিফেন্ডার নিজের মূল কাজের পাশাপাশি গোল দেওয়ায় দক্ষ সে প্রতিপক্ষের জন্য দুঃস্বপ্ন। ইতিহাস সেরা গোলস্কোরিং ডিফেন্ডারদের কথা জানবো আমরা আজকের এই আয়োজনে।

সিনিসা মিহালোভিচ (১০৫ গোল)

যুগোস্লাভিয়ার এই ফুলব্যাক ছিলেন একজন ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞ, তার ক্যারিয়ারের মোট গোলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গোলই তিনি করেছেন ফ্রি কিক থেকে। অনেকেই তাকে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন ফ্রি কিক টেকার হিসেবে বিবেচনা করেন। বাঁ পায়ের নিখুঁত ফ্রি কিক থেকে নিয়মিত গোল করে গেছেন তিনি। দূর থেকে গোলে শট, পাসিং এবং ক্রসে তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিলো।

ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞ; Source: fantacalciomag.it

পেনাল্টি ও সেট পিস বিশেষজ্ঞ হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে এই ডিফেন্ডারের। ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় মিহালোভিচ কাটিয়েছেন ইতালির সিরি আ’তে, খেলেছেন রোমা, সাম্পদোরিয়া, লাৎসিও এবং ইন্টার মিলানে। সিরি আ’তে ফ্রি কিক থেকে তিনি গোল করেছেন ২৮টি, যা ইতালিয়ান কিংবদন্তি আন্দ্রে পিরলোর সমান এবং ইতালিয়ান লিগে ফ্রি কিক থেকে করা সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এটি। জাতীয় দলের জার্সিতে ১০টি গোল করেছেন এই লেফট ব্যাক এবং ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ইরানের বিপক্ষে ফ্রি থেকে করা গোলটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার (১০৮ গোল)

জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার ছিলেন নিজের সময়ের চেয়ে ঢের অগ্রগামী এবং আগ্রাসী একজন ডিফেন্ডার। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ে খেলেছেন সুইপার হিসেবে, তৈরি করে দিয়েছেন অনন্য মানদণ্ড।

কিংবদন্তি সুইপার ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার; Source: footyfair.com

কিন্তু শুধুমাত্র রক্ষণের একজন দুর্ধর্ষ সৈনিক হিসেবেই নয়, বেকেনবাওয়ার প্রায়শই আক্রমণে দলকে সাহায্য করতেন। অসামান্য পাসিং দক্ষতা, মাঝমাঠে তার দূরদর্শিতা এবং গোল করার অদম্য ক্ষুধা তাকে প্রতিপক্ষের কাছে মূর্তিমান আতংক করে তুলেছিলো। ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বেকেনবাওয়ার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন ১০৮ বার। জাতীয় দলের হয়ে করেছেন ১৪টি গোল। বাকি গোলগুলোর মধ্যে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ৭৫টি এবং নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে করেছেন ১৯টি গোল।

রবার্তো কার্লোস (১১৩ গোল)

বুলেট গতির শট, দুর্দান্ত ফ্রি কিক, এমনকি ওপেন প্লেতেও অসামান্য দক্ষ ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রবার্তো কার্লোসকে ইতিহাস সেরা লেফট ব্যাক বললে অত্যুক্তি হবে না।

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি লেফট ব্যাক কার্লোস Source: thesun.co.uk

ফুলব্যাক হিসেবে খেলায় আক্রমণে অংশ নেওয়ার অনেক বেশি সুযোগ ছিলো এই বিশ্বকাপজয়ী ডিফেন্ডারের, সুযোগের প্রায় সবটাই তিনি কাজে লাগিয়েছেন। ডি বক্সের বাইরে থেকে করা তার শক্তিশালী শটগুলো অনেক সময়ে পরিণত হয়েছে দর্শনীয় গোলে। ক্যারিয়ারে তার মোট গোল সংখ্যা ১১৩টি। জাতীয় দলের হয়ে ১২৫ ম্যাচে তার মোট গোল সংখ্যা ১১। ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞ কার্লোসের অনেকগুলো ভয়ংকর সুন্দর গোলের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে বাঁকানো ফ্রি কিক থেকে করা গোলটি, যা নিয়ে হয়েছে অনেক গবেষণাও।

স্টিভ ব্রুস (১১৩)

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে শেইল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রায় শেষ মুহূর্তে ব্রুসের করা দুই গোলের সুবাদে অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে ম্যানচেস্টার  ইউনাইটেড প্রথম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা অর্জন করে। দীর্ঘ একটা সময় ধরে ইউনাইটেডের রক্ষণভাগ আগলে রেখেছিলেন এই ইংলিশ।

ইংল্যান্ডের হয়ে কখনো খেলার সুযোগ হয়নি ব্রুসের; Source: telegraph.co.uk

তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়টি হলো ১৯৯১-৯২ মৌসুম, এই মৌসুমে ব্রুসের গোল সংখ্যা ছিলো ১৯ এ। পেনাল্টি থেকে গোল এনে দেওয়ায় বেশ নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড় ছিলেন। অবশ্য তার ক্যারিয়ারের মোট ১১৩ গোলের একটা বড় অংশ এসেছে হেড থেকে। প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়াও খেলেছেন গিলিংহাম, নরউইচ, বার্মিংহাম এবং শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে। ব্রুসের ক্যারিয়ারে হয়তো সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে আছে কোনোদিন ইংল্যান্ড দলে ডাক না পাওয়া।

গ্রাহাম অ্যালেক্সান্ডার (১৩০ গোল)

স্কটিশ এই ডিফেন্ডার মূলত খেলেছেন রাইট ব্যাক হিসেবে, কিন্তু ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছে তাকে।

স্কটিশ খেলোয়াড় গ্রাহাম অ্যালেক্সান্ডার Source: talksport.com

প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৯৮১টি ম্যাচ, পেনাল্টি টেকার হিসেবে বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্সান্ডার তার ক্যারিয়ারে গোল করেছেন মোট ১২৯টি। দলে পেনাল্টি নেওয়ার বেশিরভাগ সময়ে তালিকার প্রথমেই ছিলো তার নাম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে খেলেছেন স্কুনথর্প, লুটন, প্রেস্টন ও বার্নলি ফুটবল ক্লাবে। ২০০২-০৩ মৌসুমে প্রেস্টনে এবং ২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্নলিতে থাকাকালীন সময়ে দুবার ১১টি গোলের দেখা পেয়েছিলেন এই ডিফেন্ডার। স্কটল্যান্ডের হয়ে ৪০টি ম্যাচ খেললেও গোলের দেখা পাননি কখনোই।

ল্যোহ ব্লঁ (১৪৬ গোল)

ফরাসি ক্লাব মপিলিয়েতে খেলেছেন এরিক ক্যান্টোনা, রজার মিলারের ও অলিভিয়ে জিরুর মতো ফরোয়ার্ডেরা, কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা একজন ডিফেন্ডার। ১৯৮৩-৯১ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ২৫১ ম্যাচে ডিফেন্ডার ল্যোহ ব্লঁ গোল করেছেন ৭৭টি, যা তাকে এই অনন্য আসনে বসিয়েছে।

ফরাসি কিংবদন্তি ব্লঁ; Source: fcbarcelona.com

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ব্লঁ মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও পরবর্তীতে পুরাদস্তুর একজন ডিফেন্ডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। গোল করায় দক্ষ অনেক ডিফেন্ডারের মতো তিনিও দারুণ একজন পেনাল্টি টেকার ছিলেন, তাছাড়া ফ্রি কিকও নিতেন অনেক সময়। ব্লঁর ১৪৬টি গোলের অনেক গোলই এসেছে পেনাল্টিতে করা গোলের মাধ্যমে। তবে ব্লঁর সবচেয়ে মনে রাখার মতো গোলটি হবে অবশ্যই ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে করা তার গোল্ডেন গোলটি, ওপেন প্লে থেকে ব্লর করা এই গোলের সুবাদেও শেষ আটে জায়গা করে নেয় ফ্রান্স।

ফার্নান্দো হিয়েরো (১৬৩ গোল)

রিয়াল মাদ্রিদ ও স্পেনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ফার্নান্দো হিয়েরোর এক মৌসুমে ২৬ গোল করার রেকর্ডই বলে দেয় রক্ষণের এই দুর্গ আক্রমণেও কতটা ভয়ংকর ছিলেন। সেন্টার ডিফেন্ডার হয়েও ১৯৯১-৯২ মৌসুমে লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে ৫৩ ম্যাচ খেলে এই বিশাল সংখ্যক গোল করেন হিয়েরো।

স্প্যানিশ ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি হিয়েরো; Source: goal.com

রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি হিয়েরো ১২৭ গোল নিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসের সেরা গোলদাতাদের মধ্যে অন্যতম, যেখানে তিনি পিছনে ফেলেছেন ক্লাবের হয়ে খেলা অনেক ফরোয়ার্ডকেও। সেট পিস ও ওপেন প্লে, বলতে গেলে সব দিক থেকেই প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি ছিলেন এই স্প্যানিশ। দুর্দান্ত হেডার, নিখুঁত পেনাল্টি টেকার এবং ফ্রি কিকে দারুণ পারদর্শী হিয়েরো তার ক্যারিয়ারে গোল করেছেন মোট ১৬৩টি। ১৯৯৪ সালে ডেনমার্কের বিপক্ষে তার একমাত্র গোলের সুবাদে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিলো স্পেন।

ড্যানিয়েল পাসারেলা (১৭৫ গোল)

লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার ইতিহাসে আক্রমণের সেরা খেলোয়াড় ম্যারাডোনা নাকি মেসি এই তর্ক  হলেও, কোনো সন্দেহ ছাড়াই দেশটির সেরা ডিফেন্ডার বিবেচিত হবেন ড্যানিয়েল পাসারেলা। খাটো খেলোয়াড়েরা তেমন একটা ভালো ডিফেন্ডার হতে পারেন না, এই ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন এই সেন্টার ব্যাক।

আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক পাসারেলা; Source: fifa.com

মাত্র ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার খেলোয়াড় হলেও বাতাসে অসাধারণ ছিলেন তিনি এবং তার ক্যারিয়ারের বর্ণাঢ্য ১৭৫টি গোলের অনেক গোলই এসেছে হেড থেকে। তাছাড়া ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে প্রায়শই পেনাল্টিও নিতেন তিনি। সাবেক রিভার প্লেট ও ফিওরেন্তিনার এই কিংবদন্তির অধিনায়কত্বে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা অর্জন করে আর্জেন্টিনা। তাছাড়া আট বছর পর মেক্সিকোতে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্কোয়াডেও ছিলেন তিনি, অবশ্য এই বিশ্বকাপে মাঠে নামা হয়নি তার।

রোনাল্ড ক্যুমান (২৫৩ গোল)

নেদারল্যান্ডসের কিংবদন্তি লিবেরো রোনাল্ড ক্যুমানের গোলসংখ্যা দেখে অনেকেই হয়তো তাকে ফরোয়ার্ড বলে ভুল করবে। সুইপার হিসেবে খেলা ক্যুমান ৭৬৩ ম্যাচে গোল করেছেন ২৫৩টি, ডিফেন্ডার হিসেবে করা এই গোলসংখ্যা এককথায় অবিশ্বাস্য। ডিফেন্ডারদের মধ্যে ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেরা গোলদাতা এই ডাচ কিংবদন্তির ধারেকাছেও নেই কোনো খেলোয়াড়।

ডিফেন্ডারদের মধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্যুমান; Source: liverpoolecho.co.uk

সুইপার হিসেবে খেলায় বল নিয়ে আক্রমণে অংশগ্রহণের অবাধ সুবিধা ছিলো তার, তাছাড়া বলের উপরে তার অসামান্য দখল থাকায় অনেক সময় মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলেছেন। বিভিন্ন ক্লাবে থাকাকালীন সময়ে পেনাল্টি ও ফ্রি কিকও নিতেন তিনি। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে ১১২ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে এই কিংবদন্তি বার্সেলোনার হয়ে বল সাম্পদরিয়ার জালে বল জড়ান, সেই সাথে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপার স্বাদ পায় বার্সেলোনা। খ্রনিগেন, আয়াক্স, পিএসভি, বার্সেলোনা ও ফেইনর্দের মতো ক্লাবে খেলেছেন তার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে। পিএসভিতে এক মৌসুমে ২৬ গোল এবং বার্সেলোনায় ১৯৮৯-৯০ ও ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে যথাক্রমে দুবার ১৯ গোল করার অসাধারণ কৃতিত্ব রয়েছে এই ডিফেন্ডারের।ডিফেন্ডার হয়েও গোল করাকে যেন নিজের স্বাভাবিক কাজের অংশ করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ক্যুমানের গোলের জন্যই বিশ্বকাপের বাছাই থেকেই ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড।

ফিচার ইমেজ- naciodigital.cat

Related Articles