Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টেনিস দেখা শুরু করতে চান? জানুন খেলাটির খুঁটিনাটি (পর্ব-২)

বিশ্বব্যাপী কেন টেনিসের এত জনপ্রিয়তা? তার আসল কারণ বৈচিত্র্য। ঘাস ও হার্ড কোর্ট কাঁপানো ফেদেরার ক্লে কোর্টে নাদালের কাছে অসহায়। আবার ক্লে কোর্টে অদম্য নাদাল ঘাসের সার্ফেসে ম্লান। কড়া রোদে খেলা হওয়া ক্লে কোর্টের বিশাল সময়ের অসম্ভব শক্তিক্ষয়ী ম্যাচের স্বাদ একরকম তো তার সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে হওয়া ঘাসের কোর্টে মিষ্টি রোদে সাদা পোশাকে দ্রুতগতির ম্যাচের স্বাদই আবার অন্যরকম। এটাই টেনিস।

নব্বইয়ের দশকে পিট সাম্প্রাস-আগাসির দ্বৈরথ শেষ হতে না হতেই ফেদেরার-নাদাল-জকোভিচদের লড়াইয়ের যুগ এসে যায়। টেনিস জগতে মহারথীদের মহারণের কোনোদিনই অভাব হয়নি, অভাব হয়নি বৈচিত্র্যের। টেনিস কখনো এমন কাউকে পায়নি যিনি সব সার্ফেসে, সবদিক দিয়েই পূর্ণ। বৈচিত্র্য ও অনিশ্চয়তা এই খেলার সবচেয়ে বড় দিক। আমরা তো বাস করছি টেনিসের সেরা যুগে যখন মাঠের লড়াইয়ে ইতিহাসেরই সেরা দুজন, ফেদেরার ও নাদাল। পাঠক, একটু কষ্ট করে দেখেই নিন টেনিসের নিয়মগুলো। হয়তো আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার দ্বারা নিজেকে তবে অসাধারণ এক খেলার দুনিয়ায় প্রবেশ করাতে পারবেন।

ফেদেরারকে বলা হয় টেনিসের সর্বকালের সেরা; Source:Eurosport Asia

টেনিস খেলাটা যে বেশ জটিল তা অনস্বীকার্য। গত পর্বে আমরা পাঠকদের সুবিধার্থে তুলে ধরেছিলাম টেনিস খেলার বড় বড় টুর্নামেন্টগুলোর প্রকারভেদ, গ্র্যান্ডস্লাম এর টুকিটাকি ও কিছু প্রয়োজনীয় টার্ম। এই পর্বের নতুন পাঠকদের জন্য আগের পর্বটা পড়ে আসা সহায়ক হবে আশা করা যায়। কিন্তু টেনিস খেলার যে অংশে এসে সবাই হড়কে যায়, তা হলো স্কোরিং অংশটা। কী যে এক জটিল ব্যাপার! পয়েন্ট পেল, উল্লাসও করলো, পরক্ষণেই আবার কোর্টে নেমে গেল! আসলে ব্যাপারটা কী? আজকের এই লেখায় আমরা নিয়ে এসেছি টেনিস খেলার স্কোরিং এবং বিভিন্ন ধরনের সার্ফেসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

টেনিস স্কোরিং

টেনিসে স্কোরিংয়ের আসল ব্যাপারটা নারী এবং পুরুষ এককে মোটামুটি একই রকম হলেও টুর্নামেন্ট ভেদে মাঝেমাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

প্রথমেই আসা যাক নারী এককের স্কোরিংয়ের ব্যাপারে। গ্র্যান্ডস্লাম কিংবা যেকোনো এটিপি ট্যুরেই নারী এককের ম্যাচ হয় সর্বোচ্চ তিন সেটের। তিন সেটের মধ্যে যদি কেউ দুটো সেট জিতে ফেলেন, তাহলে তিনিই হবেন ম্যাচ বিজয়ী। এখন আসা যাক সেট জিনিসটা আসলে কী? টেনিসে সেট মানে হলো কতগুলো গেমের সমষ্টি। আবার কতগুলো পয়েন্টের সমষ্টি হলো গেম। ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে প্রথমে কিছুটা সমস্যা হবে অনেকেরই।

একটা গেমের পয়েন্ট কাউন্ট শুরু হয় ০ থেকে, আর শেষ হয় গেম পয়েন্ট অর্জনের মাধ্যমে। সবার আগে যিনি গেম পয়েন্ট অর্জন করতে পারবেন তিনিই হবেন গেমটির বিজয়ী। সাধারণত ০ থেকে গেম পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে হলে মোট চারটি পয়েন্ট অর্জন করতে হয়। ০ থেকে ১৫, ১৫ থেকে ৩০, ৩০ থেকে ৪০ এবং সবশেষে ৪০ থেকে গেম পয়েন্ট। তবে এক্ষেত্রে দুজনেরই পয়েন্ট ৪০-৪০ হলে একটা সাম্যাবস্থায় এসে যায়। একে বলে ‘ডিউস’। ডিউস হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে গেম পয়েন্ট অর্জনের আগে ‘এডভান্সড পয়েন্ট’ নামে একটা পয়েন্ট অর্জন করতে হয়। ‘এডভান্স’ লেখাটি আসার পর আরেকটি পয়েন্ট পেলে সেই গেমটি আপনার। ধরুন, ফেদেরার-নাদাল খেলছেন। নাদাল সার্ভ করছেন। ৪০-১৫ তে এগিয়ে নাদাল। এরপর টানা দুটো পয়েন্ট নিয়ে ফেদেরার করে ফেললেন ৪০-৪০, মানে ডিউস। এখন নাদাল একটি পয়েন্ট পেলেন। তার মানে, নাদালের ‘এডভান্স’। এখন আর একটি পয়েন্ট জিতলেই গেম নাদালের। কিন্তু নাদালের ‘এডভান্স’ থাকার সময় একটি পয়েন্ট ফেদেরার পেলে কি হবে?

পয়েন্ট আবার ফিরে যাবে ৪০-৪০ এ, মানে ডিউসে। এখন ধরা যাক ফেদেরার পয়েন্ট পেলেন। এখন এডভান্স পয়েন্ট কার? ফেদেরারের। এরপর আর এক পয়েন্ট করলেই গেম তার। যিনি সার্ভ করছেন তার সার্ভ করাকালীন গেমটা যদি প্রতিপক্ষ পান, তবে তাকে বলে ‘ব্রেক’। আর যিনি সার্ভ করছেন, গেমটি যদি তিনিই জেতেন তবে তাকে বলে ‘হোল্ড সার্ভ’, মানে নিজের সার্ভ রক্ষা করলেন। এভাবেই নির্ধারিত হয় একটা নির্দিষ্ট সেটের গেমগুলোর বিজয়ী। যেকোনো সেটে যদি কেউ সবার আগে কমপক্ষে দুই গেমের ফারাক রেখে (এই অংশটা খেয়াল করবেন) ৬টি গেম জিতে ফেলে তাহলে তিনিই সেই সেটটির বিজয়ী হিসেবে গণ্য হবেন। তবে গেমের স্কোরলাইন যদি ৬-৫ টাইপের কিছু হয় (মানে পয়েন্ট হলো ৬, কিন্তু ফারাক দুই হয়নি), তাহলে সবার আগে যিনি ৭ গেম জিতবেন তিনিই হবেন সেটটির বিজয়ী। আর কোনো সেট ৬-৬ গেমে ডিউস হয়ে গেলে তা গড়াবে টাইব্রেকারে। ট্রাইব্রেকারের আগবধি সেট কিভাবে এগোয় একটু দেখে নেয়া যাক।

ফেদেরার-নাদালের আগে সাম্প্রাস-আগাসি দ্বৈরথই ছিল সেরা; Source: delo.si

আবারো ধরা যাক, নাদাল বনাম মারের একটি ম্যাচ চলছে। প্রথম নাদাল সার্ভে। তিনি নিজের গেমটি জিতলেন। ফলাফল ১-০। এবার মারের সার্ভ। তিনিও নিজের পয়েন্ট ‘হোল্ড’ করলেন, মানে নিজের সার্ভে গেম জিতলেন, এখন ফলাফল ১-১। এভাবে চলতে থাকলো, সবাই সবার গেম জিতে যাচ্ছেন, কেউ ‘ব্রেক’ করতে পারছেন না। ৪-৪ এ যখন সমতা, তার পর কয়েকটি কাল্পনিক চিত্রকল্প দেখে নেয়া যাক।

১) সার্ভে নাদাল, কিন্তু মারে ‘ব্রেক’ করলেন। তার মানে এবার মারে ৪-৫ এ এগিয়ে। এখন এরপরে নিজের সার্ভ জিতে নিলেই ৪-৬ এ সেটটি বাগিয়ে নেবেন মারে।

২) আবার ধরা যাক, ৪-৪ এ খেলা। দুজনই নিজেদের গেম জিতলেন। মানে ৫-৫। সার্ভে নাদাল। তিনি নিজের গেম জিতলেন, ফলাফল ৬-৫। তবে সেটটি কিন্তু নাদাল জেতেননি, কারণ ফারাক এখনো দুই নয়। এরপর মারের সার্ভ রয়েছে। এখন মারের সার্ভে যদি নাদাল ব্রেক করেন, তবে পয়েন্টটি হবে নাদালের, ৭-৫ এ সেটটি নাদাল জিতে নেবেন কিন্তু মারে যদি নিজের গেম জিতে যান? তবে ৬-৫ থেকে ম্যাচ হয়ে আসবে ৬-৬ এ। অর্থাৎ খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে।

এ থেকে আমরা মূল যে জিনিস মাথায় রাখব তা হলো, একটি সেট জয়ের জন্য গেম এর ফারাক হতে হয় কমপক্ষে ২।

এই খেলায় ফেদেরার নাদাল স্বর্ণালী বর্তমান ও ইতিহাসের সেরা দুইজন; Source:Tennis World USA

টাইব্রেকার

টাইব্রেকার! সে এক মহা ঝামেলার জিনিস। খুব সহজে বলা যাক। টাইব্রেকারের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো সবার আগে যিনি ৭ পয়েন্ট অর্জন করতে পারবেন, তিনি টাইব্রেকারের বিজয়ী হবেন। আর টাইব্রেকারও যদি উভয়পক্ষে ৭-৭ পয়েন্টে সমতা বিরাজ করে তাহলে সবার আগে যে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ২ পয়েন্টের ব্যবধান রাখতে পারবেন, তিনিই টাইব্রেকারের বিজয়ী হিসেবে গণ্য হবেন। গ্র্যান্ডস্লাম ট্যুরগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র উইম্বলডনেই ফাইনাল সেটে কোনো টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হয় না। সেক্ষেত্রে যিনি ৬-৬ এর পর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অন্তত ২ গেমের ব্যবধান রাখতে পারবেন তিনিই সেই সেট জয়ী হবেন। সেসময় মূল স্কোরে লেখাটা আসে ৭-৬।

পুরুষ টেনিসে গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টগুলো বাদে বাকি সব টুর্নামেন্টেই তিন সেটের ম্যাচ হয়ে থাকে। সেট কিংবা গেমের নিয়মগুলো নারী এবং পুরুষ উভয় এককের জন্য একই রকম থাকে। শুধু পুরুষ এককের গ্র্যান্ডস্লাম ম্যাচগুলো হয় পাঁচ সেটের, এবং যে আগে তিন সেট জিততে পারবে সে-ই ম্যাচের বিজয়ী হবে। সেটের ব্যাপারটাও একটু বলা যাক। পাঁচ সেটের ম্যাচ হচ্ছে। আপনি প্রথম তিনটি সেটই জিতে গেলেন, তবে বাকি দুই সেট খেলার দরকার নেই। ওই যে বলা হয়েছে ‘যে আগে তিন সেট জিতবে’। এখন প্রথম সেট হেরেও যদি আপনি পরের ৩ সেট জিতে নেন, তাহলে পঞ্চম সেটে যাওয়া দরকার নেই। আর যদি প্রথম চার সেটের দুটো করে জেতেন দুজন, তবে ম্যাচ পঞ্চম সেটে গড়ায়।

মূলত এই ছিল টেনিস স্কোরিং এর মৌলিক কিছু ব্যাপার। পুরোটা বুঝতে কেবল দুটো জিনিস করতে হবে। টিভিতে বা ইউটিউবে পুরো একটি সেট খেলা দেখে নেবেন আর কোন একটি পাঁচ সেটের মহারণের হাইলাইটস ইউটিউবে দেখে নেবেন।  এবার আমরা চলে আসব সার্ফেস নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনায়।

সার্ফেস

টেনিসে মূলত সার্ফেস তিন প্রকার- ১) ঘাস (গ্রাসকোর্ট), ২) লাল মাটি (ক্লে কোর্ট) ও ৩) কংক্রিট (হার্ড কোর্ট)। টেনিসে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ফ্যাক্টর হলো সার্ফেস। ক্রিকেটে যেমন পিচ, টেনিসে সার্ফেস এর চেয়েও বেশী গুরুত্ববহ, কারণ খেলোয়াড়ের খেলার স্টাইল ঠেকে সাফল্য সবই এই সার্ফেসের উপর নির্ভরশীল।

গ্রাসকোর্ট

টেনিসের আসল গোড়াপত্তন এই ঘাসের বুকেই, সবচেয়ে মর্যাদার আসর উইম্বলডনও এই ঘাসের মাঠেই হয়। ঘাসের সার্ফেস সবচেয়ে দ্রুতগতির হয়, তাই যাদের সার্ভ ভাল তারা আলাদা সুবিধা পেয়ে থাকেন। যারা সিঙ্গেল হ্যান্ড ব্যাক হ্যান্ড তারাও ঘাসের কোর্টে বেশী ভাল করে থাকেন, কারণ যারা এক হাতে ব্যাকহ্যান্ড নেন বিধায় রিয়্যাকশন টাইম কম লাগে। ঠিক এসব কারণেই ফেদেরার গ্রাসকোর্টে অদম্য। একটা পরীক্ষা করা হয়, তিন সার্ফেসে একই কোণে, একই গতিতে বল ছোড়ে। গ্রাসকোর্টে বাউন্স হয় সবচেয়ে কম আর গতি সর্বোচ্চ। তাই যাদের মুভমেন্ট ভালো তারাই এই কোর্ট দাপায়ে বেড়ায়।

জোকোভিচের একটি ডবল হ্যান্ড ব্যাকহ্যান্ড; Source:abc.net.au

ক্লে কোর্ট

তিন সার্ফেসের মধ্যে এটি সবচেয়ে ধীরগতির। সেই পরীক্ষায় দেখা গেছে ক্লে কোর্টে বলের বাউন্স হয় সবচেয়ে বেশী কিন্তু প্রচন্ড ধীর হয়ে পড়ে। তাই খেলোয়াড় অনেক সময় পান বলের নাগাল পেতে। এজন্যই এ কোর্টে ম্যাচ দীর্ঘ হয় এবং প্রচন্ড শক্তি লাগে। তাই ডাবল হ্যান্ড ব্যাকহ্যান্ড প্লেয়ার এ কোর্টে সুবিধা পান বেশী। ডাবল হ্যান্ডে রিয়্যাকশন টাইম বেশী লাগলেও শটে জোর হয় বেশী। এই কোর্টের আরেক বৈশিষ্ট্য হলো বল দারুণ ঘূর্ণি খায়। আর এ সব রসদ নাদালের মধ্যে ভরপুর, তাই নাদালই এই কোর্টের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়।

হার্ড কোর্ট

টেনিসে সবচেয়ে বেশী টুর্নামেন্ট এই হার্ড কোর্টে। হার্ড কোর্ট ক্লে এর চেয়ে বেশী ফাস্ট, তবে ঘাসের চেয়ে কম। আবার বাউন্স ক্লে এর চেয়ে কম কিন্তু ঘাসের চেয়ে বেশী। এই কোর্টেই সবচেয়ে বেশী বৈচিত্র্য। কোনো কোনো টুর্নামেন্টের হার্ডকোর্ট প্রায় ঘাসের কাছাকাছি গতির হয়, আবার কোনোটা ক্লে এর মতো ধীর। জোকোভিচ ও ফেদেরার হার্ডকোর্টের চরিত্র ভালো ধরতে পারেন, তবে এর মধ্যেও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একেকজন একেকরকম সুবিধা পেয়ে থাকেন। টুর্নামেন্টগুলো কিছুদিন পরপরই তাদের সার্ফেসের বৈশিষ্ট্য বদলে থাকেন।

এই ছিল নবাগত বা দেখা শুরু করতে ইচ্ছুক টেনিস ফ্যানদের জন্য ক্ষুদ্র একটি প্রচেষ্টা। খেলা যদি হয় বিনোদনের জন্য তবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই রাজসিক খেলাটি আপনাকে বিমুখ করবে না। স্বাগতম আপনাকে ফেদেরার-নাদালের সাম্রাজ্যে।

ফিচার ছবিসত্ত্ব: portaldeangola.com

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ Meherabul Haque Rafi

Related Articles