Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে ঐতিহাসিক যত ঘটনা

ইউরোপিয়ান কাপ নাম বদলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণ হয় ১৯৯৫ সালে। সে বছর থেকে ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব নেয় ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অথবা উয়েফা। নামকরণের ২৩ বছরে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বদলে গেছে কিছু নিয়ম, তৈরি হয়েছে নতুন ইতিহাস অথবা জন্ম নিয়েছে রোমাঞ্চকর ঘটনা। নতুন নিয়ম বা শিরোপাজয়ী দলের বর্ণনা নয়, ২৩ বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘটে যাওয়া কিছু রোমাঞ্চকর ম্যাচ এবং ঘটনাকে তুলে ধরা আজকের লেখার মুখ্য বিষয়।

ডেপোর্টিভো লা করুনা বনাম এসি মিলান

২০০৪ সাল। বর্তমান সময়ে অবনমন অঞ্চলে ঘোরাফেরা করা ডেপোর্টিভো লা করুনা তখন নিজেদের সেরা সময় পার করছে। ঐ সিজনে তাদের দাপটে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার মতো দল লিগে খেই হারিয়ে ফেলেছিলো। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ডেপোর্টিভো এসি মিলানের কাছে হেরে যায় ৪-১ ব্যবধানে। এসি মিলানও তখন তাদের পূর্ণশক্তিতে উজ্জীবিত। কিন্তু এত শক্তিশালী দলের সামনেও মানসিকভাবে হার মানলো না স্পেনের ক্লাবটি। ফিরতি লেগে ০-৪ গোলে এসি মিলানকে হারিয়ে ৫-৪ অ্যাগ্রিগেটে নিশ্চিত করলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল।

ডেপোর্টিভোর উদযাপন; Source: coughtoffside.com

মেসির এক ম্যাচে পাঁচ গোল

কোনো ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সহজ কথা নয়। চার গোল তো আরো কঠিন, আর পাঁচ গোলের সুপার হ্যাটট্রিক তো অভাবনীয়। কিন্তু লিওনেল মেসি সেই অভাবনীয় কাজকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে বার্সেলোনার দেওয়া ৭ গোলের ভেতর ৫ গোল করেছিলেন মেসি। কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হলো, ভাগ্য সহায় হলে সেদিন বায়ার লেভারকুসেনের জালে ৬ গোল দিয়ে ফেলেছিলেন মেসি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথম এক ম্যাচে ৫ গোল করেন মেসি ; Source:  AP Photo

আপোয়েলো নিকোশিয়ার ইতিহাস

সাইপ্রাসের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবথেকে বড় সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনালে পদার্পণ। আর শেষ আটে নিয়ে যাওয়া একমাত্র ক্লাব আপোয়েলো নিকোশিয়া। অলিম্পিক লিঁওকে ট্রাইবেকারে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে তারা এ ইতিহাস রচনা করে।

ফ্রান্সে লিঁওর মাঠে গিয়ে ০-১ গোলে হেরে এসেছিলো সাইপ্রাসের ক্লাবটি। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে শেষ মুহূর্তে গোল করে ফলাফল সমতায় আনে আপোয়েলো। লিঁওর আলেক্সজান্ডার লাকাজেট ও মিশেল বাস্তোস পেনাল্টি সেভ করে দেন গোলকিপার দিওনিসিওস চিয়োতিস। আর ৫টি পেনাল্টি শটের ভেতর আপোয়েলো গোল করেন ৪টি। ম্যাচটিতে শুধু হাড্ডাহাড্ডির লড়াই ছিলো না। প্রবল উত্তেজনা সহ্য না হবার কারণে স্টেডিয়ামেই দর্শক থেকে খেলোয়াড় পর্যন্ত বেশ ক’জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

আপোয়েলো নিকোশিয়া; Source: Betdistrict.com

লিভারপুলের জন্য উয়েফার নিয়ম পরিবর্তন

২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলো লিভারপুল। কিন্তু ইংলিশ লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এভারটনের পেছনে পড়ে ৫ম হবার কারণে পরবর্তী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে না খেলাটা নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। কারণ উয়েফার নিয়মানুযায়ী, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ১ম চার দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারবে। কিন্তু ফাইনালে অবিশ্বাস্য জয়ের পরেও ইংলিশ ফুটবল ফেডারেশন তাদের ৪র্থ ক্লাব হিসেবে এভারটনকে সুযোগ দেয় পরের বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাইপর্ব খেলার জন্য। এর ফলে উয়েফা বাধ্য হয় লিভারপুলের জন্য নিজেদের নিয়ম পরিবর্তন করে লিভারপুলকেও বাছাইপর্ব খেলার সুযোগ করে দিতে।

লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের চিরচেনা স্লোগান; Source: wallup.net

মিরাকল অফ ইস্তাম্বুল

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর সবথেকে রোমাঞ্চকর ফাইনাল অবশ্যই লিভারপুল বনাম এসি মিলান ম্যাচ। পিরলো, কাকা এবং হার্নান ক্রেসপোর গোলে প্রথমার্ধেই শিরোপার আশা শেষ হয়ে যেতে বসেছিলো অলরেডদের। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পর ৫৪ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের স্কোরলাইন ছিলো ০-৩, ৬০ মিনিটে তা হয়ে যায় ৩-৩। ৬ মিনিটে ৩ গোল হজম করেও এসি মিলানের আক্রমণাত্মক মনোভাব ও ৩ গোল করে ম্যাচে ফিরে আসা লিভারপুলের পাল্টা আক্রমণ চললেও কোনো গোল আর হয়নি। টাইব্রেকারে শেভচেঙ্কোর শট দুদেক ফিরিয়ে দিলে অবশেষে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচের ভাগ্য যায় অলরেডদের ঘরে।

অলরেডদের শিরোপা জয়ের উল্লাস

লিওনেল মেসির অবিস্মরণীয় গোল

চিরশত্রু রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ। বার্সেলোনার সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি প্রথম গোল করে বার্সাকে এগিয়ে নিয়েছেন বটে, কিন্তু বিস্ময় যে এখনও বাকি। সার্জিও বুসকেটসকে পাস দিয়ে নিজেই দৌড়ে এসে চার ডিফেন্ডার কাটিয়ে এবং খোদ ইকার ক্যাসিয়াসকে ফাঁকি দিয়ে লিওনেল মেসি অতিমানবীয় গোল করে বসলেন। সব লিগ মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কম গোল করেননি মেসি। কিন্তু মাদ্রিদের বিপক্ষে তার এ গোলটি যে সবথেকে সেরা, তা বলাই বাহুল্য।

দুর্দান্ত সেই গোলের পর মেসির উদযাপন; Source: Getty Images

আর্সেনাল ২-১০ বায়ার্ন মিউনিখ

গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ঘটনা। শেষ ষোলতে মুখোমুখি হয়েছিলো আর্সেনাল এবং বায়ার্ন মিউনিখ। প্রথম লেগের ম্যাচ বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে। শুরুটা ভালোই হয়েছিলো গানার্সদের। ২০ মিনিটে থিও ওয়ালকটের গোল এগিয়ে ছিলো তারা। কিন্তু ৫৪ মিনিটে কসিয়েলনির লাল কার্ডে যেন বিপদ নেমে এলো আর্সেনালের উপর। লেভানডস্কি প্রথম গোল করলেন, এরপর একে একে রোবেন, ডগলাস কস্তা, আর্তুরো ভিদালরা করলেন টানা পাঁচ গোল।

ফিরতি লেগে বায়ার্ন মিউনিখকে টপকানো সহজ ছিলো না আর্সেনালের জন্য। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার তো কিছুই হলো না, উল্টো যেন বায়ার্নের মাঠের বিভীষিকা ফেরত এলো। বায়ার্ন মিউনিখ গুনে গুনে আবারো পাঁচ গোল দিলো আর্সেনালের জালে। আর আর্সেনাল ফেরত দিলো শুধুমাত্র ১টি। ফলাফল ২-১০ অ্যাগ্রিগেটে বায়ার্ন মিউনিখ কোয়ার্টার ফাইনালে।

হতাশায় আচ্ছন্ন আর্সেনাল; Source: Getty Images

এক ম্যাচে ৮ গোল

২০০৮-০০৯ মৌসুমের চেলসি বনাম লিভারপুলের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ। প্রথম লেগ তুলনামূলকভাবে চেলসির জন্য একপেশে ছিলো। কিন্তু তিন গোলে এগিয়ে ছিলো ব্লুসরাই।

দ্বিতীয় লেগে এসে পিটার চেক যেন হারিয়ে ফেললেন তার স্বাভাবিক দক্ষতা। পাশাপাশি দ্রগবা ও ল্যাম্পার্ডরাও ভুলে গেলেন গোল করতে। এবং এ ৪৫ মিনিটে ছন্নছাড়া চেলসিকে পেয়ে লিভারপুল করলো জোড়া গোল। দ্বিতীয়ার্ধে অ্যালেক্স আর দ্রগবার বদৌলতে ৬০ মিনিট শেষ হবার আগেই চেলসি পেয়েছিলো সমতা। আর ল্যাম্পার্ড গোল করলে লিডও পেয়ে যায় তারা। কিন্তু লিভারপুলও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। ডিক ক্রুইট আর লুকাসের গোলে আবারো এগিয়ে যায় অলরেডরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আবারো গোল করে বসেন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। ৪-৪ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচ ড্র হলেও প্রথম লেগে এগিয়ে থাকার সুবাদে সেবার পরের রাউন্ডে গিয়েছিলো ব্লুসরা।

আট গোলের এমন রোমাঞ্চকর ম্যাচের দেখা সহজে পাওয়া যায় না; Source: Nate Abaurrea

এরিক আবিদালের ফিরে আসা

২০১১ সালে এরিখ আবিদালকে লিভারে টিউমারজনিত সমস্যার কারণে ছুরি-কাঁচির তলায় যেতে হয়েছিলো। বিষয়টি এত গুরুতর ছিলো যে শুধু ফুটবল ক্যারিয়ার নয়, তার জীবনও ছিলো হুমকির মুখে। তবে আবিদাল হার মানেননি। ফিরে এসেছিলেন কাতালান বাহিনীর কাছে। সেবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বার্সেলোনাকে। ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর এরিখ আবিদালই উল্লাসিত দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছিলে শিরোপা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাতে আবিদাল; Source: Marca

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪-৩ রিয়াল মাদ্রিদ

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গিয়ে ১-৩ গোলে হেরে এসেছিলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নিজেদের মাঠে ক্লিনশিট রেখে ৩ গোল ফেরত দেওয়া অবিশ্বাস্য হলেও ভিসেন্ত দেল বক্সের অধীনে ভয়ঙ্কর রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা ছিলো রেড ডেভিলদের। কিন্তু অ্যাওয়ে ম্যাচেও রিয়াল মাদ্রিদ দুর্নিবার। মাত্র ৬০ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান রোনালদো করলেন হ্যাটট্রিক। তবে রুড ফন নিস্টলরয় আর হেলগুয়েরার আত্মঘাতী গোলের ফলে তখনও জয়ের নেশায় মত্ত ফার্গুসন বাহিনী। আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে শেষমুহূর্তে এগিয়ে নিয়ে গেলেন ডেভিড বেকহাম। তার জোড়া গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪-৩ গোলের জয় পেলেও অ্যাগ্রিগেটে পরের রাউন্ডে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো রিয়াল মাদ্রিদের।

বেকহামের জোড়া গোল জয় এনে দিয়েছিলো রেড ডেভিল শিবিরে; Source: Getty Images

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ১০০ গোল

রুড ফন নিস্টলরয়ের করা ৫৬ গোলের রেকর্ড টিকে ছিলো অনেকদিন। তারপর রাউল করলেন ৭২ গোল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গত বছর গোল সংখ্যার রেকর্ড নিয়ে গেলেন তিন অঙ্কে। তবে প্রথমবারের মতো ১০০ গোল করে তিনি থামেননি, এ পর্যন্ত করে ফেলেছেন ১২০টি গোল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এভাবে গোলবন্যা চালু থাকলে ভবিষ্যতে রোনালদো কোথায় গিয়ে থামবেন তা বলা মুশকিল। তবে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০০ গোল করা দ্বিতীয় ফুটবলারের দেখা পেয়ে গেছে। চলতি মৌসুমেই ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০০ গোলের মাইলফলক পার করেন লিওনেল মেসি।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; Source: Goal.com

বাতে বরিসভ ০-৭ শাখতার দেনেস্ক

বাতে বরিসভের বিপক্ষে শাখতার দেনেস্কের পারফর্মেন্স অনেক দলের করা রেকর্ড ভেঙে দিলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবথেকে বড় জয়ের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। তবে ইউক্রেনের ক্লাবটি যতগুলো রেকর্ড ভেঙেছে তা মন্দ নয়। ১১ মিনিটে প্রথম গোল পাওয়ার পর শাখতার আবারো এগিয়ে যায় লুইজ আদ্রিয়ানোর গোলে। এরপর ডগলাস কস্তার আরো এক গোলের পর প্রথমার্ধেই লুইজ আদ্রিয়ানো করেন টানা ৩ গোল। প্রথমার্ধে ৬ গোল আগে কখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পর বাতে বরিসভ রক্ষণাত্মকভাবে খেলে গেলেও সপ্তম গোল এড়াতে পারেনি। ৮২ মিনিটে শাখতার পেনাল্টি পেলে তা থেকে নিজের প্রথমবার ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ৫ গোল করেন লুইজ আদ্রিয়ানো।

শাখতারের পাঁচ গোলের নায়ক লুইজ আদ্রিয়ানো; Source: Weloba

সুপার সাব লার্স রিকন

দল যে স্বপ্ন দেখছে, সে স্বপ্ন সত্য পরিণত করে দেওয়ার জন্য নিজের প্রতি কতটা গর্ববোধ হয়? ১৯৯৭ সালে মিউনিখের এক রাতে এমন একটা সময় এসেছিলো ২০ বছর বয়সী লার্স রিকনের জীবনে। ম্যাচের আর মাত্র ২০ মিনিট বাকি। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ১-২ গোলে পিছিয়ে জুভেন্টাসের বিপক্ষে। তখনই বেঞ্চ থেকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন রিকন। মাত্র ১৬ সেকেন্ড পর ২০ গজ দূর থেকে জোরালো শটে সমতাসূচক গোল করেন তিনি। দ্বিতীয় গোল করেন ম্যাচ শেষ হবার কিছু সময় আগে। বদলি হিসেবে মাঠে নেমে টানা দুই গোল করে মুহূর্তে ২০ বছর বয়সী রিকন হয়ে উঠলেন শিরোপা জয়ের নায়ক।

লার্স রিকন; Source: Getty Images

রেড ডেভিলদের ভয়াল স্মৃতি

২০০৯ এবং ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছেছিলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এবং অদ্ভুতভাবে এই দুই ফাইনালেই হতাশ হতে হয়েছিলো বার্সেলোনার কাছে হেরে। ২০০৯ সালে মূলত ফার্গুসনের দল হেরেছিলো মেসির দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে। ২০১১ সালে ফাইনালেও সেই একই গল্প ফেরত আসলো। সেই পুরনো বার্সেলোনা এবং আবারও মেসির অতিমানবীয় পারফর্মেন্সের কাছে রেড ডেভিলদের নতি স্বীকার। এ দুই ফাইনালের পর এ পর্যন্ত বার্সেলোনার সাথে আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দেখা হয়নি। দুই দলের বেশ কিছু পরিবর্তন আসলেও রেড ডেভিলরা দুই ফাইনাল হারার প্রতিশোধ নিতে নিশ্চয়ই এখনো মুখিয়ে আছে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে মেসির করা সেই অতিমানবীয় গোল; Source: The Sun

বার্সেলোনার রূপকথা

ম্যাচ শেষ হবার পর লুইস এনরিকে বলেছিলেন, “আমার কাঁদা উচিত ছিলো, কিন্তু আমার চোখে পানি আসছিলো না।” এমন অদ্ভুত কথা শুনে অবাক হবার কারণ নেই। পিএসজির মাঠে ০-৪ গোলে হেরে আসার পর বার্সেলোনা ইতিহাস তৈরি করে জিতেছিলো ৬-১ গোলে।

পিএসজির কাছে ৪ গোলে হেরে আসার পর বার্সার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো বটে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারায়নি। দ্বিতীয় লেগে রূপকথার গল্পের শুরু হয় লুইস সুয়ারেজের গোল আর কুরজাওয়ার আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে। পেনাল্টি থেকে মেসি তৃতীয় গোলের পর বার্সেলোনা আশার পালে হাওয়া লাগলেও কাভানির গোল সব চুরমার করে দেয়।

কিন্তু নেইমার তো দমে যাননি। পেনাল্টি ও ফ্রি কিক থেকে গোল করে দলকে এনে দেন পঞ্চম গোল। গোলের সমতা হলেও বার্সেলোনা তখনো পিছিয়ে পিএসজির অ্যাওয়ে গোলে। এ সময় আবির্ভাব হয় সার্জি রবার্তোর। একদম শেষ মুহূর্তে নেইমারের পাস থেকে করেন জয়সূচক গোল। রূপকথার গল্প লিখে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছলেও শেষ আট থেকে বার্সেলোনা সেবার হেরে বাদ পড়ে জুভেন্টাসের কাছ থেকে।

সার্জি রবার্তোর শেষ মুহূর্তের গোলে ইতিহাস তৈরি হয়েছিলো ন্যু ক্যাম্পে; Source: The Telegraph

রোমার স্বপ্নজয়

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে রোমার কখনো খেলা হয়নি। বার্সেলোনার কাছে ঘরের মাঠে ১-৪ গোলে হেরে এসে প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন অনেকটা ফিকে হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ছিলো পরিপূর্ণ। ঘরের মাঠে ছন্নছাড়া বার্সেলোনাকে পেয়ে রোমা ঘটালো অঘটন। বার্সেলোনা হজম করলো ৩ গোল। অ্যাগ্রিগেট ৪-৪ গোলের সমতা হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে রোমা পেল সেমিফাইনাল খেলার টিকেট। সেমিফাইনাল উতরানো হয়নি, কিন্তু বার্সেলোনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়া, প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার মতো ইতিহাস তো রচনা হয়েছে।

রোমার স্বপ্নপূরণের নায়ক মানোলোনাস; Source: Paolo Bruno

ত্রাণকর্তা যখন সার্জিও রামোসের মাথা

২০১৩-১৪ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। অ্যাটলেটিকোকে ৩৬ মিনিটে লিড এনে দিয়েছিলেন ডিয়েগো গডিন। এরপর আর কোনো গোল হয়নি। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ঐতিহাসিক রক্ষণের বদৌলতে বেল, রোনালদোরা ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোলবঞ্চিত থাকলেন।

৯৩ মিনিটে সবাই যখন ভেবে নিয়েছিলো এবার শিরোপা ভিসেন্তে ক্যালরেদনেই যাচ্ছে, ঠিক তখনই হেডে সমতাসূচক গোল দিয়ে বসেন সার্জিও রামোস। একরকম ফলাফল নিশ্চিত ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯০ মিনিট ধরে রিয়াল মাদ্রিদকে ঠেকিয়ে রাখলেও অতিরিক্ত সময়ে সেটা আর সম্ভব হয়নি। ১১০ মিনিটে গোল করেন গ্যারেথ বেল, পেনাল্টিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং শেষ মুহূর্তে মার্সেলোর গোলো রিয়াল মাদ্রিদ শিরোপা জিতে নেয়। কিন্তু একজন সার্জিও রামোস যদি না থাকতেন? অথবা শেষমুহূর্তে তিনি ঐ গোল যদি না করতে পারতেন?

শেষ মুহূর্তে করা এ গোলই ঘুরিয়ে দিয়েছিলো ম্যাচের ভাগ্য; Source: Getty Images

Featured image: Uefa

Related Articles