১.
আবেগে থরহরিকম্প হয়ে ভূমিকা লেখার কাজটি বেশ কঠিন। আবেগ তো আর শব্দ-বাক্য সাজিয়ে আসে না। ভূমিকা লেখার মতো আবেগ-অনুভূতিহীন অংশটুকু তাই প্রবাদপ্রতিম লেখক উৎপল শুভ্রের হাত থেকে বেরোলে মন্দ হয় না। প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দঘন মুহূর্তে তিনি যা লিখে গিয়েছিলেন, তা তো গতকাল রাতে বিশ্বজয়ের পরও আশ্চর্য রকমের প্রাসঙ্গিক!
কাল সকালে পুব আকাশে যে সূর্যটা উঠেছিল, সেটি কি একটু অন্যরকম ছিল? একটু বেশি লাল? বাংলাদেশের জন্য লাল অক্ষরে লিখে রাখার দিনটিতে সূর্যের রঙটাও তো একটু অন্যরকমই হওয়ার কথা! কাল রাতের আকাশটাও কি হুট করেই রঙ বদলে ফেললো! কালো কুচকুচে অন্ধকার থেকে হঠাৎ করেই হয়ে গেল রঙিন? নাকি এসবই আপনার মনের ভুল। বিশ্বজয়ের আনন্দে এমন ভুল আপনি করতেই পারেন!
আপনার বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপ জিতে গেছে!
২.
বাংলাদেশ যেদিন জেতে, সেদিন নাকি ম্যাচের শুরু থেকেই কেমন ‘জয়,জয়’ একটা ধ্বনি ওঠে। আর কাল যেন, মাঠে বল গড়ানোর আগে থেকেই বাংলাদেশ জয়ী! ক্রিকেটে ব্যাট-বলের লড়াই ছাপিয়েও অনেক সময় মুখ্য চরিত্র হয়ে যায় যে টস নামের ভাগ্যপরীক্ষা, কাল সেই পরীক্ষায় ভাগ্যদেবীর পরিপূর্ণ আনুকূল্যই পেয়েছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার আকাশ গত ক’দিন ধরেই কাঁদছিল বেশ; বৃষ্টির শঙ্কা ছিল ফাইনালের দিনেও। আকবর আলী তাই টসে জিতে যখন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানাবার সুযোগ ছিল সামান্যই।
শুধু টস জিতলেই তো হতো না, সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণের বাধ্যবাধকতাও ছিল। টুর্নামেন্ট-জুড়েই প্রতিপক্ষকে ভুগিয়ে গিয়েছে যে উদ্বোধনী জুটি, ফাইনালের আগ পর্যন্ত খেলা পাঁচ ইনিংসে যে জুটির ব্যাটিং গড় ২১৭! সেই যশস্বী-সাক্সেনা জুটিকে নিয়ে ভয় পাবারও যথেষ্ট কারণ ছিল। কিন্তু এদিনটি যে বাংলাদেশের তা বুঝিয়ে দিতে শরীফুল সময় নিয়েছিলেন ছয়টি বল, যশস্বী জওসওয়ালকে প্রথম ওভারেই দুবার পরাস্ত করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আকবর আলী ভুল করেননি।
৩.
ভুল ছিলেন না আপনিও। শরীফুল-সাকিবের ওরকম নির্ভুল পাওয়ার প্লে বোলিংয়ের মূল্য হিসেবে এরকম হাজার ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা জীবিকা বাদ দিতেও আপনি আপত্তি করবেন না।
শরীফুল আর সাকিবের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতের রানের খাতা খোলে ম্যাচের ১৪ তম বলে। আর এদিকে আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, ফিল্ডিংয়ে নামা এই বাংলাদেশ আপনার অচেনা। একটি রান বাঁচাতে তাদের মরিয়া চেষ্টাটি আপনার অচেনা।
রান আটকে রাখলেও উইকেটটি তুলে নিতে পারেননি শরীফুল-সাকিব। ম্যাচের হাইলাইটসের প্রথম দৃশ্যটাই হয়ে যায় উইকেট। আপনাকে উল্লাসে ভাসিয়ে সাধের উইকেটটিও এনে দেন অভিষেক দাস, বিশ্বকাপে করা তার চতুর্থ বলে। ভারতের রান তখন মোটে ৯।
দশ ওভার শেষে রানটা কষ্টেসৃষ্টে ২০ ছাড়ায়। রানটা খুব বেশি বাড়ে না পরের দশ ওভারেও, ওই ষাট বলে রান আসে মোটে চল্লিশ। অবশ্য উইকেটও তো পড়েনি। জওসওয়ালের সঙ্গে তিলক ভার্মার জুটি জমে উঠতে শুরু করেছে।
৪.
তিলক ভার্মা-যশস্বী জওসওয়ালের জুটিটা পঞ্চাশ পেরোয় ৯১ বলে। জওসওয়ালও পঞ্চাশ পেরোন ২৮ তম ওভারে। পঞ্চাশ পেরিয়ে হাত খুলতে শুরু করেন তিনি। সাকিবের বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কাটিও আসে তার ব্যাটেই, ম্যাচের ২৯ তম ওভারে। আপনি হয়তো বা তখন ব্যস্ত মন্ত্র জপতে, ভারতকে ২৩০ রানের মধ্যে আটকাতে হবে। গত ১৭ ইনিংসে ভারত এই রান পেরিয়ে হারেনি!
আপনার মন্ত্রই হয়তো কাজে আসে। সাকিবের বলে শরীফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিলক। অত বাইরের বল তিলক কেনই বা এক্সট্রা কাভারে তুলে মারলেন, কেনই বা ওখানটায় ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির শরীফুল ফিল্ডিং করছিলেন, জাদুমন্ত্র ছাড়া তার ব্যাখ্যা দেয়া তো অসম্ভব!
৫.
যশস্বী জওসওয়ালের গল্পটা আপনি জানেন! মুম্বাইয়ে মিষ্টির দোকানে কাজ করতে করতে ক্রিকেটার হয়ে ওঠা, সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে লিস্ট-এ-ক্রিকেটে দ্বিশতক হাঁকানোর গল্পগুলো গত কিছুদিনে আপনি অনেকবার পড়েছেন। শরীফুলের গল্পটাও কি জানতেন?
তিলক ভার্মার ক্যাচ ধরে শরীফুল গল্পটা শোনাবার মঞ্চ বানান। অভাবের সংসারে কী করে ক্রিকেটার হবার বিলাসিতা দেখিয়েছিলেন, তার জীবনে কী করে আলমগীর কবির নামের মিরাকল ঘটেছিল, শরীফুল জানিয়ে যান তার পুরোটাই। যশস্বী জওসওয়ালে তার গল্পটা চাপা পড়ে যেতে পারে ভেবেই কি না, ওই কাঁটাটা তুলে নেন শরীফুল নিজেই। শরীফুলের পেসে বিভ্রান্ত হয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে জওসওয়াল ফিরে যান সাজঘরে, ব্যক্তিগত ৮৮ রানে।
শরীফুলের পরের বলটা অন্য যেকোনো সময় আপনার মনে প্রশ্ন জাগাতো। বলটা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়েই যেত কি না, আম্পায়ার ঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে বোধকরি বিতর্কও বাঁধাতেন কোথাও কোথাও! কিন্তু এদিন আম্পায়ার আপনার চোখে দেবদূত হয়ে যান, বলটা সিদ্ধেশ বীরের পায়ে না লাগলে স্ট্যাম্পে লাগতোই, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আপনার চেয়ে বেশি একমত হতে পারেন না আর কেউ!
শরীফুলের ওই দুই বলের আগেই রাকিবুল ফিরিয়েছিলেন প্রিয়ম গার্গকে। পাঁচ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান তখন ১৫৬!
৬.
পচেফস্ট্রুমের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির আভাস আগে থেকেই ছিল। তবে তা যে ঝড়ে রূপ নেবে এমন কিছু জানবার উপায় ছিল না! থাকবে কীভাবে, বাংলাদেশের বোলারদের মন পড়বার কোনো ব্যারোমিটার তো আবিষ্কৃত হয়নি!
রান নিতে গিয়ে দুজন ব্যাটসম্যান একই প্রান্তে চলে এসেছেন, সতীর্থ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে পাল্লা লাগাচ্ছেন নিজের উইকেট বাঁচাতে, এমন দৃশ্য দেখে আপনি এতদিন কেবল হেসেছিলেন। হাসলেন এদিনও, তবে তার চেয়েও বেশি ভাসলেন উচ্ছ্বাসে। ধ্রুব জুরেল ইন্টারনেট সেনসেশন (!) বনে গিয়ে আপনাকে দিয়ে যান আরও একটি উইকেট। ধ্রুবর পথ ধরেন অথর্ব-কার্তিক ত্যাগীর সঙ্গে বাকিরাও। ৩১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ভারত গুটিয়ে যায় ১৭৭ রানে।
২২ তম ওভারে পচেফস্ট্রুমের গ্যালারিতে লাল-সবুজের একটা মিছিল বের হতে দেখে আপনিও তেমন কিছুর স্বপ্ন বুনেছিলেন। ম্যাচের অর্ধেক পেরোনোর পরে আপনার সেই স্বপ্ন ভিত্তি পায় আরও একটু।
৭.
মধ্যবিরতির আধঘণ্টা আপনার সামনে হাজির হয় অনেক সমীকরণ আর সম্ভাবনা নিয়ে। আপনি ভয় পান কার্ত্তিক ত্যাগীর উচ্চতায়, সুশান্ত মিশ্রর পেসে। রবি বিষ্ণোয়ের গুগলি আপনার বুকে কাঁপন ধরায়। কিন্তু স্বপ্ন দেখা কি তাতে থামে?
বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম বলেই কার্ত্তিক ত্যাগী ওয়াইড দিয়ে বুঝিয়ে দেন, স্নায়ুর লড়াইয়ে বল তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। পারভেজ হাসান ইমন আর তানজিদ তামিম দারুণ দুটি শটে আপনাকে জানিয়ে যান, এই ম্যাচ নিয়ে আপনার স্বপ্ন দেখতে কোনো বাধা নেই!
তামিম-ইমন জুটি আপনাকে স্বপ্নের ভেলায় ভাসিয়ে নেন নবম ওভার পর্যন্ত। সুশান্ত মিশ্র-কার্ত্তিক ত্যাগী তাদের গতিতে ভড়কে দিলেও প্রথম পঞ্চাশ আসে পঞ্চাশ বলেই। জয়ের জন্যে আর চাই মোটে ১২৮ রান, হাতে তখনও দশ উইকেট!
তামিম ভুলটা করেন তখনই। তিন বল আগেই বিষ্ণোয়কে উড়িয়ে মারা ছক্কার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে গিয়ে, টাইমিংয়ে গড়বড় করে প্রথম উইকেটটি দিয়ে আসেন বিষ্ণোয়ের সেই ওভারেই। একটা হার্টবিট বোধহয় মিস হয়ে যায়!
৮.
মাহমুদুল হাসান জয় সেমিফাইনালে শতক তুলেছিলেন, তৌহিদ হৃদয় তো যুবদলে আছেন সেই নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকেই। শাহাদাৎ হোসেনও যে রান করতে পারেন, তার প্রমাণ আপনি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেই। এতজন ফর্মে থাকা ক্রিকেটারের দলে ১২৭ রান আপনার চোখে তখনও অতিক্রম্যই মনে হয়!
ফর্মে তো ছিলেন রবি বিষ্ণোয়ও। ফাইনালের আগ অবধি ওভারপ্রতি ৩.৫৮ রান খরচায় যিনি উইকেট নিয়েছিলেন ১৩টি। এরপরেও তার সেরাটা আপনি দেখতে পান ফাইনালের মঞ্চেই। তার বলের জবাব না খুঁজে পেয়ে একে একে সাজঘরের পথ ধরেন জয়, হৃদয় আর শাহাদাত। আপনার ফেসবুকের প্রোফাইলে তখন আরও একবার যোগ হয়, “হলো না!”
৯.
এই “হলো না” শব্দবন্ধ এই নিয়ে আপনার ফেসবুক পাতায় লেখা হলো মোট ৬ বার। প্রথম লিখেছিলেন সেই ২০০৯ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় ফাইনাল হারের আক্ষেপে। এরপরে ২০১২ এশিয়া কাপ গিয়েছে, গিয়েছে ২০১৬ আর ২০১৮ সালের আসর, মাঝে গিয়েছিল নিদাহাস কাপটিও। আপনার আর “জিতলাম” শব্দটি লেখা হয়নি।
এই যুবদলকে নিয়েও একই কথা লিখতে হয়েছিল মাস পাঁচেক আগে। যুব এশিয়া কাপে সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল এই ভারতই! লক্ষ্যমাত্রা তো ছিল এই ফাইনালের চাইতেও কম, মোটে ১০৬!
আরও একবার ‘হলো না’ লিখতে গিয়ে আপনার কষ্ট লেগেছিল, হয়তো বা অন্যবারগুলোর তুলনায় একটু বেশিই। ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ তকমা লাগাবার সুযোগ তো সকাল-বিকাল আসে না!
১০.
আউট না হলেও চোট নিয়ে পারভেজ ইমনও মাঠ ছেড়ে উঠে এসেছেন ততক্ষণে। ১৭ ওভার শেষে স্কোরকার্ড তাই ৬৬-৪ বললেও আপনি দেখতে পান, পাঁচ উইকেট হাতে নিয়ে রান দরকার আরও ১১২!
অধিনায়ক আকবর আলীকে শামীম হোসেন সঙ্গ দেন কিছুক্ষণ। তাকে সঙ্গ নিয়ে আকবর তো ছক্কাও মারেন একটি। ভারতের বোলাররাও অতিরিক্ত নামের রানখাতায় দাগ কাটেন ইচ্ছেমতো। চার উইকেট তুলে নিয়ে রবি বিষ্ণোয় ৬ ওভারের প্রথম স্পেল শেষ করে ফেলেন ততক্ষণে। শামীমের কাছে আপনি চান, যেন তিনি উইকেটে থাকেন, আরও কিছুক্ষণ!
শামীম আপনাকে নিরাশ করেন। তিলক ভার্মার অনুতাপ কমিয়ে আউট হন একই ঢঙে। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও তখন পেরোনো হয়নি।
১১.
অভিষেক দাসের বোলিংটা আপনাকে খুশি করেনি। শরীফুল-সাকিবের পরিকল্পিত বোলিংয়ের পাশে রাখলে তার পিচম্যাপ তো ভীষণ বাজে। অবশ্য বিশ্বকাপে প্রথমবার বোলিং করতে নেমেছেন এই ফাইনালের মঞ্চেই, সাথে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন মহাগুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট, আপনার তাকে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে করে। তবে, একটি শর্তে। ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে হবে!
তিলক ভার্মা সেই শর্তপূরণে তাকে সাহায্য করবেন বলেও রাজি হয়েছিলেন। সুশান্ত মিশ্রর বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়ে তো তা-ই বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু, কারও অনুগ্রহে টিকে থাকতে যেন অভিষেকের প্রবল আপত্তি। পরের বলেই ক্যাচ তুলে দেন আবারও। এবং কার্ত্তিক ত্যাগী তিলক ভার্মা নন!
১২.
অভিষেক দাস উইকেটে থাকতে থাকতেই আপনি দেখেছিলেন, সীমানাদড়ির পাশে প্যাড পরে ইমন তৈরি হচ্ছিলেন। এক ঝটকায় আপনি চলে যান তামিম ইকবালে, চলে গ্রায়েম স্মিথে কিংবা তারও আগের ম্যালকম মার্শালে! ম্যাচটা ইমনের জন্যে হলেও জেতা উচিত, এই সিদ্ধান্তে আপনি পৌঁছে গেছেন ততক্ষণে! তিনি নিজে অবশ্য আপনাকে ভরসা জোগাননি। একে তো আবার ব্যাট করতে নামবেন ইনজুরি নিয়ে, তার ওপর এই বিশ্বকাপটাও তার ভালো যায়নি তেমন! জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ বাদ দিলে বাকি চার ম্যাচে করেছেন মোটে ৬১ রান, উদ্বোধনী জুটির অপরজনের স্ট্রোক প্লের বিপরীতে তিনি যেন ম্যাড়মেড়ে টেস্ট ব্যাটিং!
এদিন অবশ্য ইমন ব্যাট করছিলেন বেশ ভালোই! মাঠ ছাড়বার আগে করেছিলেন ২৫। মাঠে ফিরে যোগ করলেন আরও ২২, আকবর আলীর সঙ্গে গড়লেন ৩৫ রানের জুটি। খোঁড়াতে খোঁড়াতে ইমনের নেয়া রানগুলো আপনাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল হৃদয়ের একেবারে গহীনে! জওসওয়ালের দিকে আপনার বলার অনুপযুক্ত শব্দ বর্ষণও ঠিক তখনই!
১৩.
জওসওয়াল বাংলাদেশকে ভোগাবেন, এ আপনি জানতেন। ব্যাট হাতে তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, তা তিনি ভুগিয়েওছিলেন। টুর্নামেন্টে ঠিক চারশো রান তোলা ব্যাটসম্যান থেকে আপনি তাই আশা করেছিলেন। তবে প্রিয়ম গার্গ তার হাতে বল তুলে দেবেন এবং পারভেজ ইমনও তার করা এক ওয়াইড বলে ক্যাচ তুলে দেবেন, এ ছিল আপনার ভাবনারও ঊর্ধ্বে। এবং জয় থেকে বাংলাদেশ তখনও ৩৫ রান দূরত্বে।
ভারতের ইনিংসের একপর্যায়ে ৪৯ বলে কোনো চার-ছয় আসেনি দেখে আপনি উদ্বেলিত হয়েছিলেন। নিউটনের ৩য় সূত্রকে সত্যি প্রমাণ করে তা এমন প্রতিক্রিয়া নিয়েই আপনার কাছে ফেরত এলো, বাংলাদেশের ইনিংসের ৩১.৩ ওভার হতে ৩৫.২ ওভার অব্দি কোনো রানই এলো না। ৩৬-তম ওভারে আসা চার রানের তিনটিই এসেছিল আবার অতিরিক্ত খাতে, ওয়াইডের সূত্রে।
১৪.
বৃষ্টির সঙ্গে আপনার রোমান্সের স্মৃতিটা খুব সম্ভবত সেই শৈশবের। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল জয়ের স্মৃতিটাও এমন বৃষ্টিস্নাত মুহূর্তেই। বাংলাদেশকে জিততে হলে এই ম্যাচে বৃষ্টির আগমন তাই যেন নিয়তি-নির্ধারিতই ছিল!
পচেফস্ট্রুমের আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছিল বেশ অনেকক্ষণ ধরেই। টেলিভিশন-পর্দায় প্রথমবার যখন ডিএলএস-পার স্কোর দেখানো হয়েছিল, বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল দুই রানে। অমন মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরিতে খেলা হয়েছিল আরও মিনিট বিশেক। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মুষলধারায় রূপ নিয়েছিল তারপরই। আকবর আর রাকিবুলের ব্যাটে ডিএলএস মেথডে বাংলাদেশ ততক্ষণে এগিয়ে গিয়েছে ১৮ রানে।
আপনি এবারে বেশ নিশ্চিত, এই ম্যাচে আর বাংলাদেশ হারছে না। বৃষ্টির সঙ্গে প্রেমটা জমাট আছে এখনও!
১৫.
বৃষ্টিটা বাগড়া দিয়ে যায় আঠারো মিনিটের জন্যে। ১৫ রানের লক্ষ্যমাত্রাটা নেমে আসে ৭ রানে, বাকি থাকা ৫৪ বল থেকে বলও কমে যায় ২৪টি। অবশ্য এই ম্যাচে কখনই- বা ওভারসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছিল!
আকবর আলী সিঙ্গেল নিয়ে দায়িত্বটা দেন রাকিবুলের কাঁধে। টুর্নামেন্ট-জুড়ে বাংলাদেশের বোলিং মশালটা বয়ে নিয়ে চলা রাকিবুল এবারে দায়িত্বটা পালন করেন ব্যাট হাতে। আকবর আলী আর স্ট্রাইক পাননি, রাকিবুল তাকে সে সুযোগ দেননি!
১৬.
কমেন্ট্রি বক্সে আপনি ইয়ান বিশপকে প্রত্যাশা করছিলেন। তা এমন প্রত্যাশা আপনি ওই ‘রিমেম্বার দ্য নেইম’ ধারাভাষ্যের পর থেকেই করেন। এই ম্যাচজয়ের পরেও ইয়ান বিশপ কিছু একটা বলেছিলেন! আপনি অবশ্য ততক্ষণে হারিয়ে গিয়েছিলেন কোন যেন সুখসাগরের অতলে, বিশপ সেই অব্দি পৌঁছুতে পারেননি।
সেই হারিয়ে যাওয়া সুখসাগরে অবশ্য আপনি একাই নন, খুঁজে পেয়েছেন চাঁদপুরের শামীম ফারুকিকে। নিজের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি যিনি বন্ধ রেখেছিলেন এই দিন দেখবার আশাতে। খুঁজে পেয়েছেন সুদীপ্ত দাসকে কিংবা আখিনূর জামান রুশোকে। খুঁজে পেয়েছেন নাম না জানা আরও অনেককে।
শুধুই তো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ট্রফি নয়, বাংলাদেশ যে বিশ্ব জিতেছে!