Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যত দূর যায় দেখা, শুধু মরীচিকা…

‘ভুলটা হলো কোথায়?’

প্রশ্নটা যেকোনো ব্যর্থ টুর্নামেন্ট শেষে সব দলকেই শুনতে হয়। বিশ্বকাপে আট ম্যাচ খেলে জয় এসেছে মাত্র দুটিতে, সেটাও পাপুয়া নিউ গিনি আর ওমানের বিপক্ষে; বিসিবিও বোধহয় বাংলাদেশ দল দেশে ফিরে এই প্রশ্নটাই করবে। কিন্তু অনেক প্রত্যাশার বিশ্বকাপটা যে বেহাল দশায় শেষ করল টাইগাররা, তাতে ‘ঠিক ছিল কোথায়’ প্রশ্নতেই উত্তর খোঁজা সহজ হতো বোধহয়। বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ-মিশনটাই যে ভুলের পর ভুলে ভরা!

ভুলের শুরু বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই। করোনার কারণে আর সব দল যেখানে রিজার্ভ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু খেলোয়াড়কেও বয়ে নিয়ে গিয়েছে বিশ্বকাপে, এমনকি অতিরিক্ত খেলোয়াড় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে স্কটিশ দলের কোচরা ইকোনমি ক্লাসে চড়ে এসেছেন আরব আমিরাতে, সেখানে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে শুরু করেছিল মাত্র একজন রিজার্ভ খেলোয়াড় নিয়ে। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে ওমান নিয়ে গেলেও তাকে ফেরত পাঠানো হয় বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। বিশ্বকাপ চলতে চলতে একে একে ইনজুরিতে পড়লেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নুরুল হাসান সোহান, সাকিব আল হাসান। মাঝের একটা ম্যাচ বাংলাদেশ দলটা হয়ে গেল ১৩ জনের, যার পেছনে নির্বাচক আর ম্যানেজমেন্টের অদূরদর্শিতাই একমাত্র কারণ।

প্রথম ম্যাচেই হার! Image credit: ICC via Getty

অদূরদর্শিতার গল্প কি এখানেই শেষ? বোলিংয়ের মূল দুই ভরসা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আর দুষ্মন্ত চামিরাকে যেখানে বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগেই ডেকে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ সাকিব আল হাসানকে আইপিএল খেলার সুযোগ দিয়েছে বিশ্বকাপ শুরুর এক দিন আগ পর্যন্তও। টানা ক্রিকেট খেলার ক্লান্তি সাকিবকে যে পেয়ে বসেছিল, সেটা পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ম্যাচ-সেরার পুরষ্কার নিতে এসে স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনিও। সর্বশেষ হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ার পেছনেও ওই টানা খেলারই ধকল, বিশ্বকাপ ছেড়ে যেতে হয়েছিল টুর্নামেন্টের মাঝপথেই। আমিরাতের তীব্র গরমে টানা ম্যাচ খেলা মোস্তাফিজুর রহমানকেও ক্লান্ত লেগেছে খুব, যার পরিণতি অনূদিত হয়েছে বাজে বোলিংয়ে। ৭ ম্যাচে ৯.২৫ ইকোনমি রেটে তার ৮ উইকেট শিকারের পরিসংখ্যানও বোধহয় বোঝাতে পারছে না, কী নখদন্তহীন বোলিংই না এই বিশ্বকাপটায় তিনি করেছেন!

টিম ম্যানেজমেন্টের ট্যাকটিক্যাল ভুলগুলোও আসা উচিত আলোচনায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের উদাহরণটাই সামনে আনা যাক! ওই ম্যাচের আগে প্রথম ছয় ওভারে স্লো লেফট-আর্মারদের বিপক্ষে জেসন রয়ের গড় ছিল ২৬.৮। সাকিব আল হাসানকে দিয়ে শুরু করানোর সিদ্ধান্তটা তাই বেশ সাধুবাদই পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম বলটাই অনেকক্ষণ হাওয়ায় ভাসিয়ে চার হজম করলেন সাকিব। আর ক্রিকভিজ বলছে, ৯০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে রয়কে বল করলে তার স্ট্রাইক রেট নামে ১২১-এ, আর এর চেয়ে কম গতিতে করলে স্ট্রাইকরেটটা বেড়ে পৌঁছায় ১৭৭-এ! ম্যাচপূর্ব বিশ্লেষণটা ম্যানেজমেন্ট ঠিকঠাক করতে পেরেছে কি না, প্রশ্নটা তাই উঠছেই।

প্রশ্নটা আরও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনের কারণে। শারজাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে একাদশের বাইরে রাখা হয়েছিল তাসকিন আহমেদকে, অথচ পুরো টুর্নামেন্টে একমাত্র তিনিই আগুন ঝরিয়েছেন বল হাতে; আবুধাবিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে নামা হলো দুই পেসার নিয়ে, রাবাদা-নোর্খিয়ে-তাসকিনের বোলিং দেখে যে সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতা ম্যাচ চলাকালীনই প্রমাণ হয়ে গেছে।

সাকিবকে পাওয়া যায়নি শেষ দুই ম্যাচে। Image credit: ICC via Getty

মাঠের বাইরের এত সব নেতিবাচকতা হয়তো বা আলোচনাই তুলত না, যদি না মাঠে দেখা যেত ইতিবাচক কোনো মুহূর্ত। কিন্তু সেরকম কিছুও দেখা যায়নি মাঠেও।

সমস্যার শুরু ওপেনিং থেকেই। স্কোরকার্ড বলবে, মোহাম্মদ নাঈম দু’টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ওমানের বিপক্ষে তার অর্ধশতকটা ম্যাচজয়ীর মর্যাদাও পেতে পারে অনেকের কাছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার কচ্ছপগতির ইনিংস উপকারের বদলে অপকার করেছে কি না, এই প্রশ্নও অবান্তর নয়। অবশ্য বল টার্ন করে বাইরে গেলে যার স্ট্রাইকরেট নেমে আসে ১০০-র নিচে, ভেতরে ঢুকলেও স্ট্রাইকরেটটা তুলতে পারেন না ১০৩-এর ওপরে, সে হিসেবে ১১০ স্ট্রাইকরেটে ৪৬.৫০ গড়ে ১৭৪ রান করার কারণে তার ‘স্তুতি’ই গাইতে হবে। তিনি তো তা-ও রান করেছেন, বাকি দুই ওপেনার সৌম্য সরকার কিংবা লিটন দাস পারেননি সেটাও। ওপেনিং জুটি পাওয়ারপ্লে’টা নির্ঝঞ্ঝাট পার করতে পারেনি একদিনও। সুপার টুয়েলভে পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে ১৩টা, সংখ্যাটা সব দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ।

এমন নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর কারণেই হোক কিংবা বাংলাদেশের রক্ষণশীল ব্যাটিং করার চিন্তাধারা, পাওয়ারপ্লেতে বলপ্রতি রান তুলতেও বেগ পেতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ অব্দি ইনিংসের প্রথম ছয় ওভারে বাংলাদেশ রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৫.৪১ করে, কেবলমাত্র নামিবিয়া আর পাপুয়া নিউ গিনিকেই পাওয়া যাচ্ছে তার নিচে। অতিরিক্ত ডট বল দেওয়ার প্রবণতা আর ছক্কা হাঁকানোর অক্ষমতাই কারণ হিসেবে সামনে টানতে হয়। সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশি ব্যাটাররা পাওয়ারপ্লেতে ছক্কা হাঁকাতে পারেননি একটিও। ফলাফল: পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৪৫, আফগানিস্তানের সর্বনিম্ন সংগ্রহটাও এগিয়ে থাকছে ২ রানে।

সেই মোস্তাফিজ কোথায়! Image credit: ICC via Getty

শুধু টপ-অর্ডারকে নিয়ে পড়ে থাকা কেন? হতাশ তো পরের দিকের ব্যাটাররাও করেছেন। বিশেষ করে আফিফ তো ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ করেছেন চূড়ান্ত মাত্রায়। টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় ওপরের দিকেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন সুপার টুয়েলভের তিন ম্যাচে, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি একবারও। নুরুল হাসান সোহান বিশ্বকাপ শুরুর আগে ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৫ বলে ৪৯ রানের ক্যামিও খেলে আশা জাগিয়েছিলেন, এবার বোধহয় তার ব্যাটেই ঘুচবে পাওয়ার হিটারের আক্ষেপ। কিন্তু মূল পর্বে এসে ঘুমিয়ে গিয়েছিল তার ব্যাটও। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটও অবশ্য জাগেনি এক পিএনজির বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া, পুরোটা সময় ক্রিজে থেকেও মেলাতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০ বলে ৪৩ রানের সমীকরণ। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ঝড়ো ব্যাটিং করে আলোড়ন তোলা শামীম হোসেন সাকিবের ইনজুরি ছাড়া সুযোগই পেতেন না। আর দুই ম্যাচে ব্যাটে নেমে বুঝিয়েছেন, সাকিব হতে আরও লম্বা পথই পাড়ি দিতে হবে তার।

ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ পড়েছে পাইকারি দরে। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বছরে বাংলাদেশ ক্যাচ ফেলেছে ৪৮টা, বিশ্বকাপে সংখ্যাটা ১০। শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুযোগগুলো হাতছাড়া না করলে বিশ্বকাপ-ভাগ্য বদলাতেও পারত, এমন আক্ষেপের গুঞ্জনধ্বনি শোনা যাচ্ছে ক্রিকেটপাড়ায় কান পাতলেই। অবশ্য ক্যাচ ড্রপে ম্যাচ ড্রপের আফসোসটা নতুন নয় বাংলাদেশের জন্য। ২০১৮ সাল থেকে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করা রায়ান কুককে নিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছিল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও। সে টুর্নামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফসকেছিল বেশ কিছু, রোহিত শর্মা কিংবা ডেভিড ওয়ার্নানের ক্যাচ মিসগুলো তো শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছিল ফল-নির্ধারণীই। দলের হেড কোচ স্টিভ রোডসকে বিদায় করলেও কুক কীভাবে টিকে গিয়েছিলেন, এখন প্রশ্ন উঠছে সেটা নিয়েও।

ক্যাচ ফসকেছে হরদম। Image credit: ICC via Getty

এক বোলিংটাই বোধহয় কিছুটা আশাজাগানিয়া। মেহেদি হাসান কিংবা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দারুণ বল করেছিলেন প্রাথমিক পর্বে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে শরিফুল ইসলামের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংও পাবে প্রশংসা। তবে সবাইকে ছাপিয়ে আপন আলোয় ভাস্বর হয়েছেন তাসকিন আহমেদ। তিনি যে সত্যিই বদলে গিয়েছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছিল গত কয়েক সিরিজেই। ৬ ম্যাচে ৬.৫০ ইকোনমি রেটে ৬ উইকেট, আপাতনিরীহ এই পরিসংখ্যানের সাধ্য কী, বল হাতে তার আগুন বোঝায়!

পুরো বিশ্বকাপ-মিশনে মাঠের খেলায় বাজে পারফরম্যান্সের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মাঠের বাইরের বিতর্কও। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর বোর্ড সভাপতি প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের, সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েই জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলটাকে তিনি রিহ্যাব সেন্টারই মনে করছেন। সাকিব আল হাসানের স্ত্রী আবার বিতর্কে ঘি ঢেলেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপের সময় কে-কোথায় ছিল লিখে। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে এসব বিরূপ মন্তব্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেই ধরে নেওয়া যায়।

এক তাসকিনই আশা দেখিয়েছেন কিছুটা। Image credit: ICC via Getty

সব মিলিয়ে যে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সেমিফাইনালকেই পাখির চোখ করেছিল টাইগাররা, সেটাই সমাপ্ত হয়েছে ‘শেষ হচ্ছে না কেন’ অস্বস্তি জাগিয়ে। শেষ ম্যাচটার পারফরম্যান্সই সবচেয়ে বাজে, টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহেই (৭৩) থেমে যেতে হয়েছে সেদিন। ১০০’র নিচে থামতে হয়েছিল অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ম্যাচেও। যার মানেটা দাঁড়াচ্ছে, প্রথমে ব্যাট করে একশ’র কমে যে পাঁচটা সংগ্রহ দেখেছে এবারের বিশ্বকাপ, তার দুটোই লিখেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপটা খারাপ গিয়েছে শ্রীলঙ্কারও, সেমির স্বপ্ন ভণ্ডুল হয়েছে সুপার টুয়েলভ শেষ হওয়ারও দিনছয়েক আগে। তবুও দল নিয়ে শ্রীলঙ্কানদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না বিশ্লেষকরা। জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারা-দিলশানের বিদায়ের পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল মাঝে, সেটা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে চারিথ আসালাঙ্কা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুষ্মন্ত চামিরা কিংবা পাথুম নিশাঙ্কাদের দিয়ে। দারুণ সব পারফরম্যান্স তারা দেখিয়ে গিয়েছেন এই বিশ্বকাপে, তাদের ঘিরে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন শ্রীলঙ্কা তাই দেখতেই পারে।

কিন্তু বাংলাদেশকে ঘিরে কি তেমন কিছুর আশাও করা যাচ্ছে? বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটাই তো টি-টোয়েন্টিসুলভ নয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে যেমন জানা যাচ্ছে, বিশ্বকাপ দলে থাকা এক ক্রিকেটার বলছেন,

‘আমি বাংলাদেশে ১১০-১২০ স্ট্রাইকরেটে খেলতে পারলেই হলো। এখানে এটাই চলে।’

লিটন দাস অধ্যায় কি এখানেই শেষ? Image credit: ICC via Getty

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাই সেরা বিবেচিত হন সাকিব আল হাসান (১২০), মাহমুদউল্লাহ (১১৯), মুশফিকুর রহিম (১১৫) ও তামিম ইকবালরাই (১১৬)৷ কিন্তু এই ব্যাটিংকে তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট পরিত্যাজ্য ঘোষণা করে এসেছে বছর পাঁচেক আগেই!

দলে আসা তরুণদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে ছুড়ে ফেলার কথা ছিল এসব প্রস্তরযুগের ক্রিকেটকে। কিন্তু তারাও পড়ে গেছেন ওই দুষ্টচক্রেরই আবর্তে! ২০১৯ সাল পর্যন্তও লিটন দাসের স্ট্রাইক রেট ছিল প্রায় ১৪০ ছুঁইছুঁই, সেটাই এখন কমে পৌঁছেছে ১২২-এ। এমন ১২০-এর ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছেন সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন ধ্রুব, নাঈম শেখরাও।

স্ট্রাইকরেটের এই পড়তি দশার কারণ তো মিরপুরের উইকেটও। ঘরের মাঠে ব্যাটারদের জন্য নাভিঃশ্বাস তোলা উইকেট বানিয়ে জেতার পড়িমরি চেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছে গত অস্ট্রেলিয়া আর নিউ জিল্যান্ড সিরিজে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তখন বলেছিলেন, জয়ের অভ্যাসটাই আসল। ভালো উইকেটে গেলে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হবে না তার ব্যাটারদের। কিন্তু তিনি যেন ভুলে গিয়েছিলেন ওই সত্যটাই, শুধু জয়ের জন্য নয়, ভালো ব্যাটিংয়ের জন্যেও অনুশীলন চাই।

অনুশীলন তো চাই কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষেও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটারদের লম্ফঝম্প দেখে ক্রিকভিজ জানিয়েছে, উচ্চগতির বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং গড় মাত্র ৯! লেগ স্পিনের বিপক্ষে ব্যাটারদের সংগ্রাম তো দেখা যায় খালি চোখেই। সব দল যেখানে রিস্ট স্পিনার আর রহস্য স্পিনারের দিকে ঝুঁকছে, বাংলাদেশ দলের ত্রিসীমাতেও দেখা যাচ্ছে না সম্ভাবনাময় কাউকে।

আরও একটা ফ্লপ বিশ্বকাপ কাটিয়ে বাংলাদেশের সাততাড়াতাড়ি সমাধান খোঁজা উচিত এসব সমস্যার। কিন্তু সমস্যার গোড়ায় না যাওয়ার যে সংস্কৃতি চালু আছে এ দেশে, তাতে চন্দ্রবিন্দুর গাওয়া ওই লাইনটাই আওড়াতে হচ্ছে,

‘পথ আঁকাবাঁকা, যত দূর যায় দেখা; শুধু মরীচিকা…’

This article is in Bangla language. This article is on Bangladesh's 2021 T-20 world cup journey. Necessary hyperlinks and images are attached inside.

Featured image © Reuters

Related Articles