Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাডবয় খ্যাত ফুটবলার জোয়ি বার্টনের যত ‘ব্যাড’ কাহিনী

জোসেফ এন্থনি বার্টন। ফুটবলার হিসেবে জোয়ি বার্টন নামেই পরিচিত। তবে যতটা না ফুটবলার হিসেবে পরিচিত তার চেয়ে বেশি সংবাদপত্রের শিরোনাম হতেন মাঠে কিংবা মাঠের বাইরের বিতর্কিত সব কর্মকান্ডের জন্য।

ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটি, নিউক্যাসেল, মার্শেই এর মতো ক্লাবে। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অল্পতেই মেজাজ হারানো আর বিতর্কিত কাজের জন্য নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি এই ইংলিশ ফুটবলার। মাঠের বাইরের কর্মকান্ডের জন্য ইংল্যান্ডের হয়েও মাত্র একবার জার্সি জড়ানোর সুযোগ পান জোয়ি বার্টন। ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক এই ইংলিশ মিডফিল্ডার ক্লাব ক্যারিয়ারে ৩৮৬ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৩৩টি। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলেন ১৩০টি ম্যাচ। পরে খেলেন আরো ছয়টি ক্লাবে। তবে ফুটবলার হিসেবে তেমন সুনাম কুড়াতে পারেননি কখনো। বরং লাইমলাইটে থাকতেন বেপরোয়া কাজকারবারের জন্য। চলুন দেখে আসা যাক অখ্যাত এই ফুটবলারের যতসব কুখ্যাত কাজ।

রেঞ্জার্সের হয়ে খেলার একটি মুহূর্তে বার্টন; Source: Sky News

সতীর্থের চোখে সিগারেট

ম্যানচেস্টার সিটিতে থাকাকালীন সময়ে ক্রিসমাস পার্টিতে এই কান্ড ঘটান বার্টন। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করা হয়। সিটির তরুণ খেলোয়াড় জেমি টেন্ডি প্র্যাংক করার জন্য বার্টনের শার্টে লাইটার দিয়ে আগুন ধরান। কিন্তু পুরো ব্যাপারটিকে নেতিবাচকভাবে নিয়ে সতীর্থ জেমি টেন্ডির চোখে সিগারেট চেপে ধরেন জোয়ি, যার জন্য ক্লাব থেকে ছয় সপ্তাহ বেতনের অর্থ জরিমানা গুণতে হয় বার্টনকে। সে বছরের বাকি সময়ের জন্য নিষিদ্ধও হন তিনি। দুই মাস পর টেন্ডি বার্টনকে আদালতে অভিযুক্ত করে মামলা করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে টেন্ডিকে ৬৫ হাজার ইউরো দিতে বাধ্য হন ব্যাডবয় খ্যাত এই ফুটবলার।

টিম হোটেলে মারামারি

২০০৫ এর জুলাইয়ে প্রি-সিজন ট্যুর খেলতে থাইল্যান্ড যায় ম্যানচেস্টার সিটি। ব্যাংককের একটি হোটেলে অবস্থানকালে ১৫ বছর বয়সী এক এভারটন ফ্যানকে মারধর করেন বার্টন। পরবর্তীতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আট সপ্তাহের বেতন জরিমানা হিসেবে দিতে হয় বার্টনকে।

দর্শকদের পশ্চাদ্দেশ দেখানো

২০০৬ সালে গুডিসন পার্কে অনুষ্ঠিত ম্যানচেস্টার সিটি বনাম এভারটন ম্যাচ শেষে এই কান্ড করে বসেন জোয়ি বার্টন। ১ – ১ সমতায় ম্যাচটি শেষ হলে মাঠ ত্যাগ করার ঠিক আগমুহূর্তে নিজের শর্টস নামিয়ে এভারটন সমর্থকদের উদ্দেশ্যে পশ্চাদ্দেশ দেখান বার্টন। এর জন্য বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা গুণতে হয় এই ফুটবলারকে। পুলিশ ব্যাপারটি নিয়ে তদন্ত করলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সতীর্থের সাথে মারামারি

ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে ম্যানচেস্টার সিটি টিমমেট ওসমান দাবুর সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান। মারামারির ফলে ওসমানকে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়। চোখের রেটিনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মারামারি আর বিশৃঙ্খলার অভিযোগে আদালতে যেতে হয় বার্টনকে। ২০০৮ সালে ১ জুলাই শুনানি শেষে চার মাসের জন্য জেল হয় এই মারদাঙ্গা ফুটবলারের। এফএ কতৃপক্ষ হতে বার্টনকে ২৫ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়।

সতীর্থ ওসমানের সাথে মারামারি করায় পুলিশের কাঠগড়ায় বার্টন; Source: Eurosport

দ্বিতীয় দফায় জেল

লিভারপুলের চার্চ স্ট্রিটে মারামারি করায় দ্বিতীয় দফায় আবার জেল খাটতে হয় বার্টনকে। ২০০৮ সামের মে মাসে চার্চ স্ট্রিটে এক লোককে মুখের উপর প্রায় ২০টি ঘুষি মেরে তাকে অচেতন করে ফেলেন। সাথে এক টিনএজারের দাঁত ভেঙে দেন। এ কাজের জন্য তাকে ৭৭ দিন জেল খাটতে হয়। পরে জুলাইয়ের ২৮ তারিখে জেল থেকে ছাড়া পান।

লিভারপুলে দাঙ্গার জন্য কোর্টে জোয়ি বার্টন; Source: Getty Image

মাঠের মারামারি

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাঠে অল্পতে মেজাজ হারানোর জন্য প্রায়শই লাল কার্ড ও নিষেধাজ্ঞার স্বীকার হতেন। জাবি এলোন্সোকে ইচ্ছাকৃতভাবে করা জঘন্য ফাউলের জন্য দেখেন ক্যারিয়ারের প্রথম লালকার্ড। নিজ ম্যানেজার এলান শিয়েরারও ট্যাকলটিকে জঘন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিউপিআর-এ থাকাকালীন অবস্থায় মাঠের মধ্যেই সাবেক সিটি সতীর্থদের সাথে মারামারি করেন বার্টন। কার্লোস তেভেজকে কনুই দিয়ে ফেলে দেয়ার পর কিক করেন আরেক আর্জেন্টাইন সার্জিও আগুয়েরোকে। তাকে থামাতে কোম্পানি এগিয়ে এলে তাকেও মাথা দিয়ে ঢুস দিতে উদ্যত হন। রেফারী সরাসরি লালকার্ড দিয়ে বের করে দেন বার্টনকে। পরবর্তীতে প্রিমিয়ার লীগ কতৃপক্ষ ১২ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেন জোয়ি বার্টনকে। পাশাপাশি ৭৫ হাজার ইউরো জরিমানাও গুণতে হয় তাকে। এছাড়া ওই সিজনেই নরউইচ সিটির ব্র্যাডলি জনসনকে ধাক্কা মেরে ম্যাচ থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।

ম্যানচেস্টার সিটির সাথে ম্যাচে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বার্টন; Source: Telegraph.co.uk

টুইটার এটাক

টুইটারে এলান শিয়ারার, গ্যারি লিনেকারের মতো ফুটবলারকে আক্রমণ করা ছাড়াও নিজের ক্লাব নিয়েও বাজে মন্তব্য করেন এই ফুটবলার। নিউক্যাসেলে থাকাকালীন সময়ে ২০১১ সালে টুইটারে সমালোচনার পাশাপাশি বাজে মন্তব্য করেন তিনি। বিরক্ত হয়ে যেন ক্লাব কতৃপক্ষ বার্টনকে ফ্রি ট্রান্সফার করে দেয়, সেটিই ছিল উদ্দেশ্য। সে বছর ফ্রি ট্রান্সফারে কিউপিআরএ যোগ দেন এই বিতর্কিত ফুটবলার। সিটির সাথে লাল কার্ড প্রসঙ্গে এলান শিয়ারার বার্টনকে নিয়ে মন্তব্য করলে তা ঠিকভাবে নিতে পারেননি তিনি। যার ফলস্বরূপ টুইটারে আক্রমণ করে বসেন শিয়ারারকে। অনেকগুলো বাজে নামে অভিহিত করেন এই কৃতি ফুটবলারকে, যিনি নিউক্যাসেলে থাকাকালীন অবস্থায় বার্টনের কোচ ছিলেন। কিছুদিন পর আরেকটি টুইট করে গ্যারি লিনেকারকেও আক্রমণ করেন তিনি।

নাইট ক্লাবে হাতাহাতি

লিভারপুলের একটি সমকামী নাইটক্লাবে হাতাহাতি করে আরো একটি বিতর্কের জন্ম দেন বার্টন। ২০১২ সালে এই ঘটনার জন্য মার্সিসাইড পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। সমকামী নাইটক্লাবে আসা দুইম লোক বার্টনকে উদ্দেশ্য করে কিছু বাজে মন্তব্য করে এবং বার্টনের মুখে পাঞ্চ করায় তাদের সাথে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন এই ফুটবলার। এজন্য অবশ্য বার্টনকে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়।

কিউপিআরের হয়ে খেলার সময় রেফারী লাল কার্ড দেখাচ্ছেন বার্টনকে; Source: Youtube

বিতর্কিত মন্তব্য

বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যও আলোচিত সমালোচিত ছিলেন এই ফুটবলার। সম্প্রতি নেইমারকে নিয়েও এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। নেইমারকে তিনি জাস্টিন বিবারের সাথে তুলনা করে বলেন নেইমার হচ্ছে বিবারের মতো ইউটিউব কিড। সুয়ারেজের কর্মকাণ্ডে সুয়ারেজের পক্ষ নিয়ে কথা বলেও সমালোচিত হন তিনি। বার্টন বলেন, মানুষের অভিব্যাক্তিগুলো এমন মনে হয় যেন সে (সুয়ারেজ) কাউকে খেয়ে ফেলেছে। এরকম মন্তব্য করে সবার রোষানলেও পড়েন তিনি।

ইংলিশ লিগে খেলার সময় নিজেকে প্রিমিয়ার লীগের বেস্ট মিডফিল্ডার বলে মন্তব্য করেন। তার ভাষ্যমতে তৎকালীন সময়ে লুকা মড্রিচ আর সামির নাসরি তার কাছাকাছি পর্যায়ের আর জেরার্ড অনেক ইঞ্জুরিপ্রবণ। তাই তিনিই সেরা মিডফিল্ডার। পলিটিকাল পার্টি ইউকেআইপি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। মিডিয়া এটিকে লিঙ্গবৈষম্যযুক্ত মন্তব্য বলে অভিহিত করে। পরে অবশ্য বার্টন তার করা মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। ফার্নান্দো তোরেসকে ১৪ বছরের মেয়ের সাথেও তুলনা করে সমালোচিত হন বার্টন।

আর্সেনালের জেরভিনহোর সাথে হাতাহাতিতে বার্টন; Source: The Sun

সর্বশেষ, এখন জোয়ি বার্টন ফুটবল থেকে দেড় বছরের জন্য নিষিদ্ধ। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি রেঞ্জার্স থেকে সাবেক ক্লাব বার্নলিতে ফেরেন এই ফুটবলার। কিন্তু ২৬ এপ্রিল বার্টন ১৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা পান। ফিক্সিং আর বেটিংয়ের সাথে জড়িত থাকার কথা নিজেই স্বীকার করে এই নিষেধাজ্ঞা পান তিনি। ২৩ মে বার্নলি জোয়ি বার্টনকে রিলিজ করে দেয়। পরবর্তীতে আপিলের মাধ্যমে বার্টনের নিষেধাজ্ঞা পাঁচ মাস কমানো হয়।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ডের মালিক জোয়ি বার্টন অনেকের মতে ফুটবলের সবচেয়ে ঘৃণিত খেলোয়াড়। নিষেধাজ্ঞা শেষ করে ফিরতে ফিরতে ততদিনে বার্টনের বয়স হবে ৩৭। ফুটবলার হিসেবে যে ফেরা হবে না তা বলেই দেওয়া যায়। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই বুটজোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দেবেন ফুটবলের এই ব্যাডবয়। তাতে হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলবেন ফুটবলার আর ফুটবলবোদ্ধারা।

This Bangla article is about Joey barton, a footballer who is infamous for fighting in the ground. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image : Wall Devil

Related Articles