প্রত্যেক পিতামাতার আকাঙ্ক্ষা থাকে সন্তানের কাছাকাছি থাকতে চাওয়ার। এজন্য অনেক সময় তাদের বেশ কিছু ত্যাগও স্বীকার করে নিতে হয়। সন্তানদের ভালোর জন্য বাবা-মারা এটি হাসিমুখে মেনে নেন।
চেলসির সাবেক বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে লোনে থাকার সময় সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন মার্তা ডমিঙ্গেজের সাথে। ২০১৫ সালে তাদের ঘর আলো করে আসে তাদের প্রথম মেয়ে সন্তান আদ্রিয়ানা। এরপর ২০১৭ সালে জন্ম নেয় তাদের ছেলে নিকোলাস। কিন্তু ততদিনে এই সম্পর্কের ইতি টেনে নিয়েছেন দু’জনই। আলাদা হয়ে যাওয়ার পর মা’র কাছেই বড় হতে থাকে ছেলেমেয়ে। বাবা তখন থাকেন স্পেন থেকে বহু দূরে, ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে সমসময় সন্তানদের কাছেই।
২০১৮ বিশ্বকাপের পর এরই জেরে চেলসির সম্পর্ক খারাপ হয় তিন মৌসুম ধরে মূল গোলরক্ষক থাকা কোর্তোয়ার সাথে। কোর্তোয়া তখন সদ্য ২০১৮ বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসের বিজয়ী। চুক্তির শেষ বছরে এসে তিনি তার ছোটবেলার স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এর কারণ দু’টি; এক, ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করা। দুই, ছেলেমেয়েদের কাছাকাছি থাকা। রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার এই ইচ্ছা থেকেই কোর্তোয়া ২০১৮ বিশ্বকাপের পর প্রাক-মৌসুম ক্যাম্পে দলের সাথে অনেক দেরিতে যোগ দেন। কারণ অনুসন্ধানে তার এজেন্টের মাধ্যমে জানা যায় তার রিয়ালে যাওয়ার এই ইচ্ছার কথা। চেলসি কোর্তোয়াকে রিয়ালে যেতে দেয়ার ব্যাপারে কোনোভাবেই রাজি ছিল না। তবে চেলসি শর্ত জুড়ে দেয় যে যদি তারা কোর্তোয়ার যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট পায়, তবেই তাকে যেতে দেবে। তখন তাদের বেঞ্চে ছিলেন শুধু উইলি কাবায়েরো। বাজারে হাতের নাগালে সহজপ্রাপ্য গোলরক্ষকও ছিল কম, যারা কোর্তোয়ার অভাব পূরণে সক্ষম। তবে এরপর একরকম জোর করেই ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট ৬ বছরের চুক্তিতে কোর্তোয়া যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। তখন বাজারে আর কাউকে না পেয়ে চেলসি দলবদলের শেষ দিনের মাত্র ৩ দিন আগে রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে এথলেটিক বিলবাও থেকে কেপা আরিজাবালাগাকে নিয়ে আসে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে।
চেলসি তাদের এই নতুন গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগার জন্য অ্যাথলেটিক বিলবাওকে পরিশোধ করে প্রায় ৭১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড। এই ট্রান্সফারের মাধ্যমে ২৩ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ গোলরক্ষক হয়ে যান ইতিহাসের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষক। মাত্র এক সপ্তাহ আগে হওয়া লিভারপুলের রেকর্ড সাইনিং অ্যালিসনের রেকর্ড ভাঙেন তিনি। তবে যে আশায় তাকে চেলসিতে নিয়ে আসা হয়, তা এখনো অধরাই রয়ে গিয়েছে চেলসির জন্য।
চেলসিতে কেপার বর্তমানে চতুর্থ মৌসুম চললেও তিনি এখন সেখানের দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক। গত দুই মৌসুমে লিগে মাত্র ৮টি ম্যাচ খেলা আকাশছোঁয়া বেতনের কেপা ইতোমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছেন তার সুনামটুকু। কেপার ফর্মের এই নিম্নগামিতার জন্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তার ট্রান্সফার ফি, বান্ধবীর সাথে সম্পর্কের অবনতি, কোচের সাথে মলোমালিন্য ইত্যাদি।
একজন তরুণ গোলরক্ষকের জন্য চেলসি কেন এত টাকা খরচ করল? এই দামটা কি কেপার পারফরম্যান্সের সাথে আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, নাকি স্রেফ ‘প্যানিক বাই’?
প্রথম সারির লিগে খেলছেন মাত্র ২ বছর হলো, খুবই সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল দলে পা দিয়েছেন। আর এরই মধ্যে কেপার জন্য এই বিশাল প্রাইজট্যাগ। খুব স্বাভাবিকভাবেই যেটা হয়ে দাঁড়ায় খুবই ভারী। সেই সাথে তাকে এমন একটি জায়গায় আনা হয়েছিল, যেখানে আগে তার পূর্বসূরী ছিলেন থিবো কোর্তোয়া ও পিওতর চেকের মতো নামজাদা গোলরক্ষকরা। যেই জুতোটায় পা গলাতে হয়েছিল, সেটা খুব একটা যে সহজ ছিল না, বলাই বাহুল্য।
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে কিন্তু তার সূচনাটা খুবই ভাল হয়েছিল। নতুন দায়িত্ব পাওয়া কোচ মাউরিজিও সারির দলে জায়গা দখল করে নেন তার রিফ্লেক্স, পাসিং, বল কন্ট্রোল ও ডিস্ট্রিবিউশন দক্ষতা দিয়ে। একটু বেশি দামে কেনা হলেও সারির সিস্টেমের জন্য তখন অব্দি সেরা ছিলেন কেপা। কিন্তু আস্তে আস্তে তার বেশ কিছু দুর্বলতা বেরিয়ে আসে।
ওই মৌসুমে চেলসি লিগে তৃতীয় হয়, সাথে জেতে উয়েফা ইউরোপা লিগ। লিগে কিছু খেলায় কেপার পারফরম্যান্স ছিল খুবই বাজে। সেই সাথে ম্যানচেস্টার সিটির সাথে কারাবাও কাপের ফাইনালে কোচ মাউরিজিও সারির সাথে মাঠেই ঝামেলা হয় কেপার। টাইব্রেকারের আগে টাইব্রেকার বিশেষজ্ঞ গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরোকে সারি নামাতে চাইলেও কেপা মাঠ থেকে উঠে যেতে রাজি হননি। তাদের এই ঝামেলায় খেলা বন্ধও থাকে বেশ কিছু সময়। এই ধরনের ‘টুকটাক’ ঝামেলা বাদ দিলে গোলবারের নিচে সেই মৌসুমে কেপার পারফরম্যান্সকে সন্তোষজনকই বলা যায়।
তাহলে ঝামেলা ছিল কোথায়?
ওই মৌসুমে লিগে কেপার গোল ফেরানোর শতকরা পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৭.৫%, তুলনামূলক বিচারে গেলে যেটা অন্যদের তুলনায় ছিল অনেক কম। PSxG-GA (পোস্ট-শট এক্সপেক্টেড গোল) ছিল ঋণাত্মক (-০.০৫), যেখানে আর্সেনালের পিটার চেকের ছিল +০.৩২। এই হিসেবটা পরিষ্কারভাবেই বুঝিয়ে দেয় গোলরক্ষক হিসেবে কেপার দক্ষতার খামতিটুকু। এছাড়া বেশ কিছু গোল ছিল, যেগুলো খুব হাস্যকরভাবে তাকে হজম করতে হয়েছিল। তার দিকে নেওয়া শটের সাথে গোল হজমের অনুপাতটা এমনভাবে বাড়ছিল যে কেপাকে নিয়ে সমস্যাটা একদম সামনে চলে আসে। সেভের সময় তার শরীরের ওজন বন্টন এবং টাইমিংয়ের গণ্ডগোল তাকে ও তার দলকে খুবই ভোগাচ্ছিল। তার সেভগুলোর সময় একটি প্রকট সমস্যা ছিল যে সেভের আগে তিনি তার হাত দুটি শরীরের পেছনে ঘুরিয়ে এরপর সামনে আনতেন। এটি তার সহজাত প্রবৃত্তিই বলা চলে। এই জিনিসটা ভরবেগ তৈরি করে বলের গতির বিরুদ্ধে কাজ করত, এতে বল ফেরানোয় সুবিধা হতো বটে, তবে তাতে যে বাড়তি কয়েক মুহূর্ত সময় লাগত, তাতেই টাইমিংয়ে গড়বড় হয়ে যেত। দূর থেকে নেয়া শটগুলো এইভাবে ভালমতোই ফেরানো যেত, কিন্তু কাছে থেকে নেয়া শট, ট্যাপ-ইন, কিংবা হেডের মতো প্রচেষ্টাগুলোর ক্ষেত্রে হাত এত বেশি ঘুরিয়ে আনার পর পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যেত না বল আটকানোর জন্য। আর ইপিএলের ক্ষিপ্রগতির ফুটবলে এরকম বল আসতে শুরু করল অহরহ। এই ‘দুর্বল কবজি’র সুবাদে টাইব্রেকারে গোল খান সার্জিও আগুয়েরো এবং ওরিগির কাছে।
এরপর সমস্যা দেখা গেল ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান পরিস্থিতে তার পজিশনিং নিয়ে। এমনিতেও পজিশনিং ভাল হচ্ছিল না। উইং থেকে কাটব্যাক করা পাসগুলো থেকে গোল হয়ে যাচ্ছিল তার বলের গতিবিধি না বুঝতে পারায়। এরপর যখন তিনি কোনো খেলোয়াড়ের সাথে এককভাবে গোলের মুখোমুখি হন, তখন সেখানে দেখা যায় নিজের সাথেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এরূপ পরিস্থিতিতে একজন গোলরক্ষক হয় নিজের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, কিংবা লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে এসে আক্রমণ করে বল ফিরিয়ে দেন। কিন্তু কেপার মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যায় এই নিয়ে। তিনি আগাবেন না পিছাবেন, এই করতে করতেই গোল হজম করা শেষ। আর্সেনালের বিপক্ষে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলির কাছে এমন একটি গোল খান যেখানে লাইন ছেড়ে অর্ধেক পথ এসে তিনি দাঁড়িয়ে যান।
২০১৮-১৯ মৌসুমে কেপার PSxG-GA যেখানে ছিল -০.০৫, সেটাই ২০১৯-২০ মৌসুমে আরো কমে দাঁড়ালো -০.২৯ এ। এই সমস্যার জন্য ওই মৌসুমে তাকে বেশ কয়েকবার একাদশে জায়গা হারাতে হয় ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে থাকা উইলি কাবায়েরোর কাছে। এফএ কাপের ফাইনালসহ পুরো প্রতিযোগিতায়ই চেলসির গোলবারের নিচে ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। এছাড়া ওই মৌসুমেও তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিকটু গোলও খেয়েছিলেন।
কেপার দুর্বলতা আবার ফুটে ওঠে রক্ষণ লাইনের পেছন থেকে তার নির্দেশনা দেয়ার দুর্বলতা আর আক্রমণাত্মক শরীরি ভাষায়। কেপার উচ্চতা ১.৮৬ মিটার, যেটা গড়পড়তা একজন প্রিমিয়ার লিগ গোলরক্ষকের থেকে কম। আর্সেনালের লেনোর উচ্চতা ১.৯ মিটার, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডি হেয়ার উচ্চতা ১.৯২ মিটার, লিভারপুলের আলিসনের উচ্চতা ১.৯২ মিটার, ম্যানচেস্টার সিটির এডারসনের উচ্চতা ১.৮৮ মিটার। সেই সাথে চেলসিতে তার দুই পূর্বসূরি কোর্তোয়া ও চেকের উচ্চতা ছিল যথাক্রমে ২ মিটার ও ১.৯৬ মিটার। আপাতদৃষ্টিতে সেটা খুব একটা কম মনে না হলেও হালকা-পাতলা গড়নের কেপাকে গোলবারের নিচে খুবই ভঙ্গুর মনে হতো।
তবে সমস্যা যে শুধু কেপার মধ্যেই ছিল, তা-ও নয়। কেপা এর আগের তিন মৌসুমে দু’জন কোচের অধীনে খেলেছেন। একজন মাউরিজিও সারি, যার পুরো সময় কেটেছে চেলসির ফ্যানদের সাথে কিছু ঝামেলা আর জোর করে ক্লাবে নিজের স্টাইল প্রবেশ করানোর চেষ্টায়। তার পরবর্তীতে ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের অধীনে চেলসির রক্ষণের সমস্যাগুলো আরো জঘন্যভাবে উঠে আসে। কাউন্টার অ্যাটাক ঠেকানোয় ব্যর্থতা, সেটপিস থেকে গোল খাওয়ার মতো কারণে বেশ কিছু খেলায় পয়েন্ট হারায় তারা। ২০১৯-২০ মৌসুমের মোট কর্নারের ৮.২% থেকেই তারা গোল খেয়েছিল, যেটি সেই মৌসুমের অন্যান্য ইংলিশ দলগুলার চাইতে প্রায় দ্বিগুণ। এখন এই দোষটা কি শুধুই কেপার একার? অবশ্যই নয়। তবে পুরোপুরি দায় এড়ানোও সম্ভব নয়। তার সামনে যারা ছিল, তারাও পারেননি তার দিকে নেয়া শটের সংখ্যা কমাতে। এমনকি কেপার কোচরাও এর সমাধান দিতে পারেননি। আবার তাকে ঐ মৌসুমে যে পরিমাণ সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তাতে এরকম ভঙ্গুর গোলরক্ষকের কাছ থেকে আরো বেশি ভুল পাওয়া স্বাভাবিক ছিল।
উপরের এই ছবিতে পর পর তিন বছরে তার স্ট্যাট দেয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিলবাওয়ে থাকাকালেও তিনি একজন ভাল শট-স্টপার ছিলেন না। কিন্তু গোলমুখে কম শটের মুখোমুখি হওয়ার তার পরিসংখ্যান মোটামুটি ভালোই ছিল। চেলসিতে আসার আগের মৌসুমেই গুঞ্জন উঠেছিল ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তার রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার। কিন্তু জিদান শুরুতেই এই ট্রান্সফারটি আটকে দেন।
বিলবাও থেকে চেলসিতে যাওয়ার পর তার শট সেভ করার শতকরা হার আরো কমে যায়। লা লিগার থেকে ইপিএল শটের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকভাবেই বেশি। কিন্তু সেটা যে এত বেশি হবে, তা হয়তো কেপা নিজেও কল্পনা করেননি। লা লিগায় কেপার একটা বিশেষত্ব ছিল যে লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে এসে ক্রস আটকে দেয়া, কর্নার থেকে বল সরাসরি পাঞ্চ বা গ্রিপ করা। চেলসিতে এসে অধঃপতন হলো এরও; এমনভাবে ক্রসের সময় দাঁড়িয়ে থাকেন যেন পায়ে লোহার বেড়ি পড়া। বিলবাওতে যেখানে কর্নার থেকে গোল হজম করেন খুব কম, সেখানে ইপিএলে ল্যাম্পার্ডের প্রথম মৌসুমে একটা বড় অংশ হজম করেন শুধু কর্নার থেকেই। এভাবে লাইন ছেড়ে না বের হয়ে নিউক্যাসলের সাথে ফ্রি-কিক থেকেও একটি সহজ গোল খেয়ে বসেন, যেখানে তিনি চাইলেই বলটি আগেই ক্লিয়ার করে দিতে পারতেন। ক্রস, কাটব্যাক কোনো কিছুই তার পক্ষে সেভাবে আটকানো সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য গোলমুখের শটের পরিমাণও বেড়ে যায়। আর পজিশনিংয়ে ভুল করে গোলের পথও সহজ করে দেন অনেকসময়।
আবার ফিরে যাই আর্সেনালের সাথে সেই ২০২০ সালের জানুয়ারির খেলায়। একদম শেষ মুহূর্তে হেক্টর বেলেরিন কাট ইন করে যে গোলটি করেছিলেন তা যদি কেপা পেছনের দিকে ডাইভ না দিয়ে সামনের দিকে ডাইভ দিতেন তাহলে তা অবশ্যই ফেরানো যেত। কিন্তু এইখানে কেপার সহজাত প্রবৃত্তিই হচ্ছে এভাবে পেছনের দিকে ডাইভ দেয়া। এটিও তার আরেক দুর্বলতা যা সে সময় ধরা পড়ে।
কথা হলো, চেলসি তাহলে কী দেখে কেপাকে কিনেছিল? খেয়াল করবেন কেপার বল ডিস্ট্রিবিউশন আর পাসিং মোটামুটি অনেক ভাল। তিনজনের ডিফেন্সে এখন গোলরক্ষক নিজে আরেকজন ডিফেন্ডারের ভূমিকা পালন করে নিজেদের মধ্যে দেয়ানেয়া করে। সে জন্য চেলসির সিস্টেমে একজন বল প্লেয়িং গোলরক্ষকের খুব দরকার ছিল। দ্বিতীয়ত, কম শটের মুখোমুখি হওয়ার শট সেভের হার চেলসির সময়কালের মতো এত বাজে ছিল না। তৃতীয়ত, কেপার যে বিশেষত্ব ছিল লাইন থেকে বেড়িয়ে এসে ক্রস আটকে দেয়ার, সেটি ইপিএলে ক্রসনির্ভর দলগুলোর বিরুদ্ধে খুব কার্যকর ভাবা হয়েছিল।
‘কেপা’ সমস্যার সমাধানে চেলসি যা করেছে, তা হলো সরাসরি তার রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে আসা। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তারা দলে ভেরায় সেনেগালের এদুয়ার্দো মেন্ডিকে। নতুন দলে এসেই দক্ষতা আর পেছন থেকে দারুণ নির্দেশনা দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়ে দলে তার জায়গাটি পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন তিনি। সেই সাথে তার এক বছরের পারফরম্যান্সের প্রেক্ষিতে তিনি দলে এখন অপরিহার্য।
এই মৌসুমে অবশ্য চেলসির উয়েফা সুপার কাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। সেই সাথে লিগ কাপের খেলাগুলোতেও মেন্ডিকে বিশ্রাম দিয়ে তাকে সুযোগ দিয়েছেন কোচ টমাস টুখেল। সেখানেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন কেপা। আফ্রিকান নেশন্স কাপে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে এক মাসের জন্য দল ছেড়েছিলেন মেন্ডি। তখনও ভরসা হয়ে ছিলেন কেপাই। এখন অব্দি এই মৌসুমে ১৫টি খেলায় ১০টি গোল হজম করেছেন। ক্লিনশিট রয়েছে ৮টি।
কিন্তু কেপার এখন কী হবে? সুনাম ও আস্থা যা হারানোর ছিল কেপার, তা আগেই শেষ। এখন তিনি কি দল পরিবর্তন করে তার ক্যারিয়ারকে পুনরোজ্জীবিত করতে চাইবেন, না দেড় লাখ পাউন্ডের সাপ্তাহিক বেতনের জন্য বেঞ্চেই বসে থাকবেন? এর চেয়ে কোনো মাঝারি সারির গিয়ে দলে গিয়ে নিয়মিত খেলে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতেও পারেন। নিজের হারানো মুকুট ফিরে পাওয়ার জন্য এই সুযোগটা তো নেওয়াই যায়। এতে অন্তত সাইনিং রেকর্ড গড়া গোলরক্ষক থেকে ‘ফ্লপ’ গোলরক্ষক হওয়ার বদনামটি শুনতে হবে না।
কেপা চেলসিতে এসেছিলেন ৭ বছরের চুক্তিতে। এর মানে এই না যে তাকে এর পুরো সময়টাই এখানে থাকতে হবে। বয়স মাত্র ২৭ বছর। একজন গোলরক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় রয়েছে হাতে, আবারও প্রথম পছন্দ হিসেবে গোলবারের নিচে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে তার। কিন্তু চেলসিতে সেটা এই মুহূর্তে মোটামুটি অসম্ভবই মনে হচ্ছে, অন্তত যতদিন মেন্ডি রয়েছেন। তাই দল পরিবর্তন করে এই সুযোগটি নিতেই পারেন। সামনের গ্রীষ্মে আবার সামনে আসবে সেই সুযোগ। আমরা দেখার অপেক্ষায় থাকব যে তিনি এই সুযোগ লুফে নিতে পারেন কি না।