টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। শেষ বলে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ হওয়ার ঘটনাও নিয়মিত।
দর্শকপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণের পথচলা শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই ফরম্যাট দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি আর্থিক দিক দিয়েও বেশ লাভবান। অদূর ভবিষ্যতে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে পারে। যার ফলে ক্রিকেটের অন্যান্য ফরম্যাট, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটের উপর দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ক্রিকেটের উপর টি-টোয়েন্টির প্রভাব কিংবা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে কিনা- এসব আজকের লেখার মূল বিষয়বস্তু না।
টি-টোয়েন্টিতে শ্বাসরুদ্ধকর, নাটকীয়তায় ভরপুর এবং টানটান উত্তেজনাকর উল্লেখযোগ্য ম্যাচ নিয়েই আজকের লেখা। যেসব ম্যাচ উপভোগ করে মাঠের দর্শকরা বাড়ি ফিরতে ফিরতে বলতে পারে, কড়ায়গণ্ডায় পয়সা উসুল হলো।
এই তো গত ১৮ই মার্চ নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল এবং ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দুটি টাটকা উদাহরণ। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে ৩৫ রান প্রয়োজন ছিলো ভারতের। টি-টোয়েন্টিতে প্রায়শ এইরকম লক্ষ্য তাড়া করে সফল হতে দেখা যায়। কিন্তু মোস্তাফিজ ১৮তম ওভারে মাত্র এক রান খরচ করে এক উইকেট শিকার করলে সমীকরণটা কঠিন হয়ে যায় ভারতের জন্য।
জয়ের জন্য ভারতের দরকার ১২ বলে ৩৪ রান। এবার বলা যায় লক্ষ্যটা একটু না বেশ কঠিন। ১৯তম ওভার বল করতে আসেন ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার রুবেল হোসেন। ব্যাটিং প্রান্তে তখন অভিজ্ঞ দীনেশ কার্তিক তখনও কোনো বল মোকাবেলা করেননি। কার্তিক তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রুবেলের ওভার থেকে ২২ রান নেন। শেষপর্যন্ত ইনিংসের শেষ বলে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিলো পাঁচ রান। সৌম্যর বলে ছয় হাঁকিয়ে নাটকীয়ভাবে ভারতকে জয় উপহার দেন কার্তিক। টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেষ বলে ছয় হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করার ঘটনা এই প্রথম ঘটেছিলো।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এমন নাটকীয়তায় ভরপুর বেশ কয়েকটি ম্যাচের সাক্ষী হয়ে আছে ক্রিকেট বিশ্ব। যেসব ম্যাচে শেষ বলের আগপর্যন্ত কোন দল জয় পাবে, তা আন্দাজ করা মুশকিল ছিলো। এরকম কিছু রোমাঞ্চকর ম্যাচ নিয়ে এই লেখা।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, ওয়েলিংটন
ভারতকে পাঁচ উইকেটে পরাজিত করে নিউজিল্যান্ড।
তখনও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উন্মাদনা বিশ্বব্যাপী ছড়ায়নি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ছয় উইকেটে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে ভারত। ভারতের দেওয়া ১৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪.১ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৫০ রান জমা করেন দুই ওপেনার রাইডার এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
উড়ন্ত সূচনার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এরপর ধীরেসুস্থে খেলতে থাকেন ম্যাককালাম এবং টেইলর। শেষপর্যন্ত জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে নিউজিল্যান্ডের ২৮ রান প্রয়োজন ছিলো। হাতে ছিলো আট উইকেট। এমন পরিস্থিতে নিউজিল্যান্ড সহজ জয়ের পথেই ছিলো। কিন্তু ইরফান পাঠান ১৮তম ওভারে মাত্র পাঁচ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট শিকার করেন।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিলো ১২ রান। তখনও ব্যাট হাতে ক্রিজে ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। প্রথম তিন বলে মাত্র তিনটি সিঙ্গেল দেন ইরফান পাঠান। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে চার হাঁকিয়ে ম্যাচ টাই করেন। শেষ বলে এক রান বাঁচানোর জন্য সব ফিল্ডার ত্রিশ গজের মধ্যে চলে আসেন। শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে পারেননি ম্যাককালাম। রোহিত শর্মা পিছন দিকে দৌড় দিয়ে অসাধারণ একটি ক্যাচ প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন। তার হাতের নাগালে না আসাতে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় এক রান দৌড়ে নিয়ে নেন দুই ভাই ব্রেন্ডন এবং নাথান ম্যাককালাম। ৫৫ বলে আটটি চার এবং একটি ছয়ের মারে অপরাজিত ৬৯* রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
৫ জুন ২০০৯, লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার উইকেটে জয় পায় নেদারল্যান্ড।
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে চার উইকেটে পরাজিত করে অঘটন ঘটায় নেদারল্যান্ডস।
টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে পাঁচ উইকেটে ১৬২ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। স্বাগতিকদের দুই ওপেনার বোপারা এবং লুক রাইট উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ১১.২ ওভারে ১০২ রান যোগ করেছিলেন। দুজনকেই সাজঘরে ফেরান রায়ান টেন ডেসকাট।
শেষদিকে ডাচ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৬২ রানে থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ১৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও টম ডি গ্রোথ (৪৯ রান) এবং পিটার বোরেনের (৩০ রান) দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েনি ডাচরা।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে সাত রান প্রয়োজন ছিলো নেদারল্যান্ডসের। ছয় বলে সাত রান তোলার দায়িত্ব পড়ে শিফার্লি এবং ডেসকাটের কাঁধে। স্টুয়ার্ট ব্রডের করা শেষ ওভারের প্রথম পাঁচ বলে পাঁচটি সিঙ্গেল নেন এই দুজন। শেষ বলে জয়ের জন্য দুই রান দরকার ছিলো ডাচদের। ব্রডের করা শেষ বলটি ঠিকমতো খেলতে পারেননি শিফার্লি। বলটি সোজা ব্রডের বরাবর যায়। নিজের বলে নিজে ফিল্ডিং করেন। শিফার্লিকে রান আউট করার জন্য তিনটি স্ট্যাম্পই লক্ষ্যে ছিলো ব্রডের সামনে। ব্রড স্ট্যাম্পে আঘাত হানতে ব্যর্থ হলে শিফার্লি এবং ডেসকাট দৌড়ে আরও একটি রান নিয়ে ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন।
২৩ মার্চ ২০১২, দুবাই
কানাডার বিপক্ষে চার উইকেটে জয় পায় স্কটল্যান্ড।
আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে আট উইকেটে ১৩৫ রান সংগ্রহ করে কানাডা। ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৩ রান আসে মিস্টার এক্সট্রা থেকে। কানাডার দেওয়া ১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। ম্যাকলেওডকে দুই রান এবং মমসেনকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান জুনায়েদ সিদ্দিকী।
মমসেন এবং ম্যাকলেওডের বিদায়ের পরেও থেমে থাকেনি রিচি ব্যারিংটনের ব্যাট। দশম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৬৭ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরার সময় তার নামের পাশে ছিলো ৪৭ রান। ১৯তম ওভার শেষে স্কটল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো পাঁচ উইকেটে ১২৯ রান। জয় থেকে তখনও সাত রান দূরে স্কটিশরা। ব্যাটিং দলের টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা কঠিন কাজ না।
কানাডার পেসার রিজওয়ান চিমা শেষ ওভারের প্রথম বলে ওয়াটসকে ফিরিয়ে দিলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। পরবর্তী চার বলে মাত্র তিন রান দেন চিমা। শেষ বলে জয়ের জন্য চার রানের প্রয়োজন পড়ে স্কটল্যান্ডের। চিমার করা ফুল ডেলিভারিকে চারে পরিণত করে স্কটল্যান্ডকে চার উইকেটের জয় এনে দেন রায়ান ফ্লানিগান।
২২ ডিসেম্বর ২০১২, মুম্বাই
ভারতের বিপক্ষে ছয় উইকেটে জয় পায় ইংল্যান্ড।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি ভারতের। ওপেনার রাহানে পাঁচ বলে তিন রান করে ফিরে যান। আরেক ওপেনার গম্ভীর ১০.৫ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থাকলেও নিজের নামের পাশে ২৭ বলে মাত্র ১৭ রান যোগ করতে পেরেছিলেন।
বিরাট কোহলির ৩৮ রান, ধোনির ৩৮ এবং রায়নার ৩৫ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ইংল্যান্ডের সামনে আট উইকেটে ১৭৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত।
ভারতের দেওয়া ১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিলো একেবারে বিপরীত। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৮.২ ওভারে ৮০ রান যোগ করেন মাইকেল লাম্ব এবং অ্যালেক্স হেইলস।
দুই ওপেনারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পাওয়া ইংল্যান্ডের রানের চাকা চেপে ধরেন যুবরাজ সিং। তিনি চার ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় তিন উইকেট শিকার করেন।
যুবরাজের দুর্দান্ত বোলিং স্পেলের পরেও শেষ হাসি হাসে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১১তম ওভারে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে লুক রাইটের পতনের পর ব্যাট হাতে নামেন ওয়েন মরগান। তখনও জয়ের জন্য নয় ওভারে ৮৪ রান প্রয়োজন ছিলো ইংল্যান্ডের।
সামিত প্যাটেল চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার পর ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য ১৩ বলে ২৯ রান প্রয়োজন ছিলো। তখনও ক্রিজে অপরাজিত ছিলেন মরগান। অশোক দিন্দার করা ১৮তম ওভারের শেষ বলে ছয় হাঁকিয়ে শেষ দুই ওভারে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ এ নামিয়ে নেন।
জস বাটলার এবং ওয়েন মরগান ১৯তম ওভার থেকে ১২ রান সংগ্রহ করলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে নয় রান। অশোক দিন্দা প্রথম পাঁচ বলে ছয় রান দিলে শেষ বলে জয়ের জন্য তিন রান প্রয়োজন পড়ে ইংল্যান্ডের। প্রথম পাঁচ বলে ফুল লেংথে বল করে সফল হওয়ার পর শেষ বলে একই চেষ্টা করেন দিন্দা। কিন্তু তার অকেজো ইয়র্কারকে তার মাথার উপর দিয়ে সোজা ছয়ে পরিণত করে দলকে জেতান ওয়েন মরগান। ২৬ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতার পাশাপাশি সিরিজে ১-১ সমতা আনেন তিনি।
২৭ জুলাই ২০১৩, কিংস্টন
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই উইকেটে পরাজিত করে পাকিস্তান।
বাঁহাতি স্পিনার জুলফিকার বাবর তার অভিষেক ম্যাচে ২৩ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে সাত উইকেটে ১৫২ রানের বেশি জমা করতে পারেনি। জুলফিকার বাবর নিজের অভিষেক ম্যাচে বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাট হাতে বেশি নজর কেড়েছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ১৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮৬ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। এরপর শহিদ আফ্রিদি ২৭ বলে ৪৬ ঝোড়ো ইনিংস খেললেও দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। আফ্রিদি যখন গ্যাব্রিয়েলের তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন তখনও জয়ের জন্য দশ বলে আট রান প্রয়োজন ছিলো পাকিস্তানের। হাতে ছিলো মাত্র তিন উইকেট। তার মধ্যে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসাবে কেউ ছিলেন না।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ছয় বলে ছয় রান দরকার ছিলো পাকিস্তানের। স্যামুয়েলসের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার হাঁকান জুলফিকার। শেষ পাঁচ বলে প্রয়োজন পড়ে মাত্র দুই রানের। কিন্তু দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে স্যামুয়েলস কোনো রান দেননি। চতুর্থ বলে লেগ বাই থেকে অতিরিক্ত এক রান নিয়ে ম্যাচ টাই করেন জুলফিকার। পঞ্চম বলে সাঈদ আজমল রান আউট হয়ে গেলে শেষ বলে জয়ের জন্য ১ রান প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের। শেষ বলে স্যামুয়েলসের করা লো ফুলটসকে ছয় হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে দুই উইকেটের জয় এনে দেন জুলফিকার বাবর।
২৪ মার্চ ২০১৪, চট্টগ্রাম
নিউজিল্যান্ডকে দুই রানে পরাজিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১৮তম ম্যাচে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নিউজিল্যান্ড।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সাজঘরে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক, ডু প্লেসিস এবং এবি ডি ভিলিয়ার্স। হাশিম আমলা ৪০ বলে ৪১ রানের ধীরগতির ইনিংস খেললে ১৫ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে চার উইকেটে ১০০ রান জমা করতে পেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
শেষ পাঁচ ওভারে জেপি ডুমিনির তাণ্ডবে ৭০ রান তুলেছিল প্রোটিয়াসরা। ডুমিনি মাত্র ৪৩ বলে দশটি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে অপরাজিত ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ১৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেইলরের ব্যাটে চড়ে সহজ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো নিউজিল্যান্ড। একপর্যায়ে সাত উইকেট হাতে রেখে ৩০ বলে মাত্র ৩৮ রান প্রয়োজন ছিলো কিউইদের। তবে নিউজিল্যান্ডের জন্য কাজটা কঠিন করে তোলেন ইমরান তাহির এবং ডেল স্টেইন।
ইমরান তাহির ১৭তম ওভারে মাত্র দুই রানের বিনিময়ে কলিন মুনরোর উইকেট এবং ডেল স্টেইন ১৮তম ওভারে আট রান খরচ করে কোরি অ্যান্ডারসনের উইকেট শিকার করলে শেষ দুই ওভারে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২১ রানের। কিন্তু ১৯তম ওভারে মরনে মরকেল ১৪ রান দিলে শেষ ওভারে মাত্র সাত রান প্রয়োজন পড়ে নিউজিল্যান্ডের। এদিন বেশ খরুচে ছিলেন মরনে মরকেল। তার তিন ওভার থেকে ৫০ রান তোলে কিউইরা।
প্রথম তিন ওভারে ১৩ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট শিকার করা ডেল স্টেইন শেষ ওভার করতে আসেন। ওভারের প্রথম বলেই লুক রংকিকে সাজঘরে ফেরান তিনি। রংকির বিদায়ের পর ক্রিজে আসা নাথান ম্যাককালাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বল থেকে কোনো রান আদায় করে নিতে পারেননি। চতুর্থ বলে চার হাঁকানোর পর পঞ্চম বলে স্টেইনের চতুর্থ শিকারে পরিণত হয়ে মাঠ ছাড়েন নাথান ম্যাককালাম। তার বিদায়ের পর শেষ বল মোকাবেলা করতে ব্যাটিং প্রান্তে আসেন ৩৬ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থাকা রস টেইলর। স্টেইনের করা শেষ বল থেকে টেইলরের করতে হতো তিন রান। স্টেইনের অসাধারণ বলটি রস টেইলর কোনোরকমে ব্যাটে লাগাতে সক্ষম হন। তবে তা থেকে কোনো রান আদায় করে নিতে পারেননি তিনি। স্টেইন নিজের বলে নিজে ফিল্ডিং করে টেইলরকে রান আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই রানের জয় নিশ্চিত করেন।
৩১ জানুয়ারি ২০১৬, সিডনি
অস্ট্রেলিয়াকে সাত উইকেটে পরাজিত করে ভারত।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ভারতের কাছে পরাজিত হয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হাতছাড়া করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। নিয়মরক্ষার তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে মাঠে নামে ওয়াটসন বাহিনী।
সিডনিতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন শেন ওয়াটসন। ব্যাট করতে অধিনায়ক শেন ওয়াটসনের ৭১ বলে দশটি চার এবং ছয়টি ছয়ের মারে অপরাজিত ১২৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে পাঁচ উইকেটে ১৯৭ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। ওয়াটসনের ১২৪* রান ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন ট্রাভিস হেড। একাই লড়াই চালিয়ে যান ওয়াটসন।
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ঝোড়ো ব্যাটিং করেন শিখর ধাওয়ান এবং রোহিত শর্মা। ধাওয়ান মাত্র নয় বলে ২৬ রান করে ওয়াটসনের শিকারে পরিণত হয়ে মাঠ ছাড়লেও ভারতের রানের চাকা থেমে থাকেনি। রোহিত শর্মা ৫২ রান এবং বিরাট কোহলির ৫০ রানের ইনিংসে জয়ের পথেই থাকে ভারত। দলীয় ১৪৭ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে কোহলি ফিরে গেলে দলের হাল ধরেন সুরেশ রায়না। তবে অপরপ্রান্তে নাজুক ছিলেন যুবরাজ সিং। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজনে ছিলো ২২ রান। কিন্তু ওয়াটসনের করা ১৯তম ওভারে মাত্র পাঁচ রান তুলতে পেরেছিলেন যুবরাজ ও রায়না। শেষ ওভারে জয়ের জন্য তখনও ১৭ রান প্রয়োজন ভারতের। যুবরাজ ৯ বলে মাত্র ৫ রানে এবং রায়না ২২ বলে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ ওভার করতে আসেন অ্যান্ড্রু টাই। অনভিজ্ঞ এই পেসার প্রথম দুই বল যুবরাজের পায়ে করেন। যার ফলস্বরূপ বল দুটি থেকে একটি চার এবং একটি ছয় হাঁকিয়ে ১০ রান আদায় করে নেন যুবরাজ। তৃতীয় বলে লেগ বাই থেকে এক রান নিলে শেষ তিন বলে জয়ের জন্য ছয় রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের। রায়না চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে দৌড়ে দুটি করে রান আদায় করে নিলে শেষ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে আর মাত্র দুই রান দরকার ছিলো ভারতের। টাইয়ের করা শেষ বলটি লেগ সাইডে সরে গিয়ে অফ সাইডের উপর দিয়ে চার হাঁকিয়ে ভারতের সাত উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন। এই জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল ভারত।
ফিচার ইমেজ: Getty Images