Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেট ম্যাচ বয়কটের আদ্যোপান্ত

ক্রিকেট বিশ্বে এখনও আলোচনায় নিদাহাস ট্রফি। কী টানটান উত্তেজনার একটা টুর্নামেন্টই না খেললো শ্রীলঙ্কা, ভারত ও বাংলাদেশ! ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বাউন্ডারির বাইরে থেকেই বাকবিতণ্ডা, মাঠে ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উত্তেজনাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের মাঝে আম্পায়ারদের ‘নো বল’ দিয়েও ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত; সব মিলিয়ে একরকম হিজিবিজি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল কলোম্বোর প্রেমাদাসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সাকিব তো উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে ক্রিকেটারদের মাঠ থেকেই বের হয়ে আসতে বললেন। ম্যাচই বয়কট করতে চেয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে এমন ইতিহাস এটাই প্রথম। তবে হ্যাঁ, বিশ্বব্যাপী প্রথম নয়। ঘরোয়াতেও এই ঘটনা আছে অনেক। সেরকম কিছু ঘটনা নিয়েই আজকের আয়োজন।

সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

একেবারে  খালি হাতে এসেও শ্রীলঙ্কায় যেন সাফল্যের খনি পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিদাহাস ট্রফির আগে নিজেদের ঘরের মাঠে এই শ্রীলঙ্কা দলই বাংলাদেশকে দুটি টি-টোয়েন্টিতে হারায়। সেই লঙ্কা দল আবার বাংলাদেশের কাছে দুই ম্যাচে হারে নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের মুল্লুকে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে যখন শেষ ওভারে জিততে হলে বাংলাদেশের ১২ রান প্রয়োজন, তখন ব্যাট হাতে ধুঁকছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। উইকেটের সেট ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে স্ট্রাইকে আনতে গিয়ে দুটি বল মোকাবেলা করেই শিকার হন রান আউটের। কিন্তু ইসুরু উদানার করা ওই দুটি বলই ছিল বাউন্সার। নিয়ম অনুযায়ী, ‘নো বল’ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। হয়তো উইকেট দিতে গিয়ে সেটা ভুলে গেলেন আম্পায়াররা।

পরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আম্পায়ারের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা করলে নো বলের সিদ্ধান্ত হয়। সেটাকে আবার প্রতিবাদ জানিয়ে বদলে ফেলে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। তখন থেকেই অঘটনের শুরু।

সাকিবের পরশে বদলে গেছে সব; Source: AFP

মাহমুদউল্লাহকে পানি দিতে গিয়ে দ্বাদশ ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরার সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে যান সাকিব। কেন ‘নো বল’ দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়েই তর্ক চলছিল। কিন্তু ‘নো বল’ আর পায়নি বাংলাদেশ। এমন সময়েই বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহকে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে আসতে বলেন সাকিব। যেন ম্যাচ বয়কটের সিদ্ধান্ত। যদিও কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের হস্তক্ষেপে বয়কট হয়নি ম্যাচ। ব্যাট হাতে জয় তুলেই মাঠ ছেড়েছিলেন রিয়াদ।

শাস্তি হিসেবে সাকিবকে ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়, সঙ্গে নামের পাশে লেখা হয় একটি ডিমেরিট পয়েন্ট। একই শাস্তি পান নুরুল হাসান সোহানও।

এই ঘটনায় সাকিবের সমালোচনা হয় অনেক। এমনকি ভারতের সাবেক অধিনায়ক এবং এই ম্যাচে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা সুনীল গাভাস্কারও মেতেছিলেন সাকিবের নিন্দায়। এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি দাবি তোলেন, সাকিবের শাস্তি হওয়া উচিত। এমন ঘটনা ক্রিকেট মাঠে নাকি ঘটাই উচিত নয়। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাস বলে, তিনি নিজেই প্রথম ম্যাচ ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন! যদিও সেটা আউট হওয়ার পর।

সুনীল গাভাস্কার (ভারত)

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ১৯৮১ সালে এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন গাভাস্কার। ফরম্যাটটি ছিল টেস্ট ক্রিকেট। বলে রাখা ভালো, ওই সময়ে ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে ছিলেন গাভাস্কার। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব ছিল তার কাঁধে। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলার ডেনিস লিলির এক অফ কাটারে পরাস্ত হন তিনি। বল গিয়ে লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদন করেন লিলি। সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সতীর্থরাও। আম্পায়ার রেক্স হোয়াইটহেড এলবিডব্লিউ আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই খানিকটা যেন ইতস্তত করছিলেন। তারপর আঙুল তুলে দেন।

সেই ম্যাচে সুনীল গাভাস্কার; Source: The Sydney Morning Herald

৭০ রানে অপরাজিত থাকা গাভাস্কার উইকেট থেকে তখনও বের হননি। মেনেই নিতে পারছিলেন না তিনি। এরপর হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে ব্যাটখানা বগলদাবা করে মাঠ ছাড়তে লাগলেন। অন্যপাশে তখন উদযাপনে ব্যস্ত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল।

কিন্তু এ কী! গাভাস্কার ৩০ গজের সীমানাও পার হননি। ধরেছেন উল্টো পথ। উইকেটে এসে নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান চেতন চৌহানকে টানতে টানতে সঙ্গে নিয়ে মাঠের বাইরে বের হয়ে যাচ্ছেন। গ্যালারি জুড়ে তখন সফরকারী দলকে দুয়োধ্বনি দিচ্ছে অজি সমর্থকরা। আম্পায়ারকে কী যেন বললেন একবার গাভাস্কার, তারপর সোজা ড্রেসিংরুমের দিকে। সঙ্গী চেতন। অজি ক্রিকেটাররা দল বেঁধে তাকিয়ে ছিলেন গাভাস্কার-চেতনের গমনপথের দিকে। ওদিকে ধারাভাষ্যকাররা বলে দিচ্ছেন, ম্যাচ বয়কট করছেন ভারতীয় অধিনায়ক। তাই নিজের সঙ্গে আরেক ব্যাটসম্যানকেও বের করে নিচ্ছেন।

হয়তো সেদিন সত্যিই গাভাস্কারের পাল্লায় পড়ে ম্যাচ বয়কট করতো ভারত। কিন্তু বাউন্ডারির সামনে থেকে সেই সুযোগটা বাতিলের খাতায় রেখে দেন দলের ম্যানেজার। তিনিই সেখানে বুঝিয়ে শুনিয়ে সুনীলকে পাঠালেন ড্রেসিংরুমে, চেতনকে ফেরালেন উইকেটে। ম্যাচের অনেকদিন পর এক সাক্ষাৎকারে গাভাস্কার ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত ছিল ওটা।”

অর্জুনা রানাতুঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

১৯৯৯ সালের ঘটনা। অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে বল করছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। হঠাৎই একটা নো বল ধরে বসেন লেগ আম্পায়ার রস ইমারসন। অভিযোগ, ‘চাক’ করেছেন মুরালিধরন। ব্যস, আর যায় কোথায়! অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা তর্কে জড়ালেন আম্পায়ার রসের সঙ্গে। খালি চোখে কীভাবে মুরালিধরনের বল চাক হয়েছে বোঝা গেলো, সেই কৈফিয়তই হয়তোবা চেয়েছিলেন সেদিন।

আম্পায়ারও নাছোড়বান্দা। নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবেন না তিনি। নো বলই থাকল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানবেন না লঙ্কাধিপতি। তাই রেগেমেগে মাঠ থেকে সাজঘরের পথ ধরলেন। একা নয়, পুরো দলকে সঙ্গে নিয়ে। ওপাশ থেকে বোলিং প্রান্তে থাকা আম্পায়ারও কয়েকবার রানাতুঙ্গাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। সে মুহূর্তে উত্তেজিত অবস্থায় তাতে কান দেননি তিনি। পুরো শ্রীলঙ্কা দল গিয়ে তখন অবস্থান নিল বাউন্ডারি লাইনে। কেবল মাঠের বাইরে গেলেন রানাতুঙ্গা। ততক্ষণে শ্রীলঙ্কায় বোর্ডের কাছে ফোন করা হয়ে গেছে কর্মকর্তাদের। তারপর কোচ-ম্যানেজারদের অনুরোধে ফেরত এলেন মাঠে। বোর্ড থেকে খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হল শ্রীলঙ্কা দলকে।

আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত অর্জুনা রানাতুঙ্গা; Source: Cricinfo

মাঠে ফিরেও রানাতুঙ্গা আম্পায়ার রস ইমারসনের সঙ্গে আবারও তর্কে জড়িয়েছিলেন। খেলা শুরু হলে পরের বলগুলো কোনোরকম অঘটন ছাড়াই শেষ করেন মুরালিধরন। শ্রীলঙ্কার ম্যাচ বয়কটের এই প্রসঙ্গে ওই ম্যাচের পর মুখ খুলেছিলেন লঙ্কা দলের ম্যানেজার সঞ্জিত ফার্নান্দো। তিনি বলেছিলেন, “ম্যাচ বয়কটের ভাবনা রানাতুঙ্গার মনে একেবারেই ছিল না। সে যা করেছে তা কেবলই হতাশার কারণে।”

বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল; Source: Cricinfo

সেই সময়ে একেবারেই তরুণ ছিলেন কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। ওই ম্যাচে তার বয়স ছিল ২৬। কে জানে, সেদিন যদি প্রতিবাদ না করতেন রানাতুঙ্গা তাহলে হয়তো আর কিংবদন্তি হওয়া হতো না মুরালিধরনের।

মোহাম্মদ কাইফ (ভারত)

এই ঘটনা গেল বছরে, ২০১৭ সালেই। আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়, ভারতের জনপ্রিয় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। কর্ণাটকের বিপক্ষে ফিল্ডিং করছিলেন ছত্তিশগড়ের অধিনায়ক কাইফ। তার দলের বোলার ওমকার ভার্মা কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন মায়াঙ্ক আগারওয়ালের বিপক্ষে। সেই আবেদন মন গলেনি আম্পায়ার উমেশ দুবেইর।

মোহাম্মদ কাইফ; Source: AFP

ফলাফল, আম্পায়ারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন অধিনায়ক কাইফ। একপর্যায়ে সদলবলে ম্যাচ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। মাঠ ছেড়ে আসার পথ ধরেন। পরে দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের পর ফেরেন মাঠে। ওই ম্যাচে শাস্তি পেয়েছিলেন ভারতের হয়ে ১২৫ ওয়ানডে ও ১৩ টেস্ট খেলা এই ক্রিকেটার। তার ম্যাচ ফি কেটে রাখা হয়েছিল। সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল সতর্কবার্তা।

ফিচার ইমেজ- Times of India

Related Articles