গত শতকের চল্লিশের দশক, সুনির্দিষ্ট করে বললে ১৯৩৬ সাল। জায়গাটা সোভিয়েত ইউনিয়নের রিগার রাজধানী লাতভিয়া। আজকের এই দিনে জন্ম হলো এক নক্ষত্রের, এক কিংবদন্তির। অষ্টম বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে চিনিয়ে দিতে গেলে যে কম নাটুকেপনা করলে হচ্ছে না! যার উপাধি আর উপনাম দিতে গেলে শেষ হবে না, আসল নাম তার মিখাইল নেখমেভিচ তাল। দাবার জগতকে আমূল পাল্টে দেয়া এই ভদ্রলোকের নাম আসলে বহু, দ্য ম্যাজিশিয়ান ফ্রম রিগা, দ্য পাইরেট অব লাতভিয়া, ফরচুনস ফেবারিট, দ্য হিপনোটিস্ট, দ্য এলিয়েন, এবং আরও কত! বন্ধুদের কাছে যিনি ছিলেন শুধুই পার্টিপ্রিয়, সদা হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুবৎসল- মিশা।
স্যাক্রিফাইসিং, অ্যাটাকিং, রোমান্টিক ধারার দাবার সাথে দাবাজগতকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দেখিয়েছিলেন এমনভাবে খেলেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়। বেঁচে থাকলে মিশা আজ ৮৫-তে পা দিতেন, তার স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে এই দুইটি নিবন্ধ। প্রথমটিতে আমরা তার দাবার জগত অধিগ্রহণের সাথে পরিচিত হবো, আর পরেরটায় দেখব নক্ষত্রের পতন।
সেরা সময়ের তালকে নিয়ে বলতে গেলে একটা কথাই বলতে হয়, “এলেন, দেখলেন ও জয় করলেন!”
– আনাতোলি কারপভ
দাবার ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রেখেছিলেন (মাত্র ১ বছর ৫ দিন) তাল, কিন্তু সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার খেলার ধরন পুরো দাবাবিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল! প্রথাগত বতভিনিকের বিরুদ্ধে ১৯৬০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে তরুণ তালের আত্মঘাতী-শৈল্পিক-আক্রমণাত্মক কৌশল দাবাবোদ্ধাদের স্মৃতিতে চির অম্লান। তার আক্রমণাত্মক খেলার শৈলী বিংশ শতকের শেষভাগের দাবার পরিমণ্ডলে এক আলোড়ন তৈরি করে। দাবার বিকাশে এবং চিন্তাধারা গঠনে তার অবদান প্রভূত।
প্রতিপক্ষকে দাবার বোর্ডে এক গভীর, ঘন জঙ্গলে নিয়ে যেতে হবে আপনার, যেখানে দুয়ে দুয়ে পাঁচ হয়! সেখান থেকে বেরোবার রাস্তাটা যেন কেবল একজনেরই বাকি থাকে।
– মিখাইল তাল
বাল্যকাল ও দাবায় হাতেখড়ি
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের লাতভিয়া অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত রিগায় ১৯৩৬ সালের ৯ নভেম্বর জন্ম নেন মিখাইল তাল। ডাক্তার বাবা নেখমেইয়া তালের ঘরে দ্বিতীয় সন্তান হিসাবে জন্ম হয় মিখাইল নেখমেভিচ দ্য এইটথ, তালের। বাবার হাত ধরেই ছয় বছর বয়সে দাবায় হাতেখড়ি হয় তার। বাবাও ফার্স্ট ক্যাটাগরি শক্তিমত্তার দাবাড়ু ছিলেন।
কিন্তু শৈশবে দাবাকে সাধারণ শখ হিসেবেই মনে হয়েছিল তালের, উপরন্তু একসময় তিনি নাটকে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েন। কিন্তু ঘটনা ঘটে সেই নাটকের প্রতি ভালোলাগার সূত্রেই। ড্রামার জন্য একদিন পাইওনিয়ার্স প্যালেসে যান শিশু তাল, সেখানে দেখতে পেলেন দাবার জন্য একটা আলাদা জায়গা আছে। সেখানেই পরিচয় ঘটে তার প্রথম দাবা কোচ ইয়ানিজ ক্রুজকোভের সাথে।
দাবায় আসক্ত হওয়া কিছুটা রোগের মতো, যেমন হংকং ফ্লু। প্রথমদিকে কিছু ম্যাচ জিতলে বা হারলে আপনার কিছু মনে হবে না, কিন্তু একটা সময় গিয়ে দাবা ছাড়া জীবনকে মনে হবে অপূর্ণ; কিছু একটা যেন আপনার জীবনে নেই। ধীরে ধীরে আপনি এমন একজনে পরিণত হবেন, দাবার ব্যাধির প্রতিরোধক যার ইমিউন সিস্টেমে নেই।
– মিখাইল তাল
উত্থান
লাতভিয়ার রাজধানী রিগায় অবস্থিত পাইওনিয়ার্স প্যালেসে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে থাকেন তাল। প্রকৃত অর্থে তার প্রথম কোচ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন অ্যালেকজান্ডার কোব্লেন্তজ। যোগ্য তত্ত্বাবধানে দ্রুত অগ্রগতি হতে থাকে তার, মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে তিনি লাতভিয়ান চ্যাম্পিয়ন হন (+১২ -২ =৫ অর্থাৎ ১২ জয়, ২ পরাজয় এবং ৫ ড্র)। ন্যাশনাল মাস্টার খেতাব অর্জন করেন সেই বছরই। এরপর একের পর এক সাফল্য অর্জন করতে থাকেন তাল।
দাবার বোর্ডে প্রথম সাহসী পদক্ষেপটা সবসময় আমিই নিতে পছন্দ করি, প্রতিপক্ষ সুযোগ নেয়ার আগেই।
– মিখাইল তাল
১৯৫৭ সালে তাল রিগা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস এবং দর্শনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। একই বছর তিনি পল কেরেস, ডেভিড ব্রন্সটেইন, ভিক্টর কোর্চনোই, তিগ্রান পেত্রসিয়ান প্রমুখ বড় মাপের খেলোয়াড়দের হারিয়ে ১৯৫৭ সালের ইউএসএসআর চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন (+৯ -১ =১০)। পরবর্তী বছরও এই টুর্নামেন্ট জেতেন তাল। তার এই জয়রথ অব্যাহত থাকে, ১৯৫৮ সালে তিনি ইন্টারজোনাল টুর্নামেন্ট জয় করেন। অবশেষে ১৯৫৯ সালে ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্ট জেতার মাধ্যমে তিনি পরবর্তী বছর মিখাইল বতভিনিকের সাথে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে লড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
দাবায় শুধু দু’রকমের স্যাক্রিফাইস বিদ্যমান– সঠিক প্রকার এবং আমারগুলো!
– মিখাইল তাল
বিশ্বজয়ের দোরগোড়ায়
উল্লেখ্য, ইউএসএসআর চ্যাম্পিয়নশিপকে সেকালে বিশ্বের সেরা টুর্নামেন্ট মানা হত, পরপর দু’বার সেটি জয় করে পুরো দাবাবিশ্বের নজর কেড়ে নেন তাল। এরপর যখন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বতভিনিককে চ্যালেঞ্জ করার উপযুক্ত হয়ে গেলেন, পুরো বিশ্ব নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হলো। ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে তাল সলিড পারফরম্যান্স দেখান (+১৬ -৪ =৮), যার মধ্যে ছিল ভবিষ্যৎ চ্যাম্পিয়ন ববি ফিশারের বিরুদ্ধে পারফেক্ট ৪/৪।
তালের খেলার ধরন ছিল বতভিনিকের পুরোপুরি বিপরীত। বতভিনিক ছিলেন ঠাণ্ডা মাথার এবং তুলনামূলক কম আক্রমণাত্মক। অপরদিকে তালের খেলার ধরন ছিল পুরোদস্তুর আক্রমণাত্মক। তার আক্রমণের ধারণা তার উক্তিতেই প্রতিভাত হয়, “সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলতে নেমে আপনি যদি ড্রয়ের লক্ষ্যে আগান, তবে এটি নিশ্চয়ই দাবার বিরুদ্ধে একরকমের অপরাধ!” এখন দেখার বিষয়, তালের এই কৌশল বতভিনিকের বিরুদ্ধে কার্যকর হয় কী না।
খেলার ধরন
মিখাইল তাল বেশ দ্রুত জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত হয়ে ওঠেন, কারণ তিনি অন্যান্য সোভিয়েত গ্র্যান্ডমাস্টারদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন দাবা খেলতেন। অন্যান্যরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মিখাইল বতভিনিককে অনুসরণ করতেন, যিনি কিছুটা কম আক্রমণাত্মক এবং শান্ত, ক্যালকুলেটিং ও র্যাশনাল দাবা খেলতেন। তাল খেলেছিলেন তথাকথিত ভুল দাবা, যার মধ্যে ছিল বিনোদন, নান্দনিকতা, নাটকীয়তা ও সমন্বয়। তিনি ছিলেন কিংবদন্তী আমেরিকান দাবাড়ু পল মরফির মতো, যিনি ছিলেন মধ্য ঊনবিংশ শতকের অনানুষ্ঠানিক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তাল ছিলেন রাশিয়ান দাবাড়ু আলেকজান্ডার অ্যালেখাইনের মতো, একমাত্র দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, যিনি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন অবস্থায় মারা যান।
তাল যদি দাবাড়ু না হয়ে বিজ্ঞানী হতেন, তবে নোবেল জিততেন এমন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন (২০০০-০৬ ও ২০০৬-০৭) ভ্লাদিমির ক্রামনিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
It’s hard to talk about Tal because he’s unusual, very bright, he’s a natural phenomenon. I’m absolutely sure that if he didn’t take up chess, he would become great in something else. He was very sharp and bright. If he was a scientist, he’d probably win a Nobel Prize.
– ভ্লাদিমির ক্রামনিক
তাল ছোট এবং বড় যেকোনো পিস স্যাক্রিফাইস করতেন, অবস্থান এত জটিল করে তুলতেন যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভাব্য সব ভ্যারিয়েন্ট গণনা করতে পারত না এবং খেলার সময় সঠিক চাল বেছে নিতে না পেরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগত, ভুল চাল দিয়ে হেরে যেত। পরবর্তীতে জটিল বিশ্লেষণের পর, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যখন শক্তিশালী দাবা কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়, এটা প্রায়ই প্রমাণিত হয় যে, তার কিছু স্যাক্রিফাইস অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ছিল এবং তাকে পরাজয় এনে দিতে পারত। কিন্তু খেলায় এই কৌশলগুলোই তালকে একের পর এক জয় এনে দিত।
যদি আপনি ভাগ্য সহায় হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকেন, তবে জীবন অনেক বিরক্তিকর হয়ে যায়।
– মিখাইল তাল
ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্ট ১৯৫৯
তাল ১৯৬০ সালে বতভিনিকের সাথে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন এই ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দ্বারা। ১৯৫৯ সালে যুগোস্লাভিয়ার ব্লেড-জাগ্রেব-বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্ট ছিল দাবার ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক টুর্নামেন্ট। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আটজন। তাদের অর্ধেকই ছিলেন সেসময়ের সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বা পরবর্তী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগীদের মধ্যে তাল ছাড়া ছিলেন পল কেরেস, তিগ্রান পেত্রসিয়ান, পল বেঙ্কো, ভাসিলি স্মিস্লভ, সভেতজার গ্লিগোরিচ, ববি ফিশার এবং ফ্রেড্রিক ওলাফসন। সেসময়ের নিরিখে যাদের মধ্যে স্মিস্লভ ছিলেন সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর তাল, পেত্রসিয়ান ও ফিশার ভবিষ্যতের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
দাবার বোর্ডে ভুল চাল অবশ্যই ভালো নয়, তবে ভুল সবসময় এড়ানোও যায় না। বাকিদের মতে যেটা ভুলত্রুটিহীন আদর্শ খেলা, আমার কাছে সেটা বেরঙিন!
– মিখাইল তাল
প্রতিটি খেলোয়াড় সবার সাথে চারটি করে ম্যাচ খেলেন এবং সব ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকা দাঁড়ায় এমন–
টুর্নামেন্ট জয়ী হিসেবে তাল বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন।
ইতিহাস সৃষ্টি
প্রস্তুতিপর্ব
১৯৬০ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ হতে চলেছিল এক জমজমাট লড়াই। তাল তার আত্মজীবনী লেখার আগেও এই চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বই লিখেছিলেন। আত্মজীবনীতে তাল এক অধ্যায়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর Tal-Botvinnik 1960 বইয়ে প্রতিটি ম্যাচ ধরে ধরে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তাল তার প্রস্তুতিকে তিনভাগে ভাগ করেন, দাবা বিষয়ক (বিশেষত ওপেনিং), মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক।
Tal plays Bronstein’s style, only much better. And absolutely, without Bronstein’s weaknesses.
– Al Horowitz
কোচ অ্যালেক্সান্ডার কোব্লেন্তজের সাথে মিলে তাল বতভিনিকের আগের ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করেন এবং ফলস্বরূপ বিভিন্ন ওপেনিং প্রেডিক্ট করতে পেরেছিলেন তারা যা ম্যাচের সময় কাজে এসেছিল। মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তাল বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের আগে একটি ছোট ওপেন টুর্নামেন্ট খেলেন। ম্যাচের আগে খেলার জন্য কতটা মুখিয়ে ছিলেন সেটা তালের উক্তিতেই বোঝা যায়, I felt ‘hungry’ for chess and from beginning to the 21st game I never felt too ‘full’.
মূল ম্যাচ
২১ গেমের ম্যাচের প্রথমটিতে তাল জয় পান। তালের মতে, এটা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ, সাধারণত যেকোনো টুর্নামেন্টের শুরুটা হতো তালের হার দিয়ে। তালের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাকে মজা করে দ্বিতীয় গেম থেকে খেলতে বলেছিল! কোচ এবং তাল সঠিক ধরতে পেরেছিলেন- বতভিনিক সম্ভবত ফ্রেঞ্চ ডিফেন্স খেলবেন। পরের চার গেম ড্র হয় এবং এরপর টানা দুই জয় তুলে নেন তাল। এর মধ্যে ষষ্ঠ গেমের একুশতম মুভে তার বিখ্যাত নাইট স্যাক্রিফাইস করেন, যা ইতিহাসের পাতায় আজও স্মরণীয়। তাল নিজে ঐ মুভের ব্যাপারে বলেন, “good, in that all other continuations are bad.”
তাল দাবা খেলতেন প্রথাগত খেলার ধরনের পুরো বিপরীতে। কিন্তু সমস্যাটা শুধু তিনি এভাবে খেলেছেন তা-ই নয়, বরং জিতেছেনও।
– গ্যারি ক্যাসপারভ
এরপর একটা গেম তাল জেতার পর বতভিনিক টানা দুই জয় তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান। এরপর তাল পুরো ম্যাচজুড়ে আর একটা গেমও হারেননি; উপরন্তু একাদশ, সপ্তদশ এবং ঊনবিংশ গেমে জিতে পুরো ম্যাচ বলতে গেলে নিজের করে নেন। বাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়। এগুলোর মধ্যে সপ্তদশ ম্যাচে তালের 12. F4 মুভটি চিরস্মরণীয়। এই মুভকে বলা হয়, Terrible, Anti-positional, Incredible! ধারাভাষ্যকারদের মতে, মুভটি এমন ছিল যে, কোনো দাবার বই পড়েনি এমন কোনো আনাড়ির চাল। তাল পরবর্তীতে একে নিজের সবচেয়ে স্মরণীয় মুভ বলেছিলেন। নিঃসন্দেহে এটি অনেক সাহসী চাল ছিল।
উনিশতম গেম জেতার পর বাকি দুই গেম তালের শুধু ড্র করলেই চলত, এবং সেটিই ঘটেছিল। সবশেষে পয়েন্ট দাঁড়ায় তাল ১২.৫ এবং বতভিনিক ৮.৫। পুরো চার পয়েন্টের লিড নিয়ে তাল হয়ে যান সেসময়ের নিরিখে সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে মুকুট অর্জন করেন মিখাইল তাল। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে গ্যারি ক্যাসপারভ এই রেকর্ড ভেঙে দেন, ২২ বছর ৭ মাসে তিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। তালের থেকে এগার মাস ছোট অবস্থায় দাবার এই রাজমুকুট নিজের করে নেন গ্যারি।
Tal doesn’t move the pieces by hand, he just uses a magic wand!
– Grandmaster Ragozin
[চলবে]