শীতকালীন অলিম্পিক ১৯৮০: মিরাকল অন আইস

২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০, লেক প্লাসিড।

বরফের উপর দুই দলের তুমুল খেলা চলছে। একপক্ষ যাচ্ছে একের পর এক আক্রমণে, অন্যপক্ষের লক্ষ্য নিজেদের জাল সুরক্ষিত রাখা। নিয়ম মেনে প্রচুর ধাক্কাধাক্কি করে যাচ্ছে তারা।

তুমুল খেলা চলছে © AP

খেলার আর মাত্র পাঁচ সেকেন্ড বাকি আছে। স্বাগতিক দর্শকদের চোখমুখে উৎকণ্ঠা। দুশ্চিন্তা চাপা দিতে সমস্বরে শেষ পাঁচ সেকেন্ড গণনা শুরু করলেন তারা। ঘড়ির কাঁটা যখন সময় শেষ নির্দেশ করছে তখন আনন্দের আতিশয্যে বিখ্যাত ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার চিৎকার করে ওঠেন, “Do you believe in miracles? Yes.”

খেলা শেষের নির্দিষ্ট সংকেত বেজে উঠতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন বিজয়ী দলের খেলোয়াড়েরা। কর্মকর্তারাও মাঠে ঢুকে উদযাপনে যোগ দিলেন। গ্যালারিতে তখন চলছে বাঁধভাঙা উল্লাস। 

শীতকালীন অলিম্পিক, ১৯৮০

ফেব্রুয়ারির ১৩-২৪ নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের লেক প্লাসিডে সূচী অনুযায়ী বসেছিল শীতকালীন অলিম্পিকের ত্রয়োদশ আসর। ১৯৩২ সালে প্রথম যখন লেক প্লাসিড অলিম্পিক আয়োজন করেছিল, তখন মাত্র ১৭টি দেশ থেকে ২৫২ জন প্রতিযোগী এসেছিলেন। ১৯৮০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭টি রাষ্ট্রের ১,০৭২ জন অ্যাথলেট।

বাইশ বছরে অলিম্পিক অনেক বড় হয়েছে, কিন্তু লেক প্লাসিডের ছোট্ট গ্রামের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এত মানুষের ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা তাদের অবকাঠামোর ছিল না। যাতায়াতব্যবস্থা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই তাই সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রতিযোগীরা অলিম্পিক ভিলেজেও আশানুরূপ সুযোগ-সুবিধা না পাবার অভিযোগ করেন। খেলার ভেন্যু উচ্চমানের হলেও বিভিন্ন ভেন্যুর মধ্যে দূরত্ব ও অপ্রতুল যানবাহনের কারণে দর্শকদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল।

লেক প্লাসিড অলিম্পিক © AP

লেক প্লাসিডের সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা, খেলার ইতিহাসের অন্যতম অঘটন আইস হকিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়, যাকে অভিহিত করা হয় মিরাকল অন আইস  নামে।

আইস হকিতে একচ্ছত্র সোভিয়েত আধিপত্য

যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক আইস হকিতে প্রশ্নাতীতভাবে চলেছে সোভিয়েত আধিপত্য। তাদের দল আগের ছয়টি অলিম্পিকের পাঁচটিতেই স্বর্ণপদক জিতেছে, যার মধ্যে ১৯৬৪-৭৬ পর্যন্ত টানা চারটি শীতকালীন অলিম্পিক অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি ১৬টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্যে ১২টিতেই শিরোপা ঘরে তুলেছে সোভিয়েতরা। উল্লেখ্য, এগুলো অলিম্পিকের মতোই কেবল অ্যামেচার বা অপেশাদারদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিত। পেশাদার হকি খেলোয়াড়েদের লীগ আর শিরোপা আলাদা ছিল।

সোভিয়েত আইস হকি টিম © ITAR-TASS/Sovfoto UIG/Getty Images

মুখোমুখি হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রের থেকে সোভিয়েত দল অনেক এগিয়ে। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে অলিম্পিকের আগপর্যন্ত বারোবার দেখার একটিতেও সোভিয়েতদের হারাতে পারেনি মার্কিনীরা। ১৯৭৬ সালে কানাডা কাপের সময় যুক্তরাষ্ট্র দলে ন্যাশনাল হকি লীগের পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়েও দুবার সোভিয়েত দলের কাছে নাকাল হয়। ১৯৬৮ সাল থেকে অলিম্পিকেও তারা ছিল অপরাজিত।     

যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক দলগুলো অলিম্পিক বা অন্যান্য টুর্নামেন্টে যেসব দল পাঠাত, তার সদস্যরা তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী খাঁটি অ্যামেচার ছিলেন। তার মানে এই নয় যে তারা কাঁচা হকি খেলোয়াড়। তাদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ইত্যাদি পেশাদারদের সমপর্যায়ের। কেবল তারা খেলার জন্য অর্থ পেতেন না বলেই অ্যামেচার বলে চিহ্নিত ছিলেন। এরা বেশিরভাগই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।   

সোভিয়েত ইউনিয়নের দল কাগজে-কলমে অ্যামেচার। তবে দক্ষতা আর পেশাদারিত্বে এরা পেশাদারদেরও হার মানাবে। তাদের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত রেড আর্মির লোক। তাদের একমাত্র কাজই ছিল সারাক্ষণ হকি খেলে যাওয়া। এজন্য সবরকম সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো সরকার থেকে। তাদের দেখভাল করতেন কিংবদন্তী কোচ ভিক্টর টিখোনোভ। বলা হয়, ইতিহাসের অন্যতম সেরা আইস হকি দল ছিল সোভিয়েতদের ১৯৮০ সালের এই দল।

সোভিয়েত কোচ ভিক্টর টিখোনোভ; Image Source: thehockeynews.com

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি

সোভিয়েতরাই সোনা জিতবে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল সবার মাঝে। যুক্তরাষ্ট্রও ব্যতিক্রম নয়। আইস হকি থেকে তারা তেমন কিছু আশা করছিল না। ১৯৬০ সালের পর থেকেই আন্তর্জাতিক হকিতে একের পর এক খারাপ ফলাফলে তাদের মনোবলও তলানিতে। সোনা না জিতুক, ভালো খেলা তো দেখাতে হবে, তা নাহলে মানসম্মান যে ডুবে যায়! এই ভাবনা থেকেই কর্তারা শরণাপন্ন হন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইস হকি কোচ হার্ব ব্রুকসের।

ব্রুকস নিজেও ছাত্রজীবনে মিনেসোটাতেই হকি খেলতেন। অলিম্পিকের জন্যও চেষ্টা করেছিলেন একবার, ১৯৬০ সালে। সেই বছর দল ঘোষণার পর সর্বশেষ যে ব্যক্তি কাটা পড়েছিলেন, তিনি হার্ব ব্রুকস। লেক প্লাসিডের আগে সেই শেষবার, যখন যুক্তরাষ্ট্র আইস হকিতে স্বর্ণ জেতে।

হার্ব ব্রুকস; Image Source: imdb.com

তবে ব্রুকস খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন আরো অনেক বছর। জাতীয় আইস হকি টিমে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। ১৯৬১, ‘৬২, ‘৬৫, ‘৬৭ আর ‘৭০ সালে দলের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেন ব্রুকস। এর মাঝে ১৯৬৪ আর ১৯৬৮ অলিম্পিকেও দলে জায়গা পেয়েছিলেন।  

সত্তরের দশকে ব্রুকস খেলা ছেড়ে মন দেন কোচিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সফলতম কলেজ হকি কোচ হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নশিপে তিন তিনবার জয়ী হয় মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইস হকি দল। প্রত্যেকবারেই কোচ ছিলেন ব্রুকস।

অলিম্পিক দলের কোচ নিযুক্ত হবার পর ব্রুকস নিজের মতো করে খেলোয়াড় নিয়ে দল সাজান। মিনেসোটার আইস হকি টিম তখন অ্যামেচারদের মধ্যে রাজত্ব করছিল, ফলে সেখান থেকেই ব্রুকস সিংহভাগ খেলোয়াড় ডেকে নেন। উলেখযোগ্য ছিলো মাইক র‍্যামজে, নেইল ব্রোটেন আর ডেভিড ক্রিশ্চিয়ান। উইসকনসিন, বোলিং গ্রিন আর ড্যুলুথের কলেজগুলো থেকেও কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় অলিম্পিকে। এছাড়া বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোলটেন্ডার (হকির গোলকীপার) জিম ক্রেইগ আর মাইক এরুযিয়ন সুযোগ পান। এরুযিয়নকে ব্রুকস ক্যাপ্টেন বানিয়ে দেন।

ক্যাপ্টেন মাইক এরুযিয়ন; Image Source: youtube.com

দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে সংবাদপত্র আর লোকমুখে অনেক সমালোচনা ছিল। অনেকেই বলছিলেন, ভালো ভালো খেলোয়াড়রা ব্রুকসের দলে স্থান পায়নি। বলা হয়, ব্রুকস উত্তরে বলেছিলেন- সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড় তিনি খুঁজছেন না, তার প্রয়োজন দলীয় কৌশলের সাথে মানিয়ে নিয়ে খেলতে পারা খেলোয়াড়।

দল নিয়ে ব্রুকস কঠোর অনুশীলন করতে থাকেন। সবাইকে ঝালিয়ে নেন নানা কৌশলের সাথে। বলা হয়, ১৯৮০ সালের দলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সমস্ত আইস হকি দলের থেকে বেশি প্রশিক্ষিত ছিল।

লেক প্লাসিডের খেলা শুরুর তিন দিন আগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে প্রদর্শনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় সোভিয়েত আর মার্কিন দল। ১০-৩ গোলে শোচনীয়ভাবে ব্রুকসের ছেলেদের বিধ্বস্ত করে ভিক্টরের দল। কেউ যদি ব্রুকসের থেকে আগে কিছু আশা করেও থাকেন, নিশ্চিতভাবেই এরপর তিনি কেবল ভরাডুবির জন্য প্রতিক্ষা করছিলেন।

খেলার সূচনা

অলিম্পিক আরম্ভ হলে বারটি দেশকে ছয়টির দুটি ডিভিশনে, ব্লু আর রেড, ভাগ করা হয়। প্রতিটি জয়ের জন্য দুই, এবং ড্রয়ের জন্য নির্ধারিত হয় এক পয়েন্ট। প্রতি গ্রুপ থেকে প্রথম দুই দল যাবে পরবর্তী মেডাল রাউন্ডে। এই দুই দলের মধ্যে হেড-টু-হেড রেকর্ড অনুযায়ী পয়েন্ট নিয়ে তারা উঠবে সেই রাউন্ডে, সেখানে আর তারা একে অপরের বিপক্ষে খেলবে না। খেলা হবে অন্য ডিভিশনের দুই দলের সাথে। 

চার জয় আর এক ড্র নিয়ে ব্লু ডিভিশন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই শেষ করে প্রাথমিক পর্যায়। রেড থেকে সোভিয়েতরা সব প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে পাঁচ জয় নিয়ে পা রাখে পরবর্তী রাউন্ডে।

মেডাল রাউন্ডে রেড ডিভিশন থেকে উঠেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন আর ফিনল্যান্ড। ফিনল্যান্ডকে ৪-২ গোলে আগের রাউন্ডে হারিয়েছিল সোভিয়েত দল। ফলে তারা ওঠেই দুই পয়েন্ট নিয়ে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আর সুইডেনের প্রাথমিক পর্বের ম্যাচ ড্র হওয়ায় তারা এক পয়েন্ট নিয়ে উঠল।

ঐতিহাসিক এক জয়  

২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০। মেডাল রাউন্ডের প্রথম খেলা।

লেক প্লাসিডে পরিপূর্ণ গ্যালারির সামনে চিরশত্রু সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইস হকি টিম মাঠে নামল। খেলা শুরুর একটু পরই সোভিয়েত ভ্যালেরি ক্রোটোভ জিম ক্রেইগকে পরাস্ত করেন। তবে কিছু সময় পরে ব্রুকসের দলের একমাত্র পূর্ববর্তী অলিম্পিয়ান, বাজ স্নেইডার গোল শোধ করেন। তার শট সোভিয়েট গোলটেন্ডার ভ্লাদিস্লাভ ট্রেটিয়াকের কাঁধের ওপর দিয়ে জালে জড়ায়।  

তবে খেলার ধারা ছিল সোভিয়েতদের অনুকূলেই। তাদের একের পর এক আক্রমণ সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছিল মার্কিনীরা। সৌভাগ্যবশত, বেশ কয়েকবার গোল খেতে গিয়ে বেঁচে যায় তারা। জিম ক্রেইগও প্রাণ দিয়ে আটকাচ্ছিলেন গোলবার।

শুরু থেকেই আক্রমণে ছিল সোভিয়েতরা; Image Source: sbnation.com

সার্জেই ম্যাকারভ সোভিয়েতদের পক্ষে আবার ব্যবধান তৈরি করতে সক্ষম হন। তার শটে ক্রেইগকে ফাঁকি দিলে ২-১ স্কোরে এগিয়ে যায় তারা।প্রথমার্ধের মাত্র কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকতে ডেভিড ক্রিশ্চিয়ানের শট অনেকটা ভাগ্যক্রমে পেয়ে যান সতীর্থ মার্ক জনসন। ঘড়িতে এক সেকেন্ড বাকি থাকতে তার জোরাল আঘাতে স্কোর হয়ে যায় ২-২। 

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোলটেন্ডার বদল করে সোভিয়েতরা। ভ্লাদিস্লাভের জায়গায় দাঁড়ান ভ্লাদিমির মিশকিন। আক্রমণের ধার আরো বাড়িয়ে দেয় তারা। ম্যাল্টসেভের গোলে মাত্র দু’মিনিটেই এগিয়ে যায় ৩-২ গোলে। ক্রেইগ সেভ না করলে ব্যবধান আরো বাড়তে পারত। নিজেদের অর্ধে আটকে পড়া মার্কিনীরা রক্ষণাত্মক খেলে কোনোমতে টিকে থাকে। এই অর্ধ শেষ হয় ৩-২ ব্যবধানেই। 

তৃতীয় এবং শেষ ২০ মিনিটের খেলা আরম্ভ হয়। নয় মিনিটের মাথায় মার্ক জনসন ডেভিড সিল্কের এলোপাথাড়ি একটি শট আয়ত্ত্বে নিয়ে খেলার ধারার বিপরীতে গিয়ে সমতা আনেন। এর মাত্র এক মিনিট পরেই সোভিয়েতদের স্তব্ধ করে দেন ক্যাপ্টেন মাইক এরুযিয়ন। সোভিয়েত সীমানায় তাদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে মিশকিনের পাশ দিয়ে সজোরে পাক (Puck – হকির বল) জালে পাঠান। উল্লাসে ফেটে পড়ে স্বাগতিক দর্শকেরা।

মার্ক জনসনের গোল © AP
মাইক এরুযিয়নের বিজয়সূচক গোল © AP

 

আরো দশ মিনিট খেলা বাকি। ব্রুকসের দল সোভিয়েতদের কিছুতেই গোল দিতে না দেবার সংকল্পে দৃঢ়। ধাক্কাধাক্কি চলতে থাকে প্রায়শই। সোভিয়েতরাও মরিয়া হয়ে ওঠে গোল পরিশোধে। ক্রেইগের দৃঢ়তায় বেশ কয়েকবার বঞ্চিত হয় তারা। শেষ পাঁচ সেকেন্ড বাকি থাকতে দর্শকেরা চিৎকার করে সময় গুণতে থাকে।

জিম ক্রেইগের বীরত্বে বেশ কয়েকবার নিশ্চিত গোল থেকে বেঁচে যায় যুক্তরাষ্ট্র © AP

খেলা শেষ হওয়ামাত্রই আনন্দে ফেটে পড়ে স্বাগতিক দল আর দর্শকেরা। মাঠেই উদযাপন করতে থাকেন কর্মকর্তা আর খেলোয়াড়েরা। পরিপূর্ণ খেলোয়াড়ি চেতনায় সোভিয়েত খেলোয়াড়েরা প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানান।

বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়েরা; Image Source: olympics.com
খেলা শেষে প্রতিপক্ষের সাথে করমর্দন করে সোভিয়েতরা; Image Source: nhl.com

এই জয় এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে আল মাইকেলসের কথা ধরে একে আখ্যায়িত করা হয় ‘মিরাকল অন আইস’ বলে। খেলার ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটন বলে একে চিহ্নিত করেন অনেকে। খেলার চিত্র দেখলে পরিষ্কার হয় কতটা এগিয়ে ছিল সোভিয়েতরা। পুরো খেলায় সোভিয়েতরা ৫২টি শট নিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছিল অর্ধেকেরও কম, মাত্র ২৫। সোভিয়েতদের ৩৯টি (৭১%) শট ছিল গোলে, সেখানে প্রতিপক্ষের গোল বরাবর শট মাত্র ১৬।

তবে চমকের আরো বাকি ছিল। সোভিয়েতদের হারালেও স্বর্ণ জয় নিশ্চিত ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ সোভিয়েতদের পয়েন্ট তখনও দুই, আর যুক্তরাষ্ট্রের তিন। পরবর্তী ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র হারলে আর সোভিয়েতরা জিতলে তারাই হবে চ্যাম্পিয়ন।

তবে আর কোনো অঘটন ঘটল না। ব্রুকসের ছেলেরা ফিনল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়। ফলে সুইডেনের বিপক্ষে জয় পেলেও সোভিয়েতদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রৌপ্যপদক নিয়ে। পরাজয় সত্ত্বেও আইস হকিতে সোভিয়েত আধিপত্য বজায় থাকে ১৯৯১ সালে ইউনিয়ন ভেঙে যাবার আগপর্যন্ত। তাদের দল ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রকেও আবার সোভিয়েতদের হারাতে অপেক্ষা করতে হয় ১১ বছর।

ডিজনির মুভি “মিরাকল”; Image Source: moviescore.com

মিরাকল অন আইস নিয়ে একই নামে ২০০৪ সালে ডিজনি স্টুডিও থেকে হলিউড চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে ১৯৮০ সালের লেক প্লাসিডে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জয় মোটামুটি সঠিকভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। কোচ হার্ব ব্রুকসের চরিত্রে সেখানে অভিনয় করেছেন কার্ট রাসেল।

This is a Bengali language article about “Miracle on Ice”. The title is attributed to the unexpected win of the US Ice Hockey Team over the Soviets in 1980 winter Olympics. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Lake Placid 1980 Olympic Winter Games. Encyclopedia Britannica.
  2. Peters, C. (2020). Inside the Miracle on Ice: How Team USA defied the numbers to beat the. ESPN.
  3. Chevreux, Laurent & Plaizier, Wim & Schuh, Christian & Brown, Wayne & Triplat, Alenka. (2014). The Miracle on Ice.
  4. Michael, B. (2016). Miracle on Ice: How a Stunning Upset United a Country.Compass Point Books; Illustrated edition.

Feature Image: mprnews.org

Related Articles

Exit mobile version