Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আর্জেন্টিনার টানা সাত ফাইনাল হারের সাতকাহন

নতুন ম্যারাডোনার তকমা জুটিয়েছিলেন অনেক আর্জেন্টাইনই। বাতিস্তুতা থেকে শুরু করে ওর্তেগা, আইমার, সাভিওলা, তেভেজ কিংবা হালের মেসি। কিন্তু ছিয়াশির ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়নি কারোরই। বিশ্বকাপ দূরের কথা, বাতিস্তুতা ছাড়া মেজর ট্রফিও জেতার স্বাদ হয়নি কারো। অস্কার রুগেরির হাতে ‘৯৩ কোপা আমেরিকা, আর্জেন্টিনার সর্বশেষ সুখ স্মৃতি হয়ে রয়েছে সেটিই। এর মাঝে পাঁচটি যুব বিশ্বকাপ আর দুটি অলিম্পিক জিতলেও, সিনিয়র টিমের ট্রফি ক্যাবিনেট যোগ হয়নি একটি শিরোপাও।

১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ হাতে ম্যারাডোনা; Source : Fifa.com

অথচ গত ২৫ বছরে আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলেছে সাতটি, হেরেছে সবকটিতেই। এই সময়ের মধ্যেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ১৩টি ফাইনালে খেলে জয়লাভ করেছে ১০টিতেই। চলুন দেখা যাক আর্জেন্টিনার সাতটি ফাইনালের দুঃখগাথা।

ফিফা কনফেডারেশন কাপ ( ১৯৯৫ )

ডেনমার্ক  ২ –০  আর্জেন্টিনা

জাপান আর নাইজেরিয়াকে টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাই ছিলো ফাইনালের ফেভারিট। ওর্তেগা, বাতিস্তুতা, ক্রেসপোদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগই জয় দেখাবে আর্জেন্টিনাকে, এমনটাই ভেবেছিলেন ফুটবল বোদ্ধারা। কিন্তু ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৫ সালে কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে বসা ৩৫ হাজার দর্শকের সামনে দাবার চাল উল্টে দিয়ে শিরোপা উল্লাসে মেতেছিলো মাইকেল লাউড্রপের ডেনমার্ক। ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টিতে ডেনমার্ককে এগিয়ে নেন লাউড্রপ। এরপর শত চেষ্টা করেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি আর্জেন্টিনা। উল্টো ৭৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন রাসমুসেন। খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয় আগেরবারের প্রথম কনফেডারেশন কাপ জয়ী আর্জেন্টিনাকে।

তিরানব্বই এর কোপা আমেরিকা, আর্জেন্টিনার সর্বশেষ সুখস্মৃতি; Source: Fifa.com

কোপা আমেরিকা (২০০৪)

আর্জেন্টিনা ২(২) – ২(৪) ব্রাজিল

পরবর্তী ফাইনাল খেলতে আর্জেন্টিনাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো ৯ বছর। পেরুতে অনুষ্ঠিত সেই বছরের কোপা আমেরিকায় বরাবরের মতো ফেভারিট ছিলো মার্সেলো বিয়েলসার আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্ব আর নকআউট স্টেজগুলোতে দাপট দেখিয়েই ফাইনালে আসে তেভেজ, সাভিওলা, আয়ালারা। কিন্তু ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের সামনে তালগোল পাকিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনা। ২০ মিনিটে গঞ্জালেজের পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলে ৪৫ মিনিটে ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান লুইসাও। ৮৭ মিনিটে দেলগাদোর গোলে যখন আর্জেন্টিনা জয়ের সুবাতাস পাচ্ছিলো, তখনই ৯৩ মিনিটে দুর্দান্ত গোলে ব্রাজিলকে দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরান সেবারের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার পাওয়া আদ্রিয়ানো। অতিরিক্ত সময়ে কোনো দলই গোল না পেলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম দুটি শট নষ্ট করেন আলেসান্দ্রো ও হেইঞ্জ। সেই সুযোগে প্রথম চারটি শটেই জয় নিশ্চিত করে ব্রাজিল। পেরুর লিমায় আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে কাপ নিয়ে উল্লাসে মাতেন ফ্যাবিয়ানো, আদ্রিয়ানোরা।

কনফেডারেশন কাপ (২০০৫)

ব্রাজিল ৪ – ১ আর্জেন্টিনা

ব্রাজিল বিশ্বকাপ ও আন্তঃমহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন দুটোই হওয়া সত্ত্বে কোপা আমেরিকা রানার্স আপ হিসেবে জার্মানি কনফেডারেশন কাপের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা। আবারো ফাইনাল, সামনে ব্রাজিল। সেবার ও ব্রাজিলের কাছেই শিরোপা খোয়াতে হয় পেকারম্যানের শিষ্যদের। বরং এবার ফাইনালে ব্রাজিলের সামনে অসহায়ই ছিলো জানেত্তি, রিকুয়েলমে, আইমাররা। আদ্রিয়ানোর দুই গোল সাথে কাকা আর রোনালদিনহোর গোলে এক ঘন্টার মধ্যেই ৪-০ এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ৬৫ মিনিটে দলের হয়ে সান্ত্বনা মূলক গোলটি করেন পাবলো আইমার। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জার্মানিতে ব্রাজিলকে দ্বিতীয়বারের মতো কনফেডারেশন কাপ জেতান কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা।

কোপা আমেরিকা (২০০৭)

ব্রাজিল  ৩ – ০ আর্জেন্টিনা

কাগজে কলমে শিরোপার যোগ্য দাবিদার ছিলো আলফিও বাসিলের আর্জেন্টিনা। তরুণ লিওনেল মেসি, মাশ্চেরানো, ম্যাক্সি রদ্রিগেজের সাথে অভিজ্ঞ রিকুয়েলমে, ক্রেসপো, ক্যাম্বিয়াসো, তেভেজরা ছিলেন। নকআউট স্টেজে প্রতিটি প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েই ফাইনালে আসে আর্জেন্টিনা। বরাবরের মতোই প্রতিপক্ষ আবার ব্রাজিল। চেনা প্রতিপক্ষ হলেও আবারো হতাশায় পুড়তে হয় আর্জেন্টাইনদের। পুরো টুর্নামেন্টে অনিয়মিত থাকা ব্রাজিল ফাইনালে হয়ে ওঠে দুর্দান্ত। ৪ মিনিটে বাপ্তিস্তার গোলের পর ৪০ মিনিটে ক্যাপ্টেন আয়ালার আত্মঘাতী গোলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। সেকেন্ড হাফে দানি আলভেজের গোলে ৩-০ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দুঙ্গার দল। এই ম্যাচ দিয়েই জাতীয় দলের হয়ে ফাইনাল হার শুরু হয় সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির।

২০০৭ সালে তারকায় ঠাসা আর্জেন্টিনা টিম; Source: Gettyimages.co.uk

বিশ্বকাপ (২০১৪)

জার্মানি ১ -০ আর্জেন্টিনা

টুর্নামেন্টে প্রথম ফেভারিট না হলেও  টিম কম্বিনেশন আর একজন লিওনেল মেসির জন্য আর্জেন্টিনা ছিলো টপ ফেভারিটদের মধ্যে একটি। সাবেলার অধীনে একের পর এক বাধা অতিক্রম করে মারাকানায় উপস্থিত হয় আর্জেন্টিনা। হিগুয়াইন, আগুয়েরো, ডি মারিয়া, মেসিদের পারফরম্যান্সে আশাবাদীও ছিলো লা আলবিসেলেস্তে সমর্থকরা। কিন্তু বিধিবাম! ইনজুরি সমস্যায় ফাইনালে বেঞ্চে বসে থাকতে হয় ডি মারিয়াকে। ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই ৭৫ হাজার দর্শকের সামনে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা ও জার্মান বাহিনী। মারাকানা, মেসি, বিশ্বকাপ ফাইনাল। মঞ্চ প্রস্তুতই ছিলো। কিন্তু পারলেন না মেসি, পারেননি কোনো আর্জেন্টাইনই। বরং একের পর এক সহজ সুযোগ মিস করেছেন হিগুয়াইন, প্যালাসিও, মেসি, আগুয়েরোরা। সেই সুবাধে মারিও গোতজের ১১৩ এর মিনিটে গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। পুরো টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনা আর শোধ করতে পারেনি সেই গোল। এই হারের মধ্য দিয়ে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে আর্জেন্টিনা।

২০১৪ ফাইনালের পর বিমর্ষ লা আলবিসেলেস্তে বাহিনী; Source: Telegraph.co.uk

কোপা আমেরিকা (২০১৫)

চিলি ০(৪) – ০(১) আর্জেন্টিনা

চিলিতে অনুষ্ঠিত ২০১৫ কোপা আমেরিকায় অন্যতম ফেভারিট ছিলো আর্জেন্টিনা। সাম্প্রতিক ফর্ম ধরে রেখেই ফাইনালে আসে শেষ বিশ্বকাপে রানার্স আপ হওয়া দলটি। সেমিফাইনালে প্যারাগুয়েকে ৬-১ উড়িয়ে দেয় মেসি, পাস্তোরেরা। কিন্তু ফাইনালে সেই চিরাচরিত আর্জেন্টিনা। সাম্পাওলির চিলির প্রেসিং ফুটবলের কাছে মার খায় আর্জেন্টিনার নান্দনিক ফুটবল। পুরো সময় হাঁসফাঁস করে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ড। মেসিকেও ভালোভাবে বোতলবন্দী করে রাখে মেদেল, ভিদালরা। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও কোনো দলই গোলের দেখা না পাওয়ায় খেলা গড়ায় ট্রাইবেকারে। আর্জেন্টিনার হয়ে ক্যাপ্টেন মেসি প্রথম শটটি ঠিকভাবে নিলেও পরবর্তী দুটি শট মিস করে বসেন গঞ্জালো হিগুয়াইন ও এভার বানেগা। অন্যদিকে প্রথম তিনটি শট সফল ভাবে নেওয়ার পর সানচেজের চতুর্থ শটে নিজেদের দর্শকের সামনে ৯৯ বছরে প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকা জেতে চিলি। আবারো মাথা নিচু করে শিরোপার পাশ দিয়ে হেঁটে আসতে হয় জেরার্ডো মার্টিনোর শিষ্যদের।

কোপা আমেরিকা  (২০১৬)

চিলি ০(৪) – ০(২) আর্জেন্টিনা

শতবর্ষ উপলক্ষ্যে কনমেবল ঠিক এক বছর পর নিয়মের ব্যাতিরেকে আরেকটি কোপা আমেরিকার আয়োজন করে, যার নাম ছিলো ‘কোপা আমেরিকা সেন্টারিও’। আর্জেন্টিনার সামনে দুঃসময় মোচনের আরেকটি সুযোগ। বরাবরের মতই নকআউট স্টেজের সব প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে লা আলবিসেলেস্তেরা। লিওনেল মেসির অসাধারণ পারফরমেন্সের সাথে ডি মারিয়া, হিগুয়াইন, লাভেজ্জিদের সাথে মেসির বোঝাপোড়ায় সব ফুটবল বোদ্ধারা আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন ধরে রাখেন।

কিন্তু আর প্রতিবারের মতোই আবারো আর্জেন্টিনার ফাইনালে সেই নখদন্তহীন পারফরম্যান্স। স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা আর ব্রাভোর অতিমানবীয় সব সেভে এবারো গোলের খাতা খুলতে পারলো না আর্জেন্টিনা। ফলাফল আবার ট্রাইবেকার, আবার আর্জেন্টিনার নার্ভ হারানো। এবার চিলির ভিদালের প্রথম শটটি রোমেরো ফিরিয়ে দেওয়ায় আর্জেন্টিনার সামনে সুযোগ ছিলো এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বসা প্রায় ৮৩ হাজার দর্শকের সামনে প্রথম শটটি মিস করেন স্বয়ং লিওনেল মেসি। এরপরের দুটি শটে মাশ্চেরানো, আগুয়েরো গোল করলেও চতুর্থ শটটি মিস করে বসেন লুকাস বিলিয়া। সেই সুবাদে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে সানচেজ, ভিদালরা। আর আর্জেন্টিনার ইতিহাসে যোগ হয় আরেকটি ফাইনাল ব্যর্থতার গল্প। ম্যাচ শেষে অভিমানে জাতীয় দল থেকে আকস্মিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন লিওনেল মেসি। যদিও পরে ভক্তদের ভালোবাসায় ফিরতে বাধ্য হন তিনি।

২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনালে পেনাল্টি মিসের পর মেসি; Source: Indiatimes

দুয়ারে আরেকটি বিশ্বকাপ। বরাবরের মতোই ফেভারিট তকমা সেটে আছে আর্জেন্টিনার গায়ে। অভিজ্ঞ মেসি, আগুয়েরো, ডি মারিয়া, মাশ্চেরানোদের সাথে আছেন তরুণ দিবালা, পারেদেস, লো সেলসোরা। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলের এই দলটা থেকে কি সেরাটা বের করে আনতে পারবেন হোর্হে সাম্পাওলি, নাকি যোগ হবে আরেকটি আর্জেন্টাইন আক্ষেপের গল্প? জবাব পাওয়া যাবে শীঘ্রই ।

আর্জেন্টিনা বর্তমান টিম; Source: MundoAlbiceleste

This article is about consecutive 7 final losses of Argentina in international stage. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image : Fifa wallpapers.com

Related Articles