![](https://assets.roar.media/assets/zwi6TNdBwB8x6t5d_11.jpg?w=1200)
যে ইংল্যান্ডে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজন, সেখানে বছরে মেরেকেটে বাংলাদেশের খেলা হয় না বললেই চলে। সে কারণে সেখানকার কন্ডিশনটা বাংলাদেশের জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। তারপরও, গেল কয়েক বছরে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডে ম্যাচ খেলার সুযোগ হওয়ায় বাংলাদেশ ইংলিশ কন্ডিশন সম্পর্কে কিঞ্চিত হলেও ধারণা পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই ধারাবাহিকতায়, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা পেসারদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাবেন; সেই আশা তিনি করতেই পারেন। করেছেনও তা-ই।
সাম্প্রতিককালে ক্রিকেট বিশ্ব হয়ে উঠছে ব্যাটসম্যানদের দুনিয়া। তাদেরকে প্রতিহত করতে গিয়ে বোলারদের খুঁজতে হচ্ছে নতুন সব বৈচিত্র্য। প্রতিবারের মতো গ্রুপভিত্তিক নয়, সব দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে হবে এবারের বিশ্বকাপে অংশ্রহণকারী দলগুলোকে। স্বাভাবিকভাবেই, দর্শক টানার জন্যে হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) এর চাওয়া থাকবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। প্রচুর রান, চার-ছক্কার মিছিল। সবকিছু ভেবেচিন্তেই ১৫ সদস্যের দলে নেওয়া হয়েছে পাঁচ পেসার। মাশরাফির সঙ্গে আছেন মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং আবু জায়েদ রাহী। এমনকি ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়া তাসকিন আহমেদের সম্ভাবনাও ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে উইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে তাসকিনকে কোচদের অনুরোধে শেষ সময়ে দলে নেওয়ার পর তার বিশ্বকাপ সম্ভাবনা বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাঁচ পেসার নিয়েও সেখানকার ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ভাবাচ্ছে মাশরাফিকে। এ প্রসঙ্গে তার ভাবনা- পেসাররা যদি সবাই ভালো করে, তাহলে ফলাফল ভালো করা সম্ভব।
![](https://assets.roar.media/assets/cfeTPfhQGLRe9ysl_12.jpg)
তিনি বলেন,
শেষবার আমরা বিশ্বকাপ খেলেছিলাম অস্ট্রেলিয়ায়। এবারও প্রায় একই কন্ডিশন। উইকেটও ছিল ফ্ল্যাট। তাদের চাওয়াই ছিল এমন উইকেট। ওর মধ্যেই আমাদের পেসাররা ভালো করেছিল। ইংল্যান্ডেও আমাদের ভালো করার সামর্থ্য আছে। আমি নিশ্চিত, ওখানে যে কোনো দলের পেস বোলাররা যদি ভালো করে তাহলে ওখানে ভালো করার সুযোগ বেশি থাকবে।
পেসারদের যতটা হেল্প উইকেটে থাকবে, স্পিনারদের ততটা থাকবে না। আমরা যারা পেস বোলার আছি, আমরা যদি শুরুটা ভালো করি, ভালো বোলিং করি তাহলে আমাদের জয়ের সুযোগ বেশি থাকবে। আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বোলাররা ভালো করিনি বলেই দলগতভাবে পারফরম্যান্স সেভাবে ভালো করতে পারিনি। অবশ্যই আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিলাম। কিন্তু ইনস অ্যান্ড আউট আমরা চার ম্যাচে পেস বোলিং ভালো করিনি। ওটা আমাদের মাথায় আছে। আমরা পেস বোলিং ইউনিট সম্মিলিতভাবে কতটা ভালো করতে পারি সেটা নিয়ে কাজ করছি। নির্দিষ্ট করে একজনকে না বলে পুরো পেস ইউনিটকে ভালো করতে হবে।
এশিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি স্পিনার। কিন্তু ইংলিশ কন্ডিশনে এসব স্পিনারই হয়ে উঠবেন নখদন্তহীন। তবে মাশরাফির মতে, বাংলাদেশ স্পিন নিয়ে সেখানে সুবিধা করতে পারবে না তা নয়, বরং অভাবটা ভালো লেগ স্পিনারের। ফ্ল্যাট উইকেটে লেগস্পিনারের কদর আর ইংলিশ-অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে তাদের কার্যকারিতার কথা মাথায় রেখেই মাশরাফির এই আফসোস।
![](https://assets.roar.media/assets/gVRQ6fdxGeTgu3sW_13.jpg)
মাশরাফি বলেছেন,
ওয়ানডে ক্রিকটে অনেক সময় বলের গতি গুরুত্ব পায় যদি কি না বোলারের ভেরিয়েশন ঠিকমতো থাকে। তো সেগুলোর সঠিক ব্যবহার ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করাটাই মূল কথা। আমাদেরকে সেভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেহেতু আমাদের এক্সট্রা পার্ট… রিস্ট স্পিনার নেই আমাদের। এখানে আমাদের অভাব আছে। তবে সাকিব ওয়ার্ল্ড ক্লাস। মিরাজ খুব ভালো করছে। মুস্তাফিজ, রুবেল, সাইফউদ্দিন, আমি আছি।
ইউনিট হিসেবে আমরা খারাপ না যে আমরা ওই চাপ হ্যান্ডেল করতে পারবো না। কিন্তু কোনো কোনো ম্যাচে আপস-ডাউন যাবে। কিন্তু কামব্যাক করা জরুরি। এটা হতে পারে এক ম্যাচ পর ভালো হচ্ছে, আবার মাঝখানে গিয়ে খারাপ করছি। ভালো দুই-একটা উইকেট পড়লে খেলা বোলারদের পক্ষে চলে আসে। এসব জিনিস কিন্তু হেল্প করবে। আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে আমরা জানি। আমাদের সেরা সামর্থ্য ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে দেখা গেছে, সেখানকার উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হিসেবে প্রস্তুত করায় রান উঠছে ৩০০-৩৫০ পর্যন্ত। বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডে একই অবস্থা থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাতে করে বাংলাদেশের জন্য বলা যায় উভয় সঙ্কট। প্রথমত, পরে ব্যাট করতে গিয়ে এত রান চেজ করা তামিম-মুশফিকদের জন্য অনেক কঠিন। আবার বোলারদের পক্ষে আটকানোটাও হবে বেশ চ্যালেঞ্জিং।
![](https://assets.roar.media/assets/whPXGZsTWGFDhpz7_14.jpg)
ঘুরেফিরে তাই বাংলাদেশকে দুদিক চিন্তা করেই এগোতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মাশরাফির মনোযোগ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু পাওয়া। এখানেও একজন লেগস্পিনারের অভাব এখনই টের পাচ্ছেন দলের এই অধিনায়ক। একজন লেগ স্পিনারের পক্ষে ব্রেক থ্রু দেওয়া বেশ সহজ বলেই মনে করেন তিনি।
তার মতে,
ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ডে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে আমরা জানতাম যে ব্যাটিং করা কঠিন। কিন্তু এখন দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে প্রচুর রান হয়। আর বিশ্বকাপে আইসিসির চাওয়া থাকে ফ্ল্যাট উইকেট এবং প্রচুর রানের। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশ্বকাপে অনেক রানের ম্যাচ হবে। আর এমনিতেও বছরের এই সময়ে ইংল্যান্ডে অনেক রান হয়। সব দলের বোলারদের জন্যই চ্যালেঞ্জ। আমাদের কোনো লেগ স্পিনার নেই, এটা আমাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য দলে যাদের আছে তারা ব্রেক থ্রু দিয়ে দেয় মাঝখানে। রান করার সামর্থ্য যে আমাদের নেই তা বলবো না। অতীতে হয়তো এরকম রেকর্ড খুব একটা নেই।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা ৩২৯ করেছিলাম। তামিম একশ করেছিল। এরকম যদি ব্যাটিং করি তাহলে পসিবল। অন্যান্য দল যেরকম নিয়মিত করছে। আমাদের সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় স্কোর নাই। একটা কারণ হতে পারে আমাদের হোম কন্ডিশনে তো এত এত রান হয় না। এটা একটা ব্যাপার। অভ্যাসের একটা ব্যাপার আছে। বলা কঠিন, তবে সামর্থ্য যে নেই তা বলবো না। আমাদের ব্যাটিং অর্ডার অনেক অভিজ্ঞ। কিন্তু অনফিল্ডে ২২ গজে যে চাপটা আসবে ঐ চাপ হ্যান্ডেল করতে হবে, আবার রানও করতে হবে। এটা ডিপেন্ড করে মেন্টালিটির ওপর। কিন্তু সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নাই।
প্রতিপক্ষ যদি বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়, তাহলে সেই রানপাহাড় অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ না নিয়ে উপায় নেই। দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা তো বটেই, তরুণদেরকেও চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। পাশাপাশি যতটা পারা যায় ঝুঁকি নিতে দ্বিধা না করারও পরামর্শ তার। মোদ্দা কথা, দিন চেষ্টা, শ্রম বা ভাগ্যের জোর; যা-ই বলা হোক না কেন, লোকে দেখবে কে জিতেছে আর কে হেরেছে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি সেই জয়টাই দেখতে চান বাকি সদস্যদের কাছ থেকে।
আমরা এখনো ৩২০ বা ৩৪০ চেজ করতে অভ্যস্ত নই। আবার প্রতিপক্ষকে নিয়মিত ২৭০-২৮০-এর মধ্যে আটকাতেও পারছি না। সুতরাং এখানে একটা অভ্যাসের ব্যাপার আছে। এর মানে এটা নয় যে কেউ ৩২০ করলে আমরা তা চেজ করতে যাবো না। আপনি যদি এক রানে হারেন বা দেড়শ বা ৭০ অথবা ৮০ রানে হারেন, হার তো হারই। আমাদের সর্বস্ব দিয়েই খেলতে হবে। কেউ ৩২০ করলে আমাদের ৩২১-এর লক্ষ্য নিয়েই খেলতে হবে। এর জন্য যত ঝুঁকি নেয়া সম্ভব, সবই নিতে হবে। ঝুঁকি না নিলে হবে না। অন্যরাও তা-ই করবে। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমাদের সব সামর্থ্য আছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা লড়াই করবো। এই মানসিকতা থাকলে ৩২০ করতে বা প্রতিপক্ষকে ২৫০-এ অলআউট করা সম্ভব। সবাই যেমন সর্বশক্তি দিয়ে খেলবে, আমাদেরও তাই নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
বলেন তিনি।
![](https://assets.roar.media/assets/osJx9n41MFHJCKRg_16.jpg)
মাশরাফির চাওয়ার সাথে দলের অন্যান্য সদস্যের চাওয়ার মিল ও কাজের মিল হলেই হচ্ছে। বাংলাদেশ যে চাইলেই একটা ভালো দিনে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ভালো কিছু করে দেখাতে পারে, তার অহরহ নজির তারা দিয়েছে।