Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোর বাংলা প্লেয়ার্স অফ দ্য মান্থ: ফেব্রুয়ারি

ইতিহাসের খেরোখাতায় চলে গেলো আরেকটি মাস, ফেব্রুয়ারি। তবে যেতে যেতে ফুটবল দুনিয়ায় সেটি বাজিয়ে গিয়েছে অশনি সংকেত, ঠিক সারা বিশ্বের মতোই। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, এবং তার করাল গ্রাস থেকে ছাড়া পায়নি ফুটবলও। ইতঃমধ্যেই সিরি আ’র সকল ম্যাচ এপ্রিলের তিন তারিখ পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে, লা লিগা খেলা হবে দর্শকশূন্য মাঠে। 

এই বিরূপ গহীন সময়ে স্মৃতিচারণ মন্দ শোনায় না। ফেব্রুয়ারিতে ফুটবলে ফিরেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ, সাথে লিগের লড়াইগুলোও জমে উঠেছে। সেখান থেকে স্মৃতিচারণ করে দেখা যাক, কারা ছিলেন গত মাসের সেরা খেলোয়াড়, কে কে নিজেদের লিগ কাঁপিয়েছেন, কারা ফেব্রুয়ারির রোর বাংলা প্লেয়ার্স অফ দ্য মান্থ। 

প্রিমিয়ার লিগ – ব্রুনো ফার্নান্দেজ 

এসেই ঝড় তুলেছেন ব্রুনো; Image: Carl Recine 

ব্রুনো ফার্নান্দেজ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসছেন, এরকম গুজব গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময়ই শোনা যাচ্ছিলো। এসে এমনই খেললেন, ইউনাইটেড ফ্যানরা হয়তো আক্ষেপ করছেন এখন, কেন আগে এলেন না এই পর্তুগীজ! এলে হয়তো লিগ টেবিলে আরেকটু ওপরে থাকতেন তারা, পল পগবার না থাকাটা এতখানিও চোখে লাগতো না। 

কী করেছেন এই পর্তুগীজ? ফেব্রুয়ারিতে লিগ ম্যাচ খেলেছেন মোটে তিনটি, তাতে দুই অ্যাসিস্ট এক গোল। তাকে কিনে আনা হয়েছিলো ৫৫ মিলিয়ন দিয়ে। ইউনাইটেড ভক্তরা এখন বলছেন হয়তো, সস্তায় হীরের টুকরো পেয়েছেন তারা! 

উলভসের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু না করতে পারলেও স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে গিয়েই করেন অ্যাসিস্ট। আর সেটায় ভর করেই চেলসির ঘরের মাঠে তাদের হারিয়ে আসে ইউনাইটেড। ওয়াটফোর্ডের সঙ্গে হোম ম্যাচে তো আরও দুর্দান্ত তিনি, পেনাল্টি থেকে নিজের ইউনাইটেড ক্যারিয়ারের প্রথম গোল তো পেলেনই, সাথে করলেন আরেক অ্যাসিস্ট। 

এভারটনের সাথে তার দূরপাল্লার শটের গোলের জোরেই এক পয়েন্ট নিয়ে ফেরে ইউনাইটেড। যদিও সেটা পহেলা মার্চে, কিন্তু নতুন সাইনিং এর জন্য এক দিন তো ছাড় দেওয়াই যায়, কী বলুন? 

লা লিগা – লিওনেল মেসি 

চার গোল, ছয় অ্যাসিস্ট, লা লিগার সেরা খেলোয়াড় কে সেটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন আছে? Image: Albert Gea/Reuters

লিগের সেরা খেলোয়াড়কে ‘প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ’ পুরষ্কারটা ধরিয়ে দিলে লা লিগায় লিওনেল মেসিই বোধকরি প্রতি মাসে পেতেন। যদিও সে হিসেব করা হয় না। কিন্তু যে হিসেবটুকু হয়, সেখানেও মেসি ফেব্রুয়ারি মাসে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন তিনি রেকর্ড ছ’বার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। 

ফেব্রুয়ারি মাসে মেসি লা লিগায় ম্যাচ খেলেছেন চারটি, তাতে চার গোল। অ্যাসিস্ট? মাত্র ছয়টি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, প্রথম তিন ম্যাচে গোলই পাননি তিনি। কিন্তু শেষ ম্যাচে সব ঝাল মিটিয়েছেন এইবারের ওপর, ন্যু ক্যাম্পে গুনে গুনে তাদের দিয়েছেন চার গোল, দল জিতেছে ৫-০ গোলের ব্যবধানে। 

ফেব্রুয়ারির প্রথম ম্যাচে লেভান্তের সাথে করেন জোড়া অ্যাসিস্ট, বেটিসের ঘরের মাঠে সেটিকেও টপকে যান তিন-তিনটে অ্যাসিস্ট করে। পরের ম্যাচে গেতাফের সঙ্গেও এক অ্যাসিস্ট। উল্লেখ্য, তিনটি ম্যাচই বার্সেলোনা জেতে এক গোলের ব্যবধানে: ২-১, ৩-২ ও ২-১।

তবে নিজের প্রলয়ংকরী রূপ দেখান মাসের শেষ ম্যাচে, প্রথমার্ধেই করে ফেলেন হ্যাট্রিক। আর দ্বিতীইয়ার্ধে চতুর্থ গোল করে যেন পুষিয়ে দেন সারা মাসের গোলখরা। বার্সেলোনা জেতে চার ম্যাচেই, অধিনায়কের দুর্দমনীয় ফর্মে ফেব্রুয়ারি মাস শেষ করে তারা লিগ টেবিলের শীর্ষে থেকে। 

সিরি আ – সিরো ইমমোবিলে 

রোনালদোকে পেছনে ফেলে সেরা ইমমোবিলে; Image: Massimo Pinca/Reuters

এই মৌসুমটাই দুর্দান্ত কাটাচ্ছেন সিরো ইমমোবিলে। করোনার আঘাতে ইতালিতে লিগ বন্ধ হবার আগে ২৬ ম্যাচে গোল করেছেন ২৭টি। যে লিগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলেন, সেখানেই তিনি ছয় গোল বেশি করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর তার এই পারফর্মেন্সের সুবাদের জুভেন্টাসের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে ল্যাজিও, পিছিয়ে আছে মাত্র এক পয়েন্টে। 

ফেব্রুয়ারি মাসেও সেই দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রেখেছিলেন এই ইতালিয়ান স্ট্রাইকার, ছয় ম্যাচে তিন গোল তো করেছেনই, সঙ্গে করেছেন তিন অ্যাসিস্টও! 

ফেব্রুয়ারির প্রথম ম্যাচেই স্পালকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয় ল্যাজিও, সেখানে ইমমোবিলে এক গোলের সঙ্গে করেন জোড়া অ্যাসিস্ট। তবে পরের দুই ম্যাচে গোলে অবদান রাখতে ব্যর্থ হন, তাতে এক ম্যাচ কোনক্রমে জিতলেও হেলাস ভেরোনার সঙ্গে পয়েন্ট হারায় ল্যাজিও। ইন্টারের সাথে গোল করে দলকে জয়ের ধারায় ফেরান ইমমোবিলে, জেনোয়ার সঙ্গেও গোল করে দলকে এনে দেন তিন পয়েন্ট। মাসের শেষ ম্যাচে বোলোনাকে ল্যাজিও হারায় ২-০ গোলে, তাতে ইমমোবিলে করেন এক অ্যাসিস্ট, জুভেন্টাসের ঠিক পেছনে থাকাটা নিশ্চিত হয় তাদের। 

বুন্দেসলিগা – জ্যাডন স্যাঞ্চো 

এই ব্রিটিশ কিশোর আর কত অবাক করবেন? Image: Leon Luegeler/Reuters

জ্যাডন স্যাঞ্চো আর কতবার প্রমাণ করবে, বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা? নয়তো ১৯ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ তরুণ এতটা দুর্দান্ত হবেন কী করে? এই মৌসুমে বুন্দেসলিগায় ম্যাচ খেলেছেন ২৩টি। গোলে অবদান? ২৯! ১৪ গোল, ১৫ অ্যাসিস্ট করেছেন, লিওনেল মেসির পর তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যিনি কিনা গোল-অ্যাসিস্ট দু’ক্ষেত্রেই দুই অংকের ঘরে গিয়ে পৌছেছেন এই মৌসুমে। 

ফেব্রুয়ারিও ব্যতিক্রম কিছু ছিলো না। স্যাঞ্চো বুন্দেসলিগায় বছরের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মাসে ম্যাচ খেলেছেন পাঁচটি, গোল করেছেন তিনটি, করিয়েছেন আরও তিনটি। 

মাসের শুরু হয় ইউনিয়ন বার্লিনের সাথে ম্যাচ দিয়ে, সে ম্যাচ বরুশিয়া হেসেখেলে জিতে নেয়, স্যাঞ্চো করেন এক গোল, এক অ্যাসিস্ট। পরের ম্যাচটা লেভারকুসেনের কাছে ৪-৩ গোলে বরুশিয়া হারলেও তাতে একটি অ্যাসিস্ট করেন স্যাঞ্চো। আর ফ্রাঙ্কফুর্টের সাথে পরের ম্যাচে করেন গোল, এবার আর জয়বঞ্চিত হয়নি ডর্টমুন্ড।

ব্রেমেন আর ফ্রেইবুর্গের সাথেও যথারীতি বজায় রাখলেন নজরকাড়া পারফরম্যান্স, বরুশিয়া জিতে নেয় দু’টো ম্যাচই। স্যাঞ্চোর এই দুর্দান্ত ফর্মই যে বরুশিয়ার এখনও লিগ রেসে পাল্লা দেওয়ার বড় অনুঘটক, সে কথা কি আলাদা করে বলবার আছে? 

লিগ ওয়ান – অ্যানহেল ডি মারিয়া 

নেইমার-এমবাপ্পেদের পেছনে ফেলে লিগ ওয়ানের সেরা খেলোয়াড় এ মাসে ডি মারিয়া; Image: Leon Kuegeler/Reuters

পিএসজির হয়ে এই মৌসুমে দারুণ ফর্মে আছেন অ্যানহেল ডি মারিয়া, ইতঃমধ্যেই করে ফেলেছেন আট গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট। ফেব্রুয়ারিতে লিগে খেলেছেন ছয় ম্যাচ, সেখানেও তিনি দারুণ। গোল করেছেন দুইটি, করিয়েছেন আরও ছয়টি!

মাসের প্রথম ম্যাচে মন্টেপেলিয়েরকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেয় পিএসজি, সেখানে ডি মারিয়া করেন এক গোল। নঁতের সাথে ২-১ ব্যবধানে জেতে পিএসজি, তাতে জোড়া অ্যাসিস্ট এই আর্জেন্টাইনের। অলিম্পিক লিঁও এর বিপক্ষেও গোল করান আরেকটি, সাথে নিজে করেন আরেকটি। 

অ্যামিয়েন্সের সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ ৪-৪ গোলে ড্র করে পিএসজি, সেখানে ডি মারিয়ার অ্যাসিস্ট একটি। মাসের শেষ ম্যাচে দিওন-এর সঙ্গে গোল বা অ্যাসিস্ট না পেলেও তার আগের ম্যাচেই জোড়া অ্যাসিস্ট করে পিএসজিকে সাহায্য করেছিলেন বোর্দোর সঙ্গে ৪-৩ গোলের আরেকটি থ্রিলার জিতে নিতে। লিগ ওয়ানে পিএসজি শীর্ষস্থানে আছে প্রায় ১২ পয়েন্টের ব্যবধানে; আর সেখানে ডি মারিয়ার অবদান ঠিক কম নয়, কী বলুন?

চ্যাম্পিয়নস লিগ – কেভিন ডি ব্রুইন

রিয়াল মাদ্রিদকে বার্নাব্যুতে হেনস্তা করে এসেছেন একা হাতে; Image: Sergio Perez/Reuters

চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় পর্বের ড্র হবার পর থেকেই সবার চোখ ছিলো ম্যানচেস্টার সিটি বনাম রিয়াল মাদ্রিদ সূচির দিকে। পেপ গার্দিওলা ও জিনেদিন জিদানের লড়াই দেখবার অপেক্ষায় ছিল সবাই। কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর প্রথম লেগে সব আলো যে কেভিন ডি ব্রুইন একা কেড়ে নেবেন, সে কথা কি কেউ ভেবেছিলো?

সে ম্যাচে প্রথম গোল অবশ্য মাদ্রিদই করেছিলো। ৬০ মিনিটের মাথায় ইস্কোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিলো রিয়াল। তবে তাদের সে আনন্দ টিকলো মাত্র ১৮ মিনিট। ডি ব্রুইনের দারুণ এক ক্রস থেকে সার্জিও রামোসকে হারিয়ে হেডে গোল করলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস, ম্যাচে ফিরলো সিটি। 

৮৩ মিনিটে পেনাল্টি বক্সে স্টার্লিংকে ফাউল করলেন দানি কার্ভাহাল, পেনাল্টি! সে ম্যাচে অধিনায়কত্ব পাওয়া ডি ব্রুইন কোনো ভুল করেননি, পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এনে দিয়েছিলেন ২-১ গোলের লিড। 

ম্যাচের শেষ মুহূর্তে রামোস লাল কার্ড পেলে সিটির জয় আরও মধুর হয়। ডি ব্রুইনের পারফরমেন্সে যে এখন প্রথম লেগ শেষে এগিয়ে সিটিজেনরাই! 

This article is in Bangla language. The article talks about the best players from each of the top five leagues and the UEFA Champions League. 

Feature Photo: Albert Gea/Reuters

Related Articles