Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টটেনহাম হটস্পার বনাম চেলসি: শিষ্য যখন গুরুর প্রতিপক্ষ

পোর্তোর হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে পর্তুগিজ কোচ জোসে মরিনহো ইংল্যান্ডে এসেছিলেন ২০০৪ সালে। ক্লাদিও রানিয়েরির শূন্যস্থানে, চেলসিতে প্রথম দফায় ছিলেন প্রায় ৪ বছরের মতো। নিজের প্রথম মৌসুমে মরিনহো জিতেছিলেন প্রিমিয়ার লিগ ও লিগ কাপ। পরের মৌসুমেও আবার প্রিমিয়ার লিগ চেলসির ঘরে। মরিনহো যেন জাদু জানেন, সেই জাদুর ছোঁয়া যেন লেগেছিল ব্লুজদের। তার অধীনে প্রথম দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে চেলসির হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেছিলে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। নিজের তৃতীয় মৌসুমে লিগে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করে, মরিনহো ইন্টার মিলানে পাড়ি জমান নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে। কিন্তু মরিনহো যুগে জ্বলে ওঠা ল্যাম্পার্ড পড়ে রইলেন শেকড় কামড়ে।

ল্যাম্পার্ড এবং মরিনহো ©PAUL ELLIS/AFP via Getty Images

ইন্টার থেকে রিয়াল মাদ্রিদ। ইতালি, স্পেনে প্রায় সব কিছু জিতে মরিনহো আবার যখন স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ফেরত গেলেন, ল্যাম্পার্ড তখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। তবুও গুরু শিষ্যের পূর্ণ-মিলন তো হলো। পাশাপাশি ল্যাম্পার্ড এবং মরিনহো আবারও জিতলেন প্রিমিয়ার লিগ। তবে চেলসিতে দ্বিতীয় দফাও দুই বছরের বেশি টিকলো না। ছোট্ট নির্বাসন কাটিয়ে মরিনহো যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ, ল্যাম্পার্ড ততদিনে ডার্বি কাউন্টিতে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় যুগের সূচনা করেছেন।

একসময়ের গুরু-শিষ্য যখন একই কাজে নিযুক্ত, তখন বিধাতাও চাইলেন তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ের দেখা। তাই সে বছর কারাবো কাপে মরিনহো বনাম ল্যাম্পার্ডের লড়াই বিশ্ব দেখতে পেল। যদিও সে ম্যাচে নিজের ছাত্রের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিলেন মরিনহো। এরপর দলের বিপর্যয়ের সময়ে ল্যাম্পার্ড ফিরেছেন তার ক্লাবে। মরিনহো পারেননি ওল্ড ট্রাফোর্ডেও থিতু হতে। কোচিং জীবন থেকে কিছুদিন নিজেকে বিরত রেখে তিনি আবার দায়িত্ব নিয়েছেন স্পার্সের। আর প্রথমবারের মতো সেই স্মৃতিবিজড়িত স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তার ছাত্রের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন স্পেশাল ওয়ান।

কারাবো কাপে মরিনহো বনাম ল্যাম্পার্ডের লড়াই © JIM WATSON/AFP via Getty Images

হোসে মরিনহো আর ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের প্রাক্তন স্মৃতি নিয়ে যথেষ্ট ভূমিকা দেওয়া শেষ। চলুন বর্তমানে ফেরত যাই। আলোচনা করা যাক চেলসি ও টটেনহাম হটস্পারের অবস্থা নিয়ে। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম স্থান বাদে বাকি অবস্থানের লড়াইগুলো জমজমাট। লিভারপুল দ্বিতীয় স্থানে থাকা লেস্টার সিটি থেকে এগিয়ে আছে ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে চেলসি ও স্পার্সের অবস্থা না বলাই শ্রেয়। ১৭ ম্যাচ খেলে চেলসির পয়েন্ট ২৯, আর স্পার্সের ২৬। চেলসি প্রতিপক্ষের মাঠে জিতলে শুধু স্পার্সের সাথে ব্যবধান বেড়ে যাবে। যদিও হারলে মরিনহো বাহিনীর খুব বেশি লাভ নেই, পয়েন্ট ব্যবধান কমলেও চেলসিকে টপকাতে পারবে না তারা।

তবে ফর্ম বিচারে কিন্তু স্পার্সই এগিয়ে। শেষ ৫ ম্যাচে চেলসি হেরেছে চারটিতে। আর বিধস্ত স্পার্স মরিনহোকে ফিরে পেয়ে নিজেরাও ফিরেছে স্বরূপে। সর্বশেষ ৫ ম্যাচে তারা জিতেছে চারটি। গোল করা ও হজম করার পরিসংখ্যানও দুই দলের জন্য প্রায় এক। উভয় দলের নড়বড়ে রক্ষণ প্রায় একই পরিমাণ গোল হজম করেছে, আর দুর্দান্ত আক্রমণভাগও গোল করেছে প্রায় সমপরিমাণ। দুই দলই যাচ্ছে একটি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে। তাই বিগত মৌসুমের ফলাফলের তথ্য-উপাত্ত মরিনহো ও ল্যাম্পার্ডের জন্য বিশ্লেষণ না করলেও চলবে।

টটেনহাম হটস্পার

এবার দলের ভেতরের অবস্থা দেখা যাক। উভয় দলে বড় ধরনের ইনজুরি সমস্যা না থাকলেও স্পার্সের ইনজুর্ড খেলোয়াড় সংখ্যা বেশি। হুগো লরিস তো নেই। এ ম্যাচের জন্য স্পার্স আরও পাবে না এরিক লামেলা, বেন ডেভিস ও টাঙ্গুই এনদম্বেলেকে। সাধারণত ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলা মরিনহোর একাদশে তাই গোলরক্ষকের দায়িত্বে থাকবেন দলের দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক পাউলো গ্যাজানিকা। দলের দায়িত্ব নিয়ে পচেত্তিনোর পছন্দের রাইট-ব্যাক হুয়ান ফয়েথের উপর ভরসা করতে পারেননি তিনি। তাই অঁরিয়ে, ডেভিনসন সানচেজ, অল্ডারভেইল্ড ও ভারতোংগেনদের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন রক্ষণ সামলানোর। তবে মরিনহোকে পেয়ে স্পার্স জয়যাত্রায় ফেরত আসলেও রক্ষণ স্বরুপে ফেরেনি। সব মিলিয়ে মরিনহোর অধীনে স্পার্স ৭ ম্যাচ খেলে ফেললেও ক্লিনশিট মোটে একটি। 

মধ্যমাঠের ডাবল পিভট অঞ্চলের জন্য এনদম্বেলেকে পাবেন না মরিনহো। তবে সে থাকলেও যে শুরুতে একাদশে থাকতেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মুসা সিসোকো অবশ্যই থাকবেন, এবং তার সঙ্গী হবেন এরিক ডায়ার বা হ্যারি উইংকস। এদের ভেতর থেকে যিনি থাকবেন না, তার খেলার সুযোগ মিলবে দ্বিতীয়ার্ধে। এই দুই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের উপরে খেলবেন মরিনহোর একাদশের সেরা খেলোয়াড় ডেলে আলি। পচেত্তিনোর আমলের শেষ সময়ের দিকে ইনজুরিতে জর্জরিত ডেলে আলি নিজের পজিশনে খেলার সুযোগ খুব কম পেতেন। তাই তার মধ্যমাঠের সক্ষমতাগুলো অনেকে প্রায় ভুলতে বসেছিল। কিন্তু মরিনহো যেন তাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। ডেলে আলির দেখা মিলছে আবার সেই বিধ্বংসী প্লে-মেকারের রোলে, যিনি বিরতিহীনভাবে প্রতি ম্যাচে গোল কিংবা অ্যাসিস্ট করেই যাচ্ছেন।

ডেলে আলিকে আবার সেই বিধ্বংসী প্লে-মেকারের রোলে দেখা যাচ্ছে © premierleague.com

স্পার্সের আক্রমণ অঞ্চলে খেলার জন্য এরিকেন ও লো চেলসো থাকলেও তাদের নিয়মিত মাঠে নামা হয় না। চেলসো স্পেশাল ওয়ানের একাদশে উপেক্ষিত থাকলেও এরিকসেন তেমন ফর্মে নেই, যতটা আছেন সন হিয়ুং মিং ও লুকাস মউরা। পচেত্তিনোর আমল শেষ হয়ে মরিনহোর নতুন সময়ে বেশ কিছু বদল হলেও মউরা আর সনের ভেতর কোনো পরিবর্তন নেই। তারা একসাথে স্পার্সে দুই উইং জুড়ে যেন আক্রমণের ফুলকি তোলেন। আর একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে তো আছেন হ্যারি কেইন। ডি-বক্সের মাঝে সুন্দর একটি গোল করার সুযোগ তৈরি হলে সেটা মিস করার মতো পাত্র কেইন নন। 

স্পার্সের আক্রমণভাগ বা মধ্যমাঠ কোনো অঞ্চলে তাদের সমস্যা নেই। মধ্যমাঠের সাথে আক্রমণভাগের রসায়নও দারুণ। তাই তাদের একমাত্র চিন্তা রক্ষণভাগ নিয়ে। কোনোভাবেই তাদের রক্ষণ এবার প্রতিপক্ষকে সামলাতে পারছে না। তাই গোল খাওয়া যেন তাদের সুনিশ্চিত। এজন্য ম্যাচ জেতার ভার সম্পূর্ণ ডেলে আলি ও কেইনদের হাতে। স্পার্স গোল হজম করুক আর না করুক, গোল তাদের নিয়মিত করে যেতেই হবে। 

সন হিয়ুং মিং ও হ্যারি কেইন © premierleague.com

চেলসি

প্রথম পছন্দের গোলরক্ষককে না পাবার ভয় ল্যাম্পার্ডের নেই। কেপা আরিজাবালাগা ফিট আছেন এ ম্যাচের জন্য। তবে ফিট থাকলেও সমস্যা তাকে কেন্দ্র করেই। যে ভরসায় তাকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আনা হয়েছিলো তার ছিটেফোঁটা তিনি পূরণ করতে পারেননি। তবে ব্লুজদের রক্ষণের অবস্থা স্পার্সের মতোই। আন্তোনিও রুডিগার ও কার্ট জুমাদের রক্ষণ চিন্তার ভাঁজ ফেলবে ল্যাম্পার্ডের কপালে। কারণ প্রতি ম্যাচে গোল হজম করা এ রক্ষণ খেলবে ডেলে আলি, সন ও কেইনদের সামনে।

সাধারণত ৪-৩-৩ ফর্মেশনে স্কোয়াড সাজালেও ল্যাম্পার্ডের দলে ম্যাসন মাউন্ট খেলেন একদম প্লে-মেকারের ভূমিকায়। আর মাউন্টের নিচে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভূমিকায় জর্জিনহো ও এনগোলো কান্তে। তবে মধ্যমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নষ্ট করার মূল কাজ কান্তে একাই করে থাকেন। আক্রমণ থেকে রক্ষণ উভয়দিকে খেললেও জর্জিনহো সবসময় সেভাবে সহায়তা করতে পারেন না কান্তেকে।

এনগোলো কান্তে © Getty images

আক্রমনাত্মক মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্টের পর চেলসির অন্যতম আক্রমণ-ভরসা হলেন পুলিসিচ ও ট্যামি আব্রাহাম। উইলিয়ান বা পেদ্রো রাইট-উইং পজিশনে নিয়মিত খেললেও তারা যথেষ্ট ধীরগতির। আর বয়সের সাথেও আগের ধার কমে গেছে। তাই গোল করার মূল দায়িত্ব নিতে হয় ট্যামি আব্রাহামকে। ১৬ ম্যাচে ১১ গোল করে যিনি এ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সফল স্ট্রাইকার। তাই স্পার্সে ডেলে আলি ও হ্যারি কেইন যে ভূমিকা পালন করেন, চেলসিতে সেই একই কাজ করতে হবে ম্যাসন মাউন্ট ও হ্যারি কেইনকে।

ট্যামি আব্রাহাম, মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সফল স্ট্রাইকার © premierleague.com

আনকোরা তরুণদের নিয়ে গড়া নতুন এক দল যে নিয়মিত ভালো ফুটবল উপহার দেবে না, সেটা ল্যাম্পার্ড নিজেও জানেন। কিছুটা এলোমেলো শুরুর পর চেলসি ভালো খেললেও সম্প্রতি আবার তাদের ফর্মে চির ধরেছে। ঘরের মাঠে বোর্নমাউথের বিপক্ষে হতাশাজনক ফুটবল খেলে হেরে পয়েন্ট হারানো সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়। বিপরীতে মরিনহোকে পেয়ে যেন জেগে উঠেছে গোটা স্পার্স শিবির। তাই এ ম্যাচকে সামনে রেখে স্পার্সই ফেভারিট। কিন্তু নিজের প্রাক্তন ক্লাবের বিপক্ষে মরিনহোর সবসময় নীভে যাবার স্বভাব। লিগে শেষ ৫ ম্যাচে তার একমাত্র হার কিন্তু প্রাক্তন ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেই। তাই ফর্মে থেকেও মরিনহোর পুরনো জুজু ফেরত আসবে নাকি ল্যাম্পার্ডের শিষ্যরা আবার ঘুরে দাঁড়াবেন? টটেনহাম হটস্পার স্টেডিয়ামে এ ম্যাচ শুধু ফলাফল নয়, এ দুটো প্রশ্নের জবাব দেবার জন্যও প্রস্তুত।

খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

Related Articles