Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একজন ‘র‍্যাম্বো’র উত্থান

যারা আর্সেনালের ২০১৯-২০ মৌসুমের এফএ কাপ জয়ের সাক্ষী হয়েছেন, তারা অবশ্যই এই জয়ের একটি বড় ক্রেডিট দেবেন তৎকালীন তাদের দ্বিতীয় গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজকে। কোভিডের জন্য খেলা বন্ধ হওয়ার পর যখন রুদ্ধদ্বারে আবার খেলা শুরু হয়, তখন দ্বিতীয় খেলাতেই ব্রাইটনের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েন মূল গোলরক্ষক বার্নড লেনো। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মার্টিনেজ। এর আগে একের পর এক লোন মৌসুম কাটিয়ে সেই মৌসুমেই দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক হতে পেরেছিলেন ২৮ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন। সেই মৌসুমের ইউরোপা লিগ ও কাপ খেলাগুলোয় ছিলেন পোস্টের নিচে। পরবর্তীতে নিজের অনবদ্য নৈপুন্যে আর্সেনালের ১৪তম এফএ কাপ জয়ের সারথী হন। লেনো ইনজুরি থেকে ফেরার আগে দলকে জেতান কমিউনিটি শিল্ড।

এখন আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতার সামনে আসে এক মধুর সমস্যা। কাকে খেলাবেন তিনি? মাত্র তিন মাসের দানবীয় নৈপুন্য দেখানো মার্টিনেজকে, না এর আগের পুরো দেড় মৌসুম আর্সেনালের ত্রাতা হয়ে থাকা লেনোকে? আর্তেতা বেছে নেন দ্বিতীয়জনকেই। অন্যদিকে মার্টিনেজ এক নম্বর গোলরক্ষক হওয়া ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে খেলার আশায় আর্সেনাল ছেড়ে পাড়ি জমান অ্যাস্টন ভিলায়। আর্সেনাল তার বদলি হিসেবে নিয়ে আসে আইসল্যান্ডের রুনার এলেক্স রুনারসনকে। কিন্তু দলে ফিরে লেনোর ভেতরে আগের মতো ক্ষিপ্রতা আর দেখা যাচ্ছিল না। বেশ কিছু ভুল করে গোল হজম করেন, আত্মবিশ্বাসের অভাবও ছিল দেখার মতো। সেই সাথে সেটপিস ও কর্নারে দুর্বলতাও চরমভাবে ফুটে উঠছিল। অন্যদিকে মার্টিনেজকে নিয়ে ভিলা তখন উড়ছে।

দ্বিতীয় গোলরক্ষন রুনারসনের অবস্থা আরো খারাপ। তার চরম বাজে পারফরম্যান্সের সুবাদে আর্সেনাল বাদ পড়ে কারাবো কাপ থেকে। তার উপর ভরসা করতে না পেরে আর্সেনাল ব্রাইটন থেকে ৬ মাসের জন্য লোনে নিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক ম্যাট রায়ানকে।

ব্রাইটনের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েন লেনো; Image Credit:  Richard Heathcote

কিন্তু এটি তো কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান ছিল না। মৌসুম শেষে ফিরে যান রায়ান, রুনারসনকে পাঠানো হয় লোনে। এবার আর্সেনাল বাজারে নামে নতুন এক ব্যাকআপ গোলকিপারের খোঁজে। প্রায় পুরো গ্রীষ্মের সময়টা তারা ব্যয় করে সদ্য রেলিগেশনে পরে চ্যাম্পিয়নশিপে চলে যাওয়া শেফিল্ড ইউনাইটেডের গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেলকে কেনায়। রামসডেলকে কেনার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র লেনোর উপর থেকে চাপ কমানো। সাথে সহজ কাপ ম্যাচগুলোয় লেনোকে বিশ্রাম দেয়া। কিন্তু আর্সেনালে সুযোগ পেয়েই রামসডেল এমন নৈপুণ্য দেখিয়ে দিয়েছেন যে এখন বার্নড লেনোই দলে তার জায়গা হারিয়ে ফেলেছেন। আর্সেনালের মূল গোলরক্ষক এখন এই ব্রিটিশ তরুণই।

আর্সেনালের হয়ে লিগে রামসডেলের অভিষেক হয় নরউইচের বিপক্ষে। সেই অ্যাওয়ে ম্যাচেই নিজের সামর্থ্যের জানান দেন রামসডেল। পেছনে একজন কমান্ডিং কিপার থাকায় বল আদানপ্রদানে সুবিধাও হচ্ছিল দুই সেন্টারব্যাক গ্যাব্রিয়েল আর হোয়াইটের।

মিকেল আর্তেতা আর দেরি না করে রামসডেলকেই আর্সেনালের গোলবারের নিচে সেট করেন। তাকে লেনোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

“বর্তমানে আমাদের দলে দুইজন অসাধারণ গোলরক্ষক রয়েছে। বার্নড লেনো অবশ্যই একজন ভাল গোলরক্ষক। আগের মৌসুমগুলোয় সে কীভাবে আমাদের বাঁচিয়েছে, সেটা ভুলবার নয়। কিন্তু আমাদের দরকার পারফম্যান্স। আমাদের ম্যাচ জিততে হবে। এজন্য আমাদের তাকেই দরকার যে আত্মবিশ্বাসের সাথে ভাল পারফরম্যান্স দেবে।”

আর্তেতা লেনোর চাইতে রামসডেলেই বেশি আশা-ভরসা পেয়েছেন।

রামসডেলকে কিনতে আর্সেনালের খরচ হয় ২৪ মিলিয়ন পাউন্ড। এত দামে কেউ ব্যাকআপ গোলরক্ষক কেনে? রীতিমতো চোখ কপালে উঠে যায় আর্সেনাল সমর্থক ও ফুটবল বিশ্লেষকদের। কিন্তু এখন এই মৌসুমের শেষদিকে এসে রামসডেল দেখিয়ে দিলেন, তার জন্য মিকেল আর্তেতার খরচ করা প্রতিটি পাউন্ডই ছিল সার্থক।

গোলরক্ষকদের পারফরম্যান্স কেমন, তা নির্ধারণ করার একটি উপায় হলো প্রতি ৯০ মিনিটে তাদের পোস্ট শট এক্সপেক্টেড গোল হিসাব করা। এই পরিসংখ্যানে প্রিমিয়ার লিগে রামসডেলের অবস্থান সবার উপরে।

কিন্তু এতে পুরোপুরি আসলে বুঝা যায় না রামসডেল কতটা উন্নতি করেছেন নিজের। আর্সেনালে আসার আগে তার সর্বোচ্চ গোল ফেরানোর শতকরা পরিমাণ ছিল ৭১%,  বর্তমানে যেটা ৭৬.৩%। শেফিল্ডের সাথে শেষ মৌসুমে তার গোল ফেরানোর শতকরা পরিমান ছিল ৭১%। শেফিল্ডের হয়ে দুই মৌসুমে যতটি গোল তিনি ফিরিয়েছেন, আর্সেনালে এই এক মৌসুম হওয়ার আগেই তার চেয়ে বেশি গোল ফিরিয়েছেন। অন্তত তার পোস্ট শট এক্সপেক্টেড গোলের পরিসংখ্যান তাই বলে।

তবে এর চাইতেও বেশি নজর কেড়েছে খেলোয়াড়দের কাছে বলের বন্টন। রামসডেলকে নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আর্সেনালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় রব হোল্ডিং বলেন,

“শেফিল্ডের সাথে খেলায় প্রথম যখন রামসডেলের মুখোমুখি হই, তখন একটি গোলকিকের সময় আমার সামনে ছিল ডেভিড ম্যাকগোল্ড্রিক (শেফিল্ডের স্ট্রাইকার)। প্রায় ৭০ গজ দূরে থেকে রামসডেল গোলকিক থেকে বলটি ম্যাকগোল্ড্রিকের পায়ে পাঠিয়ে দেয়। আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।”

এই মৌসুমে এখন অব্দি আর্সেনাল কর্নার থেকে কোনো গোল খায়নি। রামসডেল এই কৃতিত্বের অনেকখানি প্রাপ্য। বার্নড লেনোর গত মৌসুমে রাখা ১১টি ক্লিনশিটকে পার করে এই মৌসুমে লিগে মার্চ মাস অব্দি তার ক্লিনশিট ১২টি।

আর্সেনালের রক্ষণভাগ অবশ্যই আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে ব্রাইটন থেকে বেন হোয়াইটকে আনার পর গত মৌসুমের মতো ছোটখাটো ভুলের জন্য গোল খাওয়ার হার অনেক কমেছে। কিন্তু এতে রামসডেলের শট ফেরানোর কৃতিত্ব কমে না। বেশ কিছু নিশ্চিত গোলকে তিনি গোলমুখ থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। xGOT বা এক্সপেক্টেড গোলস অন টার্গেটের সাথে রামসডেলের এই মৌসুমে হজম করা গোলের সংখ্যার তুলনা করে দেখুন। এই দিকে গোলরক্ষকদেরর তালিকায় তিনি রয়েছেন ৩ নম্বরে।

বিভিন্ন মৌসুমে রামসডেলের পরিসংখ্যান; Image Credit: Author

পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেখলে প্রিমিয়ার লিগে এটি রামসডেলের সবচেয়ে ভালো মৌসুম যাচ্ছে। এর আগে বৌর্নমাউথ এবং শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও এবারের মতো চাপ কখনোই ছিল না। একটি নিচু সারির দলের গোলবার সামলানোর চেয়ে আর্সেনালের মতো দলের গোলবার সামলানো স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় দায়িত্ব।

২০১৯-২০ মৌসুমে বৌর্নমাউথের হয়ে খেলার সময় গোলমুখে মুখোমুখি হন ১৭৭টি শটের। এই মৌসুমের প্রথমভাগে রামসডেলের পারফরম্যান্স ভালোই ছিল। উদীয়মান হিসেবে অনেকেরই নজরে আসেন এ সময়। আর পরের মৌসুমে শেফিল্ডের হয়ে মুখোমুখি হন ২০৫টি শটের। বলাই বাহুল্য, তার বল ফেরানোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় এবার।  আর্সেনালের ডিফেন্সের কল্যাণে এই মৌসুমে কেবল ৮৭টি শটের মুখ দেখতে হয়েছে তাকে। যদিও লিগ মৌসুম এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু খুব অল্প পরিমাণ খেলাই বাকি রয়েছে।

আপনি একটি বিষয় নিয়ে অবশ্যই তর্ক করতে পারেন। আগের দুই দলের চেয়ে রামসডেল আর্সেনালে অনেক ভালো ডিফেন্সিভ সাপোর্ট পেয়েছে, খুবই সত্যি। কিন্তু তবুও যখন প্রয়োজন হয়েছে গোল ফেরানোর, তাকে পাওয়া গেছে পুরোদমেই। আর উন্নতির গ্রাফটাও দ্রুতই ঊর্ধ্বমুখী। গোলমুখে তার দিকে নেয়া শট থেকে যতগুলো গোল খাওয়ার কথা ছিল তার, তার চেয়ে বেশি গোল হজম করেছিলেন গত মৌসুমে, আর এই মৌসুমে তার চেয়ে প্রায় ৪টির মতো গোল কম খেয়েছেন।

গত তিন মৌসুমে আর্সেনলের ডিফেন্সিভ পরিসংখ্যান; Image Credit: Author

যদিও রামসডেল আর্সেনালে আগের দুই দলের চেয়ে কম শটের মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু আর্সেনালের আরেক গোলরক্ষক বার্নড লেনোও কিন্তু গত মৌসুমে কাছাকাছি পরিমান শটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। মোট ১২০টি শটের মুখে পড়তে হয় তাকে পুরো মৌসুমজুড়ে। মৌসুমের এখনো ১০টি খেলা হাতে রাখা রামসডেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রামসডেল প্রতি খেলায় গড়ে লেনোর চাইতে বেশি শটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। গোল ফিরিয়েছেন লেনোর চাইতে বেশি। এই দিক বিচারে অবশ্যই লেনোর চেয়ে রামসডেলকে এগিয়ে রাখাতে হবে।

দুই গোলরক্ষকের তুলনা যেহেতু এক্সপেক্টেড গোল দিয়েই করা হয়, তো আমরা লেনো আর রামসডেলের ক্ষেত্রেও এই হিসেব আনব। গত মৌসুমে লেনোর দিকে নেয়া শটগুলোর গুণমান বিচারে সেগুলো থেকে গোল হতে পারত ৩০.৬টি। কিন্তু মৌসুম শেষে দেখা গেল, ৩৫টি ম্যাচ খেলে তিনি গোল খেয়েছেন ৩২টি। অর্থাৎ যতটুকু আশা ছিল, তার চেয়ে বেশি গোল খেয়েছেন। অন্যদিকে এই মৌসুমে রামসডেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক্সপেক্টেড গোল ছিল ২১.২টি, গোল খেয়েছেন ১৭টি।  গোল বাঁচিয়েছেন ৪টিরও বেশি। এই ধরনের পারফরম্যান্সের পর রামসডেলকে সরিয়ে কি লেনোর আবার জায়গা ফিরে পাওয়া সম্ভব মনে করেন?

তবে লেনো যখন গত মৌসুমে নিয়মিত ছিলেন, তখন আর্সেনালের রাইটব্যাক ছিলেন অফ ফর্মের হেক্টর বেলারিন আর রাইট সেন্টারব্যাকে খেলেছেন রব হোল্ডিং বা ডেভিড লুইজ। এই মৌসুমে রামসডেল কপালগুণে রাইট ব্যাকে পেয়েছেন একজন ‘সলিড সামুরাই’ তাকেহিরো তোমিয়াসুকে। সেই সাথে লুইজের জায়গা নিয়েছেন সময়ের অন্যতম সেরা ইংরেজ সেন্টার ব্যাক বেন হোয়াইট। লেনো এই নিয়ে অভিযোগ করতেই পারেন যে তাকে এমন বিলাসিতা দেয়া হয়নি।

শেষ মিনিটের গোলে জিতে রুবেন নেভেসকে উত্তেজিত করার চেষ্টায় অ্যারন রামসডেল; Image Credit: Getty Image

এই মার্চ মাসে অনেকদিন পর অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন লেনো। রামসডেলের হিপ ইনজুরি তাকে এই সুযোগ এনে দেয়। আর্সেনাল কোনো কাপ প্রতিযোগিতায় টিকে না থাকায় লেনোর সুযোগও হচ্ছিল না নামার। সুযোগের সদ্ব্যবহার ঠিকই করেছেন, এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে দেখিয়ে দিয়ে তার দলের বিপক্ষেই রেখেছেন ক্লিনশিট। কিন্তু বল ডিস্ট্রিবিউশনে বারবার করে ফেলছিলেন গণ্ডগোল। অনেকটা খেই হারিয়ে পাস দিচ্ছিলেন সামনে। এতদিন রামসডেল থাকায় এই সমস্যার মুখ দেখতে হয়নি আর্সেনালকে। এইভাবে রামসডেল লেনোর চাইতে এইভাবে আরো একটি বাড়তি সুবিধা যোগ করছেন দলে তার বল ডিস্ট্রিবিউশন ও পাসিংয়ের দক্ষতা দিয়ে। লেনো যে সামনের মৌসুমে ক্লাব ছাড়ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিতই বলা চলে। আর্সেনালে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে ম্যাট টার্নারকে সামনের মৌসুমের জন্য দলে ভিড়িয়ে রেখেছে।

পরবর্তী ম্যাচগুলোতে রামসডেল আর কতগুলো গোলের সামনে পড়বেন, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এখন অব্দি তিনি নিঃসন্দেহে লেনোর থেকে ভালো পারফর্ম করেছেন। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনাল হজম করে ৩৯টি গোল, এই মৌসুমে এখন অব্দি ৩১টি গোল। হাতে থাকা খেলাগুলোয় ৮ গোলের কম খেলে বলা যাবে, আর্সেনালের ডিফেন্স আসলেই উন্নতি করেছে।

আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, মৌসুমের প্রথমভাগে আর্সেনালের নিজেদের এক্সপেক্টেড গোলের চেয়ে তাদের বিপক্ষে এক্সপেক্টেড গোল বেশি। মৌসুমের প্রথম ৩টি খেলাতেই আর্সেনাল এই ক্ষেত্রে যোজন যোজন পিছিয়ে গিয়েছিল। তারপরও এত কম এক্সপেক্টেড গোল নিয়ে ১৯টি খেলার শেষে পয়েন্ট টেবিলে আর্সেনাল ছিল চার নম্বরে। এর পেছনে যে রামসডেলের বড় অবদান রয়েছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে।

লিস্টার সিটির বিপক্ষে এইরকম একটি অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে গোল ফেরান রামসডেল, যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন অপর প্রান্তে থাকা লিস্টার গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেলের বাবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কিংবদন্তী ডেনিশ গোলরক্ষক পিটার স্মাইকেল; Image Credit: AFP

মাঠে কিংবা ড্রেসিংরুমে পজিটিভ এনার্জির ব্যাপারটিও ধর্তব্যে আনা উচিত। আর সেখানেই প্রশ্ন উঠতে পারে, রামসডেল দলে কেমন ভূমিকা রাখছেন ড্রেসিংরুমে?

আর্সেনাল দলটির মূল একাদশের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ২৫-এর মতো। যদি আলেক্সান্ডার লাকাজেত ও টমাস পার্টেকে হিসেবের বাইরে রাখা হয়, তখন সেটা দাঁড়ায় ২৩-এ। এই তরুণদের ঝাঁকে রামসডেল প্রায় সমবয়সী সতীর্থ পেয়েছেন, মন খুলে তাই উপভোগ করতে পারেন ড্রেসিংরুমটা।

লীডস ইউনাইটেডের বিপক্ষের খেলায় লীডসের সমর্থকেরা যখন তার দিকে কয়েন ও নোট ছুড়ে মারছিল, তখন রামসডেল ওই কয়েন আর নোট কুড়িয়ে নিজের তোয়ালের সাথে রেখে দেন। ম্যাচশেষে সংবাদমাধ্যমে বলেন, এভাবে তিনি মোট ১৭ পাউন্ড পেয়েছেন। তার ‘ক্যারেক্টার’ এতেই কিছুটা ধারণা করা যায়।  

আবার লেস্টার সিটির খেলায় লেস্টার সমর্থকরা যখন তাকে উদ্দেশ্য করে কটুক্তি করছিল, তিনি গোলকিক নেওয়ার সময় তাদের সাথেই সেই স্লোগানে যোগ দেন। গত মাসে উলভারহ্যাম্পটনের সাথে আর্সেনালের দেখা হয় এক সপ্তাহের মধ্যেই দুইবার। প্রথমটা আর্সেনাল ১-০ গোলে জিতে উল্লাস করায় উলভসের মিডফিল্ডার রুবেন নাভাস আর্সেনালের এই উদযাপনকে লিগ জয়ের উদযাপন বলে কটূক্তি করেন। পরের খেলায় শেষ মিনিটে ২-১ গোলে জিতে রামসডেল সতীর্থদের পেরিয়ে একদম মধ্যমাঠে গিয়ে নাভাসের সামনে জয় উদযাপন করেন।

আর্সেনাল যখন এত দাম দিয়ে দ্বিতীয় গোলরক্ষক কেনার দিকে গেল, তখন এ নিয়ে সমালোচনার অন্ত ছিল না। এর ধার আরো বাড়ে, যখন জানা যায় গোলরক্ষকের নাম রামসডেল। দু’টি ক্লাবের রেলিগেশনের সাক্ষী হওয়ায় সবার আশংকা ছিল আর্সেনালকে নিয়েও তার ভরাডুবি হয় কি না। কিন্তু নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে আর্সেনালকে নিয়ে এসেছেন টপ ফোরে। রামসডেলের ১২টি ক্লিনশিট নিয়ে আর্সেনালের ডিফেন্স এখন লিগের অন্যতম সেরা। ক্লিনশিটে তার থেকে এগিয়ে রয়েছেন কেবল এডারসন ও অ্যালিসন। তবে একটা ব্যাপারে আর্সেনালের এত দামে প্লেয়ার কেনাকে আপনি ডিফেন্ড করতে পারবেন; আর সেটা হল রামসডেল ব্রিটিশ হোম-গ্রোন খেলোয়াড়। প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের স্কোয়াডে ন্যূনতম ৭ জন হোম-গ্রোন খেলোয়াড় থাকতে হয়। তো হোম-গ্রোন খেলোয়াড় যদি একটু ভালো পাওয়া যায়, তাতে কোনো ক্ষতি নেই।

২০২১-২২ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলা টপ ১০ জন গোলরক্ষকের পরিসংখ্যান; Image Credit: NBC Sports

আর্সেনালে গোলবারের নিচে ভরসার প্রতীক হয়ে এরপর তার সামনে উন্মুক্ত হয়েছে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। আর্সেনালে যোগ দেয়ার পূর্বেই ইউরো ২০২০-এর স্কোয়াডে নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু দলে তার অভিষেক হয় গত বছরের নভেম্বরে। মার্চের শেষ সপ্তাহে ইংল্যান্ডের প্রীতি ম্যাচগুলোর স্কোয়াডেও ডাক পেয়েছিলেন গ্যারেথ সাউথগেটের কাছ থেকে। কিন্তু লিভারপুল ম্যাচের পর হিপ ইনজুরি তার এবারের থ্রি লায়ন্সের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ আগেই কেড়ে নেয়। তবে আর্সেনালের হয়ে যেরকম পারফর্ম্যান্স দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে এই সুযোগ যে আরো আসবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মার্চ মাস শেষে এক ম্যাচ কম খেলে পাঁচে থাকা টটেনহ্যাম হটস্পারের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আর্সেনাল। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর আবারও তাদের সামনে এসেছে চ্যাম্পিয়ন লিগে খেলার সুযোগ। অ্যারন রামসডেলের হাত ধরেই কি আবারও এমিরেটসে বাজবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই মধুর সুর? আর্সেনাল ফ্যানরা আশা করতেই পারেন।

(বি. দ্র.: সকল পরিসংখ্যান মার্চ ২০২২ অবধি। )

Related Articles