১
জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাবে আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শাই হোপকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন আফগানিস্তানের লেগস্পিনার রশিদ খান।
রশিদ খান ৪৪টি ওয়ানডে খেলে ৪২ ইনিংস বল করে মাত্র ১৪.৪০ বোলিং গড় এবং ২১.৮ স্ট্রাইক রেইটে ১০০ উইকেট শিকার করেছেন। মোহাম্মদ নবীর পর দ্বিতীয় আফগানিস্তানি বোলার হিসাবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন রশিদ খান।
বর্তমানে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড রশিদ খানের দখলে। এর আগে সবচেয়ে কম ম্যাচে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্কের দখলে ছিলো। তিনি ৫২ ম্যাচে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন। রশিদ খান শুধুমাত্র সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেট শিকার করেননি। সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট এবং সবচেয়ে কম বোলিং গড়েও ১০০ উইকেট শিকার করেছেন। বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্ব টি-টোয়েন্টি জ্বরে কাঁপছে। এ সময়ে রশিদ খান ওভারপ্রতি মাত্র গড়ে ৩.৯৬ রান করে দিয়েছেন।
ওয়ানডেতে প্রথম বোলার হিসাবে ১০০ উইকেট শিকার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার ডেনিস লিলি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৬৩ ম্যাচে ১০৩ উইকেট শিকার করা ডেনিস লিলি ৬০তম ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন। ডেনিস লিলির গড়া সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি প্রায় দশ বছর পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিলো। ১৯৯৩ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি লিলির রেকর্ড ভাঙেন পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুস। তিনি লিলির চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে (৫৯তম ওয়ানডেতে) ১০০ উইকেট শিকার করেন।
ওয়াকার ইউনুসের রেকর্ডটি প্রায় চার বছর পর্যন্ত শীর্ষে ছিলো। তার রেকর্ডটি ভাঙেন পাকিস্তানের স্পিনার সাকলাইন মুশতাক। তিনি মাত্র ৫৩টি ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার রেকর্ডটি প্রায় দুই দশক শীর্ষে ছিলো।
কলম্বোতে ২০১৬ সালের ২১শে আগস্ট শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের ৫২তম ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকার করে সাকলাইন মুশতাকের রেকর্ড ভেঙেছিলেন মিচেল স্টার্ক।
স্টার্কের রেকর্ড বেশি দিন টেকেনি। রশিদ খান তার চেয়ে আট ম্যাচ কম খেলে ১০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন।
২
কাগজে কলমে রশিদ খানের বয়স মাত্র ১৯ বছর ১৮৬ দিন। এতে করে তার নামের পাশে আরও একটি খ্যাতি যোগ হয়েছে। সবচেয়ে কম বয়সে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকার করা বোলার তিনি। এই তালিকায় তিনি পেছনে ফেলেছেন পাকিস্তানের সাকলাইন মুশতাককে।
সাকলাইন মুশতাক ২০ বছর ১৩৪ দিন বয়সে, আব্দুল রাজ্জাক ২০ বছর ৩৩৩ দিন বয়সে, ওয়াকার ইউনুস ২১ বছর ৭৭ দিন বয়সে এবং ইরফান পাঠান ২১ বছর ১৭৪ দিন বয়সে ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন।
১৮ই অক্টোবর, ২০১৫ সালে যখন রশিদ খান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন, তখন কাগজে কলমে তার বয়স ছিলো মাত্র ১৭ বছর। ওয়ানডে অভিষেকের ৮৯০ দিনের মাথায় ১০০ উইকেট নিজের পকেটে পুরে নেন তিনি। রশিদ খান মাত্র ২,১৩৯ বলে ১০০ তম উইকেট শিকার করেন। এই তালিকাতেও তিনি সবার শীর্ষে নিজের নাম লেখিয়েছেন। দ্বিতীয়তে থাকা মিচেল স্টার্ক ২,৪৭৪ বলে ১০০ ওয়ানডে উইকেট শিকার করেছিলেন।
৩
একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ লেগস্পিনারের যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, রশিদ খানের মধ্যে সেসব কিছু রয়েছে- বড় লেগস্পিন, অসাধারণ গুগলি, ফ্লিপার, স্লাইডার, টপ স্পিন। তার বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের সহজে কাবু করেন তিনি।
রশিদ খান তার শততম ওয়ানডে উইকেট শিকার করেছিলেন শাই হোপকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। ওয়ানডেতে তিনি তার ৫৬% উইকেট শিকার করেছেন বোল্ড এবং লেগ বিফোর উইকেটে।
এই তালিকায় অবশ্য রশিদ খান দ্বিতীয়। পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ তার ১৩৬ উইকেটের মধ্যে ৭৭ বার ব্যাটসম্যানদের বোল্ড এবং লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে পেয়েছেন, শতকরা ৫৬.৬২%! তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ৫৫.৫৬% উইকেট পেয়েছেন ফিল্ডারদের সহায়তা ছাড়া।
৪
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণের পর থেকে নজরকাড়া পারফরমেন্স করে যাচ্ছেন রশিদ খান। বর্তমানের বিশ্বের নানা প্রান্তে নিজের স্পিন ভেলকি দেখাচ্ছেন। আইপিএলে চলতি আসরে তো তিনি মিলিয়ন ডলার বয়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, বাংলাদেশের বিপিএল এবং পাকিস্তানের পিএসএলেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। সেখানে ক্রিকেট বিশ্বের নামিদামি ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করেছেন দাপটের সাথে।
তবে তারও আফসোস থেকে যাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ না পাওয়াতে। তাই তার বেশিরভাগ উইকেট র্যাংকিংয়ের নিচের দলগুলোর বিপক্ষে। রশিদ খান ওয়ানডেতে ৭৩% উইকেট শিকার করেছেন শুধুমাত্র জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮ ম্যাচে ১৩.৬২ বোলিং গড়ে এবং ২১.১ স্ট্রাইক রেটে ৪০ উইকেট শিকার করেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে ১৫.১৫ বোলিং গড়ে এবং ২২.০ স্ট্রাইক রেটে ৩৩ উইকেট শিকার করেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন রশিদ খান। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে চার ইনিংসে ১২ উইকেট শিকার করেছেন। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার উইন্ডিজদের বিপক্ষেই। গত বছর গ্রস আইলেটে মাত্র ১৮ রানের বিনিময়ে সাত উইকেট শিকার করেছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি চতুর্থ সেরা ব্যক্তিগত বোলিং ফিগার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রশিদ খান মাত্র ৯.৭৫ বোলিং গড়ে এবং ১৮.৮ স্ট্রাইক রেটে ১২ উইকেট শিকার করেছেন।
৫
রশিদ খান ৪৪টি ওয়ানডেতে চারবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। ওয়ানডেতে তার চেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন মাত্র ১২জন বোলার। এর মধ্যে মাত্র তিনজন স্পিনার। তিনজন স্পিনারের মধ্যে মুত্তিয়া মুরালিধরন ৩৫০ ম্যাচ দশবার। শহিদ আফ্রিদি ৩৯৮ ম্যাচে নয়বার এবং সাকলাইন মুশতাক ১৬৯টি ওয়ানডে ম্যাচে ছয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন।
তিনি তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ ম্যাচ র্যাংকিংয়ের নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে গত বছর আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে এবং আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শিরোপা জিতে লন্ডনের টিকেট কেটেছেন। ফলে রশিদ খানের সামনে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় তারকা ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করার সুযোগ এসেছে।
ফিচার ইমেজ: Getty Images