১
৯ বছরের সফল পথচলার পর রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে গেলেন বর্তমান সময়ের সেরা দুই খেলোয়াড়ের একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই ৯ বছরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কতটুকু দিতে পেরেছেন ক্লাবকে?
ক্লাবের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৪৫১ টি গোল করেছেন মাত্র ৪৩৮টি ম্যাচে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা রাউলের ৩২৩টি গোল করতে ম্যাচ খেলতে হয়েছে ৭৪১টি। এর মাঝে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই করেছেন ১০৫টি গোল, সেটাও মাত্র ১০১টি ম্যাচে। ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিতেছেন ১৬টি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তার চেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছেন কেবল মাত্র আলফ্রেডো ডি স্টেফেনো, তবে এর জন্য তাকে খেলতে হয়েছিল ১১টি সিজন।
তবে শুধুমাত্র এসব পরিসংখ্যান দিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গুরুত্ব বোঝা যাবে না। সাথে আরো কয়েকটি বিষয় জানতে হবে।
ইউরোপের সেরা ক্লাব হিসেবে বিবেচিত রিয়াল মাদ্রিদের একটা সময় চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই অবস্থান খুব খারাপ যাচ্ছিল। দুর্দান্ত স্কোয়াড নিয়েও ২০০৩-০৪ সাল থেকে ২০০৮-০৯ পর্যন্ত তারা বাদ পড়ে যাচ্ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় পর্ব থেকেই। এমনকি এই সময়টাতে তারা হেরে যাচ্ছিল রোমার মতো দলের সাথেও। ২০০৯-১০ মৌসুমে রোনালদো যোগ দেয় রিয়াল মাদ্রিদে। তবে সেবারও মাদ্রিদ ব্যর্থ, বাদ পড়ে আবারও দ্বিতীয় পর্বে। রোনালদো অবশ্য তার চেষ্টাটুকু করেছিলেন। লিও এর সাথে প্রথম লেগে ১-০ গোলে হেরে গেলেও দ্বিতীয় লেগে রোনালদোর গোলেই ম্যাচে ফিরে এসেছিল মাদ্রিদ। কিন্তু পরবর্তীতে লিও আরেকটা গোল করে ফেললে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যায় মাদ্রিদ। দলগতভাবে ব্যর্থ হলেও ব্যক্তিগতভাবে ৭ গোল করে রোনালদো হয়েছিলেন সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা, যেখানে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু এরপর থেকে টানা ৮ সিজন রিয়াল মাদ্রিদ খেলেছেন ন্যূনতম সেমিফাইনাল। এর মাঝে চারবার ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হন, যার মাঝে সর্বশেষ টানা তিনবার। এই ৮ বারের মাঝে ৬ বারই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সর্বোচ্চ স্কোরার।
রোনালদো না থাকলে কি রিয়াল মাদ্রিদ এত ধারাবাহিক সফলতা পেত? রিয়াল মাদ্রিদের এই দুর্দান্ত স্কোয়াডেও রোনালদোকে বাদ দিয়ে দুনিয়ার অন্য কোনো খেলোয়াড়কে নিয়েও সম্ভবত মাদ্রিদ এতটা সফলতা পেত না।
রোনালদো যখন মাদ্রিদে এলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিল তার সফল হওয়াটা খুব কষ্টের হবে। রোনালদো লিমা, মাইকেল ওয়েন, ডেভিড বেকহাম কিংবা রবিনহোর মতো খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদে এসেই, সেখানে শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও রোনালদো হয়ে উঠলেন মাদ্রিদ ইতিহাসের সেরা দুই খেলোয়াড়ের একজন, যেখানে তৃতীয় সেরা খেলোয়াড়টার অবস্থান অনেকটাই দূরে। এরপরই রোনালদোর মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যাওয়া।
অনেকের কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে এই সময়টাতে রোনালদোকে ছেড়ে দেওয়াটা রিয়াল মাদ্রিদের ভুল সিদ্ধান্ত। আসলেই কি রিয়াল মাদ্রিদ ভুল করেছে? নাকি রোনালদোরও কিছুটা ভুল আছে এই পদক্ষেপে? সেটাই একটু দেখার চেষ্টা করা যাক দুই পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে। প্রথমে শুরু করা যাক রিয়াল মাদ্রিদকে দিয়ে।
২
Product কিংবা পণ্যের অর্থ কি সেটা জানেন?
“Product refers to an item that satisfies the consumer’s needs or wants.” – অর্থাৎ পণ্য হচ্ছে এমন একটা জিনিস, যা কিনা ক্রেতার চাহিদা পূরণ করে। প্রতিটি পণ্যের একটা জীবনচক্র থাকে। এইজীবনচক্রে চারটি পর্যায় থাকে; সূচনা, বৃদ্ধি, পরিপক্বতা লাভ এবং ক্ষয়।
সূচনা হচ্ছে যেকোনো একটি পণ্যের শুরুর অবস্থান। এই অবস্থানে সে যাত্রা শুরু করে এবং ধীরে ধীরে সে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে। বৃদ্ধি ধাপে সেই পণ্যটার বেড়ে ওঠা। এই অবস্থানে বাজারে তার চাহিদা সৃষ্টি শুরু হয়, কারণ এই সময়টাতে তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া আরম্ভ হয়। পরিপক্বতা লাভের ধাপে পণ্যটি তার সর্বোচ্চ সেবা দিতে থাকে। এটি একটা পণ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এরপর থেকেই তার কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। ক্ষয়ের ধাপটিতে গিয়ে এ পণ্যের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকে। অর্থাৎ একই পণ্য সময়ের সাথে সাথে চাহিদা পূরণের ক্ষমতা হারাতে থাকে।
এখন একটি পেশাদার ফুটবল দলের কাছে প্রতিটা ফুটবলারই এক একটা পণ্য। প্রতিটি পণ্যেরই যেমন একটা জীবনচক্র থাকে, ঠিক তেমনি ফুটবলারদেরও ক্যারিয়ারে চারটা পর্যায় থাকে। সাধারণত ১৬-১৯ বছর বয়স পর্যন্ত খেলোয়াড়দের সূচনা ধাপ, ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি ধাপ, ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক ধাপ এবং ৩১-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ক্ষয়ের ধাপ।
বেশিরভাগ পেশাদার খেলোয়াড়ই ৩০ বছর বয়সের পর নিজের সেরা ফর্মে থাকতে পারেন না। ভালো খেলা এক বিষয়, আর সেরা ফর্ম আরেক বিষয়। কেউ কেউ হয়তো ভালো খেলে তবে খুব বেশি ব্যতিক্রম না হলে একজন ফুটবলার তার সেরা খেলাটা ২৬-৩০ বছর সময়ের মাঝেই খেলে থাকেন। ব্যতিক্রম সব নিয়মেই থাকে। কিছু কিছু খেলোয়াড়েরা পরিপক্বতার ধাপটি অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারেন (একটা বড় উদাহরণ ডি স্টেফেনো)। তবে এটার জন্য খেলার জন্য তার নিজেকে উজাড় করে দেবার চেষ্টা অনেক মারাত্মক পর্যায়ের হতে হয়। আত্মবিশ্বাসটাও অনেক বেশি থাকতে হয়।
রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩৩ বছর বয়সী রোনালদোর চাহিদাও স্বাভাবিকভাবে কমতে শুরু করেছিল। এটা খুবই স্বাভাবিক যে বাজারে আই ফোন ৮ এর মডেল আসার পর আই ফোন ৬ অল্প দামে দিলেও খুব কম ক্রেতাই কিনতে চাইবে, সেটার পারফর্মেন্স ভালো হলেও। এমনকি যারা আই ফোন ৬ ব্যবহার করে খুশি আছেন, তারাও সামর্থ্য থাকলে আই ফোন ৮ কেনার চেষ্টা করবেন। এরপরেও ৩৩ বছর বয়সী রোনালদোকে হয়তো রিয়াল মাদ্রিদ রাখতো। সেই ক্ষেত্রে দুটো কাজ তাদের করতে হতো। প্রথমটি হচ্ছে রোনালদোর বেতনের পরিমাণটা আপাতত এমনই রাখা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে নতুন আরেকজন উদীয়মান খেলোয়াড় এনে তাকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
মাদ্রিদ বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। বড় বড় খেলোয়াড় তাদের স্কোয়াডে ভর্তি, কিন্তু ইদানীং গোল পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা যেন অতিমাত্রায় একটু রোনালদোর উপর নির্ভরশীল। রিয়াল বার্সার মতো দলের জন্য একজন খেলোয়াড়ের প্রতি এত বেশি নির্ভরশীলতা কখনোই ভালো নয়। কিন্তু নতুন একজন খেলোয়াড় এনে তৈরি করাটাও হয়তো রোনালদো থাকা অবস্থায় সম্ভব নয়। এর বড় কারণ রোনালদো নিজে। রোনালদো থাকা অবস্থায় আরেকজন বড় খেলোয়াড়কে আনতে হলেও বিপুল টাকা প্রয়োজন। আর রোনালদো আরেকজন খেলোয়াড়ের কাছে নিজের রাজত্ব ছেড়ে দিতে চাইবেন কিনা, সেটাও একটা প্রশ্ন।
মাদ্রিদের সামনে তাই দুটো রাস্তা খোলা ছিল। প্রথমটি হচ্ছে রোনালদোর দাবি মেনে তার উপর ভরসা করেই আগামী চার বছর মেয়াদী দল সাজানো। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাজারে রোনালদোর চাহিদা থাকা অবস্থাতেই তাকে ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নতুনভাবে দল গোছানো। ব্যবসা বোঝে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিবে। রিয়াল মাদ্রিদও সেই কাজটাই করেছে।
৩.
এখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দৃষ্টিকোণটা কেমন ছিল, সেটা একটু অনুমান করা যাক।
প্রতিটি মানুষেরই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে একটা পরিকল্পনা থাকে। তবে ক্যারিয়ারেরও কিছু পর্যায় আছে। সচরাচর ক্যারিয়ারের পর্যায়টাকে পাঁচটা ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে- অনুসন্ধান, প্রতিষ্ঠা, মধ্য কর্মজীবন, শেষ কর্মজীবন এবং ক্ষয়প্রাপ্তি।
অনুসন্ধান ধাপে একজন মানুষের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় শুরু হয়। এই অবস্থায় সে ভাবতে থাকে কোন পথে জীবন শুরু করবে। সে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে নাকি খেলোয়াড়, এ ভাবনাও এমন সময়ই মাথায় আসে। পরিবেশ কিংবা নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে এই সময়ে একজন প্রভাবিত হতে পারে। যেমন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া একটা ছেলের মাঝে ফুটবলার হবার প্রবণতা বেশি থাকবে, আবার পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া একটা ছেলের ভেতর ক্রিকেটার হবার প্রবণতা থাকবে। প্রতিষ্ঠা ধাপে ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এই স্টেজ থেকেই সে যদি ভালো করতে পারে, তাহলে তার সুনাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তার চাহিদা বাড়তে থাকে।
মধ্য কর্মজীবনে মানুষ তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের উন্নতি ঘটায় এবং চেষ্টা করে তার কর্মক্ষমতা যেন কমে না যায়। এই ধাপে কর্মক্ষমতা ধরে রাখাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। নতুন নতুন মানুষ এসে প্রতিযোগিতায় নামবে। এর মাঝেই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
কর্মজীবনের শেষ অংশে মানুষের নতুন কিছু শেখার থাকে না। তারা অভিজ্ঞতা এবং ইমেজের কল্যাণে বাজারে টিকে থাকে এবং একটা পর্যায়ে তাদের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। এরপর আসে একেবারে শেষ ধাপ- ক্ষয়প্রাপ্তির এবং এসময়য় মানুষটি তার কর্মক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে এবং নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়ে অবসরে চলে যেতে হয়।
ফুটবলারদের জন্য মধ্য কর্মজীবনটা হচ্ছে সাধারণত ২৬ থেকে ৩০ বছর। এই সময়ের পরেই সাধারণত তারা তাদের গতি এবং স্ট্যামিনা হারাতে থাকে। এছাড়া একজন ২০ বছরের খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়লে যত দ্রুত সেরে ওঠে, একজন ৩৫ বছরের মানুষের সেই একই ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। ৩২-৩৪ বছর বয়সে ফুটবলারদের চাহিদা শীর্ষ লিগে কমতে থাকে। এই বয়সে কোনো খেলোয়াড় শীর্ষ লিগে খেলার সুযোগ পেলেও তাকে বেতন এবং প্লেয়িং টাইমে কিছুটা ছাড় দিতে হয়। আর এই দুটোতে ছাড় দিতে না চাইলে চলে যেতে হয় চাইনিজ কিংবা আমেরিকান লিগে।
ইনিয়েস্তা, কাকা কিংবা বেকহামের মতো খেলোয়াড়েরা ৩২ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মাঝেই ইউরোপের শীর্ষ লিগ থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। ৩৩ বছর বয়সে রিয়ালের মতো দল না পাল্টিয়ে আর বছর খানেক পর কাতার কিংবা ইউএসএর মতো লিগে বেশি বেতনে চলে যাওয়াটাই সাধারণত নিরাপদ পথে চলার বুদ্ধি। কিন্তু রোনালদো নিজেকে এমন ফিট রেখেছেন যে তার পক্ষে আরো বছর চারেক শীর্ষ পর্যায়ে খেলা হয়তো খুবই সম্ভব।
রোনালদো যে জুভেন্টাসে গিয়েছেন, সেখানে গিয়েও কি তিনি আরো ৪ বছরের বেশি সার্ভিস দিতে পারবেন? না পারার সম্ভাবনাই বেশি। রোনালদোও চাইলে আরো দু বছর চুক্তি অনুযায়ী এই বেতনে এবং কিছুটা কম প্লেয়িং টাইম নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে পারতেন। কিংবা আরো অনেক বেশি বেতন নিয়ে কাতার অথবা চাইনিজ লীগে মূল খেলোয়াড় হিসেবে চলে যেতে পারতেন। রোনালদোর সমস্যা হচ্ছে তিনি একইসাথে শীর্ষ লিগেও মূল খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে চাচ্ছিলেন এবং বেতনেও ছাড় দিতে চাচ্ছিলেন না। কোন খেলোয়াড়ই ইচ্ছে করে স্পটলাইট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন অসম্ভব আত্মবিশ্বাস। নিজের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাসটাই রোনালদোকে এই সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছে। গত পাঁচ বছরে তার যা পারফর্মেন্স, সেটার জন্য উনি এটা দাবি করতেই পারেন। কিন্তু সেই দাবি পূরণ করার জন্য যে ঝুঁকিটা নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটা রিয়াল মাদ্রিদ নিতে চায়নি এবং জুভেন্টাস নিতে চেয়েছে বলেই রোনালদোর ক্লাব পরিবর্তন।
৪
রিয়াল মাদ্রিদ কি পারতো না আরো দু বছর রোনালদোকে রেখে দিতে? হয়তো পারতো। কিন্তু মাদ্রিদের ইতিহাস বলে, তারা কখনোই এই কাজটা করেনি। রিয়াল মাদ্রিদের গ্রেট স্টেফেনোও এই সুযোগ পাননি। মাদ্রিদে স্টেফেনো খেলেছেন ৩৮ বছর বয়স পর্যন্ত। সেখানে প্রথম ৬ বছরে ২২৭ ম্যাচে স্টেফেনো গোল করেছিলেন ০.৮৫ গড়ে ১৯৪ টি আর শেষের ৫ বছরে ১৬৯ ম্যাচে করেছেন ০.৬৭ গড়ে ১১৪ টি। এরপর স্টেফেনো আরো ২ বছর খেলেছিলেন এস্পানিয়লে। মাদ্রিদ থেকে খুব সুন্দরভাবে বিদায় নিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। কিন্তু তিনি মাদ্রিদ থেকেই অবসর নিয়েছিলেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই।
রোনালদোও এখান থেকে অবসর নিতে চাইলেও হয়তো খুব সুন্দরভাবেই বিদায় নিতে পারতেন। কিন্তু গত দশ বছরের মাঝে ৯ বার বর্ষসেরার শীর্ষ তিনে থাকা কিংবা পাঁচবার সেরার পুরস্কার জেতা খেলোয়াড়টা এত তাড়াতাড়ি নিজের জায়গা ছাড়তে চাইবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।
জুভেন্টাসে রোনালদোর মূল লক্ষ্য আপাতত শিরোপা জেতা নয়, প্রথম লক্ষ্য নিজেকে শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করে আরো বছর চারেক খেলে যাওয়া। আর রিয়াল মাদ্রিদের লক্ষ্য হচ্ছে যতটা দ্রুত সম্ভব নতুনভাবে দল সাজিয়ে নিজেদেরকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনা।
রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দুই পক্ষের কেউই নিজেদের অবস্থান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল করেনি। বাকিটা সময়ই বলে দেবে যে কে ভুল ছিল, আর কে সঠিক। হয়তো আগামী ৩ বছরের মাঝেই উত্তরটা পাওয়া যাবে।
Featured Image: Marca