রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গো। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ। পেশাদার ক্রিকেটার না হলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোচ হিসেবে তার সুনাম অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেট, জাতীয় দলের হেড কোচ ছিলেন। গত বছরের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেন এই প্রোটিয়া কোচ।
তার অধীনে ২০১৯ সালে তিনটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে দু’টি টেস্ট ভারতের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। টাইগারদের কোচ হিসেবে নিজের অভিষেকেই আফগানিস্তানের কাছে হারের তিক্ততা হজম করতে হয়েছে ডমিঙ্গোকে। এছাড়া সাতটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ, জয় এসেছে চারটিতে। বছরের শেষান্তে দায়িত্ব নেয়া ডমিঙ্গোর অধ্যায়ে বাংলাদেশের বড় অর্জন নভেম্বরে ভারতের মাটিতে ভারতকে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার হারানো।
ভারত সফরের পর থেকেই ছুটিতে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সব কোচ। বড়দিন, ইংরেজি বর্ষবরণের ছুটি কাটিয়ে নতুন বছরে জানুয়ারির মাঝামাঝি ঢাকায় ফিরতে পারেন সবাই। বঙ্গবন্ধু বিপিএল শেষ হওয়ার আগেই ঢাকায় ফেরার কথা ছিল ডমিঙ্গোর, ফিরেছেন গত ১২ জানুয়ারি। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেই বিপিএলে চোখ রাখছেন ৪৫ বছর বয়সী এই কোচ। স্বদেশে বসে সরাসরি দেখার সুযোগ নেই বলে স্কোরকার্ড-ফুটেজেই নজর রাখছেন ডমিঙ্গো। কথা বলছেন জাতীয় দলের নির্বাচক ও স্থানীয় কোচদের সঙ্গে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স, বিপিএল, ২০২০ সালের চ্যালেঞ্জ, টার্গেট নিয়ে কথা বলেছেন ডমিঙ্গো। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য যা তুলে ধরা হলো।
ক্রিসমাস কেমন কেটেছে?
খুব ভালো কেটেছে। পরিবারের সাথে সময় কাটছে। ভালোই ছিল সব কিছু।
আপনি ঢাকায় ফিরছেন কবে?
আমি সম্ভবত ১২ বা ১৩ জানুয়ারি ফিরব।
বঙ্গবন্ধু বিপিএল দেখছেন আশা করি?
আমি ভালোভাবেই বিপিএল দেখছি। প্রতিদিনই স্কোরগুলো খুঁজে দেখছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি সরাসরি ম্যাচ দেখতে পারছি না। কিন্তু আমি অবশ্য স্কোর দেখছি, কোচ-নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলছি, তারা কেমন দেখছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স কেমন দেখছেন?
অবশ্যই বিপিএলে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামের স্কোর অনেক ভালো ছিল। কিন্তু এখানে আমাদের প্লেয়ারদের কিছু ভালো পারফরম্যান্স ছিল। মুশফিক ভালো স্কোর করেছে। মনে হচ্ছে, মুস্তাফিজ এই মুহূর্তে ভালো বোলিং করছে। সে দারুণ কিছু পারফরম্যান্স করেছে। আমি দেখছি, তরুণ মিরাজ ব্যাটে-বলে ভালো করছে। তরুণ অফ স্পিনাররাও বল হাতে ভালো করছে। নাঈম শেখ খুব ভালো ব্যাটিং করছে। মিঠুন কয়েকদিন আগে রান পেয়েছে। তাই আমি বলতেই পারি, আমি ভালোভাবেই বিপিএল দেখছি।
তিন তরুণ পেসার মেহেদী হাসান রানা, হাসান মাহমুদ, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধকে নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এই পেসারত্রয়ীকে কি বিপিএলের আগে দেখেছেন?
হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান রানা ভালো করছে। আমি তাদের বোলিংয়ের ফুটেজ দেখেছি, যখন তারা ইমার্জিং দলে ছিল। কয়েকজন আছে, যারা ওদেরকে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা জাতীয় দলে আমাদের সঙ্গে ছিল না। তারা ইমার্জিং দল ও ‘এ’ দলে ছিল। কিন্তু তাদেরকে বিপিএলে দেখে আমি সত্যিই খুশি।
শুরুতে খারাপ করলেও টুর্নামেন্টের মাঝপথে মুস্তাফিজ ছন্দে ফিরেছেন। জাতীয় দল বিবেচনায় তার এই পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই স্বস্তির আপনাদের জন্য…
এটাই ক্রিকেটে হয়, আমি আগেও বলেছি। অনেক সময় বিষয়গুলো আপনার পক্ষে যাবে এবং অনেক সময় যাবে না। ডেথ ওভারে বোলিং করা সবসময়ই চাপের, কারণ তখন ব্যাটসম্যানরা সবসময় রান তুলতে চেষ্টা করে। এটা খুব কঠিন স্কিল। বিষয় হলো, তাকে সবসময় সমর্থন করা। কারণ, সে মানসম্পন্ন বোলার। আমি বিস্মিত নই যে, সে টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করছে।
আপনার চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২০১৯ সালটা কেমন কাটল?
আমার দায়িত্ব নেয়ার আগের সময়টা নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন (বিশ্বকাপের পর দায়িত্ব নিয়েছিলেন)। ওটা আগের কোচের কাজ ছিল। বিশ্বকাপে তাদেরকে পারফর্ম করতে দেখে আমি উদ্দীপ্ত ছিলাম। সাকিবকে এক বছরের জন্য হারানো বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, নতুন কিছু ভালো প্লেয়ার বের করার চেষ্টা করা। শান্ত, নাঈম, সাইফ হাসানদের কাছ থেকে আমাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স প্রয়োজন। সিস্টেমের ভেতরে রেখেই এসব তরুণকে কিছু ম্যাচে দেখতে হবে। তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজের মতো সিনিয়রদেরও ঠিকমতো ব্যবহার করা দরকার। আমার মনে হয়, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো কিছু ফাস্ট বোলার খুঁজে বের করতে হবে। এটা অগ্রাধিকার দিয়েই করতে হবে। এই বিষয়গুলোই আগামী মাসগুলোতে ফোকাসে থাকবে। আমাদেরকে স্কিলের উন্নতি আনতে হবে, কারণ লম্বা সময় ধরে আমাদের টেস্ট ম্যাচের পারফরম্যান্স ভালো নয়।
বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় ২০১৯ সালের মূল্যায়ন করতে হলে কী বলবেন?
দেখেন, আমাদের টি-টোয়েন্টি দল উন্নতি করছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে গিয়েছি। আমরা ভারতকে ভারতের মাটিতেই হারিয়েছি। হয়তো সহজেই সিরিজটা জিততে পারতাম, যদি শেষ ম্যাচে আরও একটু ভালো খেলতাম। আমাদের টেস্ট এখনও অনেক পিছিয়ে।
২০২০ সালে অনেক টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। অনেক সিরিজ, আপনার চোখে এই বছর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
আমার মনে হয়, বড় বিষয় হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার চেষ্টা করা। বাছাইপর্বে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওমানের বিরুদ্ধে খেলতে হবে আমাদেরকে। আমি মনে করি, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়া। এছাড়া কিছু টেস্ট সিরিজ জেতার চেষ্টা করা উচিত। টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির চেষ্টা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচ জেতা।
বাংলাদেশের হেড কোচ হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত টার্গেট কী থাকবে ২০২০ সালে?
আমার মূল ফোকাস হবে দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচ জেতা। এটা আমাদের জন্য বড় ফোকাস পয়েন্ট। বাংলাদেশ দেশের মাটিতে অতীতে ভালো করেছে। কিন্তু দেশের বাইরে খুব বাজে পারফরম্যান্স করেছে। অন্তত একটা টেস্ট ম্যাচ বাইরে জেতার চেষ্টা করতে হবে। টেস্টে আমাদের অনেক গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ গত বছরের চেয়ে এবার আমরা বেশি টেস্ট খেলব। অবশ্যই এটা আমাদের জন্য অনেক দারুণ বিষয় হবে।
সাকিব আল হাসানকে ছাড়া এসব চ্যালেঞ্জ পাড়ি দেয়া কতটা কঠিন হবে?
এটা বড় ক্ষতি। কিন্তু এটা তরুণদের জন্য দারুণ সুযোগ, তার অনুপস্থিতিতে এগিয়ে আসার। খেলাটা এভাবেই এগিয়ে যাবে, কিছু বিষয় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুটা ভালো হয়নি।
২০২০ সালের জন্য কী পরিকল্পনা বা ভাবনা থাকছে আপনার?
আমরা টেস্ট সিরিজ জিততে চাই। আমি জানি না, বাংলাদেশ কতগুলো টেস্ট জিতেছে। আমাদেরকে টেস্ট সিরিজ জিততে হবে, এবং আমি মনে করি ২০২০ সালে এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর নিয়ে আলোচনা চলছে। আপনার চিন্তাভাবনা কী এই ব্যাপারে?
আমার মনে হয়, সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের আলোচনা করতে হবে। বোর্ডের সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে, এবং তারপর কী হবে বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিবে।
আপনি কি পাকিস্তান সফরে যাবেন?
যদি দলকে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়, তাহলে আমি যাব। যদি দলকে যাওয়ার ছাড়পত্র না দেয়া হয়, তাহলে আমি অবশ্যই যাব না।
বিসিবি সভাপতি বলেছেন, অনেক কোচই যেতে রাজি নয়। আপনার সহকর্মীদের মধ্যে কে কে যেতে রাজি?
আমার মনে হয়, কেউ কেউ যেতে আগ্রহী নয়। কিন্তু যদি আমাদেরকে যেতেই হয়, তাহলে আমি যাব।