১৪ই আগস্ট ১৯৪৮। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে মাঠে নামেন স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। তার ঠিক ৪২ বছর পর ১৯৯০ সালের ১৪ই আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম শতক হাঁকান মাত্র ১৭ বছর ৩ মাস ২০ দিন বয়সী ভারতীয় এক ব্যাটসম্যান। ব্র্যাডম্যানের শেষ থেকেই যে কিশোরের শুরু, সে একদিন কৈশর পেরিয়ে যৌবন, যৌবন শেষ করে উপনীত হলো ৩৮ বছর বয়সে। ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখটা ১৬ই মার্চ ২০১২। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ শতকটা করে ফেললেন সেদিনই, শততম শতক। ১০০টি শতকের মহাকাব্য লেখা সেদিন শেষ করলেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।
করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর অভিষেক ঘটে শচীনের। ব্যাট হাতে শচীন যখন প্রথমবার মাঠে নামেন, তখন পাকিস্তানের সময় ছিল বিকেল ৩টা বেজে ৪ মিনিট, ভারতীয় সময়ে যা তখন ৩টা বেজে ৩৪ মিনিট। ২৪ বছর পর যখন শেষবার ব্যাট হাতে নামেন শচীন, তখনও সময়টা ওই একই, ৩টা বেজে ৩৪ মিনিট।
শচীনের ২৪ বছরের ক্যারিয়ার সাজানো অনন্য আর অসাধারণ সব কীর্তি দিয়ে, শুরু আর শেষটাও তেমনি বিশেষ। ব্র্যাডম্যানের শেষের দিন নিজের শতক যাত্রার শুরু আর ঠিক ৩ টা বেজে ৩৪ মিনিটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আর শেষবার ব্যাট হাতে নামাটা বিস্ময়েরই বটে। তবে এই বিস্ময় ধূলিস্মাৎ হয়ে যেতে বাধ্য সোজা শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে প্রবেশ করলেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক রান (৩৪ হাজার ৩৫৭) আর সর্বাধিক শতকের মালিক শচীন টেন্ডুলকার এই নশ্বর অবনীকে ক্রিকেটের রঙে রাঙাতে ধরায় আসেন ১৯৭৩ সালের ২৪শে এপ্রিল মুম্বাইয়ের মহারাষ্ট্রের রমেশ-রজনীর সংসারের ৪র্থ সন্তান হয়ে। ২ ভাই আর ১ বোনের আদরের ছোট ভাই হওয়ায় আদর-যত্ন পেয়েছেন সবার থেকেই। এই যেমন আর্থিকভাবে খুব বেশি ভালো অবস্থানে না থেকেও বাবার থেকে বাইসাইকেল, ১১ বছর বয়সে বড় বোনের থেকে ক্রিকেট ব্যাট, বড় ভাই অজিতের অনন্য সহযোগিতা – আরও কত কিছু!
শিবাজী পার্কে শ্রী রমাকান্তের হাত ধরে শুরু হয় শচীনের প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট শিক্ষা। স্কুল ক্রিকেটে খেলেছেন অনেক ম্যাচ, স্কুল থেকে পাওয়া লম্বা ছুটি কাটাতেন পুরোটাই ক্রিকেট অনুশীলন করে। যে ক্রিকেটের প্রতি তার এত ভালোবাসা জীবনের শুরু থেকেই, সেই ক্রিকেট নামক মহাকাব্যের মহানায়ক সে হবে না তো কে হবে!
ক্রিকেটের প্রতি, নিজ দলের প্রতি তার প্রতিজ্ঞা সব সময়ই ছিল পাহাড়ের মতো অটল, প্রকৃতির মতো স্বচ্ছ, যোদ্ধার মতো নির্ভয়। ছোটবেলাতেই শিবাজী পার্কে খেলার সময় নিজ দলের উইকেটরক্ষক আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ছোট শচীন সেদিন দলের অধিনায়ক। দলের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করেন, কেউ উইকেটরক্ষক হতে চায় কি না। কারও থেকে যখন কোনো উত্তর পেলেন না, তখন শূন্য অভিজ্ঞতা নিয়েই দাঁড়িয়ে গেলেন উইকেটের পেছনে। শূন্য অভিজ্ঞতা বলে কথা, আঘাত পেলেন চোখের নিচে, রক্তে ভেসে যাওয়া অবস্থা। তাই নিয়েই ফিরলেন বাড়ি। বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না, দাদি দেখে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দিয়েছিলেন, রক্তাক্ত মুখের খবর বাবা-মাকে আর তেমন দেয়াই হয়নি শচীনের। দলের জন্য নিজের সেরাটা বারবার দিয়ে গেছেন জাতীয় দলেও।
শচীনের স্কুল আর শিবাজী পার্কের মাঝে দূরত্ব অনেকখানি। সময়মতো বাস না ধরতে পারলেই দেরি হতো, সঙ্গী হতো ভ্রমণক্লান্তিও। এতসব চিন্তা করে শচীনকে রাখা হলো সুরেশ আর মঙ্গলা নামক তার আত্মীয়ের বাড়ি। ছোট শচীন নিজ বাড়ি ছেড়েছিলেন এই ক্রিকেটকে ভালোবেসে। এমন করেই ১৯৮৮ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে শতরান করেন। একই বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি স্কুল ক্রিকেটে শচীন আর বিনোদ কাম্বলি করলেন ৬৬৪ রানের জুটি। রঞ্জি ট্রফি, দুলীপ ট্রফি আর ইরানী ট্রফি – ৩ টুর্নামেন্টেই নিজের অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরির রেকর্ডও আছে তার।
পরের বছরই জাতীয় দলে অভিষেক। একই সিরিজে ক্রিকেটের তখনকার দুই সংস্করণেই অভিষিক্ত হলেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, সেটাও পাকিস্তানের মাটিতে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিসের মোকাবেলা করে।
১৯৮৯ সালের ১৫ই নভেম্বর তার অভিষেক। করাচি স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে নেমেছিলো ১৬ বছর ২২৩ দিন বয়সী টেন্ডুলকার। ওয়াকার ইউনিসের বাউন্সারে নাক ফেটে ঝরেছিল রক্ত। ঘাবড়ে যাননি, রক্তাক্ত নাক মুছে নিয়ে পরের বলেই হাঁকিয়েছিলেন বাউন্ডারি! সেই ইউনিসের বলেই বোল্ড হয়ে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫ করে থামতে হয়েছিলো শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে। ওই ম্যাচে আর ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পাননি লিটল মাস্টার। ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ফয়সালাবাদ টেস্টে ১৭২ বল মোকাবেলা করে ৫৯ রান করে জানান দিয়েছিলেন নিজের সক্ষমতার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই সিরিজেই করেছিলেন আরও একটি অর্ধশতক।
টেস্টে শুভ সূচনা হলেও একদিনের ক্রিকেটে শুরুটা মোটেও শুভ ছিল না। নিজের ২য় বলেই সেই ওয়াকার ইউনিসের বলে আউট হয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় ‘লিটল মাস্টার’কে। পরের ম্যাচ খেলেছেন নিউ জিল্যান্ডে। ২য় ওডিআই ম্যাচেও ফলাফল একই, ২ বল খেলে ০ রান। ৬ মার্চ ১৯৯০, নিজের ৩য় ম্যাচে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংসের মধ্য দিয়েই খুলেছিলেন ক্রিকেটের এই সংস্করণের রানের খাতা।
নিউ জিল্যান্ড সফরের ওডিআইয়ের আগেই খেলেছেন টেস্ট সিরিজে। সেখানে নিজের প্রথম ইনিংসে প্রথম বলেই আউট হন শচীন। পরের ম্যাচে মাত্র ১২ রানের জন্য দেখা পাননি প্রথম শতকের, ৮৮ রানে ফিরতে হয়েছিল তাকে। আর মোটে ১২টা রান করলেই হয়ে যেতেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।
পরবর্তীতে শতকের শতক করা শচীনের শতক যাত্রা শুরু হয় তার নবম টেস্টের ৫ম দিনে। ১৯৯০ সালের ১৪ আগস্ট ম্যানচেস্টারে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ১১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। টেস্টে শচীন এরপর থেকে নিয়মিতই করে গেছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে শতক খরা যেন লেগেই ছিল তার। শেষ পর্যন্ত ৭৯তম ম্যাচে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ১১০ রানের ইনিংস। ওডিআই শতক খরা কাটানোর পরের ৩ ম্যাচে টানা শূন্য রানে আউট হয়েছেন শচীন। মাঝে এক ইনিংস বাদ দিয়ে আবার শতক, এবার প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। এরপর থেকে টেস্ট ক্রিকেটের মতো একদিনের ক্রিকেটেও সেঞ্চুরি করাটাকে ডালভাত করে ফেলেন ব্র্যাডম্যানের যোগ্য উত্তরসূরী এই ব্যাটসম্যান। সবশেষ শতকটি করেন ২০১২ সালের এশিয়া কাপে, ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে।
টেস্ট ক্রিকেটে ততদিনে ২৪৮*, ২৪১*, ২১৭, ২০১* রানের ইনিংস আছে শচীনের, আছে মুলতানে ১৯৪* এর ইনিংসও। ডাবল হান্ড্রেড তো টেস্ট ক্রিকেটেই হয়; একদিনের ক্রিকেটের ৩০০ বলের খেলায় কি আর একাই ২০০ করা যায়? এই ‘অসম্ভব’কেও প্রথমবার সম্ভব করেন ক্রিকেটের এই বরপুত্র। ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফিকার বিপক্ষে মাত্র ১৪৭ বলে হাঁকান ওডিআই ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দ্বিশতক। অবশ্য কাছাকাছি গিয়েছিলেন আরও কয়েকবারই। ঠিক আগের বছরের মার্চ আর নভেম্বরে খেলেছিলেন ১৬৩* আর ১৭৫ রানের ইনিংস। ১৯৯৯ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ বল মোকাবেলা করে খেলেছিলেন অপরাজিত ১৮৬ রানের ইনিংস।
১৯৯৬ থেকে ব্যাটসম্যান শচীনের নতুন পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় ক্যাপ্টেন শচীন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি খেলেছেন ৭৩ ওডিআই আর ২৫ টেস্ট। অধিনায়ক হিসেবে হয়তো খুব একটা সফল ছিলেন না; ৭৩ ওডিআইতে মাত্র ২৩ টি জয়, উইনিং পারসেন্টেজ ৩৫ শতাংশের কিছু বেশি। ২৫ টেস্টে জিতেছিলেন ৪টিতে, হারের সংখ্যা ৯। অধিনায়ক শচীনের যাত্রার শেষও হয় দ্রুতই, ২০০০ সালে।
এতসব রেকর্ডের বরপুত্রের একটা অপ্রাপ্তি থেকেই যাচ্ছিল। ‘৯২, ’৯৬, ’৯৯, ২০০৩, ’০৭ – টানা ৫টি বিশ্বকাপ খেলেও বিশ্বকাপটা উঁচু করে তোলা হয়নি শচীনের। আক্ষেপটা ঘোচে ২০১১ বিশ্বকাপে, বিশ্বকাপহীন তাই থাকতে হয়নি ক্রিকেট রাজ্যের রাজাকে। মাঝে ২০০৩ বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন শচীন; ১৯৯৬ আর ২০০৩ বিশ্বকাপে ছিলেন সর্বাধিক রানসংগ্রাহক। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন হারান নিজের বাবাকে। বাবার মৃত্যুতে দেশে ফিরে এসে আবারও ফিরে যান ইংল্যান্ডে; ইস্পাতদৃঢ় মনোবল নিয়ে ঠিকই খেলে যান বিশ্বকাপ, সেঞ্চুরিও হাঁকান।
সব থেকে বেশি ওডিআই বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের তালিকায় শচীন ২য়, প্রথমে থাকা পন্টিং থেকে তিনি পিছিয়ে ১ ম্যাচে; তবে সব থেকে বেশি ইনিংস খেলাতে শচীন সবার উপরেই। বিশ্বকাপে ২,২৭৮ রান নিয়ে এখানেও সবার উপরে শচীন। সর্বাধিক ৬ শতকও তার, তার সমান ৬ শতকের মালিক এখন তারই স্বদেশী রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংসও তার সব থেকে বেশি (২১টি) । সমান ১২টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস নিয়ে কুমার সাঙ্গাকারা আর বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান আছেন পরের অবস্থানে।
শচীন রমেশ টেন্ডুলকার টেস্ট খেলেছেন ঠিক ২০০টি; কী কাকতালীয় ব্যাপার, তাই না? ওহ আচ্ছা, কাকতালীয় হলো কীভাবে, তাই ভাবছেন তো? ২০০তম টেস্টে অবসরে যাবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। তবে সেই ২০০তম টেস্টে তিনি যে শেষবার ব্যাট করবেন, সেই ১৫ নভেম্বরেই আর ব্যাট হাতে যখন নামবেন, তখন ঘড়ির কাঁটাতে সময়ও থাকবে ৩টা বেজে ঠিক ৩৪ মিনিট; এসব কি অবাক করে না? শতকের সংখ্যাটাও ঠিক ১০০; পরে আর কোনো শতক করতে পারলে সংখ্যাটা দেখতে হয়তো ততটা সুন্দর হতো না, যতটা এখন আছে।
২০০ টেস্ট খেলে শচীন ৫১ শতক আর ৬৮ অর্ধশতকে মোট রান করেছেন ১৫ হাজার ৯২১। মাত্র ৭৯ রান করলেই ছুঁয়ে ফেলতেন ১৬ হাজার রান। ৪৬৩টি একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে শতক ৪৯টি, অর্ধশতক ৯৬টি, আর মোট রান ১৮ হাজার ৪২৬। টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন একটিই, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ রানে বোল্ড আউট হন সে ম্যাচে তিনি। শচীন টেন্ডুলকারের টেস্ট গড় ৫৩.৭৮ আর ওডিআইতে সেটা ৪৪.৮৩। টেস্টে দ্বিশতক ৬টি, ওডিআইতে ১টি। ক্রিকেটের ৩ সংস্করণ মিলিয়ে তার মোট সংগ্রহ ৩৪ হাজার ৩৫৭ রান। ২য় অবস্থানে থাকা লংকান গ্রেট সাঙ্গাকারার সংগ্রহ ২৮ হাজার ১৬ রান। তার এই রেকর্ড আদৌ কেউ ভাঙতে পারবে কি না, সে বিতর্ক চলছে, চলবেও আপন মহিমায়।
তার খেলা মোট আন্তর্জাতিক ম্যাচ কত? কী লাভ তা জেনে? ২০০ টেস্ট, ৪৬৩ ওডিআই, সাথে ১ টি-টোয়েন্টি… সংখ্যাটা ৬৬৪। সংখ্যাটি তার খ্যাতির সাথে অন্য আরেকভাবেও জড়িত। সেই যে স্কুল ক্রিকেটে বিনোদ কাম্বলির সাথে তার ৬৬৪ রানের জুটি!
শচীন টেন্ডুলকার ১৯৯৭ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন। ভারতের পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, রাজীব গান্ধী, অর্জুন পুরস্কারসহ আরও বহু পুরস্কার জিতেছেন তিনি। ২০১৯ সালের জুলাইতে যুক্ত হন আইসিসির হল অব ফেমেও। ৬টা ভিন্ন পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন শচীন। ১৯৯৮ সালে ১২ শতক করে এখন পর্যন্ত এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ শতকের মালিকও এই শচীনই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩১০ ম্যাচে তার মোট রান আছে ২৫ হাজারের বেশি, আর লিস্ট-এ’তে ২১,৯৯৯ রান; সংখ্যার খেলাটা এখানেও। আইপিএলের সুবাদে শচীনের আছে টি-টোয়েন্টি শতকও। ৭৮ আইপিএল ম্যাচে মোট রান ২,৩৩৪।
লিস্টল মাস্টার বল করতেও মন্দ জানতেন না। ২০০ টেস্টে ৪৬ উইকেট আছে তার নামের পাশে, একদিনের ক্রিকেটে হিসেবটা ৫.১ ইকোনমি আর ৪৪.৪৮ গড়ে ১৫৪ উইকেট। একদিনের ক্রিকেটে ন্যূনতম ১০ হাজার রান, ১০০ উইকেট আর ১০০ ক্যাচ নেয়া ক্রিকেটার এই শচীন টেন্ডুলকারই।
আরও কিছু রেকর্ডের সাথেও যুক্ত আছে শচীনের নাম। কোনোটি সাফল্যের, কোনোটি আবার নিছক রেকর্ড; তবুও রেকর্ড বলে কথা তো। এই যেমন থার্ড আম্পায়ার পদ্ধতিতে প্রথম আউট হওয়া ক্রিকেটার শচীন (১৯৯২)। আবার ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্লাবের ইতিহাসের প্রথম বিদেশি ক্রিকেটারও শচীনই। ১৯৯৯ সালে শোল্ডার বিফোর উইকেটও হয়েছিলেন তিনি।
সব উপন্যাসেরই শেষ আছে, মহাকাব্যেরও ইতি টানতে হয়; ২৪ বছরের ক্যারিয়ারও শেষ করতে হয় শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে। ঘোষণা দিলেন, নিজের ২০০তম টেস্ট ম্যাচই হবে তার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের শেষ ক্রিকেট ম্যাচ। ব্যস, শুরু হলো আরেক হুলস্থূল কাণ্ড। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের জায়গা করে দেয়া থেকে যার শুরু। ভক্তদের জটলা স্টেডিয়ামে, স্টেডিয়ামের বাইরে, “শচীন… শচীন…” বলে গগনবিদারী চিৎকার, সুধীর গৌতমের শঙ্খ বাজিয়ে যাওয়া; সব কিছুই তাকে বিদায় জানাতে। সেদিন দর্শক হিসেবে সেখানে উপস্থিত কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা বলেছিলেন,
“He Has Scripted the Greatest Ever Career.”
এই কথাটুকুর মাহাত্ম্য বা যৌক্তিকতা কোনোটি বুঝতেই বিশাল পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হয় না। প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে তার ক্যারিয়ারটাকে অনুভব করার চেষ্টা করলেই বোঝা যাবে, তার হিমালয়সম ক্যারিয়ার স্ক্রিপ্টেড কোনো মহাকাব্যের থেকে কোনো অংশে কম নয়। শচীন শচীনই থেকে যাবেন, দ্বিতীয় শচীন হয়তো আর পাওয়া যাবে না সুদূর ভবিষ্যতেও। তার বিশেষণ তিনি নিজেই, তার তুলনাও তিনিই।