Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাইফ হাসানের বদলে যাওয়ার নেপথ্যে

বাংলাদেশের হয়ে দু’টি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন সাইফ হাসান। দুই আসরেই ওপেনিংয়ে দলের আস্থার প্রতীক ছিলেন। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় ওপেনার হিসেবে আলোচিত হয়ে এসেছে তার নাম। তবে এই পর্যায়েই তার সঙ্গে জুড়ে যায় ‘মন্থর গতির’ ব্যাটসম্যানের পরিচিতি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় ক্রিকেট লিগে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সাইফ হাসান। একই প্রতিযোগিতায় নিজের প্রথম ম্যাচেও সেঞ্চুরি রয়েছেন এই ডানহাতি ওপেনারের। তারপর থেকে টেকনিক, টেম্পারামেন্ট মিলে লঙ্গার ভার্সন ফরম্যাটের বিবেচনাতেই চিন্তা করা হয়েছে সাইফ হাসানকে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খুলনা টাইটান্স দলে সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। বিপিএলের সর্বশেষ আসরে তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল। ২০১৮ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবাহনীর মতো শীর্ষ ক্লাবে খেলেছিলেন। কিন্তু স্ট্রাইকরেটে মন্থরতা, তথা রান তোলার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় বাদ পড়তে হয় আবাহনী থেকেও।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ আসরটি সাইফ হাসানের জন্য অনেক কিছু প্রমাণের মঞ্চ ছিল। বলা বাহুল্য, নতুন রূপে এবার নিজেকে মেলে ধরেছেন এই ওপেনার। অতীতের ধারণা, নিজের ব্যাটিং স্টাইল সবকিছুতে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। অনেক কিছু জয়ের এই ব্যক্তিগত মিশনে সফলও হয়েছেন সাইফ।

Image Credit: Saif Hassan Facebook Page

‘লিস্ট এ’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রিমিয়ার লিগের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের অতীত রেকর্ডকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েছেন সাইফ। প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ৭৯.৩৩ স্ট্রাইকরেটে ৮১৪ রান করে লিগের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের গৌরব অর্জন করেছেন। ব্যাটিং গড় ৬২.৬১, রয়েছে তিনটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ সেঞ্চুরি। সাইফের বদলে যাওয়ার স্মারক বহন করছে শেষ হওয়া প্রিমিয়ার লিগ, যেখানে লিগ শেষের আগের ম্যাচে বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিরুদ্ধে ১১৬ বলে অপরাজিত ১৪৮ রানের অসামান্য ইনিংস খেলেছিলেন প্রাইম দোলেশ্বর ওপেনার সাইফ। ইনিংসে ১০টি চার ও ১১টি ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা (১৬) মারার রেকর্ড এখন সৌম্য সরকারের দখলে। তারপরই আছেন মাশরাফি-সাইফ হাসানরা, যারা ১১টি করে ছক্কা মেরেছেন।

সফলভাবে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করার পর একান্ত আলাপে নিজের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলেছেন সাইফ হাসান। ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের বদলে যাওয়া, ব্যাটিং-ফিটনেস নিয়ে কাজসহ সার্বিক বিষয়ে জানিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণ।

Image Credit: Saif Hassan Facebook Page

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সবগুলো ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, আগের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হয়েছেন। সব মিলিয়ে নিজের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?

আমি কাজ করছিলাম আমার ব্যাটিং নিয়ে। আগে যেমন একটা আক্ষেপ ছিল, শেষের দিকে কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারিনি। গত প্রিমিয়ার লিগটা ভালো ছিল, ১২ ম্যাচে ৪৮০ রান হয়েছিল। তবে একটা আক্ষেপ ছিল যে, সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হতে পারিনি, সামনে যেখানে সুযোগ পাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। প্রাইম দোলেশ্বরে সব ম্যাচ খেলতে পেরেছি। আর সার্বিক প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল। কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম বাবুল স্যারের (প্রাইম দোলেশ্বর কোচ মিজানুর রহমান বাবুল) সাথে। সব মিলিয়ে ভালো ফলাফল এসেছে।

এবার মিরপুরে সব ম্যাচে ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেট ছিল না। ফতুল্লায়ও বড় রান হয়নি তেমন। এসব কঠিন উইকেটে রান পাওয়া নিশ্চয়ই সন্তুষ্টির?

মিরপুরে এবার রান করাটা কঠিন ছিল। এত সহজ ছিল না। ওখানেও গাজী গ্রুপের সাথে সেঞ্চুরি হয়েছে, তারপর বিকেএসপিতে একটা হয়েছে। ফতুল্লায় কিছু কিছু উইকেট কঠিন ছিল, তো ওখানেও রান হয়েছে। বাবুল স্যার যেটা বলেন যে, তোমার যদি বেসিক ঠিক থাকে, তুমি সবকিছু করতে পারবে। উনি অনেক কাজ করছে আমার সাথে। অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে আমাকে দেখছে। ওনার আসলে বড় হাত আছে আমার ব্যাটিংয়ের ওপর। আমি যখন অনূর্ধ্ব-১৯’য়ে ছিলাম, তখন থেকেই উনি শুরু করলেন আমার বেসিক শক্তিশালী করার কাজ। একদম প্রথম থেকে, উনি বলে আসছে, বেসিক যদি ঠিক থাকে, তাহলে তুমি নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।

Image Credit: Saif Hassan Facebook Page

প্রিমিয়ার লিগে এবার কি অনেক কিছু প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছিল আপনার সামনে?

অবশ্যই। গত বছর একটা সেঞ্চুরি ছিল, আর ফিফটি ছিল তিনটা। কিন্তু এবার চিন্তা করেছিলাম যে, বড় ইনিংস খেলব, আর যতো দ্রুত রান করা যায়, সেই চেষ্টা করব। স্ট্রাইকরেটটা মাথায় রেখে প্রান্তবদল করে খেলার চেষ্টা করব। আর দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা, দল যেটা চাচ্ছিল সেটা যেন করতে পারি। টিমের ফলাফলও খুব ভালো হয়েছে, আমরা তৃতীয় অবস্থানে থেকে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেছি। সব মিলিয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। অবশ্য আমরা চ্যাম্পিয়নের হওয়ার জন্য লড়াই করছিলাম। তবুও খুব ভালো হয়েছে আমাদের।

সর্বশেষ বিপিএলে খেলার সুযোগ পাননি। বিপিএলে দল পাওয়ার জন্য কি নিজেকে আলাদাভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন?

হ্যাঁ, যেমন গত বিপিএলে ছিলাম না, এবার এটা মাথায় ছিল। অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল টুর্নামেন্টটা। এই প্রিমিয়ার লিগের আগে টি-টোয়েন্টি একটা টুর্নামেন্ট হয়েছিল, ওখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলাম। সব মিলিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাথায় ছিল, অবশ্যই এসব যদি ঠিক থাকে, তাহলে বিপিএলের জন্য অনেকখানি এগিয়ে থাকব। মানে যদি আমার দিকটা স্লো থাকে, যদি স্ট্রাইকরেটের দিক থেকে পিছিয়ে থাকি, তাহলে ওখানে দল পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। আমি আমার দিক থেকে একটু এগিয়ে রাখলাম। স্ট্রাইকরেটটা ঠিক রাখার চিন্তা আমার মাথায় ছিল। সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে। ছক্কার রেকর্ডগুলো, ২৭টি ছয় ১৬ ম্যাচে। স্ট্রাইকরেটটাও ভালো ছিল।

Image Credit: Saif Hassan Facebook Page

বড় শট খেলা, দ্রুত রান করার জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন?

বড় শট, এটা আসলে অনেক অনুশীলন করা লাগে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল সাহস, সাহসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর ফিটনেসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সিঙ্গেলগুলো ক্যারি করতে হয়। যেমন এক’কে দুই রানে পরিণত করতে হয়। যেই বলে রান হয় না, সেখানেও যদি আপনি এক নিয়ে নেন, তাহলেও অনেকখানি এগিয়ে যান। প্রান্তবদল করে খেলার ক্ষেত্রে ফিটনেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারপর জিম অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বড় শটের পেছনে শক্তির জন্য জিম করা দরকার।

প্রিমিয়ার লিগের আগে ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন মনে হচ্ছে…

গত বছর আবাহনীতে যখন ছিলাম, তখন আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল। পরে এটা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। ফিটনেস করেছি, অফ সিজনে প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করেছি। তারপর যেখানে গিয়েছি, সেখানেই ফিটনেস করেছি, প্রতিদিনই করেছি বলতে গেলে। তারপর খাবার অভ্যাস বদলে ফেলেছি। খাবার অভ্যাসটা আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যতই ফিটনেস নিয়ে কাজ করি না কেন, খাবার অভ্যাস যদি আগের মতোই রয়ে যায়, তাহলে একই হলো, লাভ হলো না ফিটনেস নিয়ে কাজ করে। আমার মনে হয়, সেটাই কাজে দিয়েছে।

Image Credit: Saif Hassan Facebook Page

একটা টুর্নামেন্টে ভালো করাই এখন আর যথেষ্ট না। এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাও অনেক জরুরী…

হ্যাঁ আসলেই, অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক আসরের পারফরম্যান্স দিয়ে বিচার করা ঠিক না। আমার উচিত যতটা সম্ভব ধারবাহিক থাকা। ফিটনেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের যেসব জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। আরও দ্রুত রান করার অনুশীলন করতে হবে। নিজের শক্তির জায়গায় বাইরে গিয়ে অনুশীলন বেশি করতে হবে।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রতি সবসময় নজর থাকে নির্বাচকদের। একটা সফল টুর্নামেন্ট পার করেছেন। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নটা নিশ্চয়ই সবসময় দেখেন…

প্রত্যেক প্লেয়ারের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমি চিন্তা করছি, সামনে যে টুর্নামেন্টটা আসবে, সেটা আসলে অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে আমার জন্য। সামনে যদি লঙ্গার ভার্সন থাকে, সেটা আমার ভালো খেলতে হবে। সামনে যদি এইচপির কোনো প্রোগ্রাম থাকে, সেটা আমার ভালো খেলতে হবে। সামনে যে খেলাগুলো আসবে, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর চ্যালেঞ্জিং হবে আমার জন্য। ওখানে পারফর্ম করতে হবে।

This article is in Bangla language. It is about the evolution of Saif Hassan, an emerging Bangladeshi talented batsman, who has secured the position of highest run-getter in DPL. 

Featured Image: Getty Images

Related Articles