Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাঙ্গা-মাহেলা: বন্ধুত্ব, ৬২৪ ও অন্যান্য

ক্যান্ডি থেকে আসা ছেলেরা নাকি ‘দস্যি’ হয়। অন্তত কুমার সাঙ্গাকারার সাথে দেখা হবার আগ পর্যন্ত এটিই জানতেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। তবে শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় যে দু-একবার মুখোমুখি হয়েছেন, তাতেই মাহেলা বুঝে গেছিলেন যে, সাঙ্গাকারা সেই দস্যি ছেলেদের কাতারে পড়েন না। বরং শান্ত-সৌম্য এই ছেলেটি ক্রিকেটের অতি মনোযোগী ছাত্রদের একজন।

দারুণ প্রতিভাবান মাহেলা জয়াবর্ধনেকে কৈশোর থেকেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মনে করা হতো। ১৭ বছর বয়সেই অনূর্ধ্ব-২৪ ও ‘এ’ দলে খেলে ফেলেছিলেন তিনি। সাঙ্গাকারার আন্তর্জাতিক অভিষেক হতে হতে ততদিনে সেঞ্চুরি তো বটেই, একটা ডাবল সেঞ্চুরিও করে ফেলেছেন মাহেলা; কাঁধে পেয়েছেন সহ-অধিনায়কের গুরুদায়িত্বও।

তরুণ মাহেলা জয়াবর্ধনে; Image Source: YouTube

“সহজাত প্রতিভার সুবাদে অন্যদের থেকে কম পরিশ্রমেই ভালো ফল পেত মাহেলা। অল্প বয়স থেকেই বড় ইনিংস খেলার একটা ক্ষমতা ছিল ওর। ওকে ব্যাট করতে দেখে আমরা হতাশ হয়ে যেতাম। ওকে কখনোই বড় রান করার জন্য আমাদের মতো পরিশ্রম করতে হতো না।”

কথাগুলো বলছিলেন সাঙ্গাকারা।

এমসিসির বিপক্ষে ২০০২ সালে সাঙ্গাকারা; Image Courtesy: ICC

প্রতিভাবান মাহেলার সঙ্গে পরিশ্রমী সাঙ্গাকারা – ‘opposites attract’ বলে ইংরেজি যে প্রবাদটা আছে, বোধহয় তাই ঘটেছিল তাদের দু’জনের ক্ষেত্রে। তাছাড়া ড্রেসিংরুমে তাদের বয়সী কেউ না থাকাটাও তাদের বন্ধুত্বকে প্রগাঢ় করেছে। 

এই বন্ধুত্বই পরবর্তীতে জন্ম দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বাধিক রানপ্রসবা জুটির। ২৯৩ বার জুটি বেঁধে প্রায় ৪৮ গড়ে ১৩,৩৬৮ রান এসেছে ‘সাঙ্গাবর্ধনে’র ব্যাট থেকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা সর্বোচ্চ। ৬২ বার তাদের জুটি পেরিয়েছে পঞ্চাশ, শতরানের জুটির সংখ্যা ৩৬। 

২০০৪ সালে সাঙ্গা-মাহেলা; Image Courtesy: Getty Images

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০৬ সালে তৃতীয় উইকেট জুটিতে গড়া ৬২৪ ছিল নিঃসন্দেহে তাদের সবচাইতে বিখ্যাত জুটি। টেস্ট ক্রিকেটে তো বটেই, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই এটি যেকোনো উইকেটে সবচাইতে বড় জুটি।

কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সেই টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অ্যাশওয়েল প্রিন্স। গ্রায়েম স্মিথ-জ্যাক ক্যালিসবিহীন দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম দিনেই গুটিয়ে যায় ১৬৯ রানে। শ্রীলঙ্কার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়ে লড়াইয়ের আভাস দিয়ে রাখেন তরুণ ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন। তবে সামনে কী আসতে চলেছে তা দু’দলের খেলোয়াড় বা সিংহলিজ স্পোর্টিং ক্লাবের কোনো দর্শক ভাবতেও পারেননি।

চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে উপুল থারাঙ্গা সাজঘরে ফিরলে সাঙ্গাকারার সাথে ক্রিজে যোগ দেন অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। ব্যক্তিগত রান যখন ৭, তখন ডেল স্টেইনের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন সাঙ্গাকারা। কিন্তু তালুবন্দি করতে পারেননি জ্যাক রুডলফ।

পরের বলেই সাঙ্গাকারাকে বোল্ড করেন স্টেইন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওভারস্টেপিংয়ের জন্য বলটি বৈধ বলে স্বীকৃতি পেল না। বেঁচে গেলেন সাঙ্গাকারা।

পর পর দুই বলে আউট হতে পারতেন সাঙ্গাকারা; Image Courtesy: Getty Images 

প্রথম দিন শেষ হবার আগেই দু’জনেই পেরিয়ে যান ব্যক্তিগত অর্ধশত রান। সাঙ্গাকারা অপরাজিত ছিলেন ৫৫ রানে আর মাহেলা ৫৪। দু’জনের জুটিও ততক্ষণে পেরিয়েছে শতরান।

পরের দিনটায় কোনো সুযোগ দিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকাকে, দু’জনেই তুলে নিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। ভালো রানরেটে ব্যাটিং করে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সাঙ্গাকারা-মাহেলা যোগ করলেন ৩৫৭ রান। দু’জনে রানও করলেন পাল্লা দিয়ে, প্রথম দিনের রানের সাথে সাঙ্গাকারা যোগ করেন ১৭০ আর মাহেলা ১৬৯।

ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। সন্ধ্যায় দু’জনই স্ত্রীদের নিয়ে খেতে বেরোলেন, উদ্দেশ্য নিজেদের চাঙ্গা রাখা। ফিরে এসে আইস বাথ, ফিজিওর সঙ্গে একটা সেশন কাটিয়ে তারা আবারও নেমে পড়লেন পরদিন। ইতিহাস যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে!

তৃতীয় দিনেও তারা নিরাপদে কাটিয়ে দিলেন দুই সেশন। মজার ব্যাপার হলো, এই দীর্ঘ সময় ক্রিকেটের চাইতে ক্রিকেটের বাইরের কথাই বেশি বলেছেন দু’জন – যেমন, রাতে আজ কী খাওয়া যায়! তবে একটু চিন্তায় পড়ে গেছিলেন তখন, যখন বিশ্বরেকর্ডটা একটু একটু করে কাছে চলে আসছিলো। 

সাঙ্গা-মাহেলার আগে রেকর্ডটা ছিল জয়াসুরিয়া-মহানামার; Image Courtesy: AFP

তৃতীয় দিন শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা যখন চা বিরতিতে যায়, তখন সাঙ্গাকারা-মাহেলা জুটি তুলে ফেলেছে ৫৭০ রান। ড্রেসিংরুমে গিয়ে সাঙ্গাকারা-মাহেলা জানতে পারেন, আর মাত্র ৭ রান যোগ করলেই ভারতের বিপক্ষে সনাথ জয়াসুরিয়া- রোশান মহানামার রেকর্ড ৫৭৬ রানের জুটি টপকে যাবেন তারা। 

চা-বিরতির পর তারা ঢুকে গেলেন ইতিহাসের পাতায় আর আতশবাজির সাথে তাদের রেকর্ডকে স্বাগত জানাল কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টিং ক্লাব। পরক্ষণেই বিজয় হাজারে ও গুল মোহাম্মেদের ৫৭৭ রানের জুটির রেকর্ডও ভেঙে ফেলেন তারা।

সব ধরনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এই দু’জনের; Photo Courtesy: AFP

 

অবশেষে তাদের জুটি ভাঙতে সমর্থ হন অ্যান্ড্রু হল। ব্যক্তিগত ২৮৭ রানে সাঙ্গাকারাকে ফেরান এই ফাস্ট বোলার। মাত্র ১৩ রানের জন্য ট্রিপল সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলেও টেস্ট ক্রিকেটে নিজের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর দাঁড় করিয়েছিলেন এই বাঁহাতি। 

তবে এত রান করেও না হতে পারলেন দলীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, না হতে পারলেন ম্যাচসেরা। কেননা সাঙ্গাকারা আউট হয়ে গেলেও মাহেলা থামেননি। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ডও বুঝি ভেঙে ফেলবেন। 

তবে তা আর হয়নি। ব্যক্তিগত ৩৭৪ রানের মাথায় আন্দ্রে নেলের নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হন মাহেলা। শ্রীলঙ্কার হয়ে মাহেলার ৩৭৪ এখনো এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান আর টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। অধিনায়ক হিসেবেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের তালিকায় আছে এটি।

পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহেলা আউট হয়ে যাবার সাথে সাথেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন দলীয় ৭৫৬ রানে। দুই ওপেনার এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়ে গিয়েছেন, এমন ইনিংসগুলোর ক্ষেত্রে ৭৫৬-ই এখনো দলীয় সর্বোচ্চ রান।

ট্রিপল সেঞ্চুরির পর; Image Courtesy: Eranga Jayawardena/Associated Press

প্রায় ১৩ ঘন্টার এই জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বল করতে হয়েছে ১৫৭ ওভার। এর আগে বা পরে – কখনোই কোনো জুটি এত লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে পারেনি। 

এক ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যান আড়াইশ রান পেরিয়েছেন, এর আগে এমন দৃষ্টান্ত ছিল শুধু একটি। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একই ইনিংসে স্যার গ্যারি সোবার্স তুলেছিলেন ৩৬৫ রান আর কনরাড হান্টের সংগ্রহ ছিলো ২৬০।

সব রেকর্ড যে ব্যাটিংয়েই হয়েছে, তা-ও নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার নিকি বোয়ে ৬৫ ওভার বল করে ২২১ রান খরচায় ছিলেন উইকেটশূন্য। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে এর চাইতে বেশি রান খরচ করে উইকেটশূন্য ছিলেন কেবল একজনই। 

একসাথে ব্যাট করে দু’জন করেছেন ৬,৫৫৪ রান, যার দশ শতাংশ এসেছিল সেই এক ইনিংসেই।  

এই দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের আক্ষেপ ছিল একটা বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জিততে না পারা। সে অপেক্ষাও ফুরোয় ২০১৪ সালে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি জিতে বিদায়ী দুই ক্রিকেটার সাঙ্গাকারা ও মাহেলাকে উৎসর্গ করে শ্রীলঙ্কা। 

নিজেদের রেস্তোরাঁয়; Image Courtesy: Forbes India

 

ক্রিকেট মাঠের বন্ধুত্ব তারা বিস্তৃত করেছেন ক্রিকেটের বাইরেও। দু’জনে মিলে খুলেছেন ‘মিনিস্ট্রি অব ক্র‍্যাব’ নামে একটা সামুদ্রিক খাবারের রেস্তোরাঁ, যার শাখা আছে ভারতের মুম্বাইতেও। এছাড়া বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠনেও একসাথে অংশীদারিত্ব রয়েছে তাদের।

অবসরের পর শ্রীলঙ্কা দলের নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেছেন সাঙ্গাকারা। বর্তমানে আইপিএলের দল রাজস্থান রয়্যালসের পরিচালক ও বিখ্যাত মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ধারাভাষ্য দিয়ে থাকেন তিনি।

মাহেলা জয়াবর্ধনে এখন দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ হিসেবে। কৈশোরে মারা যাওয়া ভাই ধীশালের স্মরণে ‘হোপ ক্যান্সার প্রজেক্ট’ ও ৭৫০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতালের পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।

This is a Bengali language article on the iconic 624-run partnership between Mahela Jayawardene and Kumar Sangakkara. Necessary sources are hyperlinked inside.

Feature image: Reuters.

Related Articles