কসোভো থেকে মা-বাবার সাথে শূন্য হাতে শাকিরি সুইজারল্যান্ড এসেছিলেন স্বাভাবিক জীবনের খোঁজে, জীবনের নানা বাঁক পেড়িয়ে এই খেলোয়াড় পেরেছেন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। সুইজারল্যান্ডের হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়েছিলেন, রাশিয়া’ ১৮ বিশ্বকাপে সার্বিয়ার বিপক্ষে গোলের পর হৃদয়ের গভীরে কসোভোর জন্য ভালোবাসা থেকে ‘ঈগল’ উদযাপন করে আবারও এসেছেন আলোচনায়। তবে এবারের জন্য পার পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে।
পার্কে ফুটবল খেলা ছেলেটা কিভাবে বিশ্বকাপের মঞ্চ মাতাচ্ছে, সেই গল্প শাকিরি করেছেন দ্য প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য বাংলায় তুলে ধরা হল এই দুর্দান্ত অভিযাত্রীর গল্প।
আমাদের বাড়ি তেমন উষ্ণ ছিল না, শুধু একটি বড় ফায়ারপ্লেস ছিল। এটি ছিল খুবই পুরনো। বাসেলের একটি খামারবাড়িতে পুরনো বাড়ি এবং সব কিছু ঠিক এরকমই ছিল। নিজেকে উষ্ণ রাখতে আমি আশেপাশে পাগলের মতো দৌড়াতাম। ঠাণ্ডার ব্যাপারে আমার বড় ভাই সবসময় অভিযোগ করত, কারণ ওর ঘর ছিল উপরতলায়, ফায়ারপ্লেস থেকে অনেক দূরে। শীতকালে ওকে প্রায় পাঁচটার মতো কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হতো।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে আমার পরিবার কসোভো ছেড়ে চলে আসে, তখন আমার বয়স চার এবং আমাকে ও আমার দুই ভাইসহ তারা সুইজারল্যান্ডে জীবনযাপনের চেষ্টা করছিল। ব্যাপারটি সহজ নয়। বাবা সুইস জার্মান জানতেন না, তাই তাকে রেস্টুরেন্টে থালা-বাসন পরিষ্কারের কাজ নিতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজে তিনি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিলেন। মা শহরের অফিস বিল্ডিংগুলো পরিষ্কার করতেন (আমি ছিলাম মায়ের ভ্যাকুয়াম সহকারী এবং আমার ভাই জানালা পরিষ্কার করতো)।
সুইজারল্যান্ড যে কারও জন্য খুব ব্যয়বহুল। তাছাড়া আমার বাবা-মায়ের জন্য আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছিলো, কারণ আমাদের পরিবারের যারা এখনও কসোভোতে তাদের জন্য বাড়িতে অনেক অর্থ পাঠাতে হতো। প্রথমদিকে প্রতিবছর আমরা তাদের সাথে দেখা করতে যেতে পারতাম। আসলে, মা সবসময়ই বলতো, “বিমানে তুমি সবসময় দুষ্ট ছিলে! সবসময় সিটের উপরে ওঠার চেষ্টা করতে এবং পেছনের লোকদের স্পর্শ করতে! কখনোই তুমি শান্ত ছিলে না!”
কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়লো এবং আমার পরিবারের যারা সেখানে আটকা পড়েছে তাদের জন্য সবকিছু খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার চাচার ঘর পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং আরও অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। যতটা সম্ভব বাবা টাকা পাঠাতো। তাই যখন আমি বড় হচ্ছিলাম তখন খরচ করার মতো অতিরিক্ত অর্থ আমাদের ছিল না, সম্ভবত শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জন্মদিনের সময়।
মজার ব্যাপার হলো, আসলে রোনালদো ছিল আমার আদর্শ। আদি রোনালদো (ব্রাজিলিয়ান)। যেভাবে সে খেলতো, ম্যাজিক মনে হতো আমার কাছে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে সে যখন ইনজুরিতে আক্রান্ত হলো এবং ব্রাজিল ফ্রান্সের কাছে হেরে গেল, আমি কাঁদছিলাম এবং কাঁদছিলাম এই জন্য যে তার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছিল। বিশ্বকাপের তিন মাস পরে আমার সপ্তম জন্মদিন ছিল, পুরো তিন মাস মাকে প্রতিদিন বলতাম, “জন্মদিনে শুধুমাত্র রোনালদোর হলুদ জার্সিটা চাই। আমাকে ঐ জার্সিটা এনে দাও।”
জন্মদিনে আমার জন্য মায়ের কাছে শুধুমাত্র একটি বাক্স ছিল। খুলে দেখি রোনালদোর হলুদ জার্সি। আসলে এটি ছিল নকল জার্সি যা আপনি বাজারে কিনতে পাবেন। এমনকি আমার মনে হয় না জার্সিতে কোনো প্রতীক ছিল। এটি ছিল সবুজ রঙে নাম্বার ৯ লেখা সাধারণ হলুদ শার্ট। সত্যিকার জার্সি কেনার অর্থ আমার বাবা-মায়ের ছিল না, কিন্তু সেটা কোনো ব্যাপার না। দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের। প্রায় দশ দিনের মতো, প্রতিদিন আমি জার্সিটি পরেছি এবং এমনকি আমার হলুদ হাফপ্যান্টও ছিল, যেগুলোর সাথে আমি জার্সিটি গায়ে দিতাম।
স্কুলে একমাত্র অভিবাসী বাচ্চা আমিই ছিলাম এবং আমার মনে হয় না যে সুইস বাচ্চারা বুঝতো কেন আমি এত ফুটবল পাগল। সুইজারল্যান্ডে ফুটবল কেবল একটি খেলা। অন্যান্য জায়গার মতো এখানে তা জীবন ছিল না। মনে আছে যে চার বছর পর, রোনালদো যখন তিনকোণা চুল নিয়ে ২০০২ বিশ্বকাপে এসেছিল, তখন নাপিতের কাছে গিয়ে বলেছিলাম, “রোনালদোর মতো করে চুল কেটে দিন।”
কিন্তু তখন আমার কোঁকড়ানো সোনালী চুল ছিল, তাই উদ্ভট লাগছিল দেখতে। স্কুলে যাওয়ার পর আমাকে দেখে প্রায় সব বাচ্চার অনুভূতি ছিল অনেকটা এরকম, এই ছেলের কী হয়েছে? সে কী করেছে এটা?
পাত্তা দিইনি। আমি আমার মতো ছিলাম। আমার স্কুল ছিল শহরের ভালো জায়গায়, কিন্তু আমার বাড়ি ছিল শহরের সত্যিকার বাজে জায়গা থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে এবং সেখানে ভালো ফুটবল খেলা হত। মা আমাকে না যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করতো, কিন্তু স্কুল শেষে প্রতিদিন খেলার জন্য সেখানে হেঁটে যেতাম। জানি, লোকে মনে করে পুরো সুইজারল্যান্ড বেশ দারুণ এবং বেশিরভাগই এমন। কিন্তু পার্কে সবকিছু উন্মত্তের মতো। প্রত্যেক দল যেন জাতিসংঘ। আপনি তুর্কী, আফ্রিকান, সার্বিয়ান, আলবেনিয়ানসহ সবাইকে পাবেন এবং সেখানে শুধু ফুটবলই ছিল না- সবাই সেখানে আড্ডা দিতে আসত। তাই আপনি সেখানে দেখবেন যে কেউ জার্মান হিপ-হপ করছে, কেউ ফ্রি-স্টাইল র্যাপ করছে এবং এমনকি খেলা চলাকালীন সময়ে মেয়েরা সোজা মাঠের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
সেখানে ফুটবল ছিল সত্যিকার ফুটবল। যেমন, আপনি দেখবেন সেখানে লোকজন সর্বদা মার-গুঁতা খাচ্ছে, কিন্তু আমি কখনোই খাইনি, কারণ সবসময় মুখ বন্ধ রাখতাম। কিন্তু পার্কের খেলা আমাকে সত্যিই অনেক সাহায্য করেছে, কারণ আমি ছোট ছিলাম এবং শিখেছি কিভাবে বড়দের সাথে খেলতে হয়, যারা অবশ্যই মজা করে বেড়াচ্ছে না।
চৌদ্দ বছর বয়সে আমি এফসি বাসেলের যুব দলে খেলতাম এবং প্রাগে অনুষ্ঠিত নাইক কাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। সমস্যা ছিল স্কুল কিছুদিন বাদ দেওয়া লাগবে এবং যখন আমি স্যারের কাছে অনুমতি চাইলাম, তিনি না করে দিয়েছিলেন। সুইজারল্যান্ডে স্কুলের ব্যাপারে শিক্ষকেরা খুবই কঠোর। ভাবলাম, আচ্ছা, তাহলে কিছুদিন অসুস্থতার ভান করতে হবে আমাকে।
তাই মাকে দিয়ে স্কুলের জন্য আমি নোট লিখিয়ে নিয়েছিলাম যেখানে বলা ছিল আমার জ্বর বা এই জাতীয় কিছু এবং আমি টুর্নামেন্টের জন্য প্রাগে গিয়েছিলাম। আমি সত্যিই অনেক ভালো খেলেছিলাম এবং প্রথমবারের মতো অন্য দেশের বাচ্চারা আমার দিকে এমনভাবে তাকাত, যেন ঐ ছেলেটা বাসেলের, হ্যাঁ, ওটাই। অসাধারণ অনুভূতি।
বাসায় ফিরে এসে সোমবারে স্কুলে গিয়েছিলাম। জানেন কি, তখনও ভান করছি যে আমি কিছুটা অসুস্থ! স্যার সাথে সাথে বলেছিলেন, “জের্দান, এদিকে আসো। আসো, আসো, আসো।”
তিনি হাত নেড়ে আমাকে তার দিকে ডেকে টেবিলের উপর খবরের কাগজ মেলে ধরেছিলেন।
নিচে ইঙ্গিত করে বললেন, “ওহ, তুমি অসুস্থ ছিলে?”
এবং পত্রিকার প্রথম পাতায়, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি হাতে আমার হাসি মুখের ছবি।
তার দিকে তাকিয়ে আমি হাত বাতাসে তুলে ধরলাম, যেন আচ্ছা, ধরা পড়ে গিয়েছি!
ঐ টুর্নামেন্টের পর থেকে আমি অনেক বেশি মনোযোগ পেতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু তখনও পরিবারের জন্য অর্থ একটা বড় সমস্যা ছিল, কারণ আমার দুই ভাইও বাসেলে খেলত। যখন টুর্নামেন্ট বা অন্য কিছুর জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হত, তা ছিল প্রায় তিনগুণ বেশি। ১৬ বছর বয়সে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের জন্য স্পেনের কোনো এক জায়গায় যাওয়ার জন্য অর্থের দরকার ছিল এবং তা ছিল প্রায় ৭০০ সুইস ফ্রাঁর মতো। এক রাতে বাবা এসে বলল, “দেখ, অসম্ভব, আমরা এত দিতে পারব না।”
তাই আমার ভাইয়েরা এবং আমি অর্থ যোগাড় করার জন্য ছোটখাট কাজের খোঁজে বের হয়েছিলাম। আশেপাশে প্রতিবেশীদের বাগানে আমি প্রায় তিন সপ্তাহ কাজ করেছিলাম এবং এক ভাই, আমি জানিও না সে আসলে ঠিক কী করতো, শুধু জানতাম যে সে কোনো ফ্যাক্টরিতে বড় নিরাপত্তা চশমা চোখে কাজ করতো, এতটুকুই। যেভাবেই হোক, আমরা এক সাথে শেষমুহূর্তে অর্থ যোগাড় করতে পেরেছিলাম এবং স্পেনে যেতে পেরেছিলাম। মনে আছে যে, আমার বড় ভয় এটা ছিল না যে আমি যেতে পারব না, ভয় লাগতো যে হয়ত আমার সহ-খেলোয়াড়েরা জেনে যাবে যে আমরা অর্থ পরিশোধ করতে পারিনি।
আপনি জানেন যে, ছেলেপেলেরা কিভাবে হয়রানি ও আপনাকে নিয়ে মজা করতে পারে, বিশেষ করে যখন আপনার বয়স ১৬ বা ১৭। প্রশিক্ষণ শেষে, সবাই ক্যাম্প থেকে বের হতো কিছু খাওয়ার জন্য। আমার ও ভাইদের কাছে কখনোই এমন অর্থ ছিল না, তাই আমরা সবসময় কিছু অজুহাত তৈরি করে সরাসরি বাসায় চলে যেতাম। কিন্তু আমি মনে করি এটাই আমাকে ভিন্নভাবে আরও ক্ষুধার্ত করেছে। আমি সেরাদের বিপক্ষে খেলার জন্য ক্ষুধার্ত ছিলাম, সবসময়।
একবছর পর, ১৭ বছর বয়সে আমি বাসেলের প্রথম দলে ডাক পেয়েছিলাম। একটি ম্যাচের শেষের দিকে ২০ মিনিটের জন্য নামানো হয়েছিল আমাকে এবং ভেবেছিলাম যে বেশ ভালো করেছি। পরের দিন প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর আমার যুব-দলের কোচ বললেন, “কী ছিল এটা? ভাবছিলে কী তুমি?”
আমি বললাম, “কোন ব্যাপারে বলছেন আপনি?”
তিনি বলেছিলেন, “ম্যানেজারের সাথে মাত্রই কথা বললাম। তিনি বলেছেন যে তুমি শুধুই ড্রিবলিং করেছে। তুমি দ্বিতীয় দলে ফেরত যাবে। এটাই চূড়ান্ত।”
ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো বাসেলে আমার এই শেষ।
দুই সপ্তাহ পর ম্যানেজারকে তারা বরখাস্ত করেছিল। নতুন ম্যানেজার আসলেন। তিনি আমাকে প্রথম দলে জায়গা দিয়েছিলেন এবং এরপর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এটা মজার কারণ তিনি আমাকে লেফট ব্যাকে দিয়েছিলেন এবং আচ্ছা, আপনি জানেন, আমি আক্রমণ করতে ভালোবাসি এবং সুযোগ তৈরি করতে। তাই ডিফেন্ডাররা সবসময় চিৎকার করতো, “তোমাকে ফিরে আসতে হবে! ফিরে আসো!”
[হাসি] আচ্ছা, কী বলতে পারি? আমার জন্য এটা বেশ ভালো কাজ করেছে, কারণ খবরের কাগজগুলোতে বলা হচ্ছিলো যে হয়তো আমাকে ২০১০ বিশ্বকাপ দলে ডাকা হতে পারে। আমি কিছু চিন্তা করতে পারছিলাম না। স্কোয়াডে যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো, খুবই আবেগপূর্ণ ছিল মুহূর্তটা। সোজা বাড়ি গিয়েছিলাম মা-বাবাকে বলতে এবং তারা খুবই খুশি হয়েছিল।
সবকিছু খুব দ্রুত ঘটছিল। ১৬ বছর বয়সে একসময় স্পেনে যাওয়ার টিকিটের অর্থ যোগাড় করার জন্য মানুষের বাগানে কাজ করতাম, এবং তারপর ১৮ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্যে বিমানে উঠছি বিশ্বকাপের জন্য?
আমার মনে আছে, যখন আমরা স্পেনের বিপক্ষে খেলেছিলাম, তখন ঠিক সামনে ইনিয়েস্তাকে দেখে ভাবছিলাম, কী দারুণ, এই লোককে আমি টিভিতে দেখেছি, সে ঠিক সামনে আমার। কিন্তু যে ব্যাপারটা আমার সবসময় মনে থাকবে তা হলো, যখন আমরা প্রথম পৌঁছেছিলাম, আমরা আমাদের হোটেল পেলাম এবং সেখানে প্রত্যেক কক্ষের বাইরে বড় বন্দুক হাতে সশস্ত্র লোক দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের নিরাপত্তার জন্য একান্ত প্রহরী। আমি ভাবছিলাম, পৃথিবীর সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার ছিল এটি, কারণ আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে মাত্র এক বছর আগেও আমি পার্ক থেকে রাতে দৌড়ে বাসায় যেতাম! এখন আমার নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী আছে!
আমাকে বিশ্বকাপে খেলতে দেখা মা-বাবার জন্য আসলে দারুণ গর্বের ব্যাপার, কারণ তারা সুইজারল্যান্ডে এসেছিল শূন্য হাতে এবং সন্তানদের একটি সুন্দর জীবন দেওয়ার প্রচেষ্টায় কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমি মনে করি, মিডিয়া প্রায়ই সুইজারল্যান্ডের জন্য আমার যে অনুভূতি তা ভুল বুঝেছে। আমি অনুভব করি, আমার দুটি বাড়ি, ব্যাপারটা সহজ। সুইজারল্যান্ড আমার পরিবারকে সবকিছু দিয়েছে এবং আমি চেষ্টা করি জাতীয় দলের জন্য সবকিছু দেওয়ার। কিন্তু যখনই আমি কসোভোতে যাই, সাথে সাথে সেটাও আমার নিজের বাড়ি মনে হয়। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার মতো কিছু না। এটা শুধু আমার একান্ত ভেতরের অনুভূতি।
২০১২ সালে আলবেনিয়ার বিপক্ষে খেলার সময়, আমার বুটে সুইজারল্যান্ড, আলবেনিয়া এবং কসোভোর পতাকা ছিল এবং কিছু সুইস খবরের কাগজ; তা নিয়ে লোকে সবরকমের নেতিবাচক কথা বলেছিল। আমাকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছিলো, কিন্তু আমার কাছে উদ্ভট মনে হয় যে কিছু লোক এভাবে ভাবতে পারে, কারণ এটা কেবল আমার পরিচয়। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে মহান বিষয়টি হলো এটি এমন একটি দেশ, যেখানে যুদ্ধ ও দারিদ্রপীড়িত অঞ্চল থেকে আসা লোকদের স্বাগত জানানো হয়, যারা সুন্দর জীবন খুঁজছে।
সুইজারল্যান্ডে হ্রদ পাহাড় এবং সবকিছু আছে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে পার্কও আছে, যেখানে আমি খেলেছি তুর্কী, সার্ব, আলবেনিয়ান, আফ্রিকান, মেয়ে এবং জার্মান র্যাপারদের সাথে। সুইজারল্যান্ড সবার জন্য।
যখন আমি ২০১৮ বিশ্বকাপে মাঠে নামবো, আমার বুটে সুইজারল্যান্ড এবং কসোভো উভয় দেশেরই পতাকা থাকবে। রাজনৈতিক বা এরকম অন্য কোনো কারণে নয়। কারণ এই পতাকাগুলো আমার জীবনের গল্প বলে।
যদিও চিন্তা করবেন না, সুইস পতাকা আমার বাম পায়ে আছে।
ফিচার ইমেজ- sputniknews.com