একটি দলে একজন অধিনায়কের ভূমিকা কি শুধু দলকে নেতৃত্ব দেওয়া কিংবা খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? না, এর বাইরেও একজন অধিনায়কের দায়িত্ব থাকে তার দল এবং তার দলের খেলোয়ারদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল না ছেড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়া। তবেই তো তিনি নায়ক। তবেই তো তিনি অধিনায়ক। অধিনায়কত্বও যে একটি শিল্প হতে পারে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে শুরু করেছিলেন রিকি পন্টিং আর সেটিকে পূর্ণতা দিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা।
২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। মুম্বাইয়ের ওয়াংখের স্টেডিয়ামে মুখোমুখি স্বাগতিক ভারত ও শ্রীলংকা। ঘরের মাটিতে খেলা হওয়ার কারণে একদিকে যেমন মানসিক সমর্থন ঠিক অন্যদিকে কিছুটা স্নায়ুচাপ ভারতীয় খেলোয়াড়দের মাঝে। ২৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছে ভারত। ব্যাটিং এ তখন ধোনি ও যুবরাজ। নুয়ান কুলাসেকারার করা ৪৯ তম ওভারের ২য় বলটিকে সোজা লং অনে পাঠিয়ে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস টানেন ধোনি। এ যেন এক দায়িত্ব থেকে মুক্তিলাভ। এ দায়িত্ব ঘরের মাটিতে দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর।
শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ১৯৮৩ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ভারত। শচীনের ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে এক অতৃপ্তি যেন নিমিষেই পূরণ হয়ে গেল। অবশ্য শচীনও পরে ঠিকই বলেছিলেন ধোনীর নেতৃত্বে খেলাটাই তার কাছে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের ছিল। বিশ্বকাপে খেলা ধোনির সেই ব্যাটটি পরবর্তীতে ৭২ লাখ ভারতীয় রূপিতে নিলাম হয়। নিলামের অর্থ ধোনির স্ত্রী সাক্ষীর ‘সাক্ষী রাওয়াত ফাউন্ডেশন’ এ দান করা হয়।
১৯৮১ সালের ৭ জুলাই ঝাড়খণ্ডের রঞ্চিতে পান সিং-দেবকি দম্পতির ঘরে ধোনির জন্ম। অবশ্য ধোনির দাদার আদিনিবাস উত্তরাখন্ড হলেও বাবার কাজের সুবাদে তাদের রঞ্চিতে চলে আসতে হয়েছিল। বাবা পান সিং ছিলেন এক বেসরকারী কোম্পানির কর্মকর্তা। আর মা দেবকী দেবী ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে ধোনি ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় তিনি ফুটবল খেলায় পারদর্শী ছিলেন।
রঞ্চির এক স্কুলে পড়াকালীন সেই দলের ফুটবল টিমে সুযোগ পেয়েছিলেন। ধোনি ছিলেন গোলরক্ষক। কিন্তু কোচ তাকে ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটের উইকেটকিপিং এ মনোযোগী হতে বললেন। ছোট্ট ধোনীর মন তখনই ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন কোচ দেভেল সাহাইয়ের কথায়। তবে এখন ধোনি ঠিকই উপলব্ধি করছেন সেটিই ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। কোচ স্যারও হয়তো আন্দাজ করেছিলেন- এই ছেলে বড় হয়ে ক্রিকেট জগতের সেরা উইকেট রক্ষকদের একজন হবে।
১৯৯৮ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াকালে সেন্ট্রাল কোল ফিল্ড লিমিটেডের হয়ে ক্রিকেট খেলতে ধোনির প্রথম মাঠে নামা। দলের কোচ ম্যাচ প্রতি প্রত্যেক ছক্কা বাবদ তাকে ৫০ রুপি দিতেন। ধোনির হেলিকপ্টার শট দেভেল সাহাইকে মুগ্ধ করতো, যা তিনি শিখেছিলেন পাড়ার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। কিছুদিন পর সুযোগ পান বিহার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমের কুচবিহার ট্রফিতে বিহারের প্রতিপক্ষ ছিল পাঞ্জাব।
সেই ম্যাচেই জাতীয় দলে তার অন্যতম সতীর্থ যুবরাজ সিং এর সাথে প্রথম দেখা হয়। সেই বছরই বিহারের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে তার অভিষেক। ধোনি সেখানেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। মিডল অর্ডারে ব্যাট করার সুবাদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলের ফিনিশার হিসেবে তাকে ম্যাচ শেষ করতে হতো। ২০০১-০৩ এই সময়টুকুতে খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিটিই এর দায়িত্ব পালন করেছেন ধোনি।
২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ধোনির। পরের বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে হয় টেস্ট অভিষেক। ২০০৫ সালে ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ধীরে ধীরে ভারতীয় দলে তার জায়গা শক্ত হতে থাকে।
অধিনায়কত্ব লাভ
২০০৭ সালে তৎলাকীন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড ভারত বিদায় নিলে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। ক্ষুব্ধ সমর্থকরা রঞ্চিতে নির্মাণাধীন ধোনির বাড়িতে ভাংচুর করে। সে বছরই দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সংস্করণে টান টান উত্তেজনার ফাইনাল ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা জেতে ধোনির নেতৃত্বে থাকা ভারত। ধোনির মুকুটে এক এক করে যোগ হতে থাকে সাফল্যের পালক।
ভারতীয় ক্রিকেটে তখন ধোনির জয়জয়কার। দল নির্বাচনেও তখন তারই অাধিপত্য। শেহওয়াগ, গৌতম গম্ভীর, যুবরাজ সিং এর মতো সিনিয়র খেলোয়াড়রা দল থেকে বাদ পড়লে আঙ্গুল ওঠে ধোনির দিকে। যুবরাজ যদিও পরবর্তীতে দলে ফেরার সুযোগ পান। তবে তাদের ছাড়াই শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়নাদের নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে ভালোভাবেই রাজত্ব করে ধোনির নেতৃত্বে থাকা ভারত। ২০১৩ সালে জেতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। রচিত হয় এক অন্য রকম ইতিহাস। আইসিসির সবগুলো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জেতা এক মাত্র অধিনায়ক ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
২০১৫ সালে রাজকোটে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারতের মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস এবং ডি ভিলিয়ার্স। হঠাৎ পিঠে ব্যথা পেয়ে মাঠের মধ্যেই শুয়ে পড়েন ডু প্লেসিস। তার অভিব্যক্তি দেখে ধোনি বুঝতে পারলেন তার সাহায্য প্রয়োজন। দ্রুত ছুটে গেলেন ডু প্লেসিসের কাছে। ক্ষণিকের জন্যে বনে গেলেন ডু প্লেসিসের চিকিৎসক। দুই পা ধরে তাকে হয়তো জিজ্ঞাসা করছিলেন, “ফাফ, তুমি ব্যথা পেয়েছো নাকি?” ধোনি জানেন, তারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ, কিন্তু শত্রু নন। ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা সেটা আবারো দেখলো ক্রিকেট দুনিয়া।
সেই বছরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ভারত বনাম বাংলাদেশের মধ্যকার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে তার একটি সংঘর্ষ হয়। মুস্তাফিজের করা এক বলে সিংগেল নিতে যান ধোনি। পিচের মাঝখানে সামনে পড়ে যান মুস্তাফিজ। তাকে সরিয়ে নিজের রাস্তা পরিস্কার করতে চাচ্ছিলেন তিনি। অবশ্য ধোনি যে এটা ইচ্ছাকৃতই করেছেন সেটা ভালভাবেই লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সেই ম্যাচে মুস্তাফিজ এবং ধোনি দুজনকেই পরবর্তীতে জরিমানা করা হয়।
গত বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং স্টার ইন্ডিয়া নায়ী সোচ নামক এক কর্মসূচির আয়োজন করে। এ কর্মসূচীতে একজন সন্তানের বড় হওয়ার পেছনে তার মায়ের ত্যাগ, ভালবাসা, শ্রম এই বিষয়গুলো উঠে আসে। তারই ফলশ্রুতিতে ২৯ অক্টোবর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতীয় খেলোয়াড়রা তাদের মায়ের নাম সম্বলিত জার্সি পরে খেলতে নামেন। তার আগে একটি প্রোমোশনাল ভিডিও তৈরি করা হয় যেখানে এক সাংবাদিক ধোনিকে প্রশ্ন করে তার জার্সিতে দেবকি লেখা কেন? ধোনি জানান, এত দিন আমি ধোনি নামের জার্সি পড়ছি তখন তো জিজ্ঞাসা করেননি ধোনি কে, তাহলে আজ কেন?
গত বছর ওডিআই দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান ধোনি। অবশ্য বোর্ড থেকে যে তাকে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল এ নিয়েও কিছুটা গুঞ্জনও উঠেছিল। তবে ধোনি নিজেও এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেননি। গত বছরের ১০ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ দিয়ে সীমিত ওভার ক্রিকেটের অধিনায়কত্বকে বিদায় জানান তিনি। ধোনির সম্মানার্থে সেই ম্যাচ স্টার স্পোর্টস সম্প্রচার করেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে রিভিউ নেওয়ার ইশারা করেন ধোনি।
সচরাচর রিভিউ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দলের অধিনায়কের হাতে থাকে। ধোনি ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি আর অধিনায়ক নন। অবশ্য দোষটা তার নয়, দোষটা নেহাত তার অভ্যাসের। রিভিউ নেওয়ায় সফল অধিনায়কও তিনিই। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমকে কেউ কেউ ধোনী রিভিও সিস্টেমও বলে থাকেন। মাঠের ভেতরের যেকোনো সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ নিতে বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলিও যে তার কাছে ছুটে যান সেটা মাঠে ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যায়।
এই তো কয়েক মাস আগের কথা। শ্রীলংকার পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের ৩য় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ব্যাট করছিল ভারত। জয় থেকে তখন মাত্র ৮ রান দূরে তারা। ক্ষুব্ধ সমর্থকরা একের পর এক বোতল ছুড়তে শুরু করলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নেমে পড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ৪৫ মিনিট খেলা বন্ধ রাখা হয়। ভারতীয় অন্য খেলোয়াড়রা যখন মাঠের মধ্যে বসে পড়লেন তখন সেই ফাঁকে ধোনী মাঠেই খানিকটা সময় ঘুমিয়ে নিলেন। ধোনির ঘুমিয়ে পড়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকটা হাসির পাত্রও হতে হয়েছে তাকে। ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টা নিয়ে অবশ্য ধোনি পরে কোনো মন্তব্য করেননি।
২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একই হোটেলে অবস্থান করছিলেন পাকিস্তান এবং ভারতীয় ক্রিকেট দল। টুর্নামেন্টটির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয় ভারত। তবে ফাইনালের আগে হোটেল লবিতে ধোনির কোলে পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের ১০ মাস বয়সী শিশুপুত্র আব্দুল্লাহর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানসহ গোটা ক্রিকেট বিশ্বের কাছে ধোনি অনেক প্রশংসিত হন।
২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএল এর ১ম সংস্করণে ধোনিকে কিনে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। সে বছর ধোনিই ছিলেন আইপিএল এর সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়। সফল অধিনায়ক কি আর ধোনি এমনি এমনি হয়েছেন? ধোনির নেতৃত্বে ২০১০ এবং ২০১১ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল চেন্নাই সুপার কিংস। ২০১০ ও ২০১৪ সালে জেতে চ্যাম্পিয়ন লিগ টি-টুয়েন্টির শিরোপা। ফিক্সিং এর দায়ে চেন্নাইকে দুই বছরের জন্যে বহিষ্কার করলে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টের নেতৃত্ব দেন ধোনি। তবে এই দুই মৌসুমেই ব্যর্থ হয় পুনে। ১৫৯টি আইপিএল ম্যাচে ধোনির মোট রান সংখ্যা ৩,৫৬১।
২০০৯ সালে ধোনির নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টেস্ট র্যাংকিং এ শীর্ষে ওঠে ভারতীয় ক্রিকেট দল। তিন ফরম্যাটেই তার নেতৃত্বে ভারত জিতেছে সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ২০৪টি ছক্কা মারার রেকর্ড রয়েছ তার নামের পাশে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ১২০ বার অপরাজিত থেকেছেন ধোনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বোচ্চ ৭২টি ম্যাচের। ক্যারিয়ারে প্রাপ্তির সংখাও নেহাত কম নয়। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে হয়েছেন আইসিসির ওডিআই ‘প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’। ২০০৯ সালে পেয়েছেন ভারত সরকারের চতু্র্থ সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’। ২০১১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাকে লেফটেনেন্ট কর্ণেল খেতাব প্রদান করেন। সম্পতি ধোনিকে ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পদ্মভূষণের’ জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
শুধু একজন খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, ধোনি নিজেকে বানিয়ে ফেলেছেন এক ঝানু ব্যবসায়ীও। ইন্ডিয়া সিমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। কাজ করেছেন এয়ার ইন্ডিয়াতেও। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ এর দল চেন্নায়িয়ান এফসির সহ-মালিকানা রয়েছে তার নামে, যার অন্যতম এক অংশীদার বলিউড অভিনেতা অভিষেক বচ্চন। হিরো হকি ইন্ডিয়া লিগে রাঞ্চি রেইস নামে তার একটি দল রয়েছে, গড়েছেন ‘মাহি রেসিং ইন্ডিয়া’ নামে এক মোটর রেসিং দলও।
ধোনির লম্বা চুলের স্টাইল ছিল দেখার মতো। গুজব উঠেছিল বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোনের সাথে তার সম্পর্কের ব্যাপারেও। দীপিকার অপছন্দের কারণেই নাকি ধোনি তার লম্বা চুল কাটতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে বিষয়টির সত্যতা মিডিয়ার সামনে কখনো তুলে ধরেননি ধোনি বা দীপিকা কেউই। ২০১০ সালে বিয়ে করেন ছোটবেলার বান্ধবী সাক্ষী রাওয়াতকে। সাক্ষী সেই সময় কলকাতার এক হোটেলে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন। অবশ্য সাক্ষীর পরিবারের সাথে তাদের আগে থেকেই জানাশোনা ছিল। ২০১৫ সালে বাবা হন ধোনি। সাক্ষী-ধোনি দম্পতির ঘর আলো করে এক কন্যাসন্তান আসে, নাম জিভা।
২০১৭ সালে ধোনির জীবনী নিয়ে তৈরি হওয়া ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি‘ সিনেমাটি মুক্তি পায়। সেখানে ধোনির ভূমিকায় অভিনয় করেন বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুত। প্রেমিকা প্রিয়াঙ্কা ঝা এর চরিত্রে অভিনয় করেন দিশা পাটানি। ধোনির স্ত্রী সাক্ষী সিং এর ভূমিকায় দেখা যায় কায়ারা আদভানিকে। পুরো সিনেমায় ধোনির জীবনের নানা অজানা দিক তুলে ধরা হয়।
২০১৯ বিশ্বকাপ নাগাদ ধোনির বয়স ৩৮ হবে। সাম্প্রতিক অফ ফর্মের জন্য ধোনির বিশ্বকাপ খেলাটা অনেকটা অনিশ্চিতই ছিল। তবে সব জল্পনা কল্পনাকে উড়িয়ে পরবর্তী বিশ্বকাপ যে ধোনি খেলবেন তা নিশ্চিত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকগণ। রিকি পন্টিং এর অধিনায়কত্ব অথবা মাইকেল বেভানের এর মতো ফিনিশিং দক্ষতা কিংবা উইকেটের পেছনে মার্ক বাউচারের মতো উইকেট রক্ষা করার ক্ষমতা- সৃষ্টিকর্তা এই তিনটি গুণের সমন্বয় করেই যেন তৈরি করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। আর তাই তো কখনো অধিনায়কত্ব দিয়ে, কখনো উইকেটের পেছনে থেকে আবার কখনো ব্যাট হাতে ভারতীয় দলকে তিনি নিজের সেরাটাই দিয়ে যাচ্ছেন।
ফিচার ইমেজ :espncricinfo.com