ক্যাসপার স্মেইকেল কিংবা ডিলে ব্লিন্ড নিজেদের বিখ্যাত ফুটবলার বাবাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করে হয়েছেন স্বনামধন্য ফুটবলার। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উল্টোটা দেখা যায়। বিখ্যাত বাবাদের পথ অনুসরণ করতে গিয়ে প্রত্যাশার চাপে অনেককেই হারিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নামী ফুটবলারের সন্তানেরাও নাম লিখিয়েছে ফুটবলের জগতে। চলুন দেখে আসা যাক এমন কিছু ফুটবলারকেই।
জাস্টিন ক্লাইভার্ট (রোমা)
বয়স – ১৯
পিতা – প্যাট্রিক ক্লাইভার্ট
রোমার উঠতি তরুণ সেনশেসন জাস্টিন ক্লাইভার্ট তার বিখ্যাত ফুটবলার বাবা প্যাট্রিক ক্লাইভার্টের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। বয়স মাত্র ১৯ হলেও নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন ইতিমধ্যেই।
২০১৭ সালে আয়াক্সের হয়ে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন জাস্টিন। এই ডাচ ক্লাবের হয়ে ৫৬ ম্যাচ খেলে ক্লাইভার্ট গোল করেছেন ১৩টি। ১৯ বছর বয়সেই পর্তুগালের বিপক্ষে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন প্রথম ম্যাচ। আর তাতেই বাবা-ছেলে দুজনই টিনএজার হিসেবে ডাচ দলের জার্সি গায়ে জড়ান। ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে ১৭.২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ায় রোমা।
মার্কাস থুরাম (গুইনগাম্প)
বয়স – ২১
পিতা – লিলিয়ান থুরাম
লিলিয়ান থুরামের ছেলে মার্কাস থুরাম খেলছেন ফ্রেঞ্চ লিগে ওয়ানে। গুইনগাম্প ক্লাবের স্ট্রাইকার হিসেবে খেলছেন মার্কাস। সোশোঁ থেকে গত গ্রীষ্মে ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড যোগদান করেন গুইনগাম্পে। সেখানে ৩২ ম্যাচ খেলে গোল করেন মোটে তিনটি।
বাবার মতো ফুটবলে এলেও বাবাকে ছাড়িয়ে যেতে বহুদূর বাকি এখনও। ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৪২ ম্যাচ খেলা লিলিয়ান থুরাম জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ও ২০০০ ইউরো। রক্ষণের খেলোয়াড় লিলিয়ান ক্লাব ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন ইতালিতে। আর সেখানেই জন্ম ছেলে মার্কাস থুরামের।
আইজ্যাক দ্রগবা (গুইনগাম্প)
বয়স – ১৭
পিতা – দিদিয়ের দ্রগবা
আরেক বিখ্যাত ফুটবলার দিদিয়ের দ্রগবার ছেলে আইজ্যাক দ্রগবাও খেলছেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব গুইনগাম্পের হয়ে। চেলসি একাডেমি ছেড়ে গত ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই আইজ্যাক যোগ দেন গুইনগাম্পে। দিদিয়ের দ্রগবাও গুইনগাম্পের হয়ে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে খেলেছিলেন ৫০টি ম্যাচ। সেখান থেকে মার্শেই হয়ে খেলেন চেলসিতে। চেলসির হয়ে দিদিয়ের দ্রগবা জিতেছেন সম্ভাব্য সব ধরনের শিরোপা। বায়ার্নকে হারিয়ে জেতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের নায়কও ছিলেন এই স্বনামধন্য স্ট্রাইকার। ছেলে আইজ্যাক দ্রগবা বাবাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।
এনজো ফার্নান্দেজ জিদান (রায়ো মাজাদাহোন্দা)
বয়স – ২৩
পিতা – জিনেদিন জিদান
জিনেদিন জিদানের চার সন্তানই বাবাকে অনুসরণ করে ফুটবলকেই বেছে নিয়েছে। চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় এনজো জিদান ক্যারিয়ার শুরু করেন রিয়াল মাদ্রিদ একাডেমিতে।
তবে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বের হয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আলাভেজে পাড়ি জমান এনজো। গত ফেব্রুয়ারিতে আলাভেজ থেকে সুইডিশ ক্লাব এফসি লুসান দলে ভেড়ায় এনজোকে। সেখান থেকে বর্তমানে এনজো জিদান ধারে আছেন রায়ো মাজাদাহান্দোতে।
তবে জিদানের বাকি তিন ছেলে লুকা, থিও ও ইলিয়াজ আছেন মাদ্রিদ একাডেমিতেই। অন্যদিকে এনজো জিদানের কাছে প্রত্যাশার চাপও বেশি। সেজন্যই নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না তিনি। নামের শেষে জিদান থাকাতেই এনজোর কাছে সবার প্রত্যাশার পারদও অনেক উঁচুতে।
টিমোথি উইয়াহ (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
বয়স – ১৮
পিতা – জর্জ উইয়াহ
যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে উঠলেও ২০১৪ সালেই পিএসজিতে পাড়ি জমান টিমোথি উইয়াহ। তিন বছর একাডেমিতে খেলার পর গতবছর মূল দলের সাথে চুক্তি করেন টিমোথি উইয়াহ।
২০১৮ সালের মার্চে ট্রয়েসের সাথে পিএসজির হয়ে অভিষেক ঘটে এই ১৮ বছর বয়সী ফুটবলারের। মোনাকোর বিপক্ষে ট্রফি দে চ্যাম্পিয়ন্সে করেন নিজের প্রথম গোল। সেই একই মাসে ডাক পান জাতীয় দল থেকেও।
তবে বাবাকে ছুঁতে হলে আরো অনেকদূর যেতে হবে টিমোথিকে। বর্তমান লাইবেরিয়া প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়াহ পিএসজির ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলে ১৯৯৫ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি অরও। তবে বাবার মতোই প্রতিভাবান ভাবা হচ্ছে টিমোথিকে।
জিওভানি সিমিওনে (ফিওরেন্টিনা)
বয়স – ২৩
ডিয়েগো সিমিওনে
ফিওরেন্টিনার হয়ে নিয়মিত খেলা স্ট্রাইকার জিওভানি সিমিওনের মধ্যে ভবিষ্যৎ তারকা স্ট্রাইকার হওয়ার সব গুণাবলীই বিদ্যমান।
গত মৌসুমে ৪০ ম্যাচ খেলে ফিওরেন্টিনার হয়ে জিওভানি গোল করেছেন ১৪টি। গুঞ্জন উঠেছিলো বাবা সিমিওনের ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে তাবু গাড়তে যাচ্ছেন জিওভানি। তবে সিমিওনে বলেছেন, তিনি কখনোই অ্যাটলেটিকোতে তার ছেলেকে আনবেন না। তবে কোচ থেকে চলে যাওয়ার পর তিনি চান তার ছেলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জার্সি গায়ে চাপাক।
ফিওরেন্টিনার পাশাপাশি চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর গুয়াতেমালার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত আকাশী সাদা জার্সি গায়েও অভিষেক হয় জিওভানি সিমিওনের। অভিষেক ম্যাচেই দলের হয়ে করেন একটি গোল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ক ডিয়েগো সিমিওনে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন ১০৬টি ম্যাচ। জিওভানি বাবার সেই রেকর্ড ছুঁতে পারবেন কি না তা সময়ই বলে দিবে।
ইয়ানিস হাগি (এফসি ভিটোরুল)
বয়স – ১৯
পিতা – জিওর্জি হাগি
বাবা জিওর্জি হাগির মালিকানাধীন ক্লাব এফসি ভিটোরুলেই ফুটবলার হিসেবে খেলছেন ইয়ানিস হাগি। তার আগে ইয়ানিস ছিলেন ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টিনাতে। কিন্তু সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পাড়ি জমান ভিটোরুলে। বর্তমানে ক্লাবটির অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন ইয়ানিস।
অন্যদিকে পিতা জিওর্জি হাগি ছিলেন ফুটবল তারকাদের মধ্যে একজন। এই রোমানিয়ান কিংবদন্তি খেলেছেন বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ দুই ক্লাবের হয়েই। এছাড়াও গ্যালাতাসারাই ও স্টুয়া বুখারেস্টের হয়ে জিতেছেন অসংখ্য লিগ শিরোপা। এর পাশাপাশি রোমানিয়ার হয়ে ১২৫ ম্যাচ খেলে দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতাও জিওর্জি হাগি। দেশের হয়ে হাগি করেছেন ৩৫টি গোল।
ফেদেরিকো চিয়েসা (ফিওরেন্টিনা)
বয়স – ২০
পিতা – এনরিকো চিয়েসা
জিওভানি সিমিওনের মতো ফিওরেন্টিনাতে খেলছেন আরেক বিখ্যাত ফুটবলার পিতার সন্তান ফেদেরিকো চিয়েসা। ইতালিয়ান গ্রেট এনরিকো চিয়েসার ছেলে ফেদেরিকো গত মৌসুমে ফিওরেন্টিনার হয়ে বেশ ভালোই নজর কেড়েছেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ক্লাবটির হয়ে ৩৮ ম্যাচে ৬টি গোল করেছেন চিয়েসা।
ফিওরেন্টিনা একাডেমিতে বেড়ে ওঠা চিয়েসা এই বছরের শুরুতেই আজ্জুরিদের হয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো মাঠে নামেন। অন্যদিকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাবা এনরিকো চিয়েসা ছিলেন ইতালির একজন প্রগতিশীল ও স্বনামধন্য স্ট্রাইকার। এনরিকোও ক্লাব ক্যারিয়ারে খেলেছেন ফিওরেন্টিনার হয়ে। ১৯৯২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দশ মৌসুম ধরে ছিলেন এই ইতালিয়ান ক্লাবে।
জর্ডান লারসন (আইএফকে নরকপিং)
বয়স – ২১
পিতা – হেনরিক লারসন
সুইডিশ ক্লাব নরকপিংয়ে খেলা জর্ডান লারসন তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বাবা হেনরিক লারসনের তত্ত্বাবধানে থাকা ক্লাব হেলসিংবর্গে।
কিন্তু ২১ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ক্লাবের ফ্যানদের রোষানলের মুখে পড়েন। ক্লাবটি অবনমিত হলে তাদের আক্রমণের শিকার হন জর্ডান। তাই ক্লাব ছেড়ে তিনি পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডে। সেখান থেকে এখন আছেন সুইডিশ ক্লাব নরকপিংয়ে।
কিন্তু সুইডিশ কিংবদন্তি বাবা হেনরিক লারসনের পথে হাঁটলেও বাবার চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে আছেন জর্ডান। ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে হেনরিক লারসন গোল করেছেন ১৩৩টি, জিতেছেন ১৫টি শিরোপা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০০৬ সালে বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়।