ডু অর ডাই!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ-এ এর দুই সেমিফাইনালিস্ট ইতোমধ্যে নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। গ্রুপ-এ থেকে ইংল্যান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলবে। গ্রুপ-বি থেকে সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট ধরা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতকে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে পাকিস্তানের কাছে এবং ভারত হেরেছে শ্রীলঙ্কার কাছে। এতে করে গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারতের শেষ ম্যাচটি অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে পরিণত হয়েছে। আজকের ম্যাচের জয়ী দল সেমিফাইনাল খেলবে। একইসাথে দুই দল সেমিফাইনালে উঠার একমাত্র সম্ভাবনা হলো, গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচই বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলে।
হাশিম আমলা এবং কুইন্টন ডি ককের শুভ সূচনা
কেনিংটন ওভালে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ভারত। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে শুরু থেকে দেখেশুনেই খেলেন প্রোটিয়াসদের দুই ওপেনার ডি কক এবং হাশিম আমলা। ধীরগতিতে শুরু করলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে রানের চাকা সচল রাখেন এই দুই ব্যাটসম্যান। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে তারা ১০৫ বলে ৭৬ রান যোগ করেন। তাদের জুটি ভাঙেন রবীচন্দ্রন আশ্বিন। প্রথম দুই ম্যাচে মূল একাদশে জায়গা পাননি ভারতের নাম্বার ওয়ান স্পিনার। সুযোগ পেয়ে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনি।
স্পিনে কুপোকাত হাশিম আমলা
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস খেলার পর রান আউটের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন হাশিম আমলা। পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ১৬ রান করে ইমাদ ওয়াসিমের স্পিনে এলবিডব্লিউ হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ৫৪ বলে ৩৫ রান করার পর আশ্বিনের বলে আউট হন তিনি। এই টুর্নামেন্টে তিনি পেসারদের বিপক্ষে ১১৩ রান করে একবারও আউট হননি। অপরদিকে স্পিনারদের বিপক্ষে দুইবার আউট হয়ে করেছেন ৪১ রান।
প্রিয় প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে এই প্রথম অর্ধশতকেই থেমে গেলেন কুইন্টন ডি কিক!
কুইন্টন আজকের ম্যাচের আগে ভারতের বিপক্ষে নয়টি ওডিআই ম্যাচ খেলেছিলেন। যার মধ্যে পাঁচটি ইনিংসেই তিনি শতক হাঁকিয়েছেন। একবারও তিনি শুধুমাত্র অর্ধশতক করে থেমে থাকেননি। কিন্তু আজকের ম্যাচে ৭২ বলে ৫৩ রান করে জাদেজার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডি কক।
২৪ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল এক উইকেটে ১১৬ রান। জাদেজার করা ইনিংসের ২৫তম ওভারের প্রথম রিভার্স সুইপ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরের বলেই অর্থোডক্স সুইপ শট খেলতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন ডি কক। ভারতের বিপক্ষে এবারই প্রথম নিজের অর্ধশতককে শতকে পরিণত করতে পারেননি তিনি। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১০টি ওডিআইতে ৭২.০০ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৭২০ রান।
আবারও রান আউট হলেন আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো সময় কাটাচ্ছেন না ডি ভিলিয়ার্স। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে চার রান করার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমাদ ওয়াসিমের প্রথম বলে কাট করতে গিয়ে হাফিজের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ওডিআই ক্যারিয়ারে এটিই মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির প্রথম গোল্ডেন ডাক।
ভারতের বিপক্ষে ডি ভিলিয়ার্স শেষ সাতটি ইনিংস যথাক্রমে ১০৯, ৩০, ১০৪, ১৯, ৪, ১১২ এবং ১১৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। আজও দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১২ বলে ১৬ রান করার পর রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ভারতের বিপক্ষে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এই আসরে ডি ভিলিয়ার্স মাত্র ৬.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ২০ রান করেছেন। কমপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে এটিই তার সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড়।
ডু প্লেসিস এবং মিলারের ভুল বোঝাবুঝি
ডি ভিলিয়ার্স রান আউট হওয়ার মাত্র চার বল পরে ডু প্লেসিসের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডেভিড মিলার। ইনিংসের ৩০তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট থার্ড ম্যানে খেলে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে চান ডু প্লেসিস। কিন্তু মাঝপথে গিয়ে সিঙ্গেল হবে না বলে ড্রাইভ দিয়ে নিজের ক্রিজে ফিরে আসেন তিনি। ততক্ষণে ডেভিড মিলারও একই প্রান্তে চলে আসেন। মাত্র চার বলের ব্যবধানে গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যানকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ডু প্লেসিসের ইনসাইড এজ!
পাকিস্তানের বিপক্ষে হাসান আলির অফস্ট্যাম্পের অনেক বাহিরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গেলে ডু প্লেসিসের ব্যাটের কিনারা লেগে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ভারতের বিপক্ষেও হার্দিক পান্ডিয়ার বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে একইভাবে আউট হন ডু প্লেসিস।
ডি ভিলিয়ার্স এবং মিলার রান আউট হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেছিলেন ডু প্লেসিস। কিন্তু তিনিও ৫০ বলে ৩৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
সাকসেসফুল রিভিউ!
আগের দুই ওভারেই ডি ভিলিয়ার্স এবং মিলার রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। ইনিংসের ৩১তম ওভারে বল হাতে নেন রবীন্দ্র জাদেজা। তার করা ওভারের দ্বিতীয় বলে সুইপ করতে গিয়ে ঠিকমতো ব্যাটে বলে করতে পারেননি ডুমিনি। জাদেজা এলবিডব্লিউর আবেদন করলে আম্পায়ার সেই আবদনে সাড়া দেন। ডুমিনি সাথে সাথে রিভিউ নেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল তার গ্লাভসে লেগে তারপর প্যাডে লাগে। এই যাত্রায় বেঁচে যান ডুমিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৪১তম ওভার। বুমরাহর ব্যক্তিগত সপ্তম ওভারের প্রথম বলটি সরাসরি পেহলুকওয়োর প্যাডে আঘাত হানে। এবার আম্পায়ার নট আউট দেন। বিরাট কোহলি রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করে আউট দেওয়া হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বিপর্যয়
২৮ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল দুই উইকেটে ১৩৯ রান। ক্রিজে ছিলেন ডু প্লেসিস এবং ডি ভিলিয়ার্স। সেখান থেকে মাত্র ৫১ রানে শেষ আট উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বুমরাহ এবং ভুবেনশ্বর দুটি করে উইকেট এবং তিনটে রান আউটের দরুন ৪৪.৩ ওভারে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
এবার আর পারলেন না রোহিত-ধাওয়ান
টুর্নামেন্টের প্রথম দুটি ম্যাচেই উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে শতরান যোগ করেছিলেন রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। শুধুমাত্র এই আসরেই না, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের আসরেও ভারতকে শুভ সূচনা এনে দিয়েছেন এই জুটি।
দলীয় ২৩ রানের মাথায় মরনে মরকেলের বলে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রোহিত শর্মা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখন পর্যন্ত আটবার একসাথে ব্যাটিং করে রেকর্ড সংখ্যক ৬৭৯ রান যোগ করেছেন এই জুটি। আট ইনিংসের মধ্যে চারটে শতরানের জুটি এবং দুটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন তারা।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবারও সফল ধাওয়ান
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত আসরে ৩৬৪ রান করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার জিতেছিলেন শিখর ধাওয়ান। এবার হয়তো লুকেশ রাহুল ফিট থাকলে তার খেলা হতো না। শেষপর্যন্ত খেলার সুযোগ পেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্ধশতক এবং শতক হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি আইসিসি টুর্নামেন্টে কেন সেরা!
আজকে ওপেনিং পার্টনার রোহিতকে শুরুতে হারালেও অধিনায়ক কোহলির সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১২৪ রান যোগ করে ভারতকে জয়ের পথেই রাখেন তিনি। ৩১তম ওভারের প্রথম বলে ইমরান তাহিরের বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে ডু প্লেসিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। ততক্ষণে তার নামের পাশে ৮৩ বলে ৭৮ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চলতি আসরেও ৯০.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ২৭১ রান করে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আইসিসি টুর্নামেন্টে মাত্র ১৬ ইনিংসে ৬৯.৭৩ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ১,০৪৬ রান। আইসিসি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে দ্রুত হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা এবং সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড়ের মালিক তিনি।
বিরাট কোহলির সেন্সিবল নক
দলীয় ১৫১ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ধাওয়ান। জয় থেকে তখনও ৪১ রান দূরে ভারত। শিখর ধাওয়ানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের নায়ক যুবরাজ সিং। অপরপ্রান্তে বেশ সাবলীলভাবে ব্যাট করছিলেন বিরাট কোহলি। শেষপর্যন্ত এ দুজন ৪২* রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ভারতের আট উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন।
বিরাট কোহলি আগের ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে গেলেও আজকে ১০১ বলে ৭৬* রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন। জাসপ্রিত বুমরাহ ২৮ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকারের কারণে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন। এই জয়ে গ্রুপ-বি থেকে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠে ভারত।