শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট খেলাটা উপমহাদেশের বাইরের ব্যাটসম্যানদের জন্য সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। দারুণ সব স্পিনারের সাথে শ্রীলঙ্কার স্পিনিং ট্র্যাক, ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তোলার জন্য আর কী চাই! দুনিয়ার সেরা ব্যাটসম্যানকেও তাই বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েই শ্রীলঙ্কায় যেতে হয়, স্টিভ স্মিথও এর ব্যতিক্রম নন। কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন স্মিথ? ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্মিথ কথা বলেছেন নিজের ব্যাটিং টেকনিক, স্পিনের বিপক্ষে প্রস্তুতি আর চলমান সেঞ্চুরি-খরার ব্যাপারে।
স্পিনের বিপক্ষে স্মিথের সামগ্রিক পরিকল্পনা কী?
দ্রুত বলের লেন্থ ধরতে পারাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত উপমহাদেশের কন্ডিশনে আপনি কোনো বোলারকেই নির্দিষ্ট লেন্থে থিতু হতে দিতে চাইবেন না। উপমহাদেশের স্পিনাররা সাধারণত বল বাউন্স করানোর চেয়ে অন্যান্য ভ্যারিয়েশনের দিকে বেশি নজর দেন। তাই দুইজন স্পিনার একই ভঙ্গিতে বল ছুঁড়লেও দুটো বলের আচরণ হয় ভিন্ন ধরনের, কোনো বল টার্ন করে, আবার কোনো বল সোজা যায়। ফলে একজন স্পিনারকে যদি কোনো লেন্থে থিতু হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাকে খেলা তখন প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই আমি চেষ্টা করি যেকোনো উপায়ে বোলারের লেন্থে থিতু হওয়াকে বাধা দিতে। এজন্য কখনো আমি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলি, কখনো ক্রিজের একটু ভেতরে গিয়ে। মোট কথা, বোলারের ওপর চাপটা ফিরিয়ে দিয়ে তার বোলিংয়ের লেন্থ এলোমেলো করে দিতে চাই আমি। আর এই চাপ ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটা অনেকক্ষণ ধরে করতে পারলে ব্যাটসম্যানের জন্য পিচের আচরণ বোঝা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি কোন বলটা টার্ন করবে, আর কোনটা সোজা যাবে সেটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে নিজের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১৫-২০ বল সময় নেওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা এই সময়ের মধ্যেই ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই ব্যাটসম্যানকে পর্যাপ্ত সাহসী হতে হয়, প্রথম বল থেকেই চাপটা বোলারের ওপর দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়।
বোলারের লেন্থ পরিবর্তন বলতে নিশ্চয়ই শুধু ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে তেড়েফুঁড়ে মারাকে বোঝায় না, আরও বুদ্ধিদীপ্তভাবে পায়ের ব্যবহারকে বোঝানো হয়।
হ্যাঁ, ফুটওয়ার্ক বা পায়ের ব্যবহার বলতে সবসময়ই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারাকেই বোঝানো হয় না, সামনে এগিয়ে এসে বা ক্রিজের ভেতরে গিয়ে মিড-অফে বল ঠেলে সিঙ্গেল নেওয়াকেও বোঝানো হয়। অর্থাৎ বাউন্ডারি মারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এক রান নিয়ে অপর প্রান্তে যাওয়া এবং ওভারের পাঁচ বা ছয় বল মোকাবেলা না করে দুটো বা তিনটা বল মোকাবেলা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটসম্যান নিয়মিত স্ট্রাইক বদল করতে পারলে বোলারের জন্য লাইন-লেন্থ ঠিক রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
যদিও কন্ডিশন ভিন্ন, তবুও ২০২০-২১ মৌসুমে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে একটু ফিরে যাওয়া যাক। ঐ সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে আপনি যেভাবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিপক্ষে ব্যাট করেছিলেন, সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে তেমনভাবে করেননি, আপনি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য তৈরি ছিলেন। যখন স্টিভ স্মিথ ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্পিনারদের মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন, তিনি সেটা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েই করেন, তাই তো? আর এইটাই কি স্পিনারদের বিপক্ষে আপনার মূল পরিকল্পনা?
হ্যাঁ। ঐ সিরিজের প্রথম দুটো টেস্টে, বিশেষ করে মেলবোর্নে অশ্বিনের বলগুলো প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ঘুরছিলো, বাড়তি বাউন্সও করছিল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আপনি সাধারণত এমনটা দেখবেন না। এক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন, তেড়েফুঁঁড়ে খেলার পরিবর্তে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন। তবে আপনাকে অবশ্যই খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারতে হবে, যে ব্যাপারে আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম। সিরিজ সামনে এগোনোর সাথে সাথে আমি নিজের ওপর চাপ নিয়ে নিচ্ছিলাম। আর আপনি যখনই নিজের ওপর চাপ নিয়ে নেবেন, সবকিছু তখন আপনার পরিকল্পনা মতো হবে না। আমি তাই অশ্বিনকে থিতু হতে দিতে চাইনি, ক্রিজে আরেকটু সক্রিয় হতে চেয়েছি, চাপটা বোলারের ওপরই ফিরিয়ে দিতে চেয়েছি। বড় স্ট্রাইড নিয়ে ডিফেন্ড করে আর পায়ের ব্যবহার আরেকটু দ্রুত করতে চেয়েছিলাম আমি। পায়ের ব্যবহারের গতি নিয়ে আমি এখনো কাজ করছি, আশা করছি মাঠে সেটা প্রয়োগ করতে পারব।
এই ধরনের কন্ডিশনে শরীরের সামনে থেকে ব্যাটে বলে সংযোগ করা, আর ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক না রাখা, এই দুটো বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করেন কীভাবে?
আমি একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করি। দেখুন, যদি আপনার ব্যাট আর প্যাড খুব কাছাকাছি থাকে, সেক্ষেত্রে বড় স্ট্রাইড নিলেও আপনার এলবিডব্লিউ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এ ধরনের উইকেটে, যেখানে বোলাররা তাঁদের ভ্যারিয়েশন দেখানোর অনেক সুযোগ পান, বড় স্ট্রাইড নিয়ে ব্যাটকে বলের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়াটাই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাকে ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথে কাজ করতেও দেখা গেছে, যেখানে ভেট্টোরির বল রিলিজ পয়েন্টটা বেশ ওয়াইড ছিল। এর কারণ কোনটা, নিচু হয়ে যাওয়া বলে অভ্যস্ত হওয়া, নাকি আন্ডারকাটার মোকাবেলার অভ্যাস করা?
দেখুন, এমন কন্ডিশনের সেরা বোলারদের প্রত্যেকেই তাঁদের বল ছোঁড়ার কোণটাকে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছেন। রঙ্গনা হেরাথই যেমন, তিনি তার বাহুকে সামান্য একটু নিচু করে, ক্রিজের ওয়াইড অংশ থেকে বল ছুঁড়তেন। এই বলগুলো ঐ কোণ থেকে পিচ করে স্কিড করতো। এরপর হেরাথ স্ট্যাম্পের কাছাকাছি এসে ঐ একই কাজটা করতেন, তবে এক্ষেত্রে বলটা স্পিন করতো। বোলাররা এভাবে প্রতিনিয়ত বল ছোঁড়ার স্থান পরিবর্তন করলে ব্যাটসম্যানের জন্য ব্যাপারটা ধরতে পারাটা খুব কঠিন হয়ে যায়। আর সেরা স্পিনাররা এই কন্ডিশনে এমনটাই করেন।
বোলার বল ছোড়ার সময়ে এই সূক্ষ্ম ভ্যারিয়েশনগুলো কি চোখের দেখায় ধরতে পারেন, নাকি এটা নিয়ে চিন্তা না করে সামনে যে বল আসছে সেটা খেলার চেষ্টা করেন?
এই ভ্যারিয়েশনগুলো যতটা সম্ভব ধরতে পারার চেষ্টা থাকে, তবে ঘটনাটা খুব দ্রুত ঘটে বলে কখনো কখনো এটা দুরূহ হয়ে ওঠে। তবে বোলার যখন একটু ওয়াইড থেকে বল করে, তখন সামনের পাকে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে নিয়ে যাওয়া, আবার বোলার যখন স্ট্যাম্পের কাছ থেকে বল করে, তখন নিজের শরীরকে বলের লেগ সাইডে রাখা, এই তো। সূক্ষ্ম ভ্যারিয়েশনগুলো ধরা কষ্টসাধ্য, তবে এটা নিয়ে সচেতন থেকে নিজের কাজটা করে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধরনের কন্ডিশনে স্পিনের বিপক্ষে আপনার দুর্বলতার দিক কোনটা?
সাধারণত স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়ার তুলনায় যে বলগুলো স্কিড করে, সেগুলোই আমাকে বেশি সমস্যায় ফেলে। স্কিড করা বলগুলোতে এলবিডব্লিউ বা বোল্ড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বল কম স্পিন করলে এবং স্পিনের দিকে খেলতে পারলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হই। আমি যখন ২০১৭ সালে জাদেজার বিপক্ষে ব্যাট করছিলাম, অফ স্ট্যাম্পের বাইরে স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে বিট হয়েও আমি সন্তুষ্ট ছিলাম, কেননা আমি ভেতরে ঢোকা বলে বিট না হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তবে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়, যেটা খেলাটাকে আরো উপভোগ্য করে তোলে। অনেকেই সুইপ বা রিভার্স সুইপকে বেছে নেয়, যা তাঁদের রক্ষণেরও অংশ। সুইপ আর রিভার্স সুইপের মাধ্যমে তারা বোলারের লেন্থ এলোমেলো করে দিতে চান।
উপমহাদেশের বাতাসে সবসময়েই একটা প্রশ্ন ওড়ে, “সুইপ করবো, নাকি করবো না?” এই সফরে আপনাকে বেশ সুইপ অনুশীলন করতে দেখা গেছে। তো এই ধরনের কন্ডিশনে সুইপ শট খেলার ব্যাপারে আপনার মনোভাব কী?
বল যখন স্পিন করে আমার দিকে আসে, সেক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করি বড় স্ট্রাইড নিয়ে ডিফেন্ড করতে, যেন বল প্যাডে লাগার সম্ভাবনা না থাকে। এই ধরনের বলগুলো গুড লেন্থে পিচ করলে আমি সাধারণত ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসি, অথবা ক্রিজের ভেতরে ঢুকে পেছনের পায়ে ভর করে খেলার চেষ্টা করি। আর যদি পিচে বেশি বাউন্স থাকে আর বল বেশি স্পিন করে, সেক্ষেত্রে সুইপ আমার জন্য একটা অপশন হতে পারে।
সুইপ আমার প্রথম পছন্দের শট নয়, তবে বিশেষ করে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে এটা কার্যকর হতে পারে। পিচের অবস্থা, ফিল্ডারদের অবস্থান, আর আমার নিজের উপলব্ধি, সব কিছুর ওপর নির্ভর করে আমি সুইপ শট খেলবো কিনা। আর এ জন্য আত্মবিশ্বাস আর খাপ খাইয়ে নিতে পারাটা জরুরি।
ইদানিং একটা ধারা দেখা যাচ্ছে, যেটা ভারত শুরু করেছে, আপনার বিপক্ষে অফ স্পিনার বল করার সময়ে লেগ স্লিপ আর লেগ গালি পজিশনে ফিল্ডার থাকছে। আপনি অনেকবার বলেছেন যে অনেক সময়েই প্রতিপক্ষ আপনাকে আউট করার জন্য বল করে না। ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টও যেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্টিভ স্মিথকে সেঞ্চুরি করতে হলে অন্তত চারশ’ বল খেলতেই হবে। আপনিও নিশ্চয়ই এটার সাথে মানিয়ে নিয়েছেন, নাকি নিজের চারপাশের এই দেয়ালটা আপনি ভাঙতে চান?
অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে আমাকে মূলত সিমারদের মুখোমুখি হতে হয়, সেক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা আমার জন্য একটু ব্যতিক্রমীই বটে। হ্যাঁ, সম্প্রতি আমি খুব বেশি সেঞ্চুরি পাইনি। তবে আমার মনে হয়, আমার বেশি বল খেলার সুবিধাটা পান অন্য ব্যাটসম্যানরা, সিমাররা যত বেশি বল করেন তারা তত বেশি ক্লান্ত হতে থাকেন এবং তাদের লুজ বল করার প্রবণতাও বাড়তে থাকে।
তবে স্পিনারদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। আমাকে আউট করার জন্য স্পিনাররা নানারকম পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে স্পিনাররা বাড়তি বাউন্স পান, আর তাই লেগ স্লিপে ফিল্ডার রেখে সোজা বল করে আমাকে আউট করার যে পরিকল্পনা, এর সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারিনি আমি। তবে আমি প্রতিপক্ষের পরিকল্পনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। তারা কীভাবে আমাকে আউট করতে চান, সেই ব্যাপারে সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। আর এই বিষয়টা আমি আমার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ভালোভাবেই করে আসছি। “আমার কী করা উচিত” বলার বদলে মাঠে সেটার বাস্তবায়ন করে দেখানো আর প্রতিপক্ষের পরিকল্পনার জবাব দেওয়াই আমার লক্ষ্য।
আমরা এতক্ষণ টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এই উপমহাদেশে টেম্পো বিষয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আর একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে পাকিস্তানের তুলনায় শ্রীলঙ্কায় পুরো বিষয়টা আলাদা কি?
হ্যাঁ, টেম্পো বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানে এটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ ঐ পিচে বল আশানুরূপ স্পিন করছিল না। পাকিস্তানি স্পিনারদের বিপক্ষে খেলা তাই খুব কঠিন ছিল না। সেই তুলনায় শ্রীলঙ্কায় স্পিনাররা অনেক বেশি ভ্যারিয়েশন পান, তাই আপনাকেও সেভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। আপনার পায়ের ব্যবহার আরও দ্রুত হতে হবে, আপনার পরিকল্পনা নির্ভুল হতে হবে। দ্রুত বল বুঝতে হবে, দ্রুত বলের কাছে পৌঁছাতে হবে, আর অনেক বেশি মনোযোগী থাকতে হবে আর বোলারের ওপর চাপ ফিরিয়ে দিতে হবে। যে ব্যাটসম্যানরা এই বিষয়গুলো তাড়াতাড়ি এবং সঠিকভাবে করতে পারবেন, তারাই এখানে সফল হবেন।
আপনার ব্যাটিং সম্পর্কে একটা তত্ত্ব শোনা যায়, আপনি পূর্বে সেট করা টেম্পো অনুযায়ী ব্যাটিং করার তুলনায় নিজে টেম্পো সেট করে ব্যাটিং করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মানে যখন আপনিই খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন আপনাকে সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ মনে হয়। সত্য?
হ্যাঁ, অবশ্যই। পাকিস্তান সিরিজেই যদি আবার ফিরে যাই, আমি কয়েকটা শুরু পেয়েছিলাম এবং ভালো খেলছিলাম। সেই সময়ে আমার মনে হয়েছিল যে আমি বোলারের ওপর আরো একটু চাপ বাড়িয়ে দিতে পারি। ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে কাজটা কঠিন ছিল, কারণ তারা তেমন বাউন্স না পেলেও রিভার্স সুইং পাচ্ছিলেন। ঐ সময়ে আমাকে রক্ষণাত্মক খেলতে হয়েছিল, কারণ আমি চাইনি আমার উইকেট দিয়ে আসতে। আর তাছাড়া পরের ব্যাটসম্যানের জন্যও একই টেম্পোতে ব্যাট করাটা কঠিন হয়ে যেত। তবে স্পিনের বিপক্ষে আমি বেশ কিছু বাউন্ডারি মেরে বোলারের ওপরে চাপ বাড়ানোর কাজটা ভালোভাবেই করতে পেরেছিলাম। আর আমার একবারও মনে হয়নি যে স্পিনের বিপক্ষে মারতে গিয়ে আমি আউট হয়ে যেতে পারি। বরং আরো কিছু বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরির আরেকটু কাছে পৌঁছে যেতে চাচ্ছিলাম আমি। আর হ্যাঁ, যখন আমিই খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করি আর বোলারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিই, তখনই আমি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকি। আর তখন আমার মনোযোগ থেকে অখণ্ড, আর পাও বেশ দ্রুত নড়াচড়া করে, ফলে আমার রক্ষণটাও ভালো হয়।
এই পুরো ব্যাপারটার সাথে কি মারনাস ল্যাবুশেনের তিন নম্বরে ব্যাট করার সম্পর্ক আছে? তিনে নেমে ল্যাবুশেন শুধু রানই করেন না, পাশাপাশি উইকেটে অনেক সময়ও কাটান। তাই আপনি যখন মাঠে নামেন, দলের রান তখন দুই উইকেটে বিশ রানের বদলে দুই উইকেটে একশ’ বিশ রান থাকে।
(হাসি) হ্যাঁ, অবশ্যই। সাক্ষাৎকারের শুরুতে যেমনটা বলছিলেন, আমার মনে হয় আমি সবসময়েই চাপের মুখে ভালো খেলি। আমি জানি না এই ব্যাপারটা মানসিকভাবে কীভাবে কাজ করে, তবে যখন মনের ভেতর থেকে একটা তাড়না আসে, দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার তাগিদ আসে, তখন নিজের ভেতরের সুইচটা কেউ যেন চালু করে দেয় আর নিজেকে আরেকটু ফোকাসড মনে হয়। আমি সবসময়েই দলের ভালো সময়ে ব্যাটিং করতে ভালোবাসি, কিন্তু দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের ক্ষেত্রেই বোধ হয় নিজের সেরাটা বেরিয়ে আসে।
এই ২০২২ সালে এসে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলা ছাড়াও ভালো খেলার মানসিক কৌশল নিশ্চয়ই রয়েছে। আপনি কি তেমন কিছু কখনো চেষ্টা করেছেন?
সম্ভবত। চেষ্টা করি দলের যেকোনো পরিস্থিতিতেই নিজের সেরাটা দেওয়ার, তবে এটা আমার জন্য একটু কঠিনই বটে। চাপই আমাকে ভালো খেলার বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগায়, চাপেই আমি সবচেয়ে বেশি ভালো খেলি।
শুধুমাত্র ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা সফরের কোন কোন বিষয়গুলো সামনের বছরের ভারত সফরে কাজে লাগতে পারে? নাকি ভারত সফরটা পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সফর থেকে একেবারেই আলাদা?
দেখুন, খেলার ধরন কিন্তু পুরোপুরি পরিবর্তন করা সম্ভব না, কিছু সাদৃশ্য সবসময়ই থাকে। কোনো কোনো পিচে বল একটু বেশি স্পিন করে, আবার কোথাও একটু বাড়তি বাউন্স করে। এই ব্যাপারগুলোর সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে খেলার সঠিক উপায়টা খুঁজে বের করতে হয়, আর তাহলেই এমন কন্ডিশনে সফল হওয়া সম্ভব।
ইদানিং আপনি আগের মতো সেঞ্চুরি পাচ্ছেন না, যদিও উইকেটে অনেক বেশি সময় কাটাচ্ছেন এবং সেটা দলের জন্য আখেরে লাভই হচ্ছে। আপনি কি ক্যারিয়ারের এমন একটা অবস্থানে পৌঁছে গেছেন যেখানে এখন ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে?
যতক্ষণ দল ভালো করছে, ততক্ষণ আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তিত নই। হ্যাঁ, আরও বেশি সেঞ্চুরি করতে পারলে আমার ভালো লাগবে, যেকোনো মানুষেরই ভালো লাগবে। তবে আমি এখনো আমার খেলার ধরন দিয়ে দলে অবদান রাখতে পারছি, পার্থক্য গড়ে দিতে পারছি। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়, আশা করি কিছু বড় সেঞ্চুরি অপেক্ষা করছে।