বার্সেলোনার ইতিহাসে সেরা তিনজন খেলোয়াড় কারা? এর একটা ছোট তালিকা করলে হয়তো এখানে কোনো জেনুইন স্ট্রাইকারের নাম আসবে না। কিন্তু ইয়োহান ক্রুইফের ড্রিম টিমের রোমারিও-রিস্টো স্টোইচকোভদের অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হেক্সাজয়ী দলে স্যামুয়েল ইতো, থিয়েরি অঁরিদের অবদানও ভুলে যাওয়ার মতো না। হালের ডেভিড ভিয়া কিংবা লুইস সুয়ারেজ বার্সার ইতিহাসে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। ছয় বছরের দুর্দান্ত রোলার কোস্টার রাইডের পর অবশেষে সুয়ারেজ এই সিজনের শুরুতে বার্সেলোনা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে যাওয়ার আগে মাত্র ২৮৩ ম্যাচে ১৯৮ গোল এবং ১১৩টি অ্যাসিস্ট করে নিঃসন্দেহে বার্সেলোনার হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছেন। নেইমার বার্সেলোনা ছাড়ার পর সুয়ারেজের ফর্ম খারাপ হতে শুরু করে এবং তা গত সিজনে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর ফলে বার্সেলোনা সুয়ারেজকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সুয়ারেজ বার্সেলোনা ছাড়ার পর বার্সেলোনার সাপোর্টাররা ‘যাক, এবার তবে আপদ বিদায় হলো’ বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও দলে সুয়ারেজের কোনো ব্যাকআপ না থাকায় এই সিজনের শুরু থেকেই বার্সেলোনাকে বেশ ভালোভাবে ভুগতে হচ্ছে। এই সিজনের গোড়া থেকেই বার্সেলোনাকে একজন জেনুইন নাম্বার নাইন ছাড়া মাঠে নামতে হচ্ছে। যার ফলে বার্সেলোনা এবং মেসি সিজনের শুরু থেকেই গোলখরায় ভুগতে দেখা গেছে।
সুয়ারেজের বিদায়ের পর বার্সেলোনায় একমাত্র জেনুইন স্ট্রাইকার হিসাবে আছেন মার্টিন ব্রাথওয়েট। ব্রাথওয়েটের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় না থাকলেও তা ঠিক বার্সেলোনায় খেলার মতো কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর নয় মোটেই। ব্রাথওয়েটের টেকনিক্যাল সার্মথ্য, বল কন্ট্রোলিং কিংবা পজিশনিং সেন্স কোনোটাই বার্সেলোনা মানের নয়। যে কারণে হাতে আর কোনো অপশন না থাকা সত্ত্বেও ক্যোমান ব্রাথওয়েটকে খুব বেশি খেলার সুযোগ দেননি। মেসি-গ্রিজমান-ডেম্বেলেরা নিয়মিত খেললেও তাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউই তথাকথিত লাইন-হোল্ডার না। যে কারণে প্রায় সময়ই একজন স্ট্রাইকার না থাকায় সিজনের শুরুতে বার্সেলোনাকে গোলস্কোরিংয়ে প্রচণ্ড ভুগতে দেখা গেছে, বিশেষ করে ন্যারো লাইন ডিফেন্স করা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। জেনুইন নাম্বার নাইন না থাকার কারণে মেসির পারফরম্যান্সেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছিল সিজনের শুরুতে। সিজনের শুরুর ৯ ম্যাচে মেসির কোনো ওপেন-প্লে গোল করতে না পারাটাই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
তাহলে এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, স্ট্রাইকার হিসাবে সুয়ারেজের বার্সেলোনায় কেমন রোল ছিল এবং সুয়ারেজের বিদায়ের পর মেসির পারফরম্যান্সে কীরকম প্রভাব পড়েছে।
বার্সেলোনায় সুয়ারেজের রোল
বার্সেলোনার মতো ক্লাবের স্ট্রাইকার হতে গেলে শুধুমাত্র লিথ্যাল ফিনিশিং কিংবা পোচার রোলের চেয়েও অনেক বেশি টেকনিক্যাল সামর্থ্যসম্পন্ন হতে হয়। বার্সেলোনার একজন স্ট্রাইকার হওয়ার জন্য বল কন্ট্রোলিং, ড্রিবলিং, অপনেন্টের ডিফেন্ডারদের নিজের দিকে ড্র্যাগ করে টিমমেটের জন্য স্পেস ক্রিয়েট করে দেওয়া, মিডফিল্ডে ড্রপ করে নিউমেরিক্যাল সুপিরিয়রিটি তৈরি করা, অফ দ্য বল পজিশনিং সেন্স – এসব গুনাবলি থাকতে হয়। সুয়ারেজ ছিলেন এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
মর্ডান ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল হচ্ছে ডিফেন্ডারদের নিজের দিকে ড্রাগ করে ওয়াইডে গিয়ে টিমমেটদের জন্য স্পেস ক্রিয়েট করা অথবা ডিপে ড্রপ করে বিল্ডআপে অবদান রাখা। সুয়ারেজের সবচেয়ে বড় গুণাবলির অন্যতম, তার খেলার মধ্যে দু’টিই উপস্থিত ছিল।
সুয়ারেজের বার্সেলোনার ৬ বছরের ক্যারিয়ারের দিক ভালোভাবে লক্ষ্য করলে সুয়ারেজ অফেন্সিভলি কতটা ক্লিনিক্যাল ছিলেন, তা খুব ভালোমতোই অনুধাবন করা যাবে। ৬ বছরের বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে সুয়ারেজের গোল পার ম্যাচ ছিল ০.৮৩ এবং এক্সপেক্টেড গোল পার ম্যাচ ছিল ০.৭৮। কিন্তু শুধুমাত্র গোলের মাধ্যমেই সুয়ারেজের অবদান উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। তাহলে চলুন, বিল্ডআপের জন্য সুয়ারেজের অবদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝার জন্য সময়ের সেরা স্ট্রাইকার লেওয়ানডস্কির সাথে সুয়ারেজের তুলনা করে দেখা যাক।
গোল স্কোরিংয়ের দিকে সুয়ারেজ লেওয়ানডস্কির চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও টিম গেম ইনভলভমেন্টে সুয়ারেজ অনেক এগিয়ে। সুয়ারেজের অ্যাসিস্ট পার ম্যাচ যেখানে ০.৩৯, লেভানডফস্কির মাত্র ০.১৪। সুয়ারেজের কী-পাস পার ম্যাচ ১.৭৪, লেওয়ানডস্কির মাত্র ১.০৮। এর থেকেই বোঝা যায়, বার্সেলোনার বিল্ডআপ প্লে’তে সুয়ারেজের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মেসির পড়তি ফর্ম এবং বাকি ফরওয়ার্ডদের ভূমিকা
২০২০-২১ সিজনের শুরুটা মেসির জন্য ছিল একেবারেই হতাশাজনক। সিজনের প্রথম ৯ ম্যাচে কোনো ওপেন প্লে গোল ছিল না। এমনকি ২০২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেসির গোল কনভার্সন রেশিও ছিল তার ক্যারিয়ারের বিবেচনায় একেবারেই বাজে। মেসি আবারও তার ধারাবাহিক গোল স্কোরিং ফর্ম ফিরে পেলেও এখন পর্যন্ত ন্যারো ডিফেন্স লাইনের বিপক্ষে মেসির গোলস্কোরিং ফর্ম বেশ মলিন। এর কারণ কি শুধুই মেসির বাজে ফিনিশিং, নাকি টিমমেটদেরও অবদান রয়েছে প্রত্যক্ষভাবে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
বার্সেলোনায় মেসির পজিশন থাকে অনেকটাই ইনভার্টেড রাইট উইঙ্গারদের মতো। মেসি মূলত সেন্টারফিল্ডের টাচলাইন এরিয়া থেকে বল নিয়ে জোন ১৪ দিয়ে ফরওয়ার্ড মুভ করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে এতদিন সবচেয়ে ভাইটাল রোল ছিল সুয়ারেজের অফ দ্য বল পজিশনিংয়ের। সুয়ারেজ অপোনেন্ট থার্ডের সেন্টার এরিয়া থেকে ওয়াইডে সরে গিয়ে প্রতিপক্ষ সেন্টারব্যাকদের নিজের দিকে ড্র্যাগ করার চেষ্টা করতেন। ফলে মেসি জোন ১৪তে ওপেন স্পেস পেয়ে বক্সে কাট-ইন করে সরাসরি অ্যাটেম্পট নিতেন। কিন্তু এই সিজনে কোনো নাম্বার নাইন না থাকায় এবং সিজনের শুরুতে প্রায় ম্যাচগুলোতেই মেসি, গ্রিজম্যান এবং কৌতিনহো একসাথে খেলার কারণে বার্সেলোনার খেলা অনেক বেশি সেন্ট্রাল এরিয়ানির্ভর হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে প্রতিপক্ষ জোন ১৪ ওভারক্রাউডেড করে সহজেই মেসির মুভমেন্ট লিমিটেড করে দিতে পারত।
উপরের ছবিতে সুয়ারেজের দুর্দান্ত পজিশনিং সেন্স এবং বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। এখানে দেখা যাচ্ছে মেসি বল নিয়ে ফাইনাল থার্ডে মুভ করছেন এবং সুয়ারেজ একজন সেন্টারব্যাকের সাথে স্টিক হয়ে আছেন। তখন মেসি সুয়ারেজের সাথে ওয়ান-ওয়ান করে উপরে উঠে আসেন। সুয়ারেজ তখন কিছুটা ওয়াইডে সরে প্রতিপক্ষ সেন্টারব্যাককে নিজের দিকে ড্রাগ করে নেন এবং মেসি তখন ফ্রি স্পেস পেয়ে শট অ্যাটেম্পট করেন।
উপরের ডায়াগ্রামের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় গত ৬ সিজনের তুলনায় আক্রমণের প্রায় সব ক্ষেত্রেই মেসির ভূমিকা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। গত ৬ সিজনে মেসির পার ম্যাচ গোল ছিল ১.০৩, যেটা কমে এই সিজনে দাঁড়িয়েছে ০.৯৪তে। মেসির অ্যাসিস্ট এবং এক্সপেক্টেড অ্যাসিস্টের গড়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। মেসির গত ৬ সিজনের অ্যাসিস্ট পার ম্যাচ ছিল যেখানে ০.৪৫, সেটি এই সিজনে কমে দাঁড়িয়েছে ০.৩৩তে। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে দলে লিথ্যাল ফিনিশারের অভাব এবং সতীর্থদের দুর্বল গোল কনভার্সন রেট। তবে উল্লেখিত পরিসংখ্যানের মধ্যে একটা জায়গা বেশ ব্যতিক্রম। মেসির গোল কন্ট্রিবিউশন কমে গেলেও পার ম্যাচে মেসির শটের সংখ্যা ৫.৩৯ থেকে এই সিজনে বেড়ে দাড়িয়েছে ৫.৮৭ এ। এর কারণ কী?
উপরের ছবির প্রথম অংশে মেসির গত ৬ সিজনের ওপেন প্লে শট অ্যাটেম্পট এবং নিচের অংশে এই সিজনে মেসির শট অ্যাটেম্পট দেখানে হয়েছে। প্রথম ছবি থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, শট নেওয়ার ক্ষেত্রে জোন ১৪ এর এরিয়া (কালো মার্ক করা অংশ) হচ্ছে মেসির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক পজিশন। কিন্তু এই সিজনে জোন ১৪ এবং তার আশেপাশের এরিয়া প্রতিপক্ষ ওভারক্রাউডেড করে রাখার কারণে মেসিকে তার স্ট্রং জোনের বাইরে এসে বেশিরভাগ অ্যাটেম্পট নিতে হচ্ছে, ফলে তুলনামূলক দুর্বল শট সেইভ করা প্রতিপক্ষ গোলকিপারদের জন্য অনেকটাই সহজ হচ্ছে। এই সিজনে জোন ১৪ এরিয়ায় মেসির ওপেন প্লে গোলসংখ্যা মাত্র ২টি।
এই সিজনে বার্সেলোনার ফরোয়ার্ডদের চান্স ক্রিয়েশনের তুলনায় গোল কনভার্সনে বেশ দুর্বলতা দেখা গিয়েছে। এই সিজনে লা লিগায় বার্সেলোনার খেলোয়ারদের মোট কী-পাসের সংখ্যা ৩৩৭, যেটি লা লিগার যেকোনো দলের মধ্যে সর্বোচ্চ।
উপরের চার্টটিতে আমরা বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডদের গোল কনভার্সন রেট দেখতে পাচ্ছি। এই সিজনে বার্সেলোনার ফরোয়ার্ডদের মধ্যে গ্রিজম্যানের গোল কনভার্সন রেট সবচেয়ে বেশি, ১৫.৪০%। এরপর যথাক্রমে মেসি, ব্রাথওয়েট এবং ডেম্বেলে। তাদের কনভার্সন রেট যথাক্রমে ১৪.৩০%, ১০.৫০% এবং ১০.৩০%। বার্সেলোনার ফরোয়ার্ডদের কনভার্সন রেট কতটা বাজে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? চলুন তাহলে উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক।
এই সিজনে বার্সেলোনার সাবেক স্ট্রাইকার সুয়ারেজের গোল কনভার্সন রেট ২০.২% এবং বর্তমান সময়ে উড়ন্ত ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড লেওয়ানডস্কির গোল কনভার্সন রেট ২৮.১%! তাহলে এবার বুঝলেন তো, বার্সেলোনার ফরোয়ার্ডদের স্কোরিংয়ে কতটুকু দুর্বল ছিল এই সিজনে?
চলুন, আরেকটি পরিসংখ্যান দেখা যাক। উপরের চার্টে আমরা এই সিজনে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডদের মোট টাচের কত শতাংশ প্রতিপক্ষ বক্সের ভেতর, তা দেখানো হয়েছে। সুয়ারেজের বিদায়ের পর বার্সেলোনা স্কোয়াডে একমাত্র জেনুইন স্ট্রাইকার রোলে রয়েছেন মার্টিন ব্রাথওয়েট, প্রতিপক্ষ বক্সে তার টাচের পরিসংখ্যানের মাধ্যমেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়৷ ব্রাথওয়েটের এই সিজনের মোট টাচের ১৭.৫০% হচ্ছে প্রতিপক্ষ বক্স এরিয়ায়। এই সিজনে বেশিরভাগ ম্যাচেই মেসি কিংবা গ্রিজমান মেইন ফরওয়ার্ড রোলে খেললেও সহজাত লাইন হোল্ডার না হওয়ায় প্রতিপক্ষ বক্স এরিয়ায় দুজনেরই উপস্থিতি আশানুরূপ নয়। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে এই সিজনে সুয়ারেজের প্রতিপক্ষ বক্সে টাচের হার ১৯.৫%।
নেইমারের বিদায়ের পর বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড লাইনে মেইন রোল ছিল মেসি এবং সুয়ারেজের উপর। সুয়ারেজের বিদায়ের পর আক্রমণে মেসির পার্টনার হিসেবে বেশিরভাগ ম্যাচেই দেখা গেছে গ্রিজমানকে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, মেসি এবং গ্রিজমান উভয়েরই মাঠের ডানপাশ নির্ভরতা। চলুন একটু ছোট পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানো যাক।
উপরের ছবিতে সুয়ারেজ এবং গ্রিজম্যানের পাসিং ডিরেকশন দেখা যাচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, সুয়ারেজের সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ পাসের ডিরেকশন ছিল ডানদিকে। এর মূল কারণ ছিল মেসি ইনভার্টেড রাইট উইঙ্গারদের মতো রাইট উইং দিয়ে জোন ১৪ দিয়ে সুয়ারেজের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান করে বক্সে অ্যাটেম্পট নিতেন। কিন্তু গ্রিজমানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রিজমানের সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ পাসের ডিরেকশন বামদিকে। ফলে মেসিকে অন্যান্য সিজনের তুলনায় এই সিজনে লেফট সাইড দিয়ে বেশি সময় বল প্রোগ্রেস করতে হচ্ছে, যা এই সিজনে মেসির হিটম্যাপ দেখলেও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এটিও এই সিজনে মেসির স্কোরিং রেট কমে যাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
আরেকটি ছোট উদাহরণ দিয়ে মেসির স্কোরিংয়ে সুয়ারেজের ইনভলভমেন্ট দেখানো যাক। গত কয়েক মৌসুমে মেসির সাথে সবচেয়ে ভালো কানেকশন দেখা গিয়েছে সুয়ারেজের। নিচের ছবিটিতে সুয়ারেজ বক্সের একপ্রান্তে পজিশন হোল্ড করে টটেনহ্যাম সেন্টারব্যাককে নিজের দিকে ড্র্যাগ করে নিতে চেষ্টা করেন। আলবার কাটব্যাকে সুয়ারেজের ফেইক মুভ টাইট স্পেসেও মেসিকে স্পেস বের করে দিতে সাহায্য করে। মেসিও সুয়ারেজের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে লেট মুভ করে অন টার্গেট অ্যাটেম্পট নেন, ফলে টটেনহ্যাম গোলকিপার লরিস সম্পূর্ণভাবে বলের লাইন বুঝতে ব্যর্থ হন এবং বার্সেলোনা গোল পেয়ে যায়।
এই সিজনের শুরুতে ট্রান্সফার মার্কেটে বার্সেলোনা অনেকগুলো প্রশ্নজর্জরিত সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত ছিল সুয়ারেজকে ছেড়ে দেওয়া। সুয়ারেজকে ছেড়ে দেয়াটা বেশ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হলেও সুয়ারেজের ফর্ম বিবেচনায় তর্কসাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনো নাম্বার নাইন না কিনেই সুয়ারেজকে ছেড়ে দেয়া এবং ঘরোয়া লিগের শিরোপাদৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের কাছেই বিক্রি করাটা যে মস্ত বড় ভুল ছিল, সেটা বলাই বাহুল্য।